সাফল্যের কথা ফলাও করে বলব অথচ ব্যর্থতার দায় নিতে দ্বিধা কেন?

সাফল্যের কথা ফলাও করে বলব অথচ ব্যর্থতার দায় নিতে দ্বিধা কেন?
02 Sep 2020, 07:22 PM

সাফল্যের কথা ফলাও করে বলব অথচ ব্যর্থতার দায় নিতে দ্বিধা কেন?

গত এপ্রিল মাসের তৃতীয় সপ্তাহে বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডার একটি বিশেষ কথা মনে পড়ে গেল। মনে পড়ল এই কারণে যে, প্রতিদিনই দেখছি দেশ ক্রমে ক্রমে সর্বনাশের দিকে এগিয়ে চলেছে। দিনদিন বেড়েই চলেছে মৃত্যু মিছিল। তা কী বলেছিলেন নাড্ডাজী সেই বক্তব্যে? অত্যন্ত গর্বের সঙ্গে তিনি ঘোষণা করেছিলেন, আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিজী কোভিড-১৯ এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বিশ্বকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। খুব ভালো। ফলাও করে বলার মতোই কথা। পোলস্টারের একটি বিশ্লষণের ভিত্তিতে তিনি এই মন্তব্য করেন। প্রশ্ন হচ্ছে, এপ্রিল পরবর্তী চারমাসে ‘পোল স্টার’ কি অনুরূপ কোনও বিশ্লেষণ করেছে? পক্ষপাতদুষ্ট সংবাদমাধ্যমগুলি থেকে আমরা আর কতটা কী আশা করতে পারি? যাই হোক, পোলস্টার কিছু করবে কি না করবে তা তাদের নিজস্ব ব্যাপার। কিন্তু ভোট পোল করে যারা স্টার তৈরি করেন সেই সাধারণ মানুষ কিন্তু নিজের মতো করে বিশ্লেষণ করে ফেলেছেন। কী তাদের বিশ্লেষণের ফলাফল?

একেবারে ২ রা সেপ্টেম্বর, ২০২০-র তথ্য অনুযায়ী, নিশ্চিতভাবে কোভিড ১৯ আক্রান্ত জনসংখ্যার বিচারে পৃথিবীতে এক নম্বরে আছে আমেরিকা। আর তিন নম্বরে ভারত। দু’নম্বরে থাকা ব্রাজিলের সঙ্গে তার ব্যবধান মাত্র ১৩৮৭৪৯। যেখানে এক নম্বরের থেকে দুই নম্বরের ফারাক ২০ লক্ষেরও বেশি। সুতরাং দুই নম্বরে খুব অল্প সময়েই আমরা হয়তো পৌঁছে যাব। কিন্তু এর চেয়েও যেটা আরও ভেবে দেখার, তা হল বৃদ্ধির হার। তালিকায় থাকা প্রথমদশটি দেশের মধ্যে নয়টি দেশের ক্ষেত্রেই এই বৃদ্ধির গ্রাফ যখন ক্রমান্বয়ে নিম্নমুখী, ভারতের ক্ষেত্রে কিন্তু তা ক্রমশ উপরের দিকে চড়ছে। কি ভাবছেন, বিশ্বকে আমরা নেতৃত্ব দেব? আসলে এ হল পেছনের দিকে এগিয়ে যাওয়া। আমাদের দেশের নেতৃত্বের কোভিড-১৯ নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার চিহ্নই এটি বহন করছে। সাফল্যের ক্ষেত্রে প্রচারের সবটুকু আলো যদি একজন শুষে নিতে চান, তাহলে এই ব্যর্থতার দায়ও তাঁকে নিতে হবে।

সরকারি তরফ থেকে বড় মুখ করে বলা হচ্ছে কেস ফ্যাটালিটি রেটে আমরা বেশ ভালো জায়গায় আছি। আমাদের ক্ষেত্রে এই হার দুই শতাংশের নীচে। কিন্তু কেস ফ্যাটালিটি রেটের সঙ্গে চিকিৎসা পরিকাঠামো ও নিয়ন্ত্রণের সমানুপাতিক সম্পর্ক নেই। অর্থাৎ কেস ফ্যাটালিটি রেট কম মানে চিকিৎসা পরিকাঠামো ভালো হচ্ছে তা কিন্তু নয়। জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের করোনা ভাইরাস রিসোর্স সেন্টার কেস ফ্যাটালিটির যে হিসেব দিচ্ছে সেই অনুযায়ী ইতালির ক্ষেত্রে এই হাক ১৩.১ শতাংশ, ইংল্যান্ড এর ক্ষেত্রে ১২.৩ শতাংশ, আমেরিকার ৩ শতাংশ, ব্রাজিলের ৩.১ শতাংশ। তাহলে কী ধরে নিতে হবে ইতালি আমেরিকার চেয়ে আমাদের চিকিৎসা পরিকাঠামো ভালো! আমরা কিন্তু স্বীকার করছি না আমাদের মৃত্যু হার  আমাদের গায়ে গায়ে লেগে থাকা প্রতিবেশি দেশগুলির থেকে বেশি। ছোট্ট প্রতিবেশি শ্রীলঙ্কার কেস ফ্যাটালিটি রেট মাত্র ০.৪ শতাংশ, মায়ানমারের ০.৭ শতাংশ, বাংলাদেশের ১.৪ শতাংশ, আর নেপালের ০.৬ শতাংশ মাত্র। এদের সবার থেকে বেশি মৃত্যু হার ভারতের। ১.৮ শতাংশ। সুতরাং মৃত্যু হারের পরিসংখ্যান আর সেরে ওঠার হার দিয়ে জনগণকে বোকা বানানো যাবে না। দেশের মানুষ প্রতিদিন তিলতিল করে শেষ হয়ে যেতে যেতে বুঝতে পারছে কিভাবে তাঁদের অর্থনীতি, সামাজিক সুরক্ষা, স্বাস্থ্য পরিকাঠামো, শিক্ষা ব্যবস্থা চুরচুর করে ভেঙে পড়ছে। সাফল্য প্রচারের বৃথা বাগাড়ম্বর না করে ব্যর্থতার দায়ও নিতে শিখুন। তা না হলে সাধারণ মানুষই সেই শিক্ষার দায়িত্ব নিয়ে নেবে।

Mailing List