সীমান্ত বাংলার তুলনাহীন তুলিন, প্রকৃতির অফুরান সৌন্দর্য্যের স্বর্গ রাজ্য  

সীমান্ত বাংলার তুলনাহীন তুলিন, প্রকৃতির অফুরান সৌন্দর্য্যের স্বর্গ রাজ্য   
09 Jan 2023, 10:40 AM

সীমান্ত বাংলার তুলনাহীন তুলিন, প্রকৃতির অফুরান সৌন্দর্য্যের স্বর্গ রাজ্য

 

ড. সুবীর মন্ডল

 

পুরুলিয়া বলতে আমরা এতদিন অযোধ্যা, বাগমুণ্ডি, বড়ন্তি, জয়চণ্ডীপাহাড়, মাঠাপাহাড়, গড়পঞ্চকোট রাজবাড়ী, ছৌনাচের গ্রাম চড়িদা, বুধপুর -পাকবিড়া, দুয়ারসিনি, ভালোপাহাড় অথবা দোলাডাঙা বুঝতাম। কিন্তু পুরুলিয়া জেলার যে এতো সুন্দর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যে ভরপুর শান্ত, নিরিবিলি, মনোরম এমন হৃদয়হরণকারী এটি জায়গা রয়েছে, 'বানসা ও ঝালদার  মুরগুমাতে' না গেলে সেটা কোনদিন অনুভব করতে পারতাম না। এ-যেন একটুকরো দক্ষিণ-পশ্চিম বঙ্গের স্কটল্যাণ্ড, প্রকৃতির অফুরান সৌন্দর্য্যের স্বর্গ রাজ্য। যেখানে দু'-তিনদিন হারিয়ে যাওয়া যায়।

কংক্রিটের কৃত্রিম শহর থেকে অনেক দূরে যেখানে গা ছুঁয়ে মেঘেদের আনাগোনা, রং-বেরঙের রঙিন পাহাড়ি ফুল, প্রজাপতি, কুয়াশা ঘেরা পাহাড়ি গ্রামে ক্লান্ত মন ছুটে যায় বারবার। যেন নতুন করে নিঃশ্বাস নিতে শেখায় পাহাড় ।ঝালদা পেরিয়ে একঘেয়ে জীবন থেকে খানিকটা স্বস্তি পেতে এ বার আপনার ঠিকানা হতে পারে সীমান্ত বাংলার তুলনাহীন তুলিন।

জঙ্গল মহলের মসৃণ রাস্তা দিয়ে রাঙা মাটির হৃদয় ছুঁয়ে ৬০কিমি গতিতে গাড়ি চলছে, পুরুলিয়ার বাগমুন্ডির শহরের অভিমুখে। দ্রুত  পালটাচ্ছে প্রকৃতি। অবশেষে হাতিরামপুর, মানবাজার, বরাবাজার বলরামপুর, হয়ে আড়াই ঘন্টায় বাগমুন্ডিতে প্রবেশ করলাম। দূরত্ব ১০০কিমি। একটু চা পানের ক্ষণিক বিরতি। ঘড়ি সময় জানাচ্ছে সকাল ৭টা। শীতের কুয়াশামাখা সকাল। বাগমুন্ডির রাস্তায় গাড়ি-জট তখনও শুরু হয়নি। বাগমুন্ডির  সীমানা ছাড়িয়ে দ্বিমুখি  রাস্তা। মুরির  দিকে রাঁচিগামী পথে গাড়ি চলতে শুরু করল। গাড়িতে বসেই  টিফিন পর্বশেষ করলাম।

একটু বাদে ঝালদা-মুরি রোড পেলাম। ঢেউ খেলানো মসৃণ স্বপ্নের রাস্তা। ল্যাণ্ডস্কেপ অনেকটাই মধুপুর-শিমূলতলার যেন কালার ফটোকপি। ঝালদা হয়ে, তুলিন ছুঁয়ে আমরা অবশেষে পৌঁছলাম তুলিনের একেবারে কাছে বাংলা-ঝাড়খণ্ডের সীমান্তে মুরি জংশনে। সাজানো গোছানো সুবর্ণরেখার নদীর তীরে খুব সুন্দর ছোট শহর। লোকজনের সংখ্যা পনের-ষোল হাজারের মত।বাগমুন্ডি থেকে দূরত্ব  42 কিমি, সময় লাগল১ ঘন্টার মত। ঘড়িতে তখন সকাল ৮টার কিছু বেশি। প্রথমে দেখা হলো সুবর্ণরেখা নদীর সঙ্গে। ছোটনাগপুর পাহাড়ের হাতছানি আর চোখ জুড়ানো সবুজ প্রকৃতি। ভালোলাগার পরিমাণ অনেকটাই বাড়িয়ে দিল দূষণ মুক্ত নির্মল অনাঘ্রাতা প্রকৃতির মায়াবী রূপ।এখান থেকে সোজা একটি রাস্তা চলে গেছে হাজারিবাগ। আর ডানদিকের পথ বোকারোগামী। আর একটি পথ রামগড় হয়ে  সরাসরি অপরূপা পত্রাতু উপত্যকায়। লোকমুখে জানলাম এখান থেকে রাজারাপ্পার ছিন্নমস্তা মন্দিরের দূরত্ব ৬০কিমি। মনটা কেমন হয়ে গেল, এতকাছে এসেও মা ছিন্নমস্তাকে দেখতে পাবনা!  মুরি রেল শহর, ঝাড়খণ্ডের সিংভূম জেলায় অবস্থিত। এখানে একটি ইণ্ডালের কারখানা দেখলাম সবাই। লোহারদাগা থেকে আকরিক এনে এখানে গুঁড়ো করা হয়। চারিদিকে ছোট ছোট টিলা, মেঘের চাদর গায়ে ঢাকা দিয়ে রয়েছে। ইতস্তত জঙ্গল আর দিগন্তের তরঙ্গায়িত নীল পাহাড় শ্রেণি। দু'একটা পাখির ডাক, সুবর্ণরেখার অস্ফূট কলধ্বনি। শীতের পাতা ঝরার রিক্ততা, বসন্তে পলাশ, শিমুল, কুসুমের রক্তিমাভায় রঙিন প্রকৃতি--দুর্দান্ত সব সিল্যুয়েট নিয়ে তুলনাহীন তুলিন ও মুরি। চারিদিকে ঘুরতে শুরু করলাম। একে- একে সুবর্ণরেখার তীরের সূর্য, শনি, হনুমান, শিব, কালি মন্দির গুলো দেখলাম। মোহাবিষ্ট হলাম। নীরবে নিভৃতে সুন্দরকে উপভোগ করার মতো জায়গা কম -ই আছে। মুরির রেললাইনের কাছে একটি হোটেলে ডিম, ভাত, সব্জি দিয়ে দুপুরের খাওয়া পর্ব সারা হলো। সময় নষ্ট না করে দুপুর ১টার সময় গাড়ি করে বেরিয়ে পড়লাম।

তুলিন পুরুলিয়ার শেষ গ্রাম। পাশেই সুবর্ণরেখা নদী এবং তার পরেই ঝাড়খণ্ড বর্ডার। তুলনাহীন তুলিন। ছোট্ট একটি গ্রাম। যার চারিপাশে সুন্দর পাহাড় ও শালপিয়ালের সবুজের সমুদ্র। ঠিক যেনো জীবন শিল্পীর তুলি দিয়ে আঁকা। সাপ পাহাড় (চপদ), বানসা পাহাড়, লায়েক বাঁধ, শনি মন্দির, সুবর্ণরেখা ওল্ড রেলওয়ের ব্রিজ, কেরওয়ারির জঙ্গল ও মাঘা নদের দিকে পলাশ বন।তুলিন গ্রামে থাকার জায়গা কম আছে ।

তবে যদি রাজকীয় ভাবে পুরোনো ঐতিহ্যে থাকতে চান যেখানে সব রকমের সুযোগ সুবিধা আছে তাহলে " Tulin Heritage Bungalow" আপনার উপযুক্ত জায়গা। পুরুলিয়াতে একটাই হেরিটেজ বাংলো আছে যেটায় রাজকীয় ভাবে খাওয়ার সুব্যবস্থা আছে।

 

১৯২০ সালে শ্রী মহিম চন্দ্র দে সরকার এই বাংলোটি তৈরি করেছিলেন ৮০ বিঘা জমি জুড়ে। ছুটির দিনে সপরিবারে এখানে সময় কাটাবেন বলে। এই বাংলো তে সাহিত্যিক বিমল মিত্র, বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়, মহিষাদল এর রাজা, ঝালদার রাজা সাহেব- এনাদের আনাগোনা প্রায়।

বাংলোটিতে একটি বিশাল মাপের গোলাপ বাগান ও প্রচুর গাছ পালা রয়েছে এবং তার সাথে আছে প্রায় ১০০ বছর আগেকার বিশাল এক প্রকান্ড পাতকুয়া যেটাকে ইদারা বলা হয়।

বাংলোর মধ্যে প্রচুর গাছ থাকার জন্য নানান ধরনের পাখি ভর্তি থাকে যেমন ডালিয়া, কোকিল, ময়না, বুলবুলি, টিয়া, শালিক, ঘুঘু , হরিয়াল, চোরাই, মুনিয়া এবং এইখানে প্রচুর এক্সটিনক্ট বার্ড ও সিসানাল বার্ড দেখা যায়।

বর্তমানে এটি একটি বুটিক রিসোর্ট এ পরিণত করা হয়েছে সমস্ত আধুনিক সুযোগ সুবিধা করা হয়েছে রুম এর মধ্যে এসি, ইলেকট্রিক কেটল, ফ্ল্যাট স্ক্রীন টিভি, চা, কফি শাশেট, মিনারেল ওয়াটার, কম্ফি বেড, দুভেট কভার থেকে বাথরুমে গিসার, টাওয়েল, হ্যান্ড টাওয়েল, টয়লেট্রিজ সেগুলোর সাথে পুরনো ঐতিহ্য বজায় রাখা হয়েছে যেমন লাল মেজে, করিবর্গার সিলিং, সেগুন কাঠের বড় জানলা, দরজা , বড় লাল সিমেন্টের বাঁধানো বসার জায়গা। বারান্দায় রয়েছে অরিজিনাল বাইসন, সাম্বার, বুনো শুয়োর, হরিণ এর মুখ সমেত সিং যেগুলো ট্রফি হান্টিং করার পর স্টাফিং করে টাঙানো। সুন্দর একটি ছাদ রয়েছে সেইখানে সন্ধ্যে হলেই আড্ডা মারার মোক্ষম স্থান।

সাইটসিং এর জন্য পুরুলিয়ায় দিকে তুলিন থেকে কংসাবতী নদীর তীরে দেউলঘাটা তে পাথরের  মূর্তি ও পোড়া মাটির মন্দির,মুরুগুমা ড্যাম এর সূর্যাস্ত, খায়রাবেরা ড্যাম এর সৌন্দর্য,অযোধ্যা পাহাড় এবং ওখানে মার্বেল লেক, বামনী ফলস, তুরগা ফলস, আপার ও লোয়ার ড্যাম। তারপর বাঘমুন্ডির দিকে পাখি পাহাড় ও প্যারডি লেক ঠিক গর্গাবুরুর পাশে, তারপর বাঘমুন্ডি থেকে তুলিন ফেরার পথে চড়িদা মুখোশ গ্রাম। এই সব জায়গায় এক ঘণ্টা কিছু মিনিট লাগে তুলিন থেকে সবই প্রায় ২০ থেকে ৫০ কি.মি এর মধ্যে।

এদিকে ঝাড়খণ্ড এর দিকে জনা ফলস, সিতা ফলস, হুন্ডু ফলস, দশম ফলস, রাজরাপ্পা, গেটালসুদ ড্যাম, পালানি ফলস, পাত্রাতু ভ্যালী, পাত্রাতু লেক, পাত্রাতু ড্যাম ও ঘুরতে যাওয়া যায়। এগুলো সব ৩০ কি মি থেকে ৯০ -১০০কি মি এর মধ্যে।শুধু ঘুরতে নয় যদি কেউ কিছু দিন একা সময় কাটাতে চায় ফটোগ্রাফি, লেখা, ছবি আঁকা, প্রি ওয়েডিং শুট, শুটিং ইত্যাদি করার জন্য দারুন জায়গা।এই বাংলো এমনই এক জায়গা এখানে বন্ধু বান্ধব, ফ্যামিলি নিয়ে আসার জন্য দারুন।

আবার বয়স্ক লোক জন যারা রিটায়ার করেছেন ঘুরতে বেড়াতে পছন্দ করেন তাদের জন্য তুলিন একটি দারুন জায়গা, সকলের একবার ঘুরে যাওয়া উচিত। মুরি শহর থেকে ঝালদা শহরের দূরত্ব ৪কিমি, ১০মিনিটে পৌঁছলাম ঝালদার আগে তুলিনে। বানসা পাহাড় হলো পুরুলিয়া জেলার ছোট্ট পাহাড়ি, এক অজ পাড়াগাঁ। জনপদ ছাড়িয়ে সবুজ গাছের আড়ালে নিজের সৌন্দর্যকে লুকিয়ে রেখেছে বানসা পাহাড়। প্রকৃতির নিভৃত আঁচলের তলায় মুখ লুকানো বাংসা পাহাড় দেখে আমরা মুগ্ধ হলাম। ভীষণ মনকাড়া জায়গা। স্হানীয় লোকের কথা অনুযায়ী পুরুলিয়া জেলার এই ছোট্ট অঞ্চলের নামকরণের পিছনে এক অলৌকিক ঘটনা লুকিয়ে আছে। যেটাকে লোককাহিনী ও কিংবদন্তি বলা যেতে পারে।এই গ্রামে বাংসা বাবা নামে এক বৃদ্ধ থাকতেন। ওই বৃদ্ধকে গ্রামের কোন ও এক বাসিন্দা এঁটো থালায় খেতে দেন। তারপর আর বাংসা বাবার   হদিস পাওয়া যায়নি। গ্রামের মানুষ বাংসা বাবাকে ফিরে পাওয়ার জন্য পুজো করতে শুরু করলেন। সেই থেকেই বাংসা ঠাকুরের পুজোর প্রচলন শুরু হল, আর তাঁরই নামে নামকরণ হল বাংসা গ্রাম ও বাংসা পাহাড়। পাহাড়ের দিকে পা বাড়াতেই দেখলাম গাছতলায় রাখা রয়েছে দেব- দেবীর মূর্তি। আর একটু এগিয়ে দেখলাম একটি ছোট্ট মন্দির। মন্দিরের মাথায় লেখা আছে বাংসা ঠাকুর। জানলাম, পৌষ মাসে বড় মেলা বসে। চোখে পড়ল পলাশের উজাড়  করা অপার সৌন্দর্য্য।নকশা করা মাটির বাড়ি। বাড়ির উঠোনে মুরগি চড়ে বেড়াচ্ছে। চারিদিকে শুধু সবুজের সমারোহ। একটা ছোট্ট চায়ের দোকান দেখলাম। সবাই চা ও বিস্কুট খেলাম। দেখলাম আদিবাসী সম্প্রদায়ের পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন সুন্দর ঘরবাড়ি।এই সবকিছু কে ঘিরেই বাংসা গ্রামের অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি। আর এরই কোলে গড়ে উঠেছে মনহরণকারী বানসা পাহাড়। আমরা প্রত্যেকে পাহাড় প্রেমিক। এই পাহাড়ের উল্টোদিকে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে, আর একটা নাম না -জানা পাহাড়, সেটাও কিছুটা বাংসা পাহাড়ের গা ঘেঁষে গড়ে উঠেছে।এই দুই পাহাড়ের মধ্যে দিয়ে চলে গেছে রেললাইন। একটুকরো সবুজের মাঝে তুলিন রেল স্টেশন। গাড়ি আসা -যাওয়ার শব্দে মুখরিত হয়ে উঠেছে বাংসা পাহাড়ের চারিদিক। বাইরের পৃথিবীর  থেকে  মনে হয়, যেন অনেক দূরে।  পাহাড়কে জড়িয়ে রেখেছে পলাশ, শিমুল, হরিতকি আর করঞ্চের  দল। সুন্দর আকৃতির পাথরের গঠনে আমরা আকৃষ্ট ও মুগ্ধ হয়ে পড়ি। এক সঙ্গেই বলে উঠলাম--'বাংসা তুমি কত সুন্দর'! পাহাড় থেকে দূরে দেখলাম তিনটি গ্রাম মেটাল,মারু,ও অর্ডার। আর দূরে বয়ে চলা নাম  না- জানা নদী। প্রকৃতির এই সুন্দর শান্ত পরিবেশ থেকে ঘরে ফিরতে কার- ই বা মন চায়! ফিরতেই হবে,কেন না, আমরা সবাই সময়ের গণ্ডির মধ্যে বাঁধা। বিদায়ী মন ফিরে ফিরে চায় বাংসার দিকে অপলক নয়নে। উথালপাথাল এক মানসিক অস্হিরতার মধ্যে মনে পড়ে গেল:'আকাশ ডাকে আজ আমায়/পাহাড় ডাকে  আজ আমায়।'সত্যিই, বাংসা যেন আমাদের বিদায় দিতে চাইছে না।বেলা তখন ৪টে। সন্ন্যাসীলজ, ১০০বছরের বটবৃক্ষ, pwd-এর বাংলো ও তুলিন স্টেশন ঘুরে আমরা চললাম মুরগুমা লেকের উদ্দ্যেশে। রাত কাটাবো ঐ খানের সেচ বিভাগের গেস্ট হাউসে। বেগুনকোদর   বাজার থেকে দূরত্ব তিন কিমি। বাজার ছাড়াতে  ধুলো ওড়া পথ। পথ ছবিতে সবুজের সঙ্গে আদিবাসী মানুষজনের ঘর-দুয়ার।ঝলক দর্শনেই মেলে স্হানীয়দের রোজ নামতার ছবি। গ্রাম ফুড়ে় রাস্তা উঠেছে বাঁধের উপরে। অবশেষে মুখোমুখি হলাম মুরগুমার সঙ্গে । সাহেবজোর নদীর উপর কৃত্রিম লেক। সবুজে ঘেরা এই লেকের দৃশ্য অতুলনীয়। একটি, দুটি পাহাড় ঢুকছে দৃশ্যমান হয়ে। আর দূরে সর্ষে ফুলের খেতটি যেন, পাহাড়ের পায়ের উপরে মেলে দেওয়া হলুদ বর্ডারে সবুজ শাড়িটি মাঘের রৌদ্রে শুকোচ্ছে। পথের ধারে  পাহাড়তলিতে শিমুল-পলাশের দাবানল। দূরে দলমা পাহাড়ের হাতছানি। গোধূলির আলোয় মুরগুমা বড় মায়াময়, অপার্থিব সুন্দর। মায়াবী নীলাঞ্জন মাখানো ছবির মতো সুন্দর।অনায়াসে কাটিয়ে দেওয়া যায় গোটা রাত। রাতের খাওয়ার শেষ হলো দেশী মুরগির ঝোল দিয়ে। সবাই চলে এলাম লেকের পাড়ে। সৌভাগ্য বশত দিনটি ছিল ভরা চাঁদের রাত। এক মায়াবি জগৎ।মন ছুঁয়ে যায়় কল্পলোকে।পরতে পরতে প্রকৃতির অকৃপণ উজাড়  করা অপার সৌন্দর্য্য।আমরা লেকের অন্যপ্রান্তে চলে এলাম। রাতে দৃশ্যমান হল দলমারেঞ্জ। মৌনতার নীরব সাক্ষী।  মায়াবী চাঁদের আলো এখানে পথে পথে আল্পপনা এঁকে এঁকে চলেছে। রাত গভীর থেকে গভীরতর হলো। ফিরে এলাম গেস্ট হাউসে।তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়লাম সকলে। ভাবছি,এবার তো ফিরে যাওয়ার পালা। নতুন সকালের জন্য অপেক্ষা। সময় যেন কিছুতেই কাটছে চাইছে না। পরেরদিন, নতুন ভোরে এক অন্যরূপ দেখলাম মুরগুমার। শান্ত, স্নিগ্ধ। ভোরের সূর্যোদয়ের দৃশ্য এককথায় অতুলনীয়। টিফিন করে গোটা ঝালদা শহরটা ঘুরেনিলাম। ছোট্ট পৌরসভা। জনসংখ্যা  ২০০০০। একে একে শিকার, শিলফোর, কালিপাহাড়, নহবাহড়়াড্যাম, বহুপ্রচীন মন্দির-- সব কিছুই দেখলাম। দুপুরের খাওয়া পর্ব এখানকার রাজদূত হোটেলে সারলাম।বেলা২টায় ঘরে ফেরার পথ ধরলাম। অন্য পথে ফিরছি। ঝালদা - বাগমুণ্ডি-- মাঠাপাহাড়-চড়িদা- বলরামপুর, বান্দোয়ান, ঝিলিমিলি-রানীবাঁধের পথে গাড়ি চলতে শুরু করেছে। শীত, বসন্ত ও বর্ষায় অপরূপা মুরগুমা ও বাংসা। বিভিন্ন জনপদভূমি ছুঁয়ে এগোতে লাগলাম। দূরত্ব ১৫০কিমি। এই অঞ্চল টি যেন সবুজের বাড়াবাড়ি উপস্থিতি। মন পাগল করে দেয়। ফলে শীতের  একেবারেই  শুরুতেই সবুজ প্রকৃতি দেখতে দেখতেই ফিরছি। সময়ের হাত ধরে সূর্য ডোবার পালা এসে গেলো। সদ্য শীতের পড়ন্ত বিকেল বেলায় শালপিয়ালের জঙ্গলের সঙ্গে আকাশের এই রঙের খেলার সাক্ষী আমরা ।একে একে বাংসা আর মুরগুমার বিরল স্মৃতিকে সঙ্গী করে গাইতে লাগলাম ঘরে ফেরার সুর। এই পথ যদি না শেষ  হয়-- বান্দোয়ান-কাটিন ছুঁয়ে  ঝিলিমিলি-রানীবাঁধের পথে ,চায়ের দোকান দেখলাম, একটু বিরতি।আবার পথ চলা।অবশেষে পৌঁছলাম নিজের  শহরে।

থাকার ব্যবস্থা- তুলিন এ Tulin Heritage Bungalow এটি একটি বহু পুরনো বাংলো যেটি 2020 সালে বুটিক রিসর্ট এ সংস্কার করা হয়েছে...!!!

পথনির্দেশ--কোলকাতা--দুর্গাপুর ব্যারেজ--বাঁকুড়া --পুরুলিয়া--ঝালদা--তুলিন ।ট্রেনে কলকাতার থেকে মুরি স্টেশন (ঝাড়খণ্ড)

লেখক: শিক্ষক, বাঁকুড়া

Mailing List