দাঁত বড় হয়ে যাওয়ায় কিছুই খাচ্ছে না খরগোশ! খরগোশেরও দাঁতের অস্ত্রোপচার হচ্ছে রাজ্যেই

দাঁত বড় হয়ে যাওয়ায় কিছুই খাচ্ছে না খরগোশ! খরগোশেরও দাঁতের অস্ত্রোপচার হচ্ছে রাজ্যেই
আনফোল্ড বাংলা প্রতিবেদন: দাঁত বড়ো হয়ে গিয়েছে খরগোশের। তাই খাওয়া দাওয়া ছেড়ে দিয়েছিল সে। প্রায় মৃত্যুর মুখে পড়ে ছিল ওই নিরীহ প্রাণীটি। শেষ পর্য্যন্ত তার দাঁত কেটে ছোটো করলেন কলকাতার দন্ত বিশেষজ্ঞরা। দাঁত ছোট হওয়ার পর সে আবার আগের মত স্বাভাবিক ভাবে খেতে শুরু করেছে। প্রাণ রক্ষা পেয়েছে খরগোশটি। শুধু ওই একটি খরগোশই নয়। কলকাতার উত্তর থেকে দক্ষিণ এভাবেই দন্ত বিশেষজ্ঞরা একটি টিম বানিয়ে খরগোশদের দাঁতের চিকিৎসা করছেন।
গৃহপালিত প্রাণী নিয়ে এখন শহরের মানুষ যথেষ্ট সচেতন। পাড়ায় পাড়ায় নিত্য নতুন গজিয়ে উঠেছে পোষ্য প্রাণীদের জন্য প্রয়োজনীয় দোকান বা 'পেট শপ'। অভাব নেই পোষ্যদের ক্লিনিকেরও। আর করোনার পর গৃহবন্দি শিশুরা নিজেদের বিনোদনের জন্য বেছে নিচ্ছে নানা পোষ্য। ওই দোকান গুলিতে কথা বলে জানা গেলো গত এক থেকে দেড় বছরে শিশু ও আর একটু বড়োদের মধ্যে চাহিদা বেড়েছে খরগোশের।
তবে, খরগোশের এই দন্ত চিকিৎসার পদ্ধতি আবিস্কার করাটা সহজ ছিল না। কারণ চিকিৎসকদের ওই দলের দাবি, এর জন্য দেশ বিদেশ থেকে নানা বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে অন লাইনে পরামর্শ করা হয়। পরামর্শ করা হয় কলকাতার কয়েকজন দন্ত চিকিৎসকের সঙ্গেও। শেষ পর্যন্ত পশু চিকিৎসক ড.শাহনওয়াজ আলম, দন্ত চিকিৎসক ড. সম্পূর্ণা দত্তগুপ্ত, আর এক দন্ত চিকিৎসক ড. আশিকুর রহমান মিলে চিকিৎসকদের একটি দল তৈরি করেন। এঁদের সঙ্গে যোগ দেন পশুপ্রেমী সুস্নিতা মুখার্জী। তারপর কলকাতার এবং আশপাশের জেলার বিভিন্ন জায়গায় শিবির তৈরি করে একাধিক পোষ্য খরগোশের দাঁতের অস্ত্রোপচার করা হয়। প্রাথমিক সাফল্যের পর ঠিক হয়েছে কলকাতা ছাড়াও বিভিন্ন জেলা সদর গুলিতে পাড়ি দেবে এই শিবির।
দন্ত চিকিৎসক সম্পূর্ণা দত্তগুপ্ত বলেন, 'মূল অস্ত্রোপচার ড. শাহনাজ আলমই করেছেন। আমরা তাঁকে কোন যন্ত্রের কি ব্যবহার এগুলি দেখিয়ে সাহায্য করেছি। খরগোশ যদি দূর্বা, ঘাস, খড় জাতীয় খাবার না খায় তাহলেই তাঁদের দাঁত বড়ো হয়ে যায়। তাছাড়া খরগোশের দাঁত নিয়মিত বাড়ে। যেটা পূর্ণ বয়স্ক মানুষের ক্ষেত্রে হয়না। দাঁত বড়ো হয়ে মাড়ি ও গালে আঘাত করে গাল কেটে সংক্রমণ হয়ে যাচ্ছিল। তার থেকে পরিত্রাণ পেতে প্রাণীগুলো সুস্থ আছে।' দন্ত চিকিৎসক আশিকুর রহমান বলেন, 'খরগোশের দাঁতের চিকিৎসার উদ্যোগে আমরা প্রাথমিকভাবে সামিল হয়ে পশু চিকিৎসককে সাহায্য করি। এখন বহু খরগোশের প্রাণ বেঁচেছে।' পশু চিকিৎসক ড. চৌধুরী শাহনাওয়াজ আলম বলেন, 'বাংলাদেশ থেকে শুরু করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইংল্যান্ড, ইরাক ইত্যাদি দেশের দন্ত চিকিৎসক, পশু চিকিৎসকদের নিয়ে আমরা একটা হোয়াটস অ্যাপ গ্রুপ করি। সেখানেই ঠিক হয় এই কাজ আমরা শুরু করবো। খরগোশপ্রেমী সুস্নিতা মুখার্জির ব্যক্তিগত উদ্যোগে সেই মত বিদেশ থেকে যন্ত্র পাতিও আসে। এখন কলকাতায় ও অন্যান্য জেলায় শিবির করে খরগোশের দাঁতের অস্ত্রোপচার করছি।'
এই অভিনব কাজে খুশি বাগবাজার থেকে বালিগঞ্জ, সল্ট লেক থেকে শ্যামবাজার সব জায়গার পশু প্রেমীরা। বর্তমানে ৱ্যাবিট কেয়ার ইন্ডিয়ার উদ্যোগে দুর্গাপুর, শ্রীরামপুর, বারাসাতে চিকিৎস্যা শিবিরে অসংখ্য খরগোশের চিকিৎসা করা হয়। পশুপ্রেমীরা জানান, এভাবেই যদি চিকিৎসকরা এগিয়ে আসেন তাহলে অনেক মানুষ তাঁদের প্রিয় পোষ্যের মৃত্যু আটকাতে সক্ষম হবেন।


