‘বর্ণপরিচয়’- দিয়ে রবীন্দ্রনাথেরও ভাষা শিক্ষার গুরু বিদ্যাসাগর, রবীন্দ্রনাথের চোখে বিদ্যাসাগর ঠিক কেমন ছিলেন, জন্মদিনে ফিরে দেখা

‘বর্ণপরিচয়’- দিয়ে রবীন্দ্রনাথেরও ভাষা শিক্ষার গুরু বিদ্যাসাগর, রবীন্দ্রনাথের চোখে বিদ্যাসাগর ঠিক কেমন ছিলেন, জন্মদিনে ফিরে দেখা
26 Sep 2022, 09:15 AM

বর্ণপরিচয়’- দিয়ে রবীন্দ্রনাথেরও ভাষা শিক্ষার গুরু বিদ্যাসাগর, রবীন্দ্রনাথের চোখে বিদ্যাসাগর ঠিক কেমন ছিলেন, জন্মদিনে ফিরে দেখা

 

ড. বিবেকানন্দ চক্রবর্তী

 

 আজ ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ২০৩ তম জন্মদিন। বিদ্যাসাগর, রবীন্দ্রনাথের চেয়ে ৪১ বছরের বড় ছিলেন। বিদ্যাসাগর ‘বর্ণপরিচয়’- দিয়ে রবীন্দ্রনাথের ভাষা শিক্ষার শুরু। অথচ রবীন্দ্রনাথ বলছেনঃ ‘বঙ্গসাহিত্যে আমার কৃতিত্ব দেশের লোক যদি স্বীকার করে থাকেন, তবে আমি যেন স্বীকার করি, একদা তার দ্বার উদ্ঘাটন করেছেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর’।

বিদ্যাসাগর (২৬ সেপ্টেম্বর, ১৮২০) রবীন্দ্রনাথের (৭ মে, ১৮৬১) চেয়ে ৪১ বছরের বড়। ১৮৬১ সালে রবীন্দ্রনাথ যখন জন্মগ্রহণ করেন, বিদ্যাসাগরের খ্যাতির আলোয় আলোকিত বাংলা। ১৮৫৫ সালের ১৩ এপ্রিল প্রকাশিত হয়েছে বিদ্যাসাগর রচিত ‘বর্ণপরিচয়’, প্রথমখন্ড, আর ঐবছর ১৪ জুন প্রকাশিত হয়েছে ‘বর্ণপরিচয়’, দ্বিতীয়খন্ড। রবীন্দ্রনাথের বয়স যখন তিন বছর চার মাস তখন বিদ্যাসাগর রচিত ‘বর্ণপরিচয়’ তাঁর পাঠ্য। ঠাকুরবাড়ির পুজোর দালানে বসতো ঠাকুরবাড়ির পাঠশালা।  সেই পাঠশালাতে রবীন্দ্রনাথের পড়াশোনা শুরু। তাঁর গৃহাশ্রিত গুরুর নাম ছিল মাধবচন্দ্র মুখোপাধ্যায়। এই গুরুর কাছ থেকেই ‘বর্ণপরিচয়’-এর পাঠ রবীন্দ্রনাথের। রবীন্দ্রনাথ তাঁর ‘জীবনস্মৃতি’-তে ‘আমরা তিনটি বালক একসঙ্গে মানুষ হইতে ছিলাম’ বলে যাঁদের কথা বলেছেন তাঁরা হলেন রবীন্দ্রনাথ, অগ্রজ সোমেন্দ্রনাথ (১৮৫৯-১৯২২) ও ভাগিনেয় সত্যপ্রসাদ গঙ্গোপাধ্যায় (১৮৫৯-১৯৭০)। বিশ্বকবি, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর-কে ‘আদিকবি’ উল্লেখ করে জীবনস্মৃতিতে লিখেছেনঃ “কেবল মনে পড়ে, ‘জল পড়ে পাতা নড়ে’। তখন ‘কর খল’ প্রভৃতি বানানের তুফান কাটাইয়া সবেমাত্র কূলে পাইয়াছি। সেদিন পড়িতেছি ‘জল পড়ে পাতা নড়ে’। আমার জীবনের এইটাই আদিকবির প্রথম কবিতা”।

বর্ণপরিচয় প্রথম ভাগে আছে ‘জল পড়িতেছে, পাতা নড়িতেছে’। রবীন্দ্র বিশেষজ্ঞ প্রশান্ত পাল লিখেছেন, “রবীন্দ্রনাথ ‘জল পড়িতেছে, পাতা নড়িতেছে’-এটাই পড়েছিলেন, কিন্তু ভাবি মহাকবির ‘সমস্ত চৈতন্য গদ্যের সাদাসিধে রূপের অন্তরে নিহিত ছন্দটুকু আবিষ্কার ক’রে গদ্যের ঘটমান বর্তমানকে কবিতার নিত্য বর্তমানে পরিণত করেছে”। শুধু বর্ণপরিচয় নয়, বিদ্যাসাগর রচিত সীতার বনবাস (১৮৬০), শকুন্তলা (১৮৫৪), বেতাল পঞ্চবিংশতি (১৮৪৭), বোধোদয় (১৮৫১) এইসব বই এর মধ্য দিয়ে বিদ্যাসাগরকে বালককালে পাশে পেয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ, তাঁর প্রভাব ছিল রবীন্দ্রনাথের জীবনে, অপরিহার্যভাবে। অনেকে মনে করেন রবীন্দ্রনাথ ‘প্রথম আদি তব শক্তি— / আদি পরমোজ্জ্বল জ্যোতি তোমারি হে / গগনে গগনে।।...’ এই গানটি বিদ্যাসাগরকে স্মরণ করে লেখেন। যদিও ১৯১১ সালে (চৈত্র ১৩১৭ বঙ্গাব্দ) প্রকাশিত এই গান ১৩১৭ বঙ্গাব্দের ১১ মাঘ কলকাতায় ৮১তম মাঘোৎসব উপলক্ষ্যে আদি ব্রাহ্মসমাজে সায়ংকালে গীত হয়। এটি রবীন্দ্রনাথ রচিত ব্রহ্মসংগীত।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পিতা মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের উদ্যোগে  ব্রাহ্মধর্মের মুখপত্র হিসেবে ‘তত্ত্ববোধিনী’ পত্রিকা প্রকাশিত হয় ১৪৪৩ খ্রিষ্টাব্দের ১৬ আগস্ট।  ‘তত্ত্ববোধিনী’ পত্রিকার প্রথম সম্পাদক ছিলেন অক্ষয়কুমার দত্ত (১৮২০-১৮৬৬)। ‘তত্ত্ববোধিনী’ পত্রিকা প্রকাশের জন্য প্রবন্ধগুলি নির্বাচিত হত যাঁদের দ্বারা, তাঁদের মধ্যে বিদ্যাসাগর অন্যতম। এই ‘পেপার কমিটি’তে বিদ্যাসাগর ছাড়াও ছিলেন রাজেন্দ্রলাল মিত্র (১৮২২–১৮৯১), দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর(১৮১৭-১৯০৫), রাজনারায়ণ বসু (১৮২৬-১৮৯৯), আনন্দকৃষ্ণ বসু (১৮২২-১৮৯৭), শ্রীধর ন্যায়রত্ন, আনন্দচন্দ্র বেদান্তবাগীশ (১৮১৯-১৮৭৫), প্রসন্নকুমার সর্বাধিকারী (১৮২৫-১৮৮৬), রাধাপ্রসাদ রায়, শ্যামাচরণ মুখোপাধ্যায়, অক্ষয়কুমার দত্ত (১৮২০-১৮৬৬) প্রমুখ ব্যক্তিবর্গ। অক্ষয়কুমার দত্তের পর ‘তত্ত্ববোধিনী’ পত্রিকার সম্পাদনার দায়িত্ব পালন করেছেন নবীনকৃষ্ণ বন্দ্যোপাধ্যায় (১৮২৪–১৮৯৬), সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত (১৮৮২-১৯২২), অযোধ্যানাথ পাকড়াশী (?-১৮৭৩), সীতানাথ ঘোষ, হেমচন্দ্র বিদ্যারত্ন (১৮৩১-১৯০৬), দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৮৪০-১৯২৬), সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৮৪২-১৯২৩), রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৮৬১-১৯৪১)।

বিদ্যাসাগরের সঙ্গে প্রথম সাক্ষাৎ হয় রবীন্দ্রনাথের, তাঁর গৃহশিক্ষক রামসর্বস্ব পন্ডিতমশায়ের মাধ্যমে। ‘জীবনস্মৃতি’তে রবীন্দ্রনাথ তা উল্লেখ করেছেনঃ “রামসর্বস্ব পণ্ডিতমহাশয়ের প্রতি আমাদের সংস্কৃত অধ্যাপনার ভার ছিল। অনিচ্ছুক ছাত্রকে ব্যাকরণ শিখাইবার দুঃসাধ্য চেষ্টায় ভঙ্গ দিয়া তিনি আমাকে অর্থ করিয়া করিয়া শকুন্তলা পড়াইতেন। তিনি একদিন আমার ম্যাক্‌বেথের তর্জমা বিদ্যাসাগর মহাশয়কে শুনাইতে হইবে বলিয়া আমাকে তাঁহার কাছে লইয়া গেলেন। তখন তাঁহার কাছে রাজকৃষ্ণ মুখোপাধ্যায় বসিয়া ছিলেন। পুস্তকে-ভরা তাঁহার ঘরের মধ্যে ঢুকিতে আমার বুক দুরুদুরু করিতেছিল; তাঁহার মুখচ্ছবি দেখিয়া যে আমার সাহস বৃদ্ধি হইল তাহা বলিতে পারি না। ইহার পূর্বে বিদ্যাসাগরের মতো শ্রোতা আমি তো পাই নাই; অতএব, এখান হইতে খ্যাতি পাইবার লোভটা মনের মধ্যে খুব প্রবল ছিল। বোধ করি কিছু উৎসাহ সঞ্চয় করিয়া ফিরিয়াছিলাম।”

বিদ্যাসাগরের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের আর একবার সাক্ষাৎ হয় ১৮৮২ সালের জুন-জুলাই (১২৮৯, শ্রাবণ) এই সময়ের মধ্যে, কোন একদিন। রবীন্দ্র অগ্রজ জ্যোতিরিন্দ্রনাথ (১৮৪৯-১৯২৫) বাংলার সাহিত্যিকদের একত্রিত করে ‘কলিকাতা সারস্বত সম্মিলন’ নামে একটি সংগঠন করার উদ্দেশ্যে রবীন্দ্রনাথকে সঙ্গে নিয়ে বিদ্যাসাগরের সাথে দেখা করেন। রাজা রাজেন্দ্রলাল মিত্র (১৮২২-৯১) এই সংগঠনের সভাপতি নির্বাচিত হোন। বিদ্যাসাগরকে ঐ সংগঠনে যুক্ত হওয়ার আবেদন জানালে বিদ্যাসাগরের প্রতিক্রিয়া কি ছিল সেই সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথ লিখেছেনঃ “যখন বিদ্যাসাগর মহাশয়কে এই সভায় আহ্বান করিবার জন্য গেলাম, তখন সভার উদ্দেশ্য ও সভ্যদের নাম শুনিয়া তিনি বললেন, ‘আমি পরামর্শ দিতেছি, আমাদের মত লোককে পরিত্যাগ করো—‘হোমরাচোমরা’-দের লইয়া কোনো কাজ হইবে না, কাহারও সঙ্গে কাহারও মতে মিলিবে না...।”

বিদ্যাসাগরের আশঙ্কা সত্য হয়েছিল। বেশ কিছুদিন পর এই সংগঠন বন্ধ হয়ে যায়।

বাংলা ভাষায় বিদ্যাসাগরের অবদান সম্পর্কে বলতে গিয়ে রবীন্দ্রনাথ বলছেন, ‘তাঁহার প্রধান কীর্তি বঙ্গভাষা’। এই প্রসঙ্গে  ‘জীবনস্মৃতি’-তে রবীন্দ্রনাথ লিখেছেনঃ “বিদ্যাসাগর বাংলাভাষার প্রথম যথার্থ শিল্পী ছিলেন। তৎপূর্বে বাংলায় গদ্যসাহিত্যের সূচনা হইয়াছিল, কিন্তু তিনিই সর্বপ্রথমে বাংলা গদ্যে কলানৈপুণ্যের অবতারণা করেন। ভাষা যে কেবল ভাবের একটা আধারমাত্র নহে, তাহার মধ্যে যেন তেন প্রকারেণ কতকগুলা বক্তব্য বিষয় পুরিয়া দিলেই যে কর্তব্যসমাপন হয় না, বিদ্যাসাগর দৃষ্টান্তদ্বারা তাহাই প্রমাণ করিয়াছিলেন। তিনি দেখাইয়াছিলেন যে, যতটুকু বক্তব্য তাহা সরল করিয়া, সুন্দর করিয়া এবং সুশৃঙ্খল করিয়া ব্যক্ত করিতে হইবে।”

উনিশ শতকের প্রথমার্ধ থেকেই বাংলায় নবজাগরণের সূচনা হয়েছিল। একটি আধুনিক ভারতবর্ষ গড়ার প্রত্যয়ী ভাবনা থেকে নবজাগরণের সূচনা। মনে করা হয়, রাজা রামমোহন রায় (১৭৭৪-১৮৩৩) থেকে এই পর্যায়ের সূচনা ও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরে (১৮৬১-১৯৪১) তার পূর্ণতা। ব্রিটিশ শাসিত ভারতের এই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর যে পথের সন্ধান দিয়ে গেছেন, তাঁর জন্মের ২০০ বছর পরেও তা সমানভাবে প্রাসঙ্গিক। বিদ্যাসাগরের জন্মের আগে ও পরে আরও অনেকে বাংলার নবজাগরণে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছেন। শিক্ষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি ক্ষেত্রগুলিতে আধুনিকতার আলো ফেলেছিলেনঃ দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৮১৭-১৯০৫), শিবনাথ শাস্ত্রী (১৮৪৭-১৯১৯), ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত (১৮১২-১৮৫৯), মধুসূদন দত্ত (১৮২৪–১৮৭৩), মদনমোহন তর্কালঙ্কার (১৮১৭–১৮৫৮), অক্ষয়কুমার দত্ত (১৮২০-১৮৬৬), বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (১৮৩৮-১৮৯৪), প্যারীচরণ সরকার (১৮২৩–১৮৭৫), রাজেন্দ্রলাল মিত্র (১৮২২–১৮৯১), রামকৃষ্ণ পরমহংস দেব (১৮৩৬–১৮৮৬), মহেন্দ্রলাল সরকার (১৮৩৩-১৯০৪), বিজয়কৃষ্ণ গোস্বামী (১৮৪১-১৮৯৯), স্বামী বিবেকানন্দ (১৮৬৩-১৯০২), ঋষি অরবিন্দ (১৮৭২-১৯৫০), রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৮৬১-১৯৪১) প্রমুখ ব্যক্তিবর্গ।

এঁদের সবাই নিজ নিজ ক্ষেত্রে বিবিধ সামাজিক কর্মকান্ডের সাথে যুক্ত ছিলেন। আর সেই কারণে বিদ্যাসাগরের সঙ্গে এঁদের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। এই সম্পর্কের রসায়নে বহুরৈখিক তাৎপর্য রয়েছে। সমকালের প্রেক্ষাপটে বিদ্যাসাগরের অসামান্য চরিত্র-চিত্রন করতে গিয়ে রবীন্দ্রনাথ লিখেছেনঃ “বিদ্যাসাগরের চরিত্রে যাহা সর্বপ্রধান গুণ, যে গুণে তিনি পল্লীআচারের ক্ষুদ্রতা, বাঙালিজীবনের জড়ত্ব সবলে ভেদ করিয়া একমাত্র নিজের গতিবেগ প্রাবল্যে কঠিন প্রতিকূলতার বক্ষ বিদীর্ণ করিয়া হিন্দুত্বের দিকে নহে, সাম্প্রদায়িকতার দিকে নহে—করুণার অশ্রুজলপূর্ণ উন্মুক্ত অপার মনুষ্যত্বের অভিমুখে আপনার দৃঢ়নিষ্ঠ একাগ্র একক জীবনকে প্রবাহিত করিয়া লইয়া গিয়াছিলেন, আমি যদি অদ্য তাঁহার সেই গুণকীর্তন করিতে বিরত হই তবে আমার কর্তব্য একেবারেই অসম্পন্ন থাকিয়া যায়। কারণ, বিদ্যাসাগরের জীবনবৃত্তান্ত আলোচনা করিয়া দেখিলে এই কথাটি বারংবার মনে উদয় হয় যে, তিনি যে বাঙালি বড়ালোক ছিলেন তাহা নহে, তিনি রীতিমত হিন্দু ছিলেন তাহাও নহে- তিনি তাহা অপেক্ষাও অনেক বেশি বড়ো ছিলেন, তিনি যথার্থ মানুষ ছিলেন। বিদ্যাসাগরের জীবনীতে এই অনন্য সুলভ মনুষ্যত্বের প্রাচুর্যই সর্বোচ্চ গৌরবের বিষয়। তাঁহার সেই পর্বতপ্রমাণ চরিত্রমাহাত্ম্যে তাঁহারই কৃতকীর্তিকেও খর্ব করিয়া রাখিয়াছে।”

বিদ্যাসাগর চরিত্রের কতগুলি বিরল বৈশিষ্ট্যের কথা বলে সেগুলি সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথের বক্তব্য উল্লেখ করা প্রয়োজন।

১. প্রতিভার শ্রেষ্ঠত্ব নয়, চরিত্রের শ্রেষ্ঠত্ব

“প্রতিভা মানুষের সমস্তটা নহে, তাহা মানুষের একাংশ মাত্র। প্রতিভা মেঘের মধ্যে বিদ্যুতের মতো, আর মনুষ্যত্ব চরিত্রের দিবালোক, তাহা সর্বব্যাপী ও স্থির। প্রতিভা মানুষের সর্বশ্রেষ্ঠ অংশ, আর মনুষ্যত্ব জীবনের সকল মুহুর্তেই সকল কার্যেই আপনাকে ব্যক্ত করিতে থাকে। প্রতিভা অনেক সময়ে বিদ্যুতের ন্যায় আপনার আংশিকতাবশতই লোকচক্ষে তীব্রতররূপে আঘাত করে, এবং চরিত্রমহত্ত্ব আপনার ব্যাপকতা গুণেই প্রতিভা অপেক্ষা ম্লানতর বলিয়া প্রতীয়মান হয়। কিন্তু চরিত্রের শ্রেষ্ঠতাই যে যথার্থ শ্রেষ্ঠতা, ভাবিয়া দেখিলে সেবিষয়ে কাহারো সংশয় থাকিতে পারে না।”

(বিদ্যাসাগর চরিত / রবীন্দ্রনাথ)

২. দানশীলতা

“যে অবস্থায় মানুষ নিজের নিকট নিজে প্রধান দয়ার পাত্র, সে অবস্থায় ঈশ্বরচন্দ্র অন্যকে দয়া করিয়াছেন। তাঁহার জীবনে প্রথম হইতে ইহাই দেখা যায় যে, তাঁহার চরিত্র সমস্ত প্রতিকূল অবস্থার বিরুদ্ধে ক্রমাগতই যুদ্ধ করিয়া জয়লাভ করিয়াছে। তাঁহার মতো অবস্থাপন্ন ছাত্রের পক্ষে বিদ্যালাভ করা পরম দুঃসাধ্য, কিন্তু এই গ্রাম্যবালক শীর্ণ খর্ব দেহ এবং প্রকাণ্ড মাথা লইয়া আশ্চর্য অল্পকালের মধ্যেই বিদ্যাসাগর উপাধি প্রাপ্ত হইয়াছেন। তাঁহার মতো দরিদ্রাবস্থার লোকের পক্ষে দান করা, দয়া করা বড়ো কঠিন; কিন্তু তিনি যখন যে অবস্থাতেই পড়িয়াছেন, নিজের কোনোপ্রকার অসচ্ছলতায় তাঁহাকে পরের উপকার হইতে বিরত করিতে পারে নাই, এবং অনেক মহৈশ্বর্যশালী রাজা রায়বাহাদুর প্রচুর ক্ষমতা লইয়া যে উপাধি লাভ করিতে পারে নাই, এই দরিদ্র পিতার দরিদ্র সন্তান সেই ‘দয়ার সাগর’ নামে বঙ্গদেশে চিরদিনের জন্য বিখ্যাত হইয়া রহিলেন।”

(বিদ্যাসাগর চরিত / রবীন্দ্রনাথ)

৩. প্রখর আত্মমর্যাদাবোধ

 “আমাদের দেশে প্রায় অনেকেই নিজের এবং স্বদেশের মর্যাদা নষ্ট করিয়া ইংরাজের অনুগ্রহ লাভ করেন। কিন্তু বিদ্যাসাগর সাহেবের হস্ত হইতে শিরোপা লইবার জন্য কখনো মাথা নত করেন নাই; তিনি আমাদের দেশের ইংরাজপ্রসাদগর্বিত সাহেবানুজীবীদের মতো আত্মাবমাননার মূল্যে বিক্রীত সম্মান ক্রয় করিতে চেষ্টা করেন নাই। একটা উদাহরণে তাহার প্রমাণ হইবে।- একবার তিনি কার্যোপলক্ষে হিন্দুকলেজের প্রিন্সিপাল্‌ কার সাহেবের সঙ্গে দেখা করিতে গিয়াছিলেন। সভ্যতাভিমানী সাহেব তাঁহার বুট-বেষ্টিত দুই পা টেবিলের উপরে ঊর্ধ্বগামী করিয়া দিয়া, বাঙালি ভদ্রলোকের সহিত ভদ্রতারক্ষা করা বাহুল্য বোধ করিয়াছিলেন। কিছুদিন পরে ঐ কার-সাহেব কার্যবশত সংস্কৃত কলেজে বিদ্যাসাগরের সহিত দেখা করিতে আসিলে বিদ্যাসাগর চটিজুতা-সমেত তাঁহার সর্বজনবন্দনীয় চরণযুগল টেবিলের উপর প্রসারিত করিয়া এই অহংকৃত ইংরাজ অভ্যাগতের সহিত আলাপ করিলেন। বোধ করি শুনিয়া কেহ বিস্মিত হইবেন না, সাহেব নিজের এই অবিকল অনুকরণ দেখিয়া সন্তোষলাভ করেন নাই।”

(বিদ্যাসাগর চরিত / রবীন্দ্রনাথ)

৪. স্ত্রীজাতির প্রতি সৌজন্যবোধ ও স্ত্রীশিক্ষার প্রসার

“স্ত্রীজাতির প্রতি বিদ্যাসাগরের বিশেষ স্নেহ অথচ ভক্তি ছিল। ইহাও তাঁহার সুমহৎ পৌরুষের একটি প্রধান লক্ষণ।”

“বিদ্যাসাগর প্রথমত বেথুন-সাহেবের সহায়তা করিয়া বঙ্গদেশে স্ত্রীশিক্ষার সূচনা ও বিস্তার করিয়া দেন। অবশেষে যখন তিনি বালবিধবাদের দুঃখে ব্যথিত হইয়া বিধবাবিবাহ প্রচলনের চেষ্টা করেন তখন দেশের মধ্যে সংস্কৃত শ্লোক ও বাংলা গালি মিশ্রিত এক তুমুল কলকোলাহল উত্থিত হইল। সেই মুষলধারে শাস্ত্র ও গালি বর্ষণের মধ্যে এই ব্রাহ্মণবীর বিজয়ী হইয়া বিধবাবিবাহ শাস্ত্রসম্মত প্রমাণ করিলেন এবং তাহা রাজবিধি সম্মত করিয়া লইলেন।”

(বিদ্যাসাগর চরিত / রবীন্দ্রনাথ)

 

 ৫. সংস্কারমুক্ত ও আধুনিক মনন

“বিদ্যাসাগর মহাশয়ও সেইরূপ, আচারের যে হৃদয়হীন প্রাণহীন পাথর দেশের চিত্তকে পিষে মেরেছে, রক্তপাত করেছে, নারীকে পীড়া দিয়েছে, সেই পাথরকে দেবতা বলে মানেন নি, তাকে আঘাত করেছেন।

“প্রাচীন আচারনিষ্ঠ ব্রাহ্মণ পণ্ডিতের বংশে বিদ্যাসাগরের জন্ম, তবু আপন বুদ্ধির দীপ্তিতে তাঁর মধ্যে ব্যক্ত হয়েছিল আনুষ্ঠানিকতার বন্ধন-বিমুক্ত মন। সেই স্বাধীনচেতা তেজস্বী ব্রাহ্মণ যে অসামান্য পৌরুষের সঙ্গে সমাজের বিরুদ্ধতাকে একদা তাঁর সকরুণ হৃদয়ের আঘাতে ঠেলে দিয়ে উপেক্ষা করেছিলেন, অদম্য অধ্যবসায়ের সঙ্গে জয়ী করেছিলেন আপন শুভ সংকল্পকে, সেই তাঁর উত্তুঙ্গ মহত্ত্বের ইতিহাসকে সাধারণত তাঁর দেশের বহুলোক সসংকোচে নিঃশব্দে অতিক্রম করে থাকেন।”

(বিদ্যাসাগর চরিত / রবীন্দ্রনাথ)

৬. অক্ষয় মনুষ্যত্ব

“আজ আমরা বিদ্যাসাগরকে কেবল বিদ্যা ও দয়ার আধার বলিয়া জানি; এই বৃহৎ পৃথিবীর সংস্রবে আসিয়া যতই আমরা মানুষ হইয়া উঠিব, যতই আমরা পুরুষের মতো দুর্গমবিস্তীর্ণ কর্মক্ষেত্রে অগ্রসর হইতে থাকিব, বিচিত্র শৌর্য বীর্য মহত্ত্বের সহিত যতই আমাদের প্রত্যক্ষ সন্নিহিত ভাবে পরিচয় হইবে, ততই আমরা নিজের অন্তরের মধ্যে অনুভব করিতে থাকিব যে, দয়া নহে, বিদ্যা নহে, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের চরিত্রে প্রধান গৌরব তাঁহার অজেয় পৌরুষ, তাঁহার অক্ষয় মনুষ্যত্ব,…”

(বিদ্যাসাগর চরিত / রবীন্দ্রনাথ)

শিক্ষা সংস্কারেও তিনি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছেন।

 বাংলার সমাজের শিক্ষা ব্যবস্থাকে তিনি এমনভাবে সাজাতে চেয়েছিলেন যেন বাংলার প্রতিটি মানুষ প্রকৃত শিক্ষিত হিসেবে গড়ে উঠতে পারে। সংস্কৃত কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে তাঁকে নিয়োজিত করা হয়। সেই প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ থাকাকালীন তিনি সেখানকার প্রশাসনে যেসব পরিবর্তন এনেছিলেন সেগুলো তার আগে আর কেউ কখনও করেন নি। তাঁর প্রস্তাবিত শিক্ষাব্যবস্থায় সবচেয়ে বেশি যে বিষয়টি স্থান পেয়েছে তা হচ্ছে সমাজ থেকে কুসংস্কার দূর করা।

সংস্কৃত কলেজে থাকাকালীন তিনি এমন একটি কাজ করেন যেটার জন্য দৃঢ় মানসিকতা ও বুদ্ধিদীপ্ত যুক্তিশীল মননের প্রয়োজন ছিল। তিনি সংস্কৃত কলেজ সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেন। কোনো বিশেষ ধর্মের মানুষের জন্য নয়, সবার জন্য। উনিশ শতকের সময় বাংলায় এ ধরনের কাজকে নাস্তিকতা বলে গণ্য করা হতো। তিনি তাতে বিন্দুমাত্র বিচলিত বোধ করেন নি। তিনিই প্রথম সংস্কৃত কলেজে ভর্তি ফি নেওয়া শুরু করেন, ক্লাসে ঠিক সময়ে উপস্থিতি এবং নিয়মানুবর্তিতার উপর জোর দেন, এবং প্রথম সাপ্তাহিক ছুটির প্রচলনও করেন।

সংস্কৃত পড়াশোনার মধ্যে কিছু পরিবর্তন আনেন তিনি। আগে সংস্কৃত কলেজে পড়াশোনা করতে হলে সংস্কৃত ব্যাকরণ ‘মুগ্ধবোধ’ পড়তে হতো। বিদ্যাসাগর এই কলেজে যোগ দেওয়ার পর সংস্কৃতকে বাংলায় রূপান্তরিত করেন এবং সেগুলোকে পাঠ্য হিসেবে ব্যবহার করেন। এরকম করার পেছনে যুক্তি ছিল যেন শিক্ষার্থীরা সংস্কৃতে লেখা যেকোনো বিষয় সহজেই নির্বাচন করতে পারে এবং পছন্দ অনুযায়ী পড়তে পারে। শুধুমাত্র সংস্কৃত শিক্ষার দিকেই যে তাঁর লক্ষ্য ছিল তা নয়। তিনি ইংরেজি, পাশ্চাত্য বিজ্ঞান এবং গণিত শিক্ষার প্রতিও গুরুত্ব আরোপ করেন। সেইসঙ্গে বাংলাভাষা ও সাহিত্য পাঠের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন।

তাঁর কাজে সন্তুষ্ট হয়ে সরকার তাঁকে বাংলার বিভিন্ন স্কুলের ইন্সপেক্টর নিযুক্ত করে। ইন্সপেক্টর বা পরিদর্শক নিযুক্ত হওয়ার পর তিনি বিভিন্ন জেলায় অনেক স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি শুধু স্কুল প্রতিষ্ঠাই করেননি, বরং সেগুলোর তত্ত্বাবধায়কের দায়িত্বও পালন করেছেন।

শুধুমাত্র নতুন আঙ্গিকে পুরো শিক্ষার প্রেক্ষাপট তৈরি করেই তিনি থেমে থাকেননি। শিক্ষকদেরকেও তৈরি করেছেন তিনি। তিনি জানতেন, যাঁরা এই নতুন আঙ্গিকে গড়া সিলেবাস পড়াবেন তাঁদেরকেও ঠিকভাবে শিক্ষিত করে গড়ে তুলতে হবে। তাঁর উদ্যোগে ১৮৫৫ সালের ১৭ জুলাই মডেল স্কুলগুলির জন্য উপযুক্ত শিক্ষক তৈরির লক্ষ্যে সংস্কৃত কলেজের অধীনে ‘নর্মাল স্কুল’ প্রতিষ্ঠিত হলো। তার প্রধান শিক্ষক নিযুক্ত হলেন অক্ষয়কুমার দত্ত।

 

আবার, বিদ্যাসাগর শুধু যে শিক্ষা-সংস্কারক ছিলেন তা নয়, সমাজ-সংস্কারক হিসেবেও তাঁর ভূমিকা অনন্য সাধারণ। বিশেষত সেকালের প্রথা-আবদ্ধ হিন্দুসমাজে বিধবাবিবাহ প্রচলন, বহুবিবাহ নিরোধ ও বাল্যবিবাহ নিরোধের ক্ষেত্রে তিনি অসামান্য ভূমিকা পালন করেছেন। এক্ষেত্রে তাঁর লক্ষ্য ছিল নারীদেরকে সামাজিক অপমান, নির্যাতন ও অধিকারহীনতা থেকে মুক্তি দেওয়া। বিদ্যাসাগরের ঐকান্তিক আগ্রহে ও কঠোর আন্দোলনের ফলে ব্রিটিশ সরকার ভারতে ‘হিন্দু বিধবা পুনর্বিবাহ আইন ১৮৫৬’ প্রণয়ন করতে বাধ্য হয়। সমকালের সমাজে এই বিধবাবিবাহ সম্পর্কে প্রবল বিরোধিতা থাকলেও রবীন্দ্রনাথ এই ব্যবস্থা মেনে নিয়েছিলেন। এমনকি তাঁর পুত্র রথীন্দ্রনাথ কৃষিতে স্নাতক হয়ে বিদেশ থেকে ফিরে আসার পর পিতা রবীন্দ্রনাথের নির্দেশে প্রথা ভেঙে বাল্য-বিধবা প্রতিমা দেবী-কে বিবাহ করেছিলেন, যেটি ছিলো ঠাকুরবাড়ির ইতিহাসে প্রথম বিধবাবিবাহ।

 

 মেদিনীপুরে গঠিত ‘বিদ্যাসাগর স্মৃতি সংরক্ষণ সমিতি’র পক্ষ থেকে রবীন্দ্রনাথকে অনুরোধ করা হয় ‘বিদ্যাসাগর স্মৃতি-মন্দির’ শিলান্যাস উপলক্ষ্যে বিদ্যাসাগর সম্পর্কে একটি কবিতা লিখে দেওয়ার জন্য। ২৪ ভাদ্র, ১৩৪৫ (১০ডিসেম্বর, ১৯৩৮) কবি লেখেনঃ

 

“বঙ্গসাহিত্যের রাত্রি স্তব্ধ ছিল তন্দ্রার আবেশে

অখ্যাত জড়ত্বভারে অভিভূত। কী পুণ্য নিমেষে

তব শুভ অভ্যুদয়ে বিকীরিল প্রদীপ্ত প্রতিভা,

প্রথম আশার রশ্মি নিয়ে এল প্রত্যুষের বিভা,

বঙ্গভারতীর ভালে পরালো প্রথম জয়টিকা।

রুদ্ধভাষা আঁধারের খুলিলে নিবিড় যবনিকা,

হে বিদ্যাসাগর, পূর্ব দিগন্তের বনে-উপবনে

নব উদ্বোধন গাথা উচ্ছ্বসিল বিস্মিত গগনে।

যে-বাণী আনিলে বহি নিষ্কলুষ তাহা শুভ্ররুচি,

সকরুণ মাহাত্ম্যের পুণ্য গঙ্গাস্নানে তাহা শুচি।

ভাষার প্রাঙ্গণে তব আমি কবি তোমারি অতিথি;

ভারতীর পূজা তরে চয়ন করেছি আমি গীতি

সেই তরুতল হতে যা তোমার প্রসাদ সিঞ্চনে

মরুর পাষান ভেদি প্রকাশ পেয়েছে শুভক্ষণে।।”

১৬ ডিসেম্বর, ১৩৩৯ (৩০ অগ্রহায়ণ, ১৩৪৬) শীতের সকালে বিদ্যাসাগরের জন্মভূমি মেদিনীপুরে বিদ্যাসাগর স্মৃতি-মন্দিরের দ্বারোদঘাটন করে কবি বললেনঃ “পুণ্যস্মৃতি বিদ্যাসাগরের সম্মাননার অনুষ্ঠানে আমাকে যে সম্মানের পদে আহ্বান করা হয়েছে, তার একটি বিশেষ সার্থকতা আছে। কারণ, এইসঙ্গে আমার স্মরণ করবার এই উপলক্ষ্য ঘটল যে, বঙ্গসাহিত্যে আমার কৃতিত্ব দেশের লোকে যদি স্বীকার করে থাকেন তবে আমি যেন স্বীকার করি একদা তার দ্বার উদ্ঘাটন করেছেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর।”

বিদ্যাসাগরের প্রতি রবীন্দ্রনাথের ছিলো সুগভীর শ্রদ্ধা। আমাদের বঙ্গভূমি যে বিদ্যাসাগরের আবির্ভাবে তীর্থভূমিতে পরিণত হয়েছে একথা বলতে গিয়ে রবীন্দ্রনাথ লিখেছেনঃ “ক্ষুধিত পীড়িত অনাথ অসহায়দের জন্য আজ তিনি বর্তমান নাই, কিন্তু তাঁহার মহৎ চরিত্রের যে অক্ষয়বট তিনি বঙ্গভূমিতে রোপণ করিয়া গিয়াছেন তাহার তলদেশ সমস্ত বাঙালিজাতির তীর্থস্থান হইয়াছে। আমরা সেইখানে আসিয়া আমাদের তুচ্ছতা, ক্ষুদ্রতা, নিষ্ফল আড়ম্বর ভুলিয়া, সূক্ষ্মতম তর্কজাল এবং স্থূলতম জড়ত্ব বিচ্ছিন্ন করিয়া, সরল সবল অটল মাহাত্ম্যের শিক্ষা লাভ করিয়া যাইব।”

লেখক: জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত ও শিক্ষারত্ন পুরস্কারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ও রবীন্দ্র গবেষক

Mailing List