বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস

বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস
শ্রীপর্ণা মিত্র মজুমদার
গত কয়েক বছরে Autism বা Autistic শব্দটা সাধারণ মানুষের কাছে পরিচিত একটি শব্দ। একটি শিশুর বৌদ্ধিক বিকাশ যখন আর পাঁচটি শিশুর থেকে আলাদা হয়, তার মধ্যে যদি সঠিক বয়সের আচরণ পরিলক্ষিত না হয়, সে যদি সামাজিক যোগাযোগ স্থাপনে অক্ষম হয়, সে যদি কেবলমাত্র নিজেকে নিয়েই ব্যস্ত থাকে, কারো সাথে কথা বলতে গিয়ে সেই ব্যক্তির সাথে যদি চোখে চোখ রেখে কথা না বলে, বারবার একই কাজ করতে থাকে তবে বলা যেতে পারে শিশুটি Autistic. তবে Autism কিন্তু কোনও রোগ নয়। এটি একটি অবস্থা।
সাধারণত শিশুর বয়স তিন বা সাড়ে তিন বছর না হলে এই অবস্থা ধরা পড়ে না। এমনও হতে পারে আপাত দৃষ্টিতে ছোট থেকেই শিশুটির বিকাশ সঠিকভাবেই হচ্ছে। সঠিক সময়েই সে উপুর হচ্ছে, হামাগুড়ি দিচ্ছে, শব্দ বলছে, দাঁড়াচ্ছে, হাঁটছে কিন্তু একটা সময় গিয়ে তার কথা বলা একদম কমে গেল বা বন্ধই হয়ে গেল এবং তাকে ডাকলেও আর সাড়া দিত না। বাড়ির লোকে ভাবলো কানের সমস্যা অর্থাৎ শুনতে পাচ্ছে না তাই সাড়া দিচ্ছে না। কিন্তু দেখা গেল, বাসন পড়ার "ঝনঝন" শব্দে সে দুহাত দিয়ে প্রবল ভাবে কান চাপা দিচ্ছে অর্থাৎ সে কানে শোনে অথচ ডাকলে কেন সাড়া দেয় না ? সমস্যার উদ্ভব হয় তখন থেকেই। ব্যাপারটা বাড়ির সবার নজরে আসে। ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করে অটিজমের কথা জানতে পারে বাড়ির লোকেরা। ডাক্তার পরামর্শ দেন শিশুকে থেরাপি দেবার জন্য। এক্ষেত্রে ডাক্তাররা প্রেসক্রিপশনে ASD লিখে দেন। ASD অর্থাৎ Autism Spectrum Disorder. এটি life long, non progressive, neurological disorder.
Autistic child এখন এত বেশি বেড়ে গেছে যে শিলিগুড়ির মত শহরেও অসংখ্য থেরাপি সেন্টার রয়েছে। অনেকে বাড়িতে এসেও প্রাইভেট টিউটরদের মত করে শিশুকে থেরাপি দিয়ে থাকেন। বাচ্চার অবস্থা বুঝে তার eye contact/ instruction follow করার ক্ষমতা অথবা কথা বলানো অথবা socialization এর ওপরে therapy করান তারা। দীর্ঘদিন এই থেরাপি এবং বাড়ির লোকের যত্নে অনেকটাই অবস্থান্তর ঘটানো সম্ভব অটিস্টিক চাইল্ডদের। অর্থাৎ বলা যেতে পারে বাড়ির লোকের যত্ন এবং প্রশিক্ষণ পেলে তাদের অবস্থার মান উন্নয়ন ঘটানো সম্ভব।
কি কারনে অটিজমের শিকার হয় মানুষ তা আজও অজানা।
Autistic দের মধ্যে কিছু রকমফের থাকে যেমন কেউ হয়তো অতি চঞ্চল, কেউ হয়তো অতটা না। কেউ হয়তো খুবই মারমুখী অর্থাৎ জিনিসপত্র ছুড়ে ভেঙে ফেলে কেউ হয়তো সে সব করে না। তবে যে সব লক্ষণ গুলো Autistic দের মধ্যে কমন সেগুলি হল-
A – Alone
U - Unusual Play
T- Twirl or Twiddle
I- Isolation
S -Socialisation এর অভাব
M - Mute
শুনলে অবাক হতে হয়, Isaac Newton, Albert Einstein, George Orwell, H.G Wells, Beethoven, Mozart এর মতো বিশ্বখ্যাত পন্ডিতরাও প্রত্যেকেই ছিলেন কম বেশি Autism এর শিকার। তাঁদের মধ্যে ছিল Asperger Syndrom. ওনারা একাকিত্ব পছন্দ করতেন,নিজের কাজে অসম্ভব মনোনিবেশ করে নিজের জগতে থাকতে পছন্দ করতেন। একই কাজের পুনরাবৃত্তি করতেন বারবার।
২০০৭ সালে United Nations General Assembly 2nd এপ্রিলকে World Autism Awarness Day হিসেবে ঘোষণা করে। এই দিনটিতে জাতিসংঘ বিশ্বজুড়ে তার সদস্য দেশগুলিকে ASD সম্পন্ন ব্যক্তিদের সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণে উৎসাহিত করে। যাতে তারাও অন্যান্য স্বাভাবিক সুস্থ মানুষদের মতোই পৃথিবীতে বেঁচে থাকতে পারে এবং নিজেদের অধিকার ভোগ করতে পারে।
আজ 2nd এপ্রিল। World Autism Awarness Day. আসুন সচেতন হই, সচেতন করি মানুষকে।
লেখক: শিক্ষিকা, শিলিগুড়ি


