ভ্রমণ: পুরুলিয়ার চেমটাবুরু শৃঙ্গ থেকে খয়ের বেড়া ড্যাম ও মুখোশের গ্রাম চড়িদা- লিখছেন দীপান্বিতা ঘোষ / প্রথম পর্ব

ভ্রমণ: পুরুলিয়ার চেমটাবুরু শৃঙ্গ থেকে খয়ের বেড়া ড্যাম ও মুখোশের গ্রাম চড়িদা- লিখছেন দীপান্বিতা ঘোষ / প্রথম পর্ব
দীপান্বিতা ঘোষ
পুরুলিয়া। ভারতের পশ্চিমবঙ্গে অবস্থিত একটি জেলা। জেলা সদর পুরুলিয়া। এই জেলার পূর্ব সীমান্তে পশ্চিম বর্ধমান জেলা, বাঁকুড়া ও ঝাড়গ্রাম জেলা। এবং অপর তিনদিক ঝাড়খণ্ড রাজ্য দ্বারা বেষ্টিত। বাংলা ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে 1956 সালে পূর্বতন বিহার রাজ্যের মানভূম জেলার সদর মহকুমাটি পুরুলিয়া জেলা নামে পশ্চিমবঙ্গের অন্তর্ভুক্ত হয়। সেই থেকে এই জেলা পশ্চিমবঙ্গের অঙ্গ।
কিভাবে পৌঁছাবেন??
এবার আসি কেমন করে এখানে আপনারা পৌঁছোবেন। নিজস্ব গাড়ি নিয়ে আসলে তো কোনো কথাই নেই। রাস্তা সব জায়গায় খুবই ভাল. তাই এদিকে থেকে খুব একটা অসুবিধা হবে না।
আপনারা কলকাতা থেকে আসতে চাইলে ডানকুনি - আরামবাগ - জয়পুর ফরেস্ট - বিষ্ণুপুর, বলরামপুর হয়ে বাঘমুন্ডি বা অযোদ্ধা পাহাড়। এছাড়াও পুরুলিয়া যাওয়ার বাসও রয়েছে।
বিভিন্ন জায়গা থেকে কলকাতা হয়ে যারা আসবেন তাদের জন্য সবচেয়ে বেস্ট হলো ট্রেন। বিশেষ করে হাওড়া থেকে রাত 11.30 চক্রধরপুর ফাস্ট প্যাসেঞ্জার। পুরুলিয়া পৌঁছে দেবে সকাল 6.30 এ। আপনি অযোধ্যা পাহাড়ে যেতে চাইলে পুরুলিয়া না নেমে 2 টা স্টেশন এগিয়ে বড়াভূমেও নামতে পারেন, দু জায়গা থেকেই আপনি অযোধ্যা পাহাড় যাওয়ার জন্য গাড়ি পেয়ে যাবেন।
বাঘমুন্ডিতেও থাকতে পারেন। এখানেও খুব ভালো ভালো হোটেল আছে। আমরা উঠেছি বাঘমুন্ডির "শোভালয় গেস্ট হাউস"এ। ফোন নম্বর দিয়ে রাখলাম যদি। কারো কাজে লাগে 9733230322 (Woner, susanta Laha )
বাঘমুন্ডিতে রয়েছে বাঘমুন্ডি পাহাড় তথা পুরুলিয়ার সর্বোচ্চ শৃঙ্গ চেমটাবুরু। অসাধারণ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে মোড়া খয়েরবাড়ি ড্যাম। এছাড়া মুখোশ গ্রাম চড়িদা। ৪ সিটার ছোটো গাড়িগুলোও ভাড়া নিয়ে নিতে পারেন 2500 টাকার মতো, একদিনের জন্য।
চড়িদা:
পুরুলিয়া জেলার বাঘমুন্ডি ব্লকে অযোধ্যা পাহাড়ের কোলে অবস্থিত চড়িদা বা মুখোশ গ্রাম। বাঘমুন্ডি শহর থেকে এই গ্রামের দূরত্ব 5 কিলোমিটার। এই গ্রামে প্রায় 100 পরিবারের বাস। এখানকার গ্রামবাসীদের মূল জীবিকা হলো "ছৌ" নাচের মুখোশ তৈরি করা। কয়েক প্রজন্ম ধরে এরা এই পেশার সঙ্গে যুক্ত। এখানে কারিগরের সংখ্যা প্রায় 250। এখানে একের পর এক ছোট ছোট বাড়িতে সার দিয়ে সাজানো শুধুই রঙ বেরঙের মুখোশ।
চড়িদা গ্রামের মুখোশগুলি "মার্শাল ডান্স" হিসেবে ব্যবহৃত হয় যা আন্তর্জাতিকভাবে বিখ্যাত। "রামকৃষ্ণ হস্তশিল্প সমিতি" এবং চড়িদা গ্রামের 13 জন সদস্যের একটি SHG পেশাগতভাবে এই মুখোশ তৈরিতে নিযুক্ত।এদের এই প্রচেষ্টার জন্য তারা জাতীয় স্তরে পুরস্কৃত হয়েছে।
চেমটাবুরু শৃঙ্গ:
বাগমুন্ডির শহর থেকে 5। থেকে 6 কিলোমিটারের মধ্যে রয়েছে বাগমুন্ডি রেঞ্জ। খুবই সংকীর্ণ রাস্তা তবে অজস্র গাড়ি চলাচল করছে। সকালে বা বিকালে গরুর পালের পাল্লায় পড়লে, আপনার গাড়িকে চলতে হবে ওদের তালেই।
লোকালয় পেরিয়ে প্রায় 3 কিমির মত যেতে হবে পাহাড়ি রাস্তা ও চড়াই উৎরাই পথ ধরে। 3 দিকে পাহাড় মাঝে সরু রাস্তা।এর দৃশ্য সত্যিই নয়ানাভিরাম। আরেকটু এগোলেই খয়েরবেড়া ড্যাম।
ড্যাম থেকে সোজাসুজি উপরে উঠে গেছে চেমটা বুরু শৃঙ্গ(699 মিটার )। ওখানে ট্রেকিং এরও সুযোগ রয়েছে।
খয়ের বেড়া ড্যাম
প্রাকৃতিক ও মনোরম বাঁধ। এটি বাঘমুন্ডিতে পাহাড় এবং বনের মধ্যে একটি সেচ বাঁধ। এটি একটি আকর্ষণীয় পর্যটন স্পট। এটি পুরুলিয়া শহর থেকে প্রায় 70 কিমি দূরে বাঘমুন্ডি ব্লকে অবস্থিত, এই জায়গাটিতে চেমটো এবং বাররা পাহাড়ের পাদদেশে একটি বিস্তীর্ণ জলাশয় রয়েছে (অযোধ্যা-রেঞ্জ)। বসন্তের সময় (দোল উৎসব) পলাশ গাছগুলি একটি নতুন মাত্রা যোগ করে। তাদের লাল-ফুল দিয়ে এলাকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য সহস্র গুণ বাড়িয়ে দেয়। বর্ষাকালে চারদিকের পাহাড় সবুজে সবুজ।
বাঘমুন্ডি পাহাড়ের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হঠাৎ করে খাড়া ঢালে উপরে উঠে যাওয়া। খাড়া ঢাল নেমে এসেছে মাঝের ড্যামে। ড্যামের জল স্বচ্ছ নীল। নীল জলের মধ্যে পড়েছে চারদিকের পাহাড়ের ছায়া। অপরূপ এই ড্যামের সৌন্দর্য দেখার জন্য পাশে তৈরী করা আছে Watch Tower। পর্যটকদের আনাগোনায় পুরুলিয়ার প্রত্যন্ত এই অঞ্চলটি জনমুখর। তবে মানুষের অসচেতনতার নিদর্শন হিসাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে নোংরা-আবর্জনা-প্লাস্টিক। মানুষ সচেতন হোক, সরকার উদ্যাগী হয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করুন এই আবেদন।
(চলবে..)


