করোনা পরিস্থিতির মধ্যেই সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে মনসাপুজোর উৎসবে মাতলেন পুরুলিয়াবাসী

করোনা পরিস্থিতির মধ্যেই সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে মনসাপুজোর উৎসবে মাতলেন পুরুলিয়াবাসী
আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়, পুরুলিয়া
করোনা পরিস্থিতির মধ্যেই মঙ্গলবার মনসা পুজোয় মাতলেন পুরুলিয়ার প্রায় গোটা জেলার মানুষ। আজ বুধবার ভাদ্রের প্রথম দিন, এইদিনই পুজোর শেষদিন অর্থাৎ পান্না। করোনার জন্য এদিন লকডাউন এর বাধা নেই। তবুও ভাদ্রের প্রথম দিনে পুরুলিয়ায় দোকান পাট খোলা পাবেন না। এদিন জেলার বার্ষিক বন্ধের দিন। পয়লা ভাদ্র মনসা পুজোর 'পার্বন '। বলি দেওয়া হাঁস কিংবা পাঠার মাংস দিয়ে ভাত খেয়ে এদিন শুধুই বিশ্রাম। সুতরাং শুনশুন পথঘাট বন্ধের চেহারা নেয় জেলায়।
মঙ্গলবার ছিল পুজো। মঙ্গলবার গভীর রাতে দেবীর চরণে হাঁস কিংবা পাঁঠা নিবেদন করেন পুরুলিয়ার মানুষ। প্রায় দেড় লক্ষ হাঁস বলি হয় পুরুলিয়ার মনসাপুজোয়। তাই পুজোর বেশ কয়েকদিন আগে থেকেই হাঁসের যোগান দিতে বীরভূম, বর্ধমান, হুগলি, মেদিনীপুর এমনকি উড়িষ্যা , ঝাড়খণ্ড থেকেও ঝাঁপিবন্দী হয়ে পুরুলিয়ায় হাঁস এসেছে হাজারে হাজারে। আদিবাসী এবং মাহাতো প্রধান পুরুলিয়ার গ্রামাঞ্চলে দুর্গাপূজা সার্বজনীন উৎসব নয। এখানে উৎসব হল মনসাপুজো, ভাদু, টুসু পরব। সাঁওতালদের উৎসব বাঁদনা। মাহাতদের করম। অরণ্য অধ্যুষিত পুরুলিয়ায় মনসা পুজোর অন্য একগুরুত্ব আছে। সে প্রাকৃতিক পরিবেশের কারণে। অযোধ্যা পাহাড় থেকে বান্দোয়ান জঙ্গলমহলে রয়েছে অসংখ্য সাপ। ফি বছর এখানে সাপের কামড়ে মানুষের মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। সাপের ভয়ে মানুষ সর্পদেবী মনসার কাছে মানত করে। প্রতি গ্রামে তাই একাধিক মনসার মূর্তি তৈরি করে মনসা পুজো হয়।
ঝালদা থানার তুলিন এলাকার ব্রাক্ষণ পুরোহিত সিদ্বেশ্বর চক্রবর্তীর মতে মনসা পুজোর জনপ্রিয়তার সবচেয়ে বড় কারণ হল, এই পুজোয় ব্রাক্ষণ পুরোহিত লাগে না। অব্রাক্ষণ পুরোহিতরাই মনসার পুজো করেন। পুজোর দিনে অনেকেই উপোস করে থাকেন। সারারাত মনসা মন্দিরে চলে 'মনসা-মঙ্গল ' গান। কোথাও কোথাও এদিন সাপ নিয়ে ঝাঁপান উৎসব হয়। মূলত বেদে সম্প্রদায়ের মানুষ এই ঝাঁপান করে থাকে। রঘুনাথপুর থানার চেলিয়ামা গ্রামের বাসিন্দা মনবোধ বেদে বলেছেন, ‘বেদেরা মনসার মানসপুত্র। তাই শেষ বর্ষায় এই সময় সমস্ত বেদে পরিবারে সাপ থাকবেই। শ্রাবণ মাসে গ্রামে গ্রামে সাপ দেখিয়ে তাঁরা ভিক্ষে করেন। সেই ভিক্ষের এক অংশ জমা রাখা হয় মনসা পুজোর জন্য । মানিক বেদে, লখাই বেদেরা জানান এখন আর তাদের ছেলেরা মন্ত্রতন্ত্র ও কৌশল শিখতে চায় না। তাই এই সবপ্রায় বন্ধ হতে চলেছে। সোমবার সারাদিন উপোষ করে রাতে পুজো করেছেন মনসাদেবীকে। আজ বুধবার পার্বণের দিনে কেউ বাড়ি থেকে বেরোবেন না। ট্র্যাডিশন বদলায় না। রীতিও বদলায় না।



