খেজুর গাছ থেকে দিনে দু’বার রস মেলে, ভোরের রসকে জিরেন এবং বিকালের রসকে ওলা বলে-জঙ্গলমহলের খেজুর রসের ঐতিহ্য-ভবিষ্যৎ ও রস সংগ্রহের চালচিত্র

খেজুর গাছ থেকে দিনে দু’বার রস মেলে, ভোরের রসকে জিরেন এবং বিকালের রসকে ওলা বলে-জঙ্গলমহলের খেজুর রসের ঐতিহ্য-ভবিষ্যৎ ও রস সংগ্রহের চালচিত্র
21 Nov 2022, 10:30 AM

খেজুর গাছ থেকে দিনে দু’বার রস মেলে, ভোরের রসকে জিরেন এবং বিকালের রসকে ওলা বলে-জঙ্গলমহলের খেজুর রসের ঐতিহ্য-ভবিষ্যৎ ও রস সংগ্রহের চালচিত্র

 

ডঃ সুবীর মণ্ডল

 

অনর্গল ডিজেল-পেট্টোলের শ্বাসরোধী কালো ধোঁয়া, নাগরিক জীবনের এই সময়ের উৎকণ্ঠা থেকে বাঁচতে, ফুসফুস ভরে  অক্সিজেন নিয়ে প্রাণশক্তিকে পুনরুজ্জীবিত করতে চাইলে আসতে হবেই এই লালমাটির স্বপ্নপুরী শাল-পিয়ালের সবুজ জঙ্গলমহলে। অপার সৌন্দর্যের লীলাভূমি। প্রকৃতিতে প্রাধান্য পেয়েছে জঙ্গল। সবাই জঙ্গলমহল রূপে চেনে ও জানে। গাঢ় সবুজ অরণ্য দিগন্তে প্রসারিত, নীচেও তার সবুজের সমুদ্র। আর লালমাটির কাঁকুড়ে মায়া মাখানো স্বপ্নময় পথ। এই দীর্ঘ সবুজ জঙ্গল ঘিরেই এখানকার প্রান্তভূমির সাধারণ মানুষের জীবন-যাপনের ছন্দ।

দক্ষিণ বাঁকুড়ার জঙ্গলমহলের সেই চির চেনা কার্তিক মাসের মনোমুগ্ধকর দৃশ্য। মুক্ত প্রকৃতির হাতছানি অস্বীকার করতে পারলাম না। মায়ামাখা স্বপ্নের রাস্তা ধরে ধরে এগোতে লাগলাম, শুধু মুগ্ধতার আবেশ। চোখ জুড়ানো মাঠ ভরা সবুজ-সোনালি ফসল। সকালের রবি-কুয়াশার রঙমিলান্তির লুকোচুরি খেলা তার সাথে কৃষক-কৃষানিদের ফসলের হাতছানি, সব মিলেমিশে এক অনিন্দ্যসুন্দর দৃশ্য নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে রূপসী জঙ্গলমহল। হঠাৎই জঙ্গলমহল পরিক্রমায় বেরিয়ে পড়েছিলাম। বেশ কিছুক্ষণ কাটালাম মাটির মানুষের সঙ্গেই। আলাপচারিতায় প্রান্তভূমির প্রান্তিক মানুষ গুলোর জীবনের সুখ- দুঃখের কথা জানলাম। খাতড়া শহরের  আশেপাশেই খেজুর গুড়ের মহল দেখলাম। কপির গ্রাম ডাকাই ঘুরলাম, মুগ্ধ হলাম নির্মল সবুজের সমারোহ দেখে। জঙ্গলমহলের  মানুষ করোনা পরবর্তী সুস্থভাবে বাঁচার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন, সীমাহীন দুঃখ জয় করেছেন , হৃদয় জুড়ে চাপ চাপ কষ্ট থাকলেও মুখে হৃদয় ওপড়ানো নির্মল হাসি। ধীরে ধীরে স্বাভাবিক জীবনের ছন্দ খোঁজার চেষ্টা করছে।

এ-এক অন্যভুবন--- শীত যত তীব্র হবে জঙ্গলমহলের খেজুর রসও তত মিষ্টি হবে। তার স্বাদও যাবে বেড়ে। কুয়াশা-ঢাকা শীতের সকালে টাটকা এক গ্লাস জঙ্গলমহলের খেজুরের রসের তুলনা হয় না। এই মধুবৃক্ষ থেকে সংগৃহীত রস কাঁচা ও জ্বাল দিয়ে খেতে যেমন সুস্বাদু, তেমনি এ- রস দিয়ে তৈরি গুড় ও পাটালিরও তুলনা নেই। শীতের জঙ্গলমহলের পিঠা-পায়েসের একটি উপাদেয় উপাদান খেজুরের রস। এই রসে তৈরি দানা, ঝোলা ও নলেন গুড়ের স্বাদ ও ঘ্রাণই আলাদা। সাধারণত জঙ্গলমহলের বিভিন্ন জনপদে বছরে ৪ মাস খেজুরগাছ থেকে মিষ্টি রস সংগ্রহ করা হয়, যা দিয়ে গুড় তৈরি হয়। এ রস অত্যন্ত সুস্বাদু ও মানবদেহের উপকারিতার কারণে যুগ যুগ ধরে মানুষের কাছে জনপ্রিয় হয়ে আছে। এখনও শীতে শহর থেকে অনেক মানুষ ছুটে যান জঙ্গলমহলের গ্রামে, খেজুর রস খেতে।

এ বছর  পুজোর  সময় থেকেই (আশ্বিন মাস) থেকে সাধারণত রস সংগ্রহের কাজ শুরু হয়েছিল। তবে পৌষ ও মাঘ মাসে সবচেয়ে বেশি রস পাওয়া যায়, কারণ জঙ্গলমহল জুড়ে দুই মাসে শীতের প্রকোপ থাকে সবচেয়ে বেশি। আবহাওয়া যত ঠান্ডা থাকে রসও তত বেশি পাওয়া যায়। ধীরে ধীরে তাপমাত্রা বাড়তে থাকে আর রসও কমতে থাকে।

‘খেজুর গাছে হাঁড়ি বাঁধো মন’—ভবা পাগলার এই বিখ্যাত গানের জনপ্রিয়তা স্তিমিত হয়ে গেলেও শীত এলেই খেজুর গাছে হাঁড়ি বাঁধা এখনো চলে রূপসী বাংলার প্রতিটা জেলায়। বিশেষ করে উত্তর চব্বিশ পরগনা, দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা, হাওড়া, হুগলির কিছুটা আর জঙ্গলমহলের শাল-পিয়াল-মহুয়ার মাঝে লুকিয়ে থাকা খেজুর গাছ গুলোতে। রস সংগ্রহ করে প্রস্তুত করা হয় নলেন গুড়। রস খেজুর গাছের, কিন্তু গুড়ের নাম নলেন কেন? এই শব্দের সাথে দ্রাবিড় সভ্যতার যোগ থাকার কারণ সুস্পষ্ট। কারণ, দ্রাবিড় অভিধানভুক্ত ‘ণরকু’ শব্দের অর্থ কাটা বা ছেদন করা। জঙ্গলমহলের আদিবাসী মানুষজনদের মিতান নাপিতের কাছে নরুন দিয়ে নক কাটানোর প্রচলন খুবই প্রচলিত। খেজুর রস সংগ্রহ করার জন্য শিউলিরা প্রথমে দা দিয়ে খেজুর গাছের কিছুটা চেঁছে দেয়, তারপর নরুন দিয়ে ফুটো করে সেখান থেকে চুঁইয়ে চুঁইয়ে পড়া রস একটা বাঁশের ছিল বা নল লাগিয়ে খেজুর গাছের গায়ে ঝোলানো হাঁড়িতে বা ভাঁড়ে সংগ্রহ করে। নল দিয়ে খেজুরের রস সংগ্রহ করা থেকে নলেন নামের উদ্ভব হয়েছে বলে অনেকে মনে করেন।

একটা খেজুর গাছ থেকে দিনে দু’বার রস মেলে। ভোরের রসকে জিরেন এবং বিকালের রসকে ওলা বলে। প্রত্যেক দিন রস সংগ্রহ করার পর প্রায় পাঁচ ঘন্টা ধরে আগুনে ফোটাতে হয় নলেন গুড় তৈরী করার জন্য। পৌষ মাসে পুরোদমে রস মেলার পর মাঘ থেকে রস কমতে শুরু করে। কারণ ঠান্ডা কম হওয়ার সাথে সাথে রসের ঘনত্ব বাড়তে থাকে। তবে খেজুর গাছ কাটার পর প্রথম দিকের রসের যে গুড় হয় তার গুনগত মান ভাল হয়। গাছের সামনে দাঁড়ালে মনোমুগ্ধকর গন্ধও মেলে সেসময়। তাই শীতের প্রাক্কালেই গুড় তৈরির কারিগররা গ্রামে ঘুরে ঘুরে খেজুর গাছের মালিকের কাছ থেকে গাছ ইজারা নিতে শুরু করে দেয়।

বিশেষ স্বাদ ও গন্ধের কারণে বাঁকুড়ার জঙ্গলমহলের নলেন-গুড়ের অনেক চাহিদা রয়েছে। শীতের মরসুমে এরকম প্রায় আশি হাজার শিউলি পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, ঝাড়গ্রাম, মেদিনীপুরের গ্রামের খেজুর রস থেকে উৎপন্ন নলেন গুড়ের পসরা সাজিয়ে জীবন জীবিকা নির্বাহ করে। ইন্দপুর-তালডাংরা ব্লকের সীমান্তে শিবডাঙ্গা-যুগীবাইদ এলাকায় বা মানবাজার থেকে মুকুটমণিপুর পিকনিক করতে যাওয়ার রাস্তায় অনেকের চোখেই নিশ্চয় ধরা পড়েছে খেজুর গাছে টাঙানো হাঁড়ি। বাঁকুড়ার দক্ষিণাবাদ খাতড়া দহলা, জামদা, সুপুর, মুকুটমনিপুর, রানীবাঁধের বিভিন্ন জনপদ, বারিকুল, ঝিলিমিলি, গোড়াবাড়ি, সারেঙ্গা, রাইপুর, তালডাংরা, কোতুলপুর, জয়পুর সহ একাধিক গ্রামে, জয়পুর, ইন্দপুর, রাইপুর, কোতুলপুর, সোনামুখি, মেজ়িয়া ও বড়জোড়া সহ বিভিন্ন ব্লক এলাকার হাজার হাজার মানুষ এই পেশায় যুক্ত। ওরা শিউলি, স্বাদে গন্ধে ভরপুর বিখ্যাত নলেনগুড় তৈরির অখ্যাত জাদুকর। জয়নগরের মোয়ার সুখ্যাতির পেছনেও রয়েছে জঙ্গলমহলের নলেন গুড়ের বিশেষ অবদান৷

খাতড়া -মুকুটমনিপুর রাস্তার ধারে খড়িডুংরিতে গুড়ের ভিয়েন বসিয়েছেন সিমলাপালের করিম চাচা। তিনি জানান, এই এলাকার গুড় স্বাদে, গন্ধে অতুলনীয় হলেও বিগত কয়েক বছরের বাজার ভাল নয়। একই অভিজ্ঞতা খাতড়ার  জামদার গ্রামের ফুটবল মাঠের গুড়ের ভিয়েনের মালিক ফরিদ ভাইয়ের। গোড়াবাড়ির আমির আলির অভিজ্ঞতা, পৌষ পার্বণ ছাড়া বছরের অন্য সময়  বাঁকুড়ার---পুরুলিয়ার বাজারে নলেন গুড়ের তেমন চাহিদা নেই। কাশীপুরের খইরুল চাচা জানান, তাঁরা কয়েকজন মিলে প্রতিদিন প্রায় এক কুইন্টাল গুড় তৈরি করছেন। কিন্তু খাতড়া শহরে ভাল বাজার পাচ্ছেন না বলে গাড়িতে গুড় নিয়ে তাঁদের বাঁকুড়া- গড়বেতা-- আসানসোলের বাজারে যেতে হচ্ছে। আবার জঙ্গলমহলে নলেন গুড়ের ইতিহাসের জড়িয়ে আছে এক বিচিত্র পরিযায়ী জীবন। যেমন উত্তরের শীতের দেশগুলি থেকে পরিযায়ী পাখিরা ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে উড়ে আসে আর গোটা শীতকাল তারা এখানে কাটিয়ে আবার ফিরে যায় তাদের শীতের দেশে, ঠিক এক রকমভাবে হুগলি,বর্ধমানের গুড় প্রস্তুতকারী বিভিন্ন মানুষ শীত পড়তেই প্রতিবার ঘাঁটি গাড়েন জঙ্গলমহলের বিভিন্ন জনপদে । আফসার শেখ, কাদের মোল্লা, গফুর আলি-রা অক্টোবর মাসের শেষের দিকে জঙ্গলমহলের বিভিন্ন গ্রামে আসেন আর মার্চের শুরুতে আবার ফিরে যান। নভেম্বর মাসে এসে প্রথমেই খেজুরগাছ সমৃদ্ধ কোনও ডাঙা জায়গাকে তাঁরা বেছে নেন, বিশেষত পুকুরপারের পাশে কোনও ডাঙাকে। তারপর নিদিষ্ট জমির উপর খেজুর গাছের মালিকানা অনুযায়ী, সেই সব খেজুর গাছের মালিকদের কাছ থেকে আফসার, গোফুররা ইজারা নেন এবং ইজারা অনুযায়ী নিদিষ্ট অনুপাতে গুড় দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়।

 

কীভাবে তৈরি হয় খেজুর গুড়? সন্ধ্যার ঠিক আগ দিয়ে গাছে ‘ছে’ দিয়ে ভাঁড় বেঁধে দেওয়া হয় এবং ভোরবেলা গাছ থেকে ভাঁড় নামিয়ে এনে গুড় জ্বাল দেওয়া হয়। কয়েক ঘন্টা ওই রস জ্বাল না দিয়ে ফেলে রাখলে খেজুরের রস গেঁজে যেতে থাকে। তৈরি হয়ে যায় নেশার রস ‘তাড়ি’। দিনের বেলা খেজুর গাছের থেকে যে রস বেরোয়, তাকে বলে ‘ঝারা-রস’। এই রস থেকে তৈরি গুড় আদৌ সুগন্ধি হয় না।

 

খাতড়া শহরের কাছে জামদার গুড়চাচা আর বিষ্ণুপুরের কাছে পোড়ামাটি শিল্পের আঁতুরঘর পাঁচমুড়া গ্রামের গুড়চাচা একটু অন্যরকমের। বিষ্ণুপুর সাবড়াকোন রাস্তায় গুড়চাচার গুড়মহল। বেশ কয়েকবছর ধরে শীতের শুরুতেই শীতের সকালে ভাটির আগুনে জাল দিতে দিতে চাচা বলতে থাকে সারাবছরের কত গল্প, কথা। মাঝে মাঝে আসে খরিদ্দার, হয় সওদা। আশেপাশের খুদে খরিদ্দারদের জন্যে অবশ্য গুড় একদম বিনামূল্যে। কিন্তু কেন? গুড়চাচার অবশ্য অন্য ব্যাখ্যা—‘বাবু পয়সা তো জীবনে আসবে যাবে, ওরা পয়সা কোথায় পাবে? আগে যখন মাটির হাঁড়ি খেজুরগাছে ঝোলানো হতো তখন আমরাও ছোটবেলায় গুলতি ছুঁড়ে অন্যের হাঁড়ি ফাটিয়ে খেজুররস খেয়ে চম্পট দিতাম। এখন তো বাবু যুগ বদলেছে, মাটির হাঁড়ি হয়েছে প্লাস্টিকের, তা বলে এই খুদেগুলোর জীভ শুকনো থাকলে যে উপরওয়ালাও ক্ষমা করবে নি বাবু; তাই ওদের ফেরাতে পারিনা’।

 

শীতের সকাল আর খেজুরের রস দু’য়ে মিলে ছিল একাকার। গ্রাম-গঞ্জের রাস্তার পাশে ছিল সারি সারি খেজুর গাছ। শেষ বিকালে গাছে হাঁড়ি বসাতো গাছিরা। সকাল বেলা হাড়ি হাড়ি খেজুর রস নিয়ে বাড়ি বাড়ি হাকডাক দিতেন। ঘরে ঘরে চলতো শীতের পিঠাপুলির উৎসব। এক দশক আগেও এমন চিত্র চোখে পড়তো জঙ্গলমহলের বিভিন্ন জেলাজুড়ে।

খেজুর রস সংগ্রহ করে জীবিকা নির্বাহ করতে শতশত গাছি। এখন আর এমন দৃশ্যের দেখা মিলে না। হারিয়ে যাচ্ছে খেজুর রসের ঐতিহ্য। খেজুর রসের ঐতিহ্য হারিয়ে যাওয়ার প্রধান কারন হলো গ্রামের রাস্তাগুলো সংষ্কার এবং নতুন করে খেজুর গাছ রোপনে অনীহা। নুতন প্রজন্মের কৃষকদের খেজুর গাছের প্রতি অনীহা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। নতুন করে খেজুর গাছ  লাগানো চেষ্টার অভাব।  হয়ত একদিন জঙ্গলমহলের সুস্বাদু নলেন গুড়ের অবলুপ্তি ঘটবে।

 

মাটির হাঁড়িতে করেই খেজুরের রস সংগ্রহের চল আছে জঙ্গলমহলের সব এলাকায়, যা প্রকৃত অর্থেই স্বাস্থ্যসম্মত।  চিকিৎসকরা বলছেন, মাটির হাঁড়িতে রস সংগ্রহ ছিল স্বাস্থ্যসম্মত।আর সে তুলনায় প্লাস্টিকের বোতল একেবারেই স্বাস্থ্যসম্মত নয়। অপরদিকে রস আহরণকারীরা বলছেন, মাটির হাঁড়ির চাইতে প্লাস্টিকের বোতলে সুবিধা বেশি। সম্প্রতি দক্ষিণ বাঁকুড়ার কংসাবতী সেচ প্রকল্পের  বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ক্যানেল ও রাস্তার দুপাশের খেজুর গাছ থেকে চলছে রস আহরণ। গাছে গাছে ঝুলছে প্লাস্টিকের বোতল। খেজুর রস সংগ্রহে ব্যস্ত সময় পার করছেন গাছিরা।শীত আর খেজুর রস। এ দুটি বিষয় যেন অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। খেজুর রস আহরণের চিত্র যেন শীতেরই প্রতিনিধিত্ব করে। 

মুকুটমনিপুর এলাকার বাসিন্দা শেখ আবদুল হান্নান। পেশায় খেজুররস সংগ্রহকারি। কথা হয় তার সঙ্গে। তিনি বলেন, মাটির হাঁড়িতে খেজুর গাছ থেকে রাতভর রস পড়তে থাকতো। সেই রস ভোরে সূর্য উঠার আগে গাছিরা এক জায়গায় জড়ো করতেন। কিন্তু এখন মাটির হাঁড়ির পরিবর্তে প্লাস্টিকের বোতল ব্যবহার করেন গাছিরা। এটা আমার কাছে স্বাস্থ্যসম্মত মনে হয় না।

জেলার সিমলাপাল থানার পুকুরিয়া এলাকার আজগর আলী বলেন, প্লাস্টিকের বোতলের অনেক সুবিধা আছে। আবার অসুবিধাও আছে। মাটির হাঁড়িতে রস সংগ্রহ করলে সে রস থাকতো একদম টাটকা। আর বোতলে বেশি সময় রস রাখলে গন্ধ হয়ে যায়।

জঙ্গলমহলের বিভিন্ন এলাকায় খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করা হচ্ছে। বিশেষ করে দেদুয়া ব্রিজ থেকে মুকুটমণিপুরের দিকে বেঁকিয়া-রুপারহিড়  এ এলাকায় কোথাও আর মাটির হাঁড়ির দেখা মিলছে না। গাছে গাছে ঝুলছে প্লাস্টিকের কলসি। প্লাস্টিকের বোতল ও হাঁড়ি ব্যবহার স্বাস্থ্যসম্মত নয়। এই  হল জঙ্গলমহলের খেজুর রস সংগ্রহের চালচিত্র। এতদিনের লালিত পালিত খেজুর রস সংগ্রহের ঐতিহ্য আজ অবলুপ্তির পথে?? আগামী প্রজন্মের মানুষ ভাল মানের  নলেন গুড়ের স্বাদ পাবে?? এই প্রশ্নের জবাব দেবে সময়।

লেখক: শিক্ষক, খাতড়া হাইস্কুল, বাঁকুড়া।

Mailing List