বিজেপির কট্টর হিন্দুত্ব এসপি-র বর্ণ জোটকে মাথা তুলতে দেয়নি

বিজেপির কট্টর হিন্দুত্ব এসপি-র বর্ণ জোটকে মাথা তুলতে দেয়নি
11 Mar 2022, 04:00 PM

বিজেপির কট্টর হিন্দুত্ব এসপি-র বর্ণ জোটকে মাথা তুলতে দেয়নি

 

বিপ্লব বসু

 

পঞ্জাব ছাড়া অন্য ৪ রাজ্যে গেরুয়া ঝড় বইছে। তারমধ্যে উত্তরপ্রদেশ ছিল অন্যতম। ভারতবর্ষের রাজনীতিতে একটা মিথ আছে, উত্তরপ্রদেশের রাজ তার, ভারতবর্ষ তার। অর্থাৎ ২০২৪ লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির পারে হাওয়ার তীব্রতা বাড়ল।

কিন্তু যোগীর গড়ে অখিলেশ যাদবদের দিকে হাওয়া মোরগের মুখটা ঘুরল না কেন তার কয়েকটা কারণ উঠে আসছে।

প্রথমত: বিজেপির প্রচার অযোধ্যা, কাশী এবং মথুরার মন্দির সহ বেশ কয়েকটি উপাদানের উপর কেন্দ্রীভূত ছিল। অন্যদিকে, সমাজবাদী পার্টি মুসলিম, এসসি এবং ওবিসি সম্প্রদায়ের নেতাদের সাথে হাত মিলিয়ে একটি কার্যত: ধর্মনিরপেক্ষ জোটের দিশাকে তুলে ধরেছিল। কিন্তু তথাকথিত 'রামরাজ্যে' এই জোটকে মানুষ হয়তো কিছুটা সিঁদুরে মেঘের আদলে দেখেছিল। বিজেপির হিন্দুত্বের ধ্বজা হয়তো এরফলে দুর্বল হয়ে পড়বে এটাই হিন্দু ভোটকে এককাট্টা করেছিল। কারণ বিজেপি অখিলেশের  এসপিকে "মুসলিম তুষ্টির" অভিযোগে বিঁধে  আগেভাগে নিজেদের পক্ষে হিন্দুত্বের কার্ড খেলতে সক্ষম হয়েছিল। এই প্রেক্ষাপটে অতীত  ইস্যুগুলির মধ্যে ছিল ২০১৩ সালের মুজাফফরনগর দাঙ্গা।

দ্বিতীয়তঃ পাঁচটি রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফলে স্পষ্ট, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির জনপ্রিয়তা এখানেই রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্বাচনমুখী গোবলয়ের দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ জুড়ে ২০টিরও বেশি  সমাবেশ এবং পাঁচটি ভার্চুয়াল সমাবেশ করেছেন। যা তিনি এর আগে কখনোই করেননি।

তৃতীয়তঃ চূড়ান্ত পর্বের আগে, প্রধানমন্ত্রী মোদি তাঁর সংসদীয় নির্বাচনী এলাকা বারাণসীতে তিন দিনের জন্য রীতিমতো শিবির বসিয়েছিলেন। এর ফলে শুধু বারাণসীতে নয়, সমগ্র অঞ্চল জুড়ে বিজেপির বিশাল বিজয় হয়েছে।

চতুর্থতঃ অখিলেশ যাদব, তাঁর 'নতুন সমাজবাদী পার্টি'র প্রচারে এবং 'জনমোহিনী'  ম্যানিফেস্টো দিয়ে, উত্তর প্রদেশের ভোটারদের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করতে পারেননি। অর্থাৎ ভোটারদের একটা বড় অংশ সমাজবাদী পার্টিকে ক্ষমতায় নিয়ে এলে মোদির জনপ্রিয় 'দোনো হাত মে লাড্ডুর' তত্ত্ব হাতছাড়া হয়ে যাবে এটাই ছিল তাঁদের কাছে সংশয়ের। বিজেপি অত্যন্ত  সুকৌশলে সমান্তরালভাবে হিন্দুত্ব এবং উন্নয়নের প্রচারকে মিশিয়ে প্রচারের নয়া মোড়ককে মানুষের কাছে তুলে ধরেছিল। একদিকে, প্রধানমন্ত্রী মোদি কাশী বিশ্বনাথ করিডোর উদ্বোধন করার সময়, তিনি জেওয়ার সহ উত্তরপ্রদেশের মাটিতে পাঁচটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন। অন্যদিকে সরযূ খাল প্রকল্প ছাড়াও বিজেপি গঙ্গা, বুন্দেলখণ্ড এবং পূর্বাচল এক্সপ্রেসওয়ের উপর বাড়তি জোর দিয়েছিল। এখানকার ভোটারদের ২১ শতাংশ দলিত। কিন্তু মায়াবতী নির্বাচনের দৌড়ে সেভাবে না থাকায় বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছিল দলিতদের মধ্যে। ফলে সেই ভোটেরও অধিকাংশই গেরুয়া শিবিরে জমা পড়ে যায়। দলিতরা বিনামূল্যের রেশন এবং বাসস্হানের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রকল্পগুলির কারণে বিজেপির ছত্রছায়ায় থাকার সিদ্ধান্ত নেন। দলিত নেতা চন্দ্রশেখর আজাদের সঙ্গে অখিলেশ যাদবের সংক্ষিপ্ত সম্পর্ক দলিতরা তেমন করে মেনে নিতে পারেননি। অন্যদিকে  অ-যাদব ওবিসিদের ভোট  এসপির ভোট বাক্সে পড়েনি। ফলে সব মিলিয়ে এসপি-র বর্ণ জোটকে মাথা তুলতে দেয়নি বিজেপি। অন্যদেরও একই দশা।

Mailing List