নিহতের সংখ্যা বেড়েই চলেছে, ধ্বংসস্তুপে আরও তো দেহ মিলবে চিন্তায় মরক্কো

নিহতের সংখ্যা বেড়েই চলেছে, ধ্বংসস্তুপে আরও তো দেহ মিলবে চিন্তায় মরক্কো
আনফোল্ড বাংলা প্রতিবেদন: থামার কোনও লক্ষণ নেই। বেড়েই চলেছে মৃতের সংখ্যা। মরক্কোর প্রশাসনও যেন হাঁপিয়ে উঠছে পরিসংখ্যান দিতে। শুক্রবারের করালরাত্রির ভয়াবহতা এখনও প্রবলভাবে বিদ্যমান। গতকাল পর্যন্ত ভয়ালভয়ঙ্কর ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা দু’হাজার ছাড়িয়ে গেছিল। আর সোমবার? লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে সেই সংখ্যা। মরক্কো প্রশাসন সূত্রে খবর, মৃতের সংখ্যা এখনও পর্যন্ত আড়াইহাজার ছাড়িয়েছে। আহতদের সংখ্যাও দু’হাজারের থেকে বেড়ে গেছে। এবং আহতদের মধ্যে বেশিরভাগেরই অবস্থা সংকটজনক।
বহু মানুষ এখনও ধ্বংসস্তুপের তলায় চাপা পড়ে রয়েছে। উদ্ধার করা সম্ভব হচ্ছে না। ভূমিকম্পের দু’দিন পরও জীবিত ব্যক্তির সন্ধানে মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছেন উদ্ধারকারীরা। প্রাণঘাতী ভূমিকম্পের কারণে মরক্কোর বিভিন্ন পাহাড়ে ধস নেমেছে। পাহাড় ধসের কারণে যান চলাচল বিঘ্নিত হচ্ছে। ঠিকঠাক ত্রাণ সামগ্রী আহতদের কাছে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে যার জেরে। রাস্তা-ঘাটে ফাটল ধরায় সড়কপথ যান চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। সব হারানো মানুষরা খোলা জায়গায় বা খেলার মাঠে আশ্রয়গ্রহণ করেছেন। আহতদের সংখ্যা ক্রমশ বৃদ্ধি পাওয়ায় রোগীর চাপ বাড়ছে হাসপাতালগুলিতে। মারাকাশ থেকে ষাট কিমি দূরের গ্রাম তাফেঘাগতে। এই গ্রামটি ভূমিকম্পের আঘাতে পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। গ্রামের বাসিন্দা বাহাত্তর বছরের ওমর বেনহান্না শূন্য চোখে বলছিলেন, ‘‘আমার তিন নাতি-নাতনি ও তাদের মা মারা গেছে। তাদের দেহগুলি এখনও ধ্বংসস্তুপের তলায় রয়েছে। অথচ ঘটনার কয়েক ঘণ্টা আগেই আমরা সব একসঙ্গে বসে খেয়েছিলাম।’’ অ্যাটলাস পর্বতমালার বেশ কয়েকটি পাহাড়ি গ্রাম সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে। মারাকাশের বাসিন্দা ফাতেমা সাতির মানুষদের দুর্দশার কথা টেনে আনলেন। বললেন, ‘‘মানুষজন কোথায় রয়েছে দেখুন। আমাদের কেউ সাহায্য করছে না। বাড়ি-ঘর সবকিছু গেছে। চিকিৎসার ব্যবস্থা নেই। আহতরা সমস্যায় পড়ছে। কেউ দেখছেই না।’’
মরক্কোর আর একগ্রাম আসনি। এই গ্রামের বহু মানুষ ধ্বংসস্তুপের তলায় চাপা পড়ে গেছে। চরম দুর্ভোগে রয়েছেন এখানকার বাসিন্দারা। কোনও ত্রাণ আসেনি। দুর্গম পাহাড়ি গ্রামগুলির ঘর-বাড়ি কাদামাটির তৈরি ইঁট দিয়ে বানানো। কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছে, ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল আল হাউস প্রদেশের দুটি গ্রামে হতাহতের সংখ্যা সবথেকে বেশি। মরক্কোর প্রশাসন জানাচ্ছে, এই ভয়ঙ্গর ভূমিকম্পে সতেরো হাজার পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। উদ্ধার কাজও চলছে পাল্লা দিয়ে। মরক্কোর সেনাবাহিনীর সদস্য ও অসামরিক উদ্ধারকারীরা প্রাণপণ চেষ্টা করছেন মানুষদের উদ্ধারে। আহত ব্যক্তিদের রক্ত দিতে স্থানীয় অধিবাসীরা ছুটে যাচ্ছেন হাসপাতালে। স্পেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, ৫৬ উদ্ধারকারীর একটি দল উড়োজাহাজে জারাগোজা থেকে মারাকেশের উদ্দেশে রওনা করেছে। তল্লাশি চালাতে তাদের সঙ্গে চারটি প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কুকুরও পাঠানো হয়েছে। স্পেনের পাশাপাশি আরও বেশ কয়েকটি দেশ মরক্কোর জনগণকে সহযোগিতার প্রস্তাব দিয়েছে। বিশ্ব ব্যাংক, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল, আফ্রিকান ইউনিয়ন এবং ইউরোপীয় কমিশন থেকেও সহযোগিতার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।


