ডিম খাওয়া নিয়েও দুশ্চিন্তা! ডিমের মধ্যে মিলছে অধিক পরিমাণ লোহা, দস্তা, তামা, সিসা! কতটা খারাপ প্রভাব ফেলছে শরীরে?

ডিম খাওয়া নিয়েও দুশ্চিন্তা! ডিমের মধ্যে মিলছে অধিক পরিমাণ লোহা, দস্তা, তামা, সিসা! কতটা খারাপ প্রভাব ফেলছে শরীরে?
আনফোল্ড বাংলা প্রতিবেদন: ডিমের মধ্যেও মিলছে ভারী ধাতু। রয়েছে লোহা, সিসা, দস্তা, তামা! যা পরিমাণের তুলনায় অনেক বেশি! এমনই তথ্য উঠে এলো এক গবেষণায়। যে গবেষণাটি করেছে বাংলাদেশের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ (বিসিএসআইআর) এবং হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছয়জন গবেষক। বিজ্ঞানীদের আশঙ্কা, ডিমে মাত্রাতিরিক্ত এসব ভারী ধাতুর কারণে মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকির আশঙ্কা রয়েছে। সম্প্রতি এই গবেষণাটি প্রকাশিতও হয়েছে একটি জার্নালে।
গবেষকরা জানিয়েছেন, ডিমের মধ্যে কোন কোন ভারী ধাতুর উপস্থিতি রয়েছে সেই বিষয়ে গবেষণা করা হয়। ডিমে ১০টি ভারী ধাতুর উপস্থিতি পাওয়া গেছে। যার মধ্যে ছয়টি ধাতুর উপস্থিতি সর্বোচ্চ অনুমোদিত মাত্রার (ম্যাক্সিমাম পার্মিসিবল লিমিট বা এমপিএল) মধ্যে রয়েছে। বাকি চারটি (দস্তা, তামা, সিসা ও লৌহ) ধাতুর উপস্থিতি পাওয়া গেছে এমপিএলের চেয়ে অনেক বেশি মাত্রায়। যেমন ডিমে তামার এমপিএল ১০, সেখানে পাওয়া গেছে ২৪.৯ পর্যন্ত। আর যেখানে সিসার এমপিএল ০.১, সেখানে পাওয়া গেছে ১.৯ পর্যন্ত। লোহার এমপিএল যেখানে ১৭.৬, সেখানে পাওয়া গেছে ৬৪.৫৯ পর্যন্ত এবং দস্তার এমপিএল যেখানে ২০, সেখানে পাওয়া গেছে সর্বোচ্চ ৩৯.২৬।
বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা শহরের মানুষ যে ডিম খায়, তাতে ভারী পদার্থের উপস্থিতি আছে কি না, তা দেখার জন্য এই গবেষণা করা হয়। ফলে গবেষণার জন্য কিছু পাইকারি বাজার নির্বাচন করা হয়। যেখান থেকেই ডিম পুরো ঢাকা শহরে সরবরাহ করা হয়। এমন ছয়টি বাজার থেকে গবেষকেরা ১২টি করে মোট ৭২টি ডিম সংগ্রহ করে পরীক্ষা শুরু হয়। ২০২০ সালের ১২ থেকে ১৭ জুলাই পর্যন্ত মহাখালী, মোহাম্মদপুর, সাভার, মিরপুর-১, যাত্রাবাড়ী ও কারওয়ান বাজারের পাইকারি বাজার থেকে ডিমগুলো সংগ্রহ করা হয়েছিল।
গবেষণাটি করেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক মো. শাহজাহান, অধ্যাপক আবদুস সামাদ ও মো. মাহমুদুল হাসান; একই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক দোলন রায়; বিসিএসআইআরের কেমিক্যাল গবেষণা বিভাগের খন্দকার শাহীন আহমেদ এবং হাজী দানেশের পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষক স্মিতা সরকার।
বিশেষজ্ঞরা বাংলাদেশের নিউজ ওয়েবসাই প্রথম আলো-কে এ বিষয়ে তাঁদের বক্তব্যও জানিয়েছেন। এ বিষয়ে গবেষক দলের সদস্য অধ্যাপক আবদুস সামাদ প্রথম আলোকে জানান, ভারী ধাতু বিশ্লেষণের জন্য বিসিএসআইআরের গবেষণাগার ব্যবহার করা হয়েছে। বিশ্লেষণের আগে নমুনা সংগ্রহ ও প্রস্তুতি প্রক্রিয়ার কাজ করা হয়েছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা প্রকল্পের তহবিলের টাকায় হয়েছে গবেষণাটি।
ট্যানারির বর্জ্য ঢাকা ও চট্টগ্রামের কিছু জায়গায় প্রক্রিয়াকরণ হয় এবং পরে সেগুলো পোলট্রির খাদ্য উৎপাদনে ব্যবহৃত হয় বলে উল্লেখ করেন প্রান্তিক খামারিদের সংগঠন বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশনের (বিপিএ) সভাপতি সুমন হাওলাদার। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, খাদ্য উৎপাদনকারীরা নিরাপদ পোলট্রি খাদ্য না দিলে প্রান্তিক খামারিরা নিরাপদ মুরগির মাংস ও ডিম দিতে পারবেন না।
মুরগির খাদ্য নিয়ে আরও গবেষণা হওয়া উচিত বলে মনে করেন অন্যতম গবেষক জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক দোলন রায়। তিনি বলেন, ‘ধারণা করছি, খাবারের মাধ্যমে মুরগির শরীরে বিষাক্ত ভারী ধাতু প্রবেশ করছে। সেখান থেকে ডিমে। আর ডিম থেকে মানুষের শরীরে। তাই খামারে পালন করা মুরগির খাবার আরও নিরাপদ হওয়া উচিত।’
এর ফলে ক্যানসার, হৃদ্রোগ, শ্বাসপ্রশ্বাসে জটিলতা, রক্তশূন্যতা, মস্তিষ্ক-কিডনি-স্নায়ুর ক্ষতিসহ নানা ধরনের শারীরিক সমস্যা বাড়ায়। গবেষণায় বলা হয়েছে, ডিমে এসব ভারী ধাতুর উপস্থিতি প্রাপ্তবয়স্কদের চেয়ে শিশু ও বয়স্কদের জন্য বেশি ঝুঁকি তৈরি করে। এর ফলে ডিম খাওয়াও এবার দুশ্চিন্তার মধ্যে পড়বে বলেই আশঙ্কা।


