আত্রেয়ী নদী, বর্ষাকাল ও হাফ প্যান্ট – চোখের জলে ভাসে পুরনো দিনের ভরা যৌবনের কাহিনী

আত্রেয়ী নদী, বর্ষাকাল ও হাফ প্যান্ট – চোখের জলে ভাসে পুরনো দিনের ভরা যৌবনের কাহিনী
28 Sep 2022, 08:34 AM

আত্রেয়ী নদী, বর্ষাকাল ও হাফ প্যান্ট – চোখের জলে ভাসে পুরনো দিনের ভরা যৌবনের কাহিনী

ড. প্রভাতকুমার শীট

 

কবিগুরু ররীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সহজপাঠে সেই আত্রেয়ী নদী আজ ভরা বর্ষা মরশুমেও শুখা। নেই নৌকা চলাচল বা খেয়া পারাপার অথবা মাছ ধরার ব্যস্ততা। নৌকাগুলো বাঁধা আছে পড়ে, নদীর পানে চেয়ে। আত্রেয়ী নদী বাংলাদেশ থেকে ভারতে প্রবেশ করে ৫৮ কিলোমিটার পথ প্রবাহিত হয়ে আবার বাংলাদেশে বয়ে গিয়েছে। মহাভারতে উল্লিখিত ঐতিহ্যবাহী আত্রেয়ী নদী বালুরঘাট সহ দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার  লাইফলাইন বলে পরিচিত। এই নদীর উপর ভরসা করেই এখানকার অধিবাসীদের কৃষিকাজ, মৎস্যশিকার, শামুক ঝিনুক সংগ্রহ, নদীগর্ভ থেকে বালি উত্তোলন প্রভৃতি রুজি রোজগার চলে।

কিন্তু সেই আত্রেয়ী নদীর অবস্থা দিন দিন শোচনীয় হচ্ছে। কয়েক বছর ধরেই চিত্রটা বদলে গিয়েছে৷ ভরা বর্ষা মরশুমেও জল নেই!  কুমারগঞ্জে আত্রেয়ী প্রবেশের আগে নদীর ওপারের দিনাজপুর (বাংলাদেশ) জেলার মোহনপুরে রাবার বাঁধ দিয়ে জল আটকে দিয়েছে বাংলাদেশ৷ ফলে এপারের নদীতে জল থাকছে না৷ আবার হঠাৎ জল ছাড়লে শুখা মরশুমেও বানভাসি হচ্ছে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার বিস্তীর্ণ অঞ্চল যেমন কালিকাপুর, রঘুনাথপুর, চকভৃগু, বোয়ালদার, ডাকরা, বেলাইন, ডাঙ্গী, খিদিরপুর প্রভৃতি৷ নদী পাড়ে ভাঙন ধরছে। জেলা বাসীদের অভিযোগ, আর্ন্তজাতিক নদী চুক্তি লঙ্ঘন করে আত্রেয়ীর উপরে চিনের সহায়তায় বাঁধ দিয়েছে বাংলাদেশ৷ ফলে নদীর নাব্যতা হারিয়ে গিয়েছে। সাত-আট বছর আগে বর্ষাকালে ৩০ থেকে ৪০ ফুট জল থাকত নদীতে, কিন্ত তা এখন কোথাও হাঁটু জল আবার কোথাও ৭ থেকে ৮  ফুট সর্বাধিক। 

নদীর প্রস্থ ও গভীরতার অনুপাত বাড়ছে। হঠাৎ করে জল ছাড়ার ফলে নদী পাড় ভাঙন ও নদীতে চর তৈরি হচ্ছে বহু জায়গায়। নদীর জ্যামিতিক রূপ পরিবর্তন, বক্রতা বৃদ্ধি পাচ্ছে দিনে দিনে। আগের মতো আর নদীতে সারাবছর জল থাকছে না। গ্রামের মানুষজন হেঁটে নদী পারাপার করছেন। নষ্ট হচ্ছে মাছের স্বাভাবিক প্রজনন বাস্তুতন্ত্রিক পরিবেশ। ভেঙে পড়েছে নদী নির্ভর জীবন জীবিকা ও অর্থনীতি৷ 

অপরদিকে বালুরঘাট শহরের সমস্ত পৌর আবর্জনা, বর্জ্য পদার্থ, অপরিশোধিত নিকাশির জল গিয়ে পড়ছে আত্রেয়ী বুকে। এছাড়াও নদী লাগোয়া শ্মশানের ছাই, নদীর বুকে কীটনাশক দিয়ে চাষবাস আত্রেয়ী নদীতে দূষণ বাড়ছে দিনে দিনে। এর ফলে আত্রেয়ী নদীতে দেশীয় মাছ রাইখর, পিয়ালী,  ট্যাংরা, বোয়াল,  বাটা,  চিংড়ি,  পুঁটিমাছ, পুতুল, খলসে, চেলা, মহাশোল, বাঘা, আড়, রিঠা  ইত্যাদি মাছ কমে গিয়েছে। স্থানিয় বাসিন্দারা বলেন, আত্রেয়ী নদীর রাইখর মাছ বিখ্যাত। কিন্তু নাব্যতা কমে যাওয়ায় সেই মাছ আজ আর তেমন পাওয়া যাচ্ছে না। বালুরঘাট খিদিরপুরের বাসিন্দা দিলীপ হালদার এর মতে, "আগে নদীতে মাছ ধরে চারশত  থেকে পাঁচশত টাকা রোজগার হত। এখন নদীতে মাছ ধরে মেরে কেটে একশত থেকে দেড়শত টাকা রোজগার। বাধ্য হয়ে আড়ৎ থেকে মাছ কিনে বাড়ি বাড়ি ফেরি করছি।"

লেখক: অধ্যাপক, ভূগোল বিভাগ, রাজা নরেন্দ্রলাল খান মহিলা মহা বিদ্যালয়, মেদিনীপুর।

Mailing List