নন্দীগ্রামে দ্বিতীয় ধাক্কা কার বাজি? কে করবে বাজিমাত?

নন্দীগ্রামে দ্বিতীয় ধাক্কা কার বাজি? কে করবে বাজিমাত?
সুমন ঘোষ
প্রথমটা ছিল আবেগ। প্রথমটা ছিল লড়াই।
দ্বিতীয়টা অবশ্যই ধাক্কা। সেটা হতে পারত, নিছকই দুর্ঘটনা। সেক্ষেত্রেও কিন্তু আবেগ থাকত। কিন্তু গানের সুর বলতে গেলে, কথায় কথা বাড়ে, তাই বলছি ইচ্ছে করে, আমার বাজাতে হল….
সিরিয়াস ঘটনা নিয়ে ইয়ার্কি? মনে হতেই পারে। কিন্তু এত প্রশ্নের উত্তর কোথায়? মানুষ কী জানতে চান না? শুনতে চান না? শুধুই রাজনৈতিক নেতাদের কথার ওপর ভর করে চলবেন? কেন? আপানারা নেতা-মন্ত্রী তো তাঁদের কাছে হাতজোড় করে। আজ, তাঁদেরই চোখ রাঙাবেন?
তাই প্রশ্ন অনেক। উত্তর নেই।
প্রথম প্রশ্ন, ঘটনার পরেই মুখ্যমন্ত্রী বিবৃতি দিলেন, তিনি ষড়যন্ত্রের শিকার। ধাক্কাধাক্কিতে পড়ে গিয়েছেন। চার পাঁচজন তাঁকে ধাক্কা মেরে ফেলে দিয়েছেন। যে কথার অর্থ, তিনি ভিড় রাস্তায় হাঁটছিলেন। তাঁকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেওয়া হয়।
সেই মুখ্যমন্ত্রী পরদিন হাসপাতালের শয্যায় কী বললেন? গাড়ির চাকা তাঁর পায়ের ওপর দিয়ে চলে গিয়েছে!
উঠে এলো একটি ছোট্ট লোহার স্তম্ভও। যা দেখিয়ে তৃণমূল নেতারা বললেন, যদি ওই লোহার স্তম্ভ দায়ী হত তাহলে গাড়ির দরজায় তার দাগ থাকত।
তৃণমূল এর মধ্যে বিজেপির গন্ধ পাচ্ছেন। প্রথমে বলা যেতে পারে, যে নন্দীগ্রাম তাঁদের কথা বলেন, সেখানে ষড়যন্ত্র! এটাও আবেগের কথা।
এবার আসা যাক, বাস্তব প্রশ্নে। কোথায় নিরাপত্তা। তৃণমূল নির্বাচন কমিশনের ওপর দায় এড়িয়ে ঝেড়ে ফেলতে চাইছেন। বিরোধীরা এটাকে নাটক বলছেন। আর নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নিয়ম অনুযায়ী মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তা বলয়ে এসবের কোনও সূযোগ নেই। তা সত্ত্বেও হয়েছে। যে মুখ্যমন্ত্রী ওখানে জিতবেন, প্রতিদ্বন্দ্বী শুভেন্দু অধিকারী নাকি ফুৎকারে উড়ে যাবে, সেখানে ষড়যন্ত্র!
মুখ্যমন্ত্রী বলছেন, বুধবার তাঁর প্রচারের সময় পুলিশ সুপার ছিলেন না। তা নিয়েও বিঁধেছে বিজেপি। প্রার্থীর সঙ্গে পুলিশ সুপার থাকার কথা নয়। তিনি অসুস্থ হলেন। ষড়যন্ত্রের কথা বললেন। কলকাতার হাসপাতালে ভর্তি হলেন। জেলায় তাঁরই সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল তৈরি নিয়ে প্রশ্ন তুললেন। পুলিশ ছিল না বলে নিজের রাজ্যের আইন শঙ্খলা নিয়ে প্রশ্ন তুললেন। কারণ, নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, রাজ্যের আইন শৃঙ্খলা রাজ্যকেই দেখতে হবে। তা সত্ত্বেও রাস্তাঘাটে বিক্ষোভ। মানুষের হয়রানি। কমিশনের কাছে তৃণমূলের ডেপুটেশন। এমনকী, দিল্লিতেও যাবেন সাংসদরা। কমিশনের দ্বারস্থ হতে।
কিন্তু নন্দীগ্রামের বিরোধী প্রার্থী। মানে সদ্য মমতার সৈনিক থেকে বিজেপিতে যাওয়া নন্দীগ্রামের বিজেপি প্রার্থী। শুভেন্দু অধিকারী। যিনি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে হারাবেন বলে জিদ নিয়ে লড়ছেন, তিনি একটি শব্দও ব্যয় করেননি। তিনি শুধু খোল বাজিয়েছেন নন্দীগ্রামে।
আর ষড়যন্ত্রের কথা বলে মুখ্যমন্ত্রী কী বিপাকে পড়লেন না? যিনি হাসপাতালে অসুস্থ অবস্থায় ষড়যন্ত্রের কথা তুললেন না। চার-পাঁচজন ধাক্কা দেওয়ার কথা তুললেন না। গাড়িতেই ধাক্কা খেয়ে হয়েছে জানালেন।
মুখ্যমন্ত্রীর আবেগের রাজনীতির কাছে শুভেন্দুর বাস্তবতা কতটা এগিয়ে গেল সে প্রশ্নটা কিন্তু থেকেই গেল।


