মৌসুমী বায়ুর হাত ধরে প্রথম বর্ষা ঢোকে কেরলে, সেই মৌসুমী বায়ুর সৃষ্টি, প্রভাব, রণকৌশল কিভাবে নিয়ন্ত্রণ হয় ?

মৌসুমী বায়ুর হাত ধরে প্রথম বর্ষা ঢোকে কেরলে, সেই মৌসুমী বায়ুর সৃষ্টি, প্রভাব, রণকৌশল  কিভাবে নিয়ন্ত্রণ হয় ?
06 Aug 2021, 11:15 PM

মৌসুমী বায়ুর হাত ধরে প্রথম বর্ষা ঢোকে কেরলে, সেই মৌসুমী বায়ুর সৃষ্টি, প্রভাব, রণকৌশল কিভাবে নিয়ন্ত্রণ হয় ?

 

ডঃ শুভেন্দু ঘোষ



মৌসুমী বায়ু মূলত একটি সাময়িক বায়ু প্রবাহ। মৌসুমী কথাটি উৎপত্তি হয়েছে আরবি শব্দ মসম/মৌসিম থেকে। এছাড়াও মালায়লাম শব্দ মনসিনও এর প্রাথমিক শব্দরূপ বলে বিবেচনা করা হয়। মসম বা মনসিন উভয়েরই অর্থ ঋতু।  আর ঋতুভেদে এই বায়ু প্রবাহিত হওয়ায় একে মৌসুমী বায়ুপ্রবাহ  বলে।

 

ভারতীয় উপমহাদেশের বিস্তীর্ণ অঞ্চলজুড়ে সুনিশ্চিতভাবে প্রতিবছরই একটি নির্দিষ্ট সময়ে মৌসুমী বায়ুর প্রভাব পরিলক্ষিত হয় এবং বছরের প্রায় সিংহভাগই বৃষ্টিপাত মৌসুমি সময়কালে সংঘটিত হয়। তবে এটাও ঠিক যে, ভারতের বিভিন্ন  অঞ্চলে বছরের কোনো না কোনো এক সময়ে বৃষ্টিপাত সংঘটিত হয়। জানুয়ারি- ফেব্রুয়ারিতে উত্তর ভারত জুড়ে যেমন  কিছু পরিমান বৃষ্টি হয়। আবার মার্চ মাসে পশ্চিমবঙ্গ, আসাম ও সংলগ্ন ঝাড়খন্ড রাজ্যে থান্ডারস্টর্ম সহযোগে ভারী বৃষ্টিপাত ঘটে। অন্যদিকে এপ্রিল ও মে মাসে সমগ্র দক্ষিণ ভারত জুড়ে আম্র বৃষ্টি দেখা যায় এবং জুন মাসের মাঝামাঝি থেকে সেপ্টেম্বর মাসের শেষ পর্যন্ত সময়ে সমগ্র ভারতে মৌসুমী বৃষ্টিপাত সংঘটিত হয়। অপরদিকে অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে ভারতের পূর্ব উপকূলে প্রত্যাবর্তনকারী মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে বৃষ্টিপাত ঘটে।

 

নিরক্ষরেখার দক্ষিনে দক্ষিণ-পূর্ব আয়ন বায়ু উত্তর-পশ্চিম দিকে  প্রবাহিত হয়। মূলত ভারতীয় উপমহাদেশ জুড়ে শক্তিশালী নিম্নচাপ বলয় এর আকর্ষনে এই বায়ু  ছুটে আসে এবং নিরক্ষরেখা অতিক্রম করার সময় ফেরেলের সূত্র অনুসরণ করে কিছুটা ঘড়ির কাটার দিকে বেঁকে গিয়ে দক্ষিণ পশ্চিম মৌসুমী বায়ু রূপে উত্তর -পূর্বে প্রবাহিত হতে শুরু করে। এই অঞ্চলে ITCZ বরাবর উত্তর পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব আয়ন বায়ুর  সংযোগ ঘটে। পরবর্তী সময়ে দক্ষিণ -পশ্চিম মৌসুমী বায়ু ভারত মহাসাগরের পৃষ্ঠদেশ বরাবর দীর্ঘ পথ অতিক্রম করে প্রচুর পরিমাণে জলীয়বাষ্প সংগ্রহ করে দুটি শাখা যথাক্রমে আরবসাগরীয় ও বঙ্গোপসাগরীয় শাখা রূপে ভারতীয় মূল ভুখন্ডে প্রবেশ করে।

 


আরবসাগরীয় ও বঙ্গোপসাগরীয় শাখা



আরবসাগরীর শাখাটি পশ্চিমঘাট পর্বতের পশ্চিমে  বাধাপ্রাপ্ত হয়ে পর্বতের প্রতিবাত ঢালে অবস্থিত বিভিন্ন অঞ্চলে প্রচুর পরিমাণে বৃষ্টিপাত সংঘটিত করে। অন্যদিকে পর্বতের পূর্বদিকে অনুবাত ঢালে জলীয়বাষ্প হ্রাস পাওয়ার কারণে বৃষ্টিপাত হয় না বললেই চলে, যার ফলে এই অঞ্চলটি বৃষ্টিচ্ছায় অঞ্চল রূপে পরিচিত। উদাহরণস্বরূপ মুম্বাইয়ে যেখানে বার্ষিক বৃষ্টিপাত ১৮৮ সেন্টিমিটার ,সেখানে পুনেতে বার্ষিক বৃষ্টিপাত মাত্র ৫০ সেন্টিমিটার। অন্যদিকে আরবসাগরীয় শাখার কিছু ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বায়ু স্রোত উত্তরে বিক্ষিপ্ত হয়ে গুজরাটের কছ এবং রাজস্থানের থর মরুভূমির দিকে অগ্রসর হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে এই বায়ু স্রোত গুলির কাশ্মীর পর্যন্ত প্রসারিত হয়ে কোন কোন স্থানে মৃদু বৃষ্টিপাত সংঘটিত করে। রাজস্থানের মরু অঞ্চল বৃষ্টিহীন থাকার অন্যতম কারণ হলো দুটি,  প্রথমত, আরাবল্লী পর্বতটি উত্তর-দক্ষিণ অক্ষ বরাবর অবস্থান করায় ইহা মৌসুমী বায়ুর গতিপথে বাধা সৃষ্টি করতে পারে না, দ্বিতীয়তঃ এছাড়াও পাকিস্তানের বালুচিস্তান প্রদেশ থেকে আগত শুষ্ক মহাদেশীয় বায়ুপুঞ্জ মৌসুমী বায়ুর আদ্রতা শোষণ করে নেওয়ার জন্য বায়ুতে জলীয় বাষ্প কমে যায়।



অন্যদিকে বঙ্গোপসাগরীয় শাখাটির একটি অংশ  শ্রীলংকা,সুমাত্রা ও ইন্দোনেশিয়া উপদ্বীপ বরাবর সক্রিয়ভাবে প্রভাব বিস্তার করে এবং এটি মায়ানমারের আরাকান ও টেনাসেরিম পর্বতে বাধাপ্রাপ্ত হয়ে মায়ানমারের পূর্ব উপকূলে প্রচুর পরিমাণে বৃষ্টিপাত (জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রায় ৪২৫ সেন্টিমিটার) সংঘটিত করে। অপর একটি অংশ  ভারতের উত্তর -পূর্বের খাসি পাহাড়ে বাধাপ্রাপ্ত হয়ে মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জির মৌসিনরামে পৃথিবীর সর্বাধিক বৃষ্টিপাত সংঘটিত করে। অনুবাত ঢালে অবস্থিত শিলং বৃষ্টিচ্ছায়া অঞ্চলরূপে অবস্থান করে। এই শাখাটি ক্রমশ দক্ষিণ-পূর্ব থেকে  উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে হিমালয় পার্বত্য অঞ্চলে বাধাপ্রাপ্ত হয় এবং  গাঙ্গেয় সমভূমি সহ সমগ্র উত্তরের সমভূমি অঞ্চল জুড়ে প্রচুর বৃষ্টিপাত ঘটায়। অপরদিকে মৌসুমী বায়ুর প্রত্যাবর্তন কালে উত্তর পূর্ব মৌসুমী বায়ু রুপে প্রবাহিত হয় এবং স্থলভাগ থেকে  জলীয় বাষ্প সংগ্রহ করে তামিলনাড়ুর করমন্ডল উপকূলে শীতকালে প্রচুর পরিমাণে বৃষ্টিপাত ঘটায়।



কিন্তু এই মৌসুমী বায়ু সম্পর্কে দীর্ঘদিন পর্যন্ত  সুনির্দিষ্ট কোন ধারণা না থাকায় মানুষের মধ্যে একটা বিভ্রান্তি ছিল।  কিন্তু পরবর্তীকালে বিভিন্ন জলবায়ু বিজ্ঞানীদের পর্যবেক্ষণ ও গবেষণার মাধ্যমে মৌসুমী বায়ুর উৎপত্তি সম্পর্কে বেশকিছু বিজ্ঞানভিত্তিক ও গ্রহনযোগ্য তত্ব উঠে এসেছে।


চলতি ধারণা


সাধারণভাবে বলা হয়ে থাকে ভারতের ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণে মৌসুমী বায়ুর উৎপত্তি হয়ে থাকে।কারণ স্বরূপ ভারতের বিস্তীর্ণ স্থলভাগ এর দক্ষিনে রয়েছে ভারত মহাসাগর ও পূর্ব-পশ্চিমে যথাক্রমে বঙ্গোপসাগর ও আরব সাগর। মৌসুমী সময়কালে  উত্তর ও উত্তর পশ্চিম ভারত ও পাকিস্তান এর উপর  শক্তিশালী নিম্নচাপ অবস্থান করায় মহাসাগরীয় অঞ্চল থেকে বায়ু স্থলভাগের দিকে প্রবাহিত হয়, তাই  এই মৌসুমি বায়ুকে সাময়িক বায়ুর বিস্তৃত সংস্করণও বলে। গ্রীষ্মের সময় উত্তর গোলার্ধে কর্কটক্রান্তি রেখা সংলগ্ন অঞ্চল গুলিতে অধিক সূর্যকিরণের কারণে বেশি উত্তপ্ত হয়, অপরদিকে দক্ষিণ গোলার্ধে মকর ক্রান্তি সংলগ্ন অঞ্চল গুলিতে সূর্যের পতনকোণ কম হওয়ায় কম তাপ সংগ্রহীত হয়। ফলস্বরূপ স্থলভাগের নিম্নচাপ এবং জলভাগের উচ্চচাপে সৃষ্টি হয়। উচ্চচাপ অঞ্চল থেকে বায়ু স্থলভাগের নিম্নচাপের অঞ্চলের দিকে  প্রবাহিত হওয়ার সময় নিরক্ষরেখা অতিক্রমন কালে ফেরেল এর সূত্র অনুসারে বায়ুপ্রবাহ উত্তর গোলার্ধে কিছুটা ডান দিকে বেঁকে দক্ষিণ পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর সৃষ্টি করে। প্রবাহের দিক এবং প্রবাহ কাল যত বেশি হয় ততোই মৌসুমী বায়ুতে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়।

 

ফলস্বরূপ অধিক জলীয় বাষ্পপূর্ণ এই মৌসুমী বায়ু উত্তর-পশ্চিম, মধ্য এবং পূর্ব ভারতে প্রচুর পরিমাণে বৃষ্টিপাত ঘটায়।  এই সাধারণ ব্যাখ্যাটি ব্যতিরেকে মৌসুমি বায়ুর উৎপত্তি সম্পর্কে বেশকিছু মতবাদের উল্লেখ করা যেতে পারে।



উৎপত্তি সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ মতবাদসমুহ



জেফ্রিস এর মতে বায়ুমণ্ডলের প্রায়  ২.১  কিলোমিটার উপর দিয়ে  বায়ু যেদিকে প্রবাহিত হয় তার ঠিক বিপরীত দিকে  সমুদ্রপৃষ্ঠ বরাবর বায়ু  প্রবাহিত হয়। তাঁর মতে সমুদ্রপৃষ্ঠের উপরে বায়ু যখন স্থলভাগের দিকে প্রবাহিত হয়, তখন উচ্চস্তরিয় বায়ু  স্থলভাগ থেকে সমুদ্রপৃষ্ঠ অভিমুখে প্রবাহিত হয়  যার ফলে মৌসুমী বায়ু সৃষ্টি হয়। জেফ্রিস পরবর্তী আবহাওয়া বিজ্ঞানীদের মতে এই তথ্য আংশিক সত্য কারণ, উচ্চতা  অনুসারে  বায়ুর চাপ ও উষ্ণতার পার্থক্যের কারণে বায়ুমন্ডলের উচ্চস্তরের ও  নিম্নস্তরের বায়ু প্রবাহের দিক পরিবর্তন ঘটে।



মৌসুমী বায়ুর ব্যাখ্যায় রেডন তত্ত্বটি খুবই উল্লেখযোগ্য, যা আবার তেজস্ক্রিয় বিকিরণ তত্ব হিসেবে পরিচিত। ভূপৃষ্ঠ থেকে ইউরেনিয়াম থোরিয়াম প্রভৃতি তেজস্ক্রিয় পদার্থের বিকিরণ এর মাধ্যমে বায়ুতে রেডন কনার  সমৃদ্ধি ঘটে। আবহাওয়া বিজ্ঞানীরা মৌসুমী সময়কালে কেরালা ও কর্নাটকের উপকূল অঞ্চলের বিভিন্ন স্থানে মৌসুমী বায়ুর নমুনা বিশ্লেষণ করে দেখেছেন যে এই সমস্ত অঞ্চলে বায়ুতে রেডনের মাত্রা বেশি। বৈজ্ঞানিক পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে যে  জলভাগ এর তুলনায় স্থলভাগ থেকে বায়ুমন্ডলে অধিক পরিমাণে রেডন সমৃদ্ধি ঘটে। তাই একথা বলা যেতেই পারে যে মৌসুমী বায়ুতে যেহেতু রেডনের মাত্রা বেশি তাই এই বায়ু স্থলভাগ  থেকে আগত হয়। দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত বিভিন্ন স্থলভাগ থেকে উপদ্বীপীয় ভারতবর্ষের মৌসুমী বায়ুর আগমন ঘটে। তবে ভারতে মৌসুমী বৃষ্টিপাতের জন্য যে বিপুল পরিমাণ জলীয়বাষ্প প্রয়োজন তা দক্ষিণ-পশ্চিম আফ্রিকার স্থলভাগ থেকে ভারতের এই স্বল্প দূরত্বে কার্যত অসম্ভব বলে অনেক আবহাওয়াবিদ মনে করেন।

 

মৌসুমী বায়ুর উদ্ভব ব্যাখ্যায় অন্যতম প্রধান তত্ত্বটি হলো এই জেট বায়ু প্রবাহের তত্ত্ব বা থার্মাল ইঞ্জিন তত্ব। কোটেশ্বরম,  জর্জ, ফন প্রভৃতি আবহাওয়া বিজ্ঞানীরা তিব্বতের উচ্চ মালভূমির তাপীয় প্রভাবকে মৌসুমী বায়ুর উৎপত্তির অন্যতম কারণ হিসেবে ব্যাখ্যা করেছেন। ১৯৭৩ সালে ভারত এবং সোভিয়েত রাশিয়ার আবহাওয়া বিজ্ঞানীদের যৌথ পর্যবেক্ষণে ভারতীয় উপমহাদেশে মৌসুমী বায়ুর আগমনে তিব্বতের উচ্চ মালভূমির ভূমিকাকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। প্রায় ২০০০ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে ৪০০০ মিটার উঁচু এবং এছাড়াও পূর্বে ৬০০ কিলোমিটার এবং পশ্চিমে প্রায় ১০০০ কিলোমিটার প্রশস্ত এই বিরাট তিব্বতের মালভূমিটি অন্যতম প্রাকৃতিক বাধাস্বরূপ এবং এই অঞ্চলের আবহাওয়ার গুরুত্বপূর্ণ নিয়ন্ত্রক বলেই বিজ্ঞানীরা মনে করেন।

 
মায়াং তুন ইন ((Maung Tun Yin) মৌসুমির আগমনকালের (জুন) অনিশ্চয়তার অন্যতম কারণ হিসেবে উপক্রান্তীয় জেট বায়ু প্রবাহের হঠাৎ তিব্বতের মালভূমির দক্ষিণ প্রান্ত থেকে কিছুটা উত্তরমুখী স্থানান্তরণ কে দায়ী করেছেন। একইভাবে অক্টোবর মাসে এই মালভূমিই মৌসুমীর সূদুর দক্ষিনে প্রত্যাবর্তনে মুখ্য ভূমিকা গ্রহণ করে। এইভাবে ইন (Yin) মৌসুমী বায়ুর উৎপত্তিতে স্থলভাগ এবং জলভাগের পরিবর্তনশীল তাপ গ্রহণ জনিত ব্যাখ্যার পরিবর্তে হিমালয় অঞ্চলের গতিময় জলচক্রের প্রভাবের উপর অধিক গুরুত্ব আরোপ করেছেন।



কোটেশ্বরমের (Koteswaram) মতে তিব্বতের মালভূমিতে প্রতীপ ঘূর্ণবাতের উৎপত্তির সঙ্গে  ভারতীয় গ্রীষ্মকালীন মৌসুমী বিস্ফোরণের নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। কিন্তু ফ্রস্ট(Frost) এই মতবাদের বিরোধিতা করে বলেন  ভারতীয় মৌসুমী সৃষ্টিতে মূলত ট্রপোপজের নিম্নসীমাতে সূর্য রশ্মির তাপীয় ফল এবং বায়ুমন্ডলে গতিশীল শীতলীকরণ পদ্ধতির অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রয়েছে। অন্যদিকে জলবায়ু বিজ্ঞানী ফন(Flohn) বাতাসের ঋতুভিত্তিক দিক পরিবর্তন এবং নিয়ত বায়ু প্রবাহের গতি প্রকৃতির ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন। তার মতে বিষুবীয় জেটের কিছুটা উত্তরমুখী স্থানান্তরের ফলে দক্ষিণ পশ্চিম মৌসুমি বায়ু সৃষ্টি হয় এবং পরবর্তীকালে নতুন করে উত্তর-পূর্ব  আয়ন বায়ুর পুনঃস্থাপনের মধ্য দিয়ে শীতকালীন মৌসুমী বায়ুর আগমন ঘটে।



আবার কোনও কোনও আবহাওয়াবিদ ভারতের কেরালা রাজ্যে প্রথম মৌসুমী বৃষ্টিপাতের আগমনের কারণ হিসেবে দক্ষিণ গোলার্ধ থেকে বায়ুপ্রবাহের হঠাৎ ভারতীয় ভূখণ্ড  অভিমুখী প্রসারণকে চিহ্নিত করেছেন। তাদের মতে সোমালী জেট(Somali Jet) এর মাধ্যমে ভারত মহাসাগরের মাদাগাস্কার ও মরিশাস দ্বীপ সংলগ্ন উচ্চ চাপ বলয় থেকে বায়ু প্রবাহ নিরক্ষ রেখা অতিক্রম করে ভারতের পশ্চিম উপকূলে পৌঁছে প্রচুর পরিমাণে বৃষ্টিপাত ঘটায়। অপরদিকে মৌসুমী গবেষণায় সর্বশেষ সংযোজন উপগ্রহ চিত্রের বিশ্লেষণের (MONEX)মাধ্যমে মৌসুমী বায়ুর উদ্ভব ব্যাখ্যা। প্রাথমিকের উপগ্রহের মাধ্যমে সমীক্ষা শুরু হলেও বর্তমানে ভারতীয় উপগ্রহ এর কারণ উদ্ভাবনে কাজ করছে।



মূল্যায়ন

বিভিন্ন মতবাদ গুলি পর্যালোচনা করলে দেখা যায় মৌসুমী বায়ুর উদ্ভব ও প্রভাব বিস্তারে বিভিন্ন নিয়ন্ত্রক গুলির মধ্যে জেট বায়ু অন্যতম এছাড়া ক্রান্তীয় ঘূর্ণবাত ও শীতকালে ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চল থেকে আগত পশ্চিমী ঝঞ্জা মৌসুমী বায়ু কে যথেষ্ট প্রভাবিত করে। অন্যদিকে এলনিনো ও লা নিনার প্রভাবও যথেষ্ট সক্রিয়। ইহা দক্ষিণ -পশ্চিম মৌসুমী বায়ুর স্বাভাবিক  আগমনে বাধার সৃষ্টি করে। ফলে আবহাওয়ার বিপরীত  রূপ পরিলক্ষিত হয়। অপরদিকে অনেক সময় লা নিনার প্রভাবে ভারতে কোন কোন বছর স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি বৃষ্টিপাত হয় এবং বেশি সংখ্যক ঘূর্ণবাতেরও সৃষ্টি হয়, ফলস্বরূপ বন্যা ও ভূমিধসের মতো বিপর্যয় এর পরিমানও বাড়ে। তবে ভারতের জলবায়ুতে মৌসুমী বায়ুর প্রভাব যেমন অনস্বীকার্য তেমনই ভারতীয় কৃষিনির্ভর অর্থনীতি মৌসুমী বায়ুর গতিপ্রকৃতির উপর বহুলাংশে নির্ভরশীল।



লেখক – শুভেন্দু ঘোষ, Researcher, TIEER (Tropical Institute of Earth and Environmental Research)

Mailing List