রাজার বংশধরের নামেই উৎসর্গ হয় নদীয়ার সীমান্তের জগদ্ধাত্রী পূজা

রাজার বংশধরের নামেই উৎসর্গ হয় নদীয়ার সীমান্তের জগদ্ধাত্রী পূজা
21 Nov 2023, 05:50 PM

রাজার বংশধরের নামেই উৎসর্গ হয় নদীয়ার সীমান্তের জগদ্ধাত্রী পূজা

 

কুহেলি দেবনাথ, নদিয়া

 

 নদীয়ার কৃষ্ণগঞ্জের ভারত বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী গ্রামের বানপুর মাটিয়ারি গ্রাম পঞ্চায়েতের মাটিয়ারির ফুলবাড়িতে প্রায় ১০০ বছর ধরে একটি জগদ্ধাত্রী পুজো হয়ে আসছে। আগে দুই দেশের বাসিন্দারা মিলেমিশে এক হয়ে যেত এই পুজোকে কেন্দ্র করে। বর্তমানে সীমান্তে তারকাটার বেড়া হয়ে যাওয়াই বাংলাদেশের বাসিন্দারা আর আসতে পারেন না এই পুজোয়। তবে এই পুজোই বর্তমানে শাস্ত্রীয় রীতি নীতি মেনে কৃষ্ণগঞ্জ ব্লকে জাঁকজমক করে প্রথম মহিলা পরিচালিত জগদ্ধাত্রী পুজো হিসেবে পূজিত হচ্ছে। গত ছ'বছর ধরে মহিলা পরিচালিত ফুলবাড়ি পোড়া মা তলা সার্বজনীন জগদ্ধাত্রী পুজোতে মহিলারা সমস্ত কিছু করেন। পুজো কমিটির সদস্যরা জানিয়েছেন, মহিলারা ঢাকও বাজায়। ফল কাটে। ভোগের জোগাড় করে। বাড়ি বাড়ি গিয়ে এই মহিলারাই প্রসাদ পৌঁছে দেয়। এছাড়াও পুজোয় তাসা, ব্যাণ্ডের টিমও মহিলা পরিচালিত নিয়ে আসা হয়।

এলাকার বাসিন্দারা জানান, ১৬০৫ সালে সম্রাট আকবরের মৃত্যুর পর জাহাঙ্গীর সিংহাসনে আসীন হন। এই সময় আকবরের সেনাপতি মান সিংহ বারো ভূঁইয়াদের শায়েস্তা করতে নদীয়ার মাটিয়ারি এলাকায় চলে আসেন। এই সময় তাকে বিভিন্ন ভাবে সহায়তায় করেছিলেন ভবানন্দ মজুমদার। তার জন্য ভবানন্দ মজুমদারকে পুরস্কারস্বরূপ জাহাঙ্গীর ডঙ্কা, সিংহাসন সহ বেশ কিছু উপহার সামগ্রী দিয়েছিলেন। ভবানন্দ মজুমদার পরে মাটিয়ারি থেকে কৃষ্ণনগর চলে আসেন। ভবানন্দ মজুমদারকে নদিয়া রাজের প্রতিষ্ঠাতা বলা হয়।নদিয়ারাজের সব থেকে বিখ্যাত মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায়কে বলা হয়। তবে তাঁর পূর্বসুরী ভবানন্দ মজুমদারের বসতভিটা ছিল এই, বানপুর মাটিয়ারিতেই। সেখানে  আজও অনেক রাজপুত রয়েছে। কলকাতা থেকে বানপুর মাটিয়ারী দূরত্ব ১১০ কিলোমিটার। শিয়ালদা থেকে ট্রেনে করে বানপুর স্টেশনে নেমে অটো রিকশায় পৌঁছানো যাবে। অন্যদিকে বাসে করে কৃষ্ণনগর থেকে বানপুর ৩৫ কিলোমিটার। বাস থেকে নেমে অথৈ পৌঁছানো যাবে । প্রায় ১০০ বছর আগে ভবানন্দ মজুমদারের বাড়ি থেকে এক কিলোমিটার দূরে কৃষ্ণগঞ্জ ব্লকে প্রথম জগদ্ধাত্রী পুজো হয় কাঠালতলা রাজপুত বালক সংঘের মাধ্যমে। 

 দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের সময় এই এলাকায় অস্থায়ী  মিলিটারি ক্যাম্পও হয়৷ বছর সাতেক আগে এখানে হওয়া দুর্গাপুজোতে ক্লাবে নোটিশ টাঙানো হয়। তাতে পুরনো জগদ্ধাত্রী পুজো আর করা যাচ্ছে না বলে নোটিশে উল্লেখ থাকে কোন এক অজানা কারণে। গ্রামের মহিলারা মেনে নিতে পারলেন না এই পূজা বন্ধের নোটিশ। এই সময় এলাকার মহিলারা এগিয়ে আসেন। তারা বলেন আমরা নিজেরা দায়িত্ব নিয়ে এই পুজো করবো। সবাবতোই দেখা গেল তারা পুজোর দায়িত্ব নিজেদের কাঁধে তুলে নেন। শুরু হয় মহিলা পরিচালিত কৃষ্ণগঞ্জ ব্লকে প্রথম জগদ্ধাত্রী পুজো। এখানকার জগদ্ধাত্রী মায়ের মূর্তি সাবেকি । পুজোটা  বৈষ্ণব মতে হয়।একদিনে সপ্তমী, অষ্টমী, নবমী পুজো হয়। পুজোতে চালকুমড়ো বলি দেওয়া হয়। পোলাও, খিচুড়ি, লুচি, পায়েস ৫ ভাজা, মিষ্টি,  ফল দেওয়া হয়। এই পুজোতে ঢাকিও মহিলা। সমস্ত কাজ মহিলারা করেন। গ্রামের এই পুজো সম্বন্ধে ৭৩ বছরের সাধন মুখোপাধ্যায় বলেন, 'এই পুজোটা প্রায় একশো বছরের। এখানকার মা জগদ্ধাত্রী খুবই জাগ্রত । পুজো উৎসর্গ করা হয় ভবানন্দ মজুমদারের নামেই। আমরা ছোট থেকেই পুজোটা দেখছি। পুজো মণ্ডপ থেকে ১ কিমি দূরে ভবানন্দ প্রতিষ্ঠিত শিব মন্দির  আজও আছে। গ্রামে শোনা যায় রাজপুতরা এই পুজোটা শুরু করেছেন। 'জগদ্ধাত্রী পুজোকে ঘিরে স্থানীয় বাসিন্দাদের উৎসাহ উদ্দীপনা থাকে চোখে পড়ার মতো।

Mailing List