হঠাৎ দরজায় কেন খিল আঁটলেন অভিষেক, বিজেপি থেকে কী বন্ধ হচ্ছে তৃণমূলে ঢোকা

হঠাৎ দরজায় কেন খিল আঁটলেন অভিষেক, বিজেপি থেকে কী বন্ধ হচ্ছে তৃণমূলে ঢোকা
06 Jun 2022, 01:30 PM

হঠাৎ দরজায় কেন খিল আঁটলেন অভিষেক, বিজেপি থেকে কী বন্ধ হচ্ছে তৃণমূলে ঢোকা

 

বিশেষ সংবাদদাতা: অর্জুন সিং-ই নাকি শেষ। বিজেপি থেকে আর ঘরওয়াপসি-তে রাজি নয় তৃণমূল। তাই ঘরে ‘খিল’ এঁটে দিলেন যুব নেতা তথা সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। 

সম্প্রতি ব্যারাকপুরের সভা থেকে প্রকাশ্যেই সে কথা জানিয়েছেন তিনি। জানিয়েছেন, দরজা খুলে দিলে বিজেপি দলটাই উঠে যাবে। কেন? কারণ, গত বিধানসভা নির্বাচনের আগে একের পর এক নেতা থেকে মন্ত্রী ঝড়ের গতিতে বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন। শুভেন্দু অধিকারী থেকে রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়, সব্যসাচী দত্ত – সে দলে কে ছিলেন না? এমনকী, তৃণমূলের টিকিট পাওয়া ব্যক্তিরাও বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন। আর পঞ্চায়েত থেকে জেলা পরিষদ, ব্লকের নেতারাও হুড়মুড়িয়ে নেতাদের পিছন পিছন বিজেপিতেই যোগ দেন। তারপর দেখা যায়, বিধানসভার ফলে বিজেপি আটকে গিয়েছে ৭১ এ। আরও বেশি আসন পেয়ে তৃতীয়বারের জন্য ক্ষমতায় এসেছে তৃণমূল।

তারপর থেকেই ঘরে ফেরার প্রস্তুতি শুরু করে দেন এক এক নেতা। রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়, সব্যসাচী দত্ত থেকে শুরু করে অনেকেই ফিরেছেন। এখানেই শেষ নয়, বিজেপি নেতা জয়প্রকাশ মজুমদার পর্যন্ত তৃণমূলে ঢুকে পড়েছেন। সর্বশেষ এলেন অর্জুন সিং।

ব্যারাকপুরের বিজেপি সাংসদ অর্জুন সিং তৃণমূলে ফেরার পরই ব্যারাকপুরে গিয়ে সভা করেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। আর সেখানেই তিনি ইঙ্গিত দিলেন যে, এই যে ঘরওয়াপসি আর নয়। আপাতত দরজায় খিল। সামনেই পঞ্চায়েত নির্বাচন। ২০২৪ সালে লোকসভা। তার আগে কেন দরজায় খিল?

দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বিজেপিতে চলে যাওয়া নেতারা ফেরায় দলে অস্বস্তি বাড়ছে। গত বিধানসভায় যখন গেল গেল রব উঠেছিল, তখন ঝুঁকি নিয়েও দলের সাধারণ কর্মী ও নেতারা কিন্তু ছিলেন। শুধু ছিলেন তা নয়, তাঁদের ভীষণ পরিশ্রম করতে হয়েছে। যে সমস্ত তৃণমূল নেতা-মন্ত্রীরা বিজেপিতে গিয়েছিলেন, তাঁরা সকলেই কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা পেয়েছিলেন। নির্বাচনে লড়েছিলেন। আর সেই কেন্দ্রীয় বাহিনী ও নেতাদের বিরুদ্ধে তীব্র লড়াই করতে হয়েছিল তৃণমূল কর্মীদের। কিছু ক্ষেত্রে অত্যাচারও সহ্য করতে হয়েছিল। তাঁরাই আবার দল ফেরার অর্থ, তাঁদের কাছে মাথা নত করতে হবে ওই সমস্ত লড়াকু কর্মীদের। যার ফলে ক্ষোভ বাড়বে। আর লড়ুাকু কর্মীরাই কিন্তু দলের আসল সম্পদ। যারা দলের দুঃসময়ে ছিলেন। তাঁদের মনের ক্ষোভ দলের উচ্চ নেতৃত্ব বুঝতে পেরেছেন। তাই আপাতত, ঘরওয়াপসিতে লাগাম টানা হল। এভাবেই পঞ্চায়েত নির্বাচনটা দেখে নিতে চাইছে দল। কারণ, মাঝে যে পুরসভা নির্বাচন গেল, তাতেও তো ভালো ফল করেছে তৃণমূল। এমন পরিস্থিতিতে দলের ভেতর আরও ক্ষোভ বাড়ুক, এটা চাইছে না দলীয় নেতৃত্ব।

আরও একটি যুক্তি রয়েছে বলেও দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে। সেটি হল, দলের সংগঠনকে গোছানোর কাচও চলছে তলে তলে। নীরবে সেই কাজটি করছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। একদিকে জেলা সফরে গিয়ে দলনেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরব হচ্ছেন, দলীয় নেতাদের স্বচ্ছতা বজায় রেখে কাজ করার ওপর জোর দিচ্ছেন। প্রয়োজনে সরিয়ে দেওয়ার কথাও জানাচ্ছেন। তেমনই দলের স্বচ্ছ ভাবমূর্তির নেতাদের খুঁজছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। এরপর তাঁদেরই উপযুক্ত পদে বসানো হবে বলেও সূত্রের খবর। তাই প্রকাশ্যে কিন্তু অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় স্পষ্ট জানাচ্ছেন, দলে দ্বিতীয়, তৃতীয় বলে কেউ নেই। একজনই রয়েছেন। তিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর দ্বিতীয় যদি কেউ থাকেন তা হল দলের কর্মীরা। অর্থাৎ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সামনে রেখেই রাজ্যজুড়ে সংগঠনকে অন্যরূপ দেওয়ায় এখন প্রধান লক্ষ্য। যাতে বিরোধীরা কোনওভাবেই না তৃণমূলকে আঘাত হানতে পারে। তাই দলীয় কর্মীদের ক্ষোভ রুখতেই আপাতত ঘরওয়াপসিতে লাগাম বলেই ওয়াকিবহার মহলের অভিমত।

Mailing List