মুখ্যমন্ত্রীকে প্রতিদ্বন্দ্বী ভাবছেন প্রধানমন্ত্রী! তার মানেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উত্তরণ

মুখ্যমন্ত্রীকে প্রতিদ্বন্দ্বী ভাবছেন প্রধানমন্ত্রী! তার মানেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উত্তরণ
সুমন ঘোষ
গত লোকসভা নির্বাচন থেকেই টক্করটা শুরু হয়ে গিয়েছিল। কেন্দ্রে বিজেপিকে রুখতে ফেডারেল ফ্রন্ট তৈরির ডাক দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁকে সমর্থন করেছিলেন একাধিক রাজ্যের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারাও। সবাইকে নিয়ে কলকাতার ব্রিগেডে সমাবেশও করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তখন থেকেই একাধিক আঞ্চলিক দলের মধ্যমনি হয়ে উঠতে শুরু করেন তিনি। একদিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই দেশের নেতৃত্ব দেবেন তেমন সম্ভাবনার অঙ্কুরোদ্গমও ঘটে যায়।
তারপর লোকসভা নির্বাচন আসে। কিন্তু দেখা যায়, এক অলৌকিক ফল। অলৌকিক এই কারণেই যে, এমন অভাবনীয় ফল যে বিজেপি নেতৃত্বও স্বপ্নেও ভাবতে পারেননি। লোকসভার ৪২ আসনের মধ্যে রাজ্য থেকে ১৮টি আসন জিতে নিয়ে চলে যায় বিজেপি।
আর তার ফলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সম্ভাবনার অঙ্কুরটা জেগে থাকলেও প্রস্ফুটিত হতে পারেনি। উল্টোদিকে বিজেপি পঙ্খীরাজের ঘোড়া হয়ে দৌড় শুরু করে রাজ্যে। গেরুয়া রথ পাহাড় থেকে জঙ্গল ছুটে বেড়ায় খটাখট খটাখট আওয়াজ তুলে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন বঙ্গজয়ের। আর সেই স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করতে গিয়ে যত এগিয়েছেন ততই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিজের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে তুলে ধরেছেন। হয়তো নিজের অজান্তেই। তিনি যে বিশ্বের সর্ব বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশ ভারতবর্ষের প্রধানমন্ত্রী, যে দেশে একগুচ্ছ রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল রয়েছে। তাঁর মাথায় তিনি। আর কেবলমাত্র একগুচ্ছ রাজ্যের মধ্যে একটি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
সেই একটি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রধানমন্ত্রীর প্রতিদ্বন্দ্বী! এটা কী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উত্তরণ নয়! অর্থাৎ এটা কী পরোক্ষে বুঝিয়ে দেওয়া নয় যে, নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে লড়তে পারেন একমাত্র মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
এটা পরোক্ষে ছিল ততদিন, যতদিন পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার ফল প্রকাশ হয়নি। রাজ্য বিধানসভার ফর প্রকাশের পরেই প্রত্যক্ষ হয়ে গেল যে, সারা দেশের মধ্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই একমাত্র ব্যক্তি যিনি নরেন্দ্র মোদি একা নন, তাঁর পুরো টিমের সঙ্গে লড়তে পারেন। এবং জিততে পারেন।
সেই জয়ের পরেও কিন্তু লড়াইটা জারি রয়েছে। রাজ্যে তৃতীয়বারের জন্য মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নেওয়ার পরেই ভোট পরবর্তী হিংসা খতিয়ে দেখতে কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল পাঠানো, একাধিক কমিশনের প্রতিনিধি পাঠানো, অবশেষে সিবিআই দিয়ে রাজ্যের দুই মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম ও সুব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় এবং বিধায়ক মদন মিত্রকে গ্রেফতার করানো – লড়াইটা জারি। অর্থাৎ এখনও মুখ্যমন্ত্রী বনাম প্রধানমন্ত্রী!
অন্যান্য রাজ্যের আঞ্চলিকদলের নেতারাও দেখছেন। হয়তো আশার আলোও জ্বালাচ্ছেন বুকের মধ্যে। একজনকে তো পাওয়া গিয়েছে লড়াই দেওয়ার জন্য। যিনি প্রধানমন্ত্রীর প্রতিদ্বন্দ্বী। সম্ভাবনার অঙ্কুরটা বাড়ছে। আগামি লোকসভা আর বেশি দেরি নেই। মাত্র তিন বছর। তারপরই বোঝা যাবে উপযুক্ত জল বাতাস পেয়ে অঙ্কুরটা পাপড়ি মেলে ধরল কিনা। তবে এটা পরিষ্কার হয়ে উঠছে যে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এখন দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির প্রতিদ্বন্দ্বী। সেটা প্রমাণ করে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নিজেই।


