নীলকন্ঠ পাখি ও শুভ বিজয়া, এক পৌরাণিক কাহিনী

নীলকন্ঠ পাখি ও শুভ বিজয়া, এক পৌরাণিক কাহিনী
(এক বিশ্বাস, এক প্রাচীন ধারণা, এক নতুন চিন্তা )
সুপ্রিয় বন্দ্যোপাধ্যায়
নীলকন্ঠ পাখির ইতিহাস:
===================
নীলকন্ঠ পাখি...
ছোট্ট একটি গ্রাম-বাংলাদেশের মাঠে-ঘাটে চড়ে বেড়ানো এক পাখি, যার আকৃতি খুব ছোট, প্রায় 27/28 সেন্টিমিটার, কিছুটা কলার মোচার মতো দেখতে ...। মাথার ওপর দিকটা নীলচে এবং পালকের নীচের দিকে নীল রঙের হয়।
এই পাখিকে ভারতে তো বটেই, বাংলাদেশের হবিগঞ্জ, চট্টগ্রামের পার্বত্য এলাকায় বেশি দেখা যায়। খাবারও খুব সাধারণ--- ফড়িং, ঝিঁঝিপোকা, ছোট সাপ ... ইত্যাদি। থাকে অন্যান্য পাখীদের মতো গাছের কোটরে। কার্ডটা পর্বের এক পাখী, যার বৈজ্ঞানিক নাম: " কোরেশিয়াস বেঙ্গেন্সিস্ " ----- সে রাতারাতি এভাবে বিখ্যাত হয়ে গেল কিভাবে??? এর উত্তর খুঁজতে আমাদের প্রবেশ করতে হবে পৌরাণিক আখ্যানে---।
শুভ বিজয়া... নীলকন্ঠ পাখির দূতের ভূমিকা:
==================================
দূর্গা পূজা আমাদের যতোই "দূর্গতিনাশিনী" , "পরাশক্তি", "মহিষাসুরমর্দিনী" হোক না কেন, মূলতঃ এটি বাঙালির ঘরের পূজো, মায়ের কাতর আহ্বানে মেয়ের বাপের বাড়িতে আসার পূজো। শরতকালে আকাশে বাতাসে আগমনীর সুরটি বেজে ওঠার সাথে সাথে গিরি-জায়া মেনকার কন্ঠে যে সুর ধ্বণিত হয়:
"যাও যাও হে গিরি আনিতে উমায়,
কাল সপনে দেখেছি, উমা নাকি খুব কেঁদেছে ---
তার-ই ফলস্বরূপ কন্যা উমার ধরাতে আগমন... সুদূর কৈলাশ থেকে।
ষষ্ঠী, সপ্তমী, অষ্টমী, নবমী--- এই চারদিনের সময় কোথা দিয়ে কেটে যায়!
আসে বিজয়ার মহাবিদায়ের মাহেন্দ্রক্ষণ। চোখের জলে বিদায় দেন কন্যা উমাকে। উমাকে রওনা করে দিয়েই খবর পাঠিয়ে দিলেন গিরিরাজ হিমবাহ হিমালয়।
পিতা নীলকন্ঠ পাখির কানে কানে বলে দিলেন উমা পিত্রালয় থেকে রওনা হয়েছে। এই সংবাদটি যেন মহেশ্বরকে আগে গিয়ে দিয়ে দেয়।
আর দূত গিয়ে মহেশ্বরকে জানিয়ে দেবার অব্যবহিত পরেই উমা গিয়ে পৌঁছায় কৈলাসপতির কাছে।
এই কারণেই বর্তমানে পূজোর পর নীলকন্ঠ পাখিকে আকাশে উড়িয়ে দেওয়া হয় এই ভেবে যে ---- সে গিয়ে কৈলাশে যথারীতি মহাদেবকে মা উমার প্রত্যাবর্তনের সমাচারটি দিয়ে দেবে।
কিন্তু হায়!!!
এখন তো আর পৌরাণিক যুগ নয়।
নীলকন্ঠ পাখিকে ধরে আনতে হয়; তাকে অর্থের বিনিময়ে কিনে এনে পিঞ্জরাবদ্ধ করতে হয়। তারপর বিজয়ার দিনে সকালে মা''র প্রত্যাবর্তনের খবরটি পৌছে দেবার জন্য, আনুষ্ঠানিক ভাবে তাকে ঐ পিঞ্জর (খাঁচা) থেকে বার করে উড়িয়ে দেওয়া হয়।
বনের পাখিকে খাঁচায় বন্দী করে রাখার ফলে, তার ঐ ছোট্ট ডানা কমজোরি হয়ে পড়ে; কৈলাশ তো দূরস্থান, সামান্য কিছুটা ওড়ার পর সে হারিয়ে ফেলে তার বায়ুতে ভর করে আকাশে ওড়া।
আর ঠিক তখনই চিল, কাক আরো ঐ জাতীয় পাখি তাকে আক্রমণ করে ও ঠুকরে মেরে ফেলে। এই কারণেই বর্তমানে নীলকন্ঠ পাখির ওড়ানোর অনুষ্ঠানটি নিয়ম করে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
যেসব বড়ো বড়ো বনেদি বাড়িতে ওই প্রথা চালু ছিল, সেখানে এখন মাটির নীলকন্ঠ পাখি তৈরী করে প্রায় মানা হয়।
আমরাও যেন--- মানস-চক্ষে--- কল্পনার আশ্রয় নিয়ে দেখি ... নীলকন্ঠ পাখি কৈলাশে পৌছে গিয়ে ধ্যানমগ্ন কৈলাশেশ্বর শিবকে ডেকে বলছে,
"ওগো মহাযোগী, আর ধ্যানে ডুবে থেকো না। তোমার কৈলাশেশ্বরী উমামা-কে ফিরিয়ে এনেছি । তুমি চোখ চাও , আর আবার আগের মতো শিব-শক্তি একত্রিত হয়ে মহানন্দে থাকো। "


