এত তাড়াতাড়ি রাজনীতি কেন

এত তাড়াতাড়ি রাজনীতি কেন
23 May 2020, 12:52 PM

এত তাড়াতাড়ি রাজনীতি কেন

সুমন ঘোষ

করোনা নিয়ে রাজনীতি শুরু হতে কিছুটা সময় নিয়েছিল। কারণ, আতঙ্ক। সারা বিশ্ব যেখানে মুখ থুবড়ে পড়েছে সেখানে ভারতকে কোন অবস্থার মধ্যে পড়তে হবে? এই দুশ্চিন্তা থেকেই সকলে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলার কথা বলেছিলেন। কিছুদিন তার ব্যতিক্রমও ঘটেনি। যখনই ধীরে ধীরে দেখা গেল আতঙ্ক দূরে সরে যাচ্ছে তখনই শুরু হয়েছিল রাজনীতি। আর আমফানের বেলায় একদিন না কাটতেই শুরু হয়ে গেল রাজনীতি। যে রাজনৈতিক তরজা ঘিরে উত্তাল রাজ্য রাজনীতি। সকলেই প্রমাণ করতে ব্যস্ত, আমফান বিধ্বস্ত মানুষের জন্য সহমর্মিতা যেন তাঁদেরই বেশি।

করোনা আতঙ্ক কিন্তু এখনও পিছু ছাড়েনি। উল্টে উত্তরোত্তর তার বৃদ্ধি ঘটছে। শহর ছাড়িয়ে তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে গ্রামেও। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের তথ্য অনুযায়ী, ক’দিন ধরে নতুন করে আক্রান্তের সংখ্যা দিনে পাঁচ হাজারের গণ্ডিতে আটকে থাকলেও এবার এক লাফে ৬ হাজার অতিক্রম করে গিয়েছে। এক দিনে ৬ হাজারেরও বেশি! শুধু আশার আলো বলতে, মৃত্যু হার কমেছে। তা অবশ্যই ন্যুনতম। এই আতঙ্কের মাঝেই এলো আমফান। সমস্ত অনুমান ভ্রান্ত প্রমাণ করে তা আছড়ে পড়ল পশ্চিমবঙ্গের বুকে। রাজ্যের উত্তর ও দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা লন্ডভন্ড করল। রাজ্যের প্রাণকেন্দ্র কলকাতাও হল বিধ্বস্ত। এর বাইরেও পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর, হুগলি–সহ দক্ষিণবঙ্গের কয়েকটি জেলাতেও ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ভালোই। করোনার কারণে রাজ্যের অর্থনীতি এমনিতেই বেহাল ছিল। তার ওপর ঝড়ে লন্ডভন্ড হয়ে ক্ষতির পরিমাণ বাড়িয়ে দিল অনেকটাই। কৃষি নির্ভর বাংলার চাষিরা চরম দুশ্চিন্তায়। করোনার কারণে মাঠের ফসল বাজারে বিক্রি করতে পারছেন না। যেটুকু বিক্রি করতে পারছেন তারও দাম মিলছে না। তার ওপর চাষ নষ্ট হল। বাড়ি ভাঙল। প্রাণ গেল মানুষের।

মুখ্যমন্ত্রীকে ফোন করলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। মুখ্যমন্ত্রী পরিস্থিতি দেখতে আহ্বান জানালেন প্রধানমন্ত্রীকে। প্রধানমন্ত্রী রাজ্যের পরিস্থিতি দেখতে এলেন। এক হাজার কোটি টাকা সাহায্যেরও আশ্বাস দিলেন। কিন্তু কোন খাতে কত টাকা? এখনও তার কোনও হিসেব জানা যায়নি। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, নিশ্চয় শীঘ্রই বিষয়টি পরিষ্কার হবে। তবে এখনও পরিষ্কার নয়। তারই মধ্যে শুরু হয়ে গেল তরজা। ইতিমধ্যেই কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে চিঠি পাঠালেন ক্ষমতাসীন বিজেপি দলের সাংসদ তথা রাজ্য বিজেপির সভাপতি দিলীপ ঘোষ। তিনি বললেন, ‘‘টাকা যাতে প্রত্যেক মানুষের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ঢোকে চিঠিতে সে কথা জানিয়েছি।’’ যা শুনে তৃণমূ‌ল নেতা তথা মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বললেন, ‘‘বড়দের কথার মাঝে ছোটদের থাকতে নেই।’’ অর্থাৎ প্রধানমন্ত্রী-মুখ্যমন্ত্রীরা কথা বলেছেন, দিলীপ ঘোষ এখানে বলছেন কেন। কিন্তু প্রশ্নটা হল, টাকা কোথায়? প্যাকেজটাই বা কী? এখনও তা কারও জানা নেই। টাকা এসে পৌঁছনো দুরের কথা। এখন প্রধান প্রশ্ন হল, আগে তো টাকা আসুক। তারপর তার খরচ বা খরচের পদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে। যেখানে প্যাকেজটাই এখনও তৈরি হয়নি, বিধ্বস্ত মানুষ চরম কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন, সেখানে এই রাজনীতি কতটা প্রাসঙ্গিক। আগে তো আমনুষের প্রাণ। মানুষ না থাকলে কাদের নিয়ে রাজনীতি হবে!

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপধ্যায় অবশ্য এখনও এসবের মধ্যে ঢোকেননি। তিনি শুধু বলছেন, কেন্দ্র দিলে ভালো, নাহলে তো আমাদেরই করতে হবে। করোনার ধাক্কার মাঝেই আমফানের উড়ে আসা। তাতে রাজ্য কতটা থিতু হতে পারবে, সময়ই তার উত্তর দিতে পারে।   

Mailing List