টার্কি পালনের বিশেষ অসুবিধা হচ্ছে এই পাখির রোগ! টার্কির রোগ প্রতিরোধ ও চিকিৎসা সম্বন্ধে জেনে নিন

টার্কি পালনের বিশেষ অসুবিধা হচ্ছে এই পাখির রোগ! টার্কির রোগ প্রতিরোধ ও চিকিৎসা সম্বন্ধে জেনে নিন
22 Dec 2022, 01:18 PM

টার্কি পালনের বিশেষ অসুবিধা হচ্ছে এই পাখির রোগ! টার্কির রোগ প্রতিরোধ ও চিকিৎসা সম্বন্ধে জেনে নিন

আনফোল্ড বাংলা প্রতিবেদন: ভারতের টার্কি পালন এবং বিশেষ করে বর্তমানে উত্‍সবের মরশুমগুলিতে টার্কির মাংসের চাহিদা দিন দিন বেড়ে চলেছে। পাশাপাশি বর্তমানে বিরিয়ানিতেও এই মাংসের ব্যবহার বাড়ছে। ২৪ সপ্তাহ বয়সের মধ্যে একটি পুরুষ পাখির গড় ওজন হয় ১০ থেকে ১৫ কেজি। যার বাজার মূল্য প্রতি কেজি ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা।

টার্কির মাংস ও ডিম সুস্বাদু ও পুষ্টিকর। মাংসে প্রোটিনের পরিমাণ অনেকটাই বেশি এবং ফ্যাট খুবই কম থাকে। মাংসে যথেষ্ট পরিমাণে খনিজ পদার্থ, ভিটামিন ও প্রয়োজনীয় অ্যামাইনো অ্যাসিড ও ফ্যাটি অ্যাসিড পাওয়া যায়। তবে কোলেস্টেরলের পরিমাণ খুব কম। টার্কি পালনে ভাল আয়েরও সুযোগ রয়েছে।

সংক্রামক সাইনোসাইটিস- 

এটি একটি ব্যাকটেরিয়া ঘটিত রোগ। যা মাইক্রোপ্লাজমা, গ্যালিসেপটিকাম ব্যাকটেরিয়া দ্বারা হয়ে থাকে। এই রোগে সাইনাস ফুলে যায়। চোখ বন্ধ হয়ে যায়। কাশি, হাঁচি ইত্যাদি হয়ে থাকে।

টার্কির প্রোটোজোয়া ঘটিত রোগ-

টার্কির প্রোটোজোয়া ঘটিত রোগ গুলি হল ব্ল্যাকহেড, কক্সিডিওসিস প্রভৃতি। এই রোগ দুটি টার্কি পাখিকে বেশি প্রভাবিত করে থাকে।

ব্ল্যাকহেড-

হিস্টোমোনাস মেলিয়াগ্রিটিস নামক এককোষী পরজীবীর কারণে ব্ল্যাক হেড হয়। এই রোগটি কৃমির দ্বারা বাহিত হয়। এই রোগে আকস্মিক মৃত্যু ঘটে থাকে। নিস্তেজতা। উজ্জ্বল হলুদ রঙের ডায়েরিয়া হয়।

প্রতিরোধ ও চিকিত্‍সা:

ভিওভিট ব্যবহার করা হয় ব্লাকহেড সংক্রমণ কমানোর জন্য। অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা যেতে পারে। মূলত সেকেন্ডারি ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ কমানোর জন্য নিয়মিত কৃমিনাশক ওষুধ খাওয়ানোর দরকার।

কক্সিডিওসিস-

এটি একটি প্রোটোজোয়া ঘটিত রোগ। এই পরজীবী অন্ত্রের কোষে প্রবেশ করে কোষগুলোকে ধ্বংস করে। এই রোগটি টার্কি পাখির জন্য মারাত্মক ক্ষতিকারক। এই রোগে ওজন কমে যায়। ডায়েরিয়া হয়।

প্রতিরোধ ও চিকিত্‍সা:

সংক্রমিত পাখির মল ও আবর্জনা পরিষ্কার করতে হবে। নিয়মিত ভ্যাকসিন দিতে হবে। অ্যামপ্রোলিয়াম বা বেকব্রের মত অ্যান্টিকক্সিডিয়াল এজেন্ট ব্যবহার করা হয় সংক্রমণ প্রতিরোধের জন্য। গৌণ সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের জন্য অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হয়।

টার্কির ছত্রাক ঘটিত রোগ-

টার্কি পাখির ক্ষেত্রে মূলত অ্যাসপারজিলোসিস সংক্রমণ বেশি দেখা যায়। যেহেতু এই পাখি অন্যান্য পাখির তুলনায় বেশি রোগ প্রতিরোধী তাই এদের ছত্রাক ঘটিত রোগ সংক্রমণে খুব কমই দেখা যায়। এছাড়া সাইকো টক্সিকোসিসও হয়ে থাকে।

অ্যাসপারজিলোসিস-

এটি একটি ছত্রাক ঘটিত রোগ এটি সাধারণত পল্টদের প্রভাবিত করে (পাঁচ দিন থেকে আট সপ্তাহ বয়স পর্যন্ত পাখিদের)। এই রোগের লক্ষণ, টার্কিকে দ্রুত শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে দেখা যায়। চোখে ক্ষত দেখা যায়। প্রতিরোধ ও চিকিত্‍সায় এই সংক্রমণের কোন ব্যবহারিক প্রতিকার নেই। সংক্রামিত পাখিদের আলাদা করতে হবে। লিটার উপাদান প্রতিস্থাপিত করতে হবে। তেল ভিত্তিক জীবাণু-নাশক স্প্রে করতে হবে।

প্রতিরোধ ও চিকিত্‍সা-

নিয়মিত টিকা দেওয়া প্রয়োজন। বিশেষ করে রানীক্ষেত রোগ ও ফাউল পক্স রোগের বিরুদ্ধে টিকা দেয়া অত্যন্ত জরুরি। টার্কির ঘর দূষণমুক্ত করণ করলে ভাল হয়।

টার্কি পাখির টিকা দেওয়ার সময়সূচী:

• রানিক্ষেত টিকা (এফ১) ৭ দিনে

• রানিক্ষেত টিকা (ল্যাসোটা) ২৮ দিনে

• ফাউল পক্স ৪২ দিনে

• রানীক্ষেত টিকা (আরটুবি) ৫৬ দিনে

• রানীক্ষেত টিকা (আরটুবি) ২৫ সপ্তাহ

• ফাউল কলেরা টিকা ৮ থেকে ১০ সপ্তাহটার্কিতে মাকড় (ফাউল মাইট) হতে দেখা যায়। লেজের পালক, পেটের পালকে বেশি দেখা যায়। এজন্য উপযুক্ত পরিচর্যা ও উপযুক্ত যত্ন নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। 

তথ্য সাহায্য: পশ্চিমবঙ্গ প্রাণী ও মত্‍স্যবিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়ের ডা. মীর আজহার উদ্দিন

Mailing List