পুরুলিয়ার তারাপীঠ মৌতড়ের জাগ্রত মা বড়কালীর মন্দিরে উপচে পড়ল দর্শনার্থীদের ভিড়, লক্ষাধিক ভক্ত সমাগম

পুরুলিয়ার তারাপীঠ মৌতড়ের জাগ্রত মা বড়কালীর মন্দিরে উপচে পড়ল দর্শনার্থীদের ভিড়, লক্ষাধিক ভক্ত সমাগম
আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়, পুরুলিয়া
রাজ্যের অন্যতম তথা পুরুলিয়ার তারাপীঠ জেলার সেরা মৌতড়ের মা বড় কালী পুজোয় সোমবার সকাল থেকে সারারাত ধরে দর্শনার্থীদের ভিড় উপচে পড়ল। ভিন ভিন রাজ্যের প্রচুর ভক্ত সমাগম হয় মৌতড়ের জাগ্রত মা বড়কালীর মন্দিরে।
সোমবার ছিল কালীপুজো। আজ মঙ্গলবার কালীপুজোর পরের দিন পান্না। রাজ্যের অন্যতম তথা পুরুলিয়া জেলার সব থেকে বড় কালীপুজো মৌতড়ের মা বড় কালীর পুজোর দিকে নজর জেলার এমনকি পড়শী রাজ্য ঝাড়খণ্ডের বহু ভক্তের। রাজ্যের অন্যতম তথা পুরুলিয়া জেলার সব থেকে বড় এই কালীপুজোর বৈশিষ্ট্য হল বলিদান। এখানে পুজোর রাত থেকে শুরু হয় বলি। চলে পরের দিন দুপুর পর্যন্ত। পাশাপাশি সারা বছর ধরে মায়ের নিমিত্তে ছাগ, ভেড়া, বলিদান করা হয়ে থাকে এই মৌতড়ের কালী মন্দিরে।
দক্ষিণেশ্বরের মন্দিরের আদলে পুরুলিয়ার রঘুনাথপুর 2 নম্বর ব্লকের মৌতড়ের মা বড়কালীর পুজো নিয়ে জনশ্রুতি রয়েছে, সাধক শোভারাম মুখোপাধ্যায়ের হাত ধরে এখানকার পুজো শুরু হয়। নতুনভাবে দক্ষিণেশ্বর মন্দিরের আদলে কয়েক বছর আগে নতুন করে মন্দির তৈরি হওয়ায় মৌতড় গ্রামের এই পুজো অন্য মাত্রা পেতে চলেছে। গত দুবছর করোনার জেরে পুজো হলেও মেলা হয় নি।
বিভিন্ন জনশ্রুতিতে ভরা এই পুজোয় শুধু জেলারই নয়, আশেপাশের জেলা ও ভিন ভিন রাজ্য ঝাড়খন্ড বিহার উড়িষ্যা থেকে বহু ভক্ত এখানে পুজো দিতে আসেন। ভিড় সামাল দিতে হিমশিম খেতে হয় পুলিশকর্মীদের। তবে ঠিক কত বছর আগে এই পুজো শুরু হয় তার সঠিক হিসাব নেই উদ্যোক্তাদের কাছে। তবে এলাকার জনশ্রুতি ও মৌতড় গ্রামের পুজো নিয়ে লেখা কিছু বইতে উল্লেখ করা তথ্য অনুযায়ী, কয়েক শতাব্দি আগে গ্রামের বাসিন্দা বিশ্বনাথ ভট্টাচার্যের জামাই সাধক শোভারাম মুখোপাধ্যায় মৌতড় গ্রামে কালীপুজো শুরু করেছিলেন। স্থানীয় বাসিন্দা তথা লোকগবেষক সুভাষ রায় বলেন মৌতড় গ্রামের কালীপুজো ঠিক কবে থেকে শুরু হয়েছিল সে বিষয়ে নির্দিষ্ট তথ্যের অভাব রয়েছে। তবে জানা যায় বর্ধমানের বাসিন্দা, শোভারাম মুখোপাধ্যায়ের সাথে মেয়ের বিয়ে দিয়েছিলেন মৌতড় গ্রামের বিশ্বনাথ ভট্টাচার্যর। শোভারাম মৌতড় গ্রামেই থেকে গিয়েছিলেন। সাধক প্রকৃতির শোভারাম দিনে-রাতে এলাকার শ্মশানে জঙ্গলে ঘুরে বেড়াতেন। পঞ্চমুন্ডির আসন প্রতিষ্ঠা করে তিনি পুজোপাঠ শুরু করেন।পরে ওই জায়গাতেই মন্দির গড়ে উঠে। তন্ত্রমতে সিদ্ধ এই পঞ্চমুন্ভির আসনটি বর্তমানে মন্দিরের নীচে রয়েছে বলে দাবি পুজো উদ্যোক্তাদের।
বহু চর্চিত পুরুলিয়ার রঘুনাথপুর 2 ব্লকের মৌতড়ের মা বড় কালীপুজো। এই পুজো নিয়ে এলাকায় কম জনশ্রুতি নেই। এই পুজো হয় কার্তিক মাসের অমাবস্যায়। দূর্গা পূজার বিজয়া দশমীর পরদিন থেকে সাধারণত শুরু হয়ে যায এই পূজার প্রস্তুতি। সেই রেশ চলে ভাতৃদ্বিতীয়ার দিন পর্যন্ত। তবে এই পুজোর প্রধান আকর্ষণ পশু বলি। এখানে পুজোর রাত থেকে শুরু হয় বলি। চলে পরের দিন দুপুর পর্যন্ত। যার আকর্ষনে হাজার হাজার কৌতুহলী দর্শনার্থী ভিড় জমায় মেলা প্রাঙ্গণে। বংশানুক্রমে এ মন্দিরের পৌরহিত্য করে আসছেন সনৎ বন্দ্যোপাধ্যায়রা। সনৎ বাবুর কথায় ,মানুষ বিশ্বাস করে পূজা দেন। মানত পুর্ণ হয়। মন্দিরে এখনো রয়েছে শতাধিক বছরের পুরনো পুঁথী। সেই পুথি অনুযায়ী পুজো হয় ।পুজোর সময়ে সেই পুঁথি পাঠ করা হয়। সনৎ বাবু শোনাচ্ছিলেন পুজোর অতীত দিনের কথা। বিশ্বাস আর ভক্তি যেখানে মিশে গিয়েছে, সেখানে যুক্তি-তর্ক দিয়ে বিচার হয় না। বস্তুত এই ধরনের হাজারো অলৌকিক ঘটনার উদাহরণ নিয়েই কয়েক শতাব্দী ধরে নিজস্ব মহিমায় চলে আসছে মৌতড়ের " মা বড় কালী" পুজো। এবার মৌতড়ের জাগ্রত মা বড়কালীর মন্দিরে প্রচুর ভক্ত সমাগম হয়েছিল। ভিন রাজ্য থেকেও প্রচুর ভক্ত সমাগম হয়েছিল এই মন্দিরে।


