হাওড়া জেলার বনসাই সম্রাট, তাঁর কাজকর্ম দেখলে যে কেউ বিস্মিত হবেন

হাওড়া জেলার বনসাই সম্রাট, তাঁর কাজকর্ম দেখলে যে কেউ বিস্মিত হবেন
ড. সমরেন্দ্র নাথ খাঁড়া
ক্লাস নাইনে পড়ার সময় একটা পাকুর গাছকে ছোট করে রাখার পরিকল্পনা শুরু। এটা দেখা ও কিছুটা ধারণা পাওয়া শুকতারা পত্রিকা থেকে। যদিও একদম ছোটবেলা থেকে গাছ বসানোর শখ। সেই পাকুর গাছের বনসাই এখনও তার বনসাই সাম্রাজ্যে বর্তমান ও এখনও তার প্রেরণা। তিনি হলেন হাওড়া জেলার আমতা -২ ব্লকের জয়পুর গ্রামের প্রণব কুমার মল্লিক। জয়পুর ফকিরদাস ইনস্টিটিউশন থেকে পড়াশুনা শেষ করে জামশেদপুরে টাটা মোটরস থেকে National Council of Training in Vocational Trade এ ইলেকট্রিক্যাল পাস করে টাটা মোটরসে চাকরী করতে থাকেন।কিন্তু ঘুমিয়ে থাকা শিল্পীর বামন গাছ তৈরির শিল্প ২০১২ সাল থেকে জেগে ওঠে। বাণিজ্যিকভাবে শয়ে শয়ে বিভিন্ন গাছকে বামন অর্থাৎ বনসাই তৈরী করে অর্থের মহীরুহ তৈরী করে ফেলেছেন। বিভিন্ন রাজ্যে প্রণববাবুর বামন গাছ অর্থাৎ বনসাই যাচ্ছে।রাজ্যের বিভিন্ন পুষ্প প্রতিযোগিতায় এই সব শৈল্পিক বামন গাছ অর্থাৎ বনসাই দিয়ে অংশগ্রহণ করে প্রচুর পুরষ্কার লাভ করেছেন।জয়পুরের মতো দূরবর্তী ও প্রত্যন্ত গ্রামে বনসাই সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছেন। শিল্পীর হাতের ছোঁয়ায় প্রতিটা গাছের মধ্যে শিল্প সুষমা লেগেছে।২০১৭ সালে মাননীয় মুখ্যমন্ত্রীর হাত থেকে রাজ্যস্তরে হাওড়া জেলা থেকে কলকাতার নজরুল মঞ্চে 'কৃষক সম্মান ' পেয়েছেন।
হাওড়া জেলা উদ্যানপালন দপ্তর থেকে ভর্তুকিতে পলি হাউস দেওয়া হয়েছিল। প্রণববাবুর অনুরোধ যদি একটা শেড নেট দেওয়া হয়,তাহলে বনসাইয়ের আরও এলাকা ও সংখ্যা বাড়াবেন। প্রণববাবু জানান ' বিভিন্ন যুবক - যুবতীদের প্রশিক্ষণ দিয়ে তাদের স্বনির্ভর করতে চাই।'
যে সকল প্রজাতির গাছের উপর প্রণববাবু বেশি কাজ করছেন। যেমন -বট, পাকুড়, লং আইল্যান্ড, গ্রীন আইল্যান্ড, রেটুসা, নুডা বেঞ্জামিন, দেস্মডিয়াম, কার্মনা, প্রেমনা, গুমি, গমেলিনা, এলম, মালবেরী, বুগেনভালিয়া,কামিনী, যজ্ঞ (যোগী) ডুমুর,অ্যাডেনসনিয়া,শিলা,পাইন। সব মিলিয়ে প্রায় ২৫০০ এর বেশি বনসাই আছে। সবথেকে বেশি প্রেমনা প্রায় ১৬০০ বনসাই। কার্মনা ৩০০। বিভিন্ন আকারের বা উচ্চতার ৬ ইঞ্চি থেকে ৩৬ ইঞ্চি।
যে সকল ভঙ্গিমায়/স্টাইলে করেছেন। যেমন -এক্সপোজড রুট, ফরমাল আপরাইট, ইনফরমাল আপ রাইট,স্লান্টিং, ৪ সেমি ক্যাসকেড, ক্যাসকেড, রাফট, টুইন ট্রাঙ্ক, ট্রিপল ট্রাঙ্ক, মাল্টি ট্রাঙ্ক, জিন ও সারি, ফরেস্ট।তামাম ভারতবর্ষের যেসব বনসাই শিল্পী আছেন, তার মধ্যে প্রণববাবুর 'এক্সপোজড রুট' আলাদা মানের ও মাত্রার; মুন্সিয়ানার পরিচয় দেয়।
আমার মতে (হাওড়া জেলার উপ উদ্যানপালন অধিকর্তা ড.সমরেন্দ্র নাথ খাঁড়া), 'বনসাই শিল্পীর হাতের কাজ দেখার মতো। এমন প্রত্যন্ত গ্রামে এমন শিল্প সুষমা ও অর্থ উপার্জনের পথ খুলে বনসাইয়ের সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছেন, তার দেখে অবাক হতে হয়।'
প্রণববাবুর বিভিন্ন গাছের কাঠ ও কাঠের গুঁড়ি কেটে তৈরী করেছেন বিভিন্ন মনীষীর মূর্তি, শিল্প সুষমার বিমূর্ত রূপ। এই সব নিয়ে কলকাতার প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণ করেন।
লেখক: হাওড়া জেলার উপ উদ্যানপালন অধিকর্তা
................


