ভারত-বাংলাদেশের মিলন মেলার দুঃখ কিছুটা থাকলো, তবে প্রথা মেনেই শুরু টাকির ঐতিহ্যশালী বিসর্জন  

ভারত-বাংলাদেশের মিলন মেলার দুঃখ কিছুটা থাকলো, তবে প্রথা মেনেই শুরু টাকির ঐতিহ্যশালী বিসর্জন   
06 Oct 2022, 03:15 PM

ভারত-বাংলাদেশের মিলন মেলার দুঃখ কিছুটা থাকলো, তবে প্রথা মেনেই শুরু টাকির ঐতিহ্যশালী বিসর্জন

 

আনফোল্ড বাংলা প্রতিবেদন, টাকি: প্রত্যাশা মতনই কঠোর নিরাপত্তার মধ্যেই প্রথামেনেই শুরু টাকির ঐতিহ্যশালী বিসর্জন। মায়ের কৈলাস যাত্রায় বিদায়ের সুরেই আগামী বছরের আসার আনন্দে মাতলো টাকি। সন্ধ্যার আকাশ ভরে উঠলো আতসবাজির রঙে। তবে বিগত বছর গুলির মত এবারও দূর্গা প্রতিমা বিসর্জনকে কেন্দ্র করে বসিরহাটের টাকির ইছামতীতে মানুষের উন্মাদনা থাকলেও তা মিলন উৎসবে আনন্দ থেকে বঞ্চিত থাকলো দুই বাংলার মানুষ। দুই দেশের নিরাপত্তার কারনেই নদীবক্ষে কাটাতাঁরে বাঁধাপড়ল দুই বাংলার প্রতিমা বোঝাই নৌকা। তবে টাকির ইছামতীর মিলন মেলা বন্ধ হলেও দুই পাড়ের মানুষের উন্মাদনা, হাসনাবাদে ইছামতীর মাঝে ভাসমান ভেসেলে বিসর্জনের বিকালে এক বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠান, আতসবাজির প্রদর্শনী সাধারণ মানুষকে টাকির মিলন মেলা হারানোর দুঃখকে কিছুটা হলেও দূর করেছে।

টাকির রাজবাড়ির পুজো ৩০০ বছর হল। মা পান্তা ভাত কচু শাক খেয়ে ২৬ বেয়ারার কাঁধে চড়ে ইছামতীতে নিরঞ্জনের মধ্যেদিয়ে শুরু হল টাকির বিসর্জন। সকাল থেকেই টাকির রাজবাড়ির প্রথামেনে দেবীর যাত্রামঙ্গল বরন তারপর সিঁদুর খেলায় মেতে ওঠে স্থানীয় বাসিন্দারা। আগে টিকির রাজবাড়ির ঠাকুর ইছামতি নদীতে ভাসান হল তারপর একে একে ঘোষ বাড়ি, রায়চৌধুরী বাড়ি, মুখার্জি বাড়ি, গুরুর বাড়ি, চক্রবর্তী বাড়ি পরপর প্রতিমা ভাসান হল। এরপর সার্বজনীন পুজোর প্রতিমা নিরঞ্জন হয়। সঙ্গে নৌকা করে নদীবক্ষে আনাগোনা। করোনা কাটায় দুই বছর এই বিসর্জন থেকে বঞ্চিত ছিল মানুষ। এবার তাই সকালের সামান্য বৃষ্টিকে উপেক্ষা করে দেখাগেল বাঁধভাঙা উল্লাস। তবে বেলা গড়াতেই আকাশ পরিস্কার হওয়াতে বৃষ্টির সম্ভাবনা দূর হতেই মানুষের মধ্যে উৎসাহ বাড়ে ফলে বাড়তে থাকে ভিড়। আন্তর্জাতিক জলসীমানার ওপারে বাংলাদেশের সাতক্ষীরা জেলা এপারে টাকী।প্রতিমা নিরঞ্জন দেখতে দুপারে অপেক্ষায় উদগ্রীব মানুষ। কড়া নজরদারি বিএসএফ ও বিডিআর এর।  অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে ও দেশীয় নিরাপত্তা যাতে বিঘ্নিত না হয় সেই কারনে  সকাল থেকেই ছিল বিপর্যয় মোকাবেলা দল ও সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর জওয়ানেরা। মানুষের ভীড় সামলাতে হিমসিম খেতে হয়েছে পুলিশ প্রশাসনকে। এদিন বিএসএফ ও জেলা পুলিশের উচ্চপদস্থ আধিকারিকেরা নিজেরা সশরীরে উপস্থিত ছিলেন নিরাপত্তা দেখভাল করতে। এদিন সন্ধ্যায় শুর হয় টাকি পুরসভার উদ্যোগে আতোস বাজি প্রদর্শনী। নানান রঙে ভরে ওঠে শরতে আকাশ।

তবে অতীতে ইছামতী বক্ষে প্রতিমা নিরঞ্জনকে কেন্দ্রকরে দুই বংলার মিলন, মিষ্টি মুখ আজ ইতিহাস হলেও করোনা কাটা সরয়ে এবারের টাকিতে প্রতিমা বিসর্জন এক অন্য মাত্রা পেল।প্রতিবারের মত এবারও পুজোর আগেই দু'দেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যৌথ সিদ্ধান্তে ঠিক হয়েছিল 'ইছামতীতে দুই বাংলার বিসর্জন হলেও জল সীমান্ত অতিক্রম করা চলবে না।' সেইমত প্রশাসনের কঠোর নজরদারিতে নদীর মাঝ বরাবর ঘেরা ছিল বিএসএফ ও পুলিশের যৌথ বেষ্টনীর নিরাপত্তা। অন্যদিকে বাংলাদেশের তরফেও ছিল বিজিবির কঠোর নজরদারি। বাংলাদেশের বিজিবি ও ভারতের সীমান্ত রক্ষা বাহিনী ও পুলিশ টহলের মধ্যেই সাঙ্গ হল বিসর্জন। ২০১১ সালে দুইবাংলার বির্সারজন ঘিরে কিছু অঘন ঘটে যাওয়ায় কঠোর সিদ্ধান্ত নেয় দুইদেশের প্রশাসন। তারপর ২০১২ থেকে বন্ধ হয়েযায় জলসীমা অতিক্রম করে মিলন উৎসব। ফলে বিসর্জন ঘিরে উন্মাদনা থাকলেও দুই বাংলার মিলনের ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি এবারও ঘটল না। দেশের নিরাপত্তার কারনে অতীতের সেই ঐতিহ্য অনেকটা ম্লান হলেও তা সত্ত্বেও দুই বাংলার মিলন উৎসবের আনন্দ ভাগ করে নিতে ইছামতীর দুপারের অগণিত মানুষ এবারেও সাক্ষী থাকলো।

Mailing List