সাগর দত্ত হাসপাতালে চালু হচ্ছে টার্সিয়ারি ক্যানসার কেয়ার সেন্টার, কতটা পরিষেবা মিলতে পারে সেখানে?

সাগর দত্ত হাসপাতালে চালু হচ্ছে টার্সিয়ারি ক্যানসার কেয়ার সেন্টার, কতটা পরিষেবা মিলতে পারে সেখানে?
19 Aug 2022, 12:15 PM

সাগর দত্ত হাসপাতালে চালু হচ্ছে টার্সিয়ারি ক্যানসার কেয়ার সেন্টার, কতটা পরিষেবা মিলতে পারে সেখানে?

 

আনফোল্ড বাংলা প্রতিবেদন: মাত্র চারজন চিকিৎসকের ভরসায় চালু হতে চলেছে টার্সিয়ারি ক্যানসার কেয়ার সেন্টার। যেখানে রাজ্যের বিভিন্ন জেলা থেকে রেফার হয়ে ক্যানসারের গুরুতর অবস্থার রোগীদের ভর্তি হওয়ার কথা। কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের মিলিত তহবিলে প্রায় ৪৫ কোটি টাকা খরচ করে তৈরি হচ্ছে এই কেন্দ্রটি। কলেজ অফ মেডিসিন অ্যান্ড সাগর দত্ত হাসপাতাল এ খুলতে চলেছে এই বিভাগ।                         

হাসপাতাল সূত্রের খবর, চারতলা এই বিল্ডিংটির নীচের দুটি তলায় থাকবে দুটি বাংকার। সেখানে উচ্চ শক্তি সম্পন্ন রেডিয়েশনের যন্ত্রপাতি থাকবে। উপরের বাকি তলাগুলিতে থাকবে রোগীদের থাকার বন্দোবস্ত। তবে শুধু 'ডে কেয়ার' এ যেসব রোগীদের কেমো থেরাপি দেওয়া হবে তাঁদের জন্যই খোলা হচ্ছে এই কেন্দ্রটি। ডে কেয়ারের রোগীদের জন্য বরাদ্দ হচ্ছে তিরিশটি শয্যা। বাকি ক্যানসারের যাবতীয় চিকিৎসা এখানে এখনই হবে না বলে জানা যাচ্ছে। কারণ মাত্র চারজন চিকিৎসকের ভরসায় ক্যানসারের মত গুরুত্বপূর্ণ রোগের যাবতীয় চিকিৎসার পরিষেবা দেওয়া সম্ভব নয় বলে মনে করছে অভিজ্ঞ মহল। 

কিন্তু পুজোর আগেই চালু করে দেওয়া হবে এই টার্সিয়ারি ক্যানসার কেয়ার কেন্দ্রটি। আনুষ্ঠানিকভাবে ঘটা করে উদ্বোধনেরও পরিকল্পনা রয়েছে। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন এখনই এটি চালু হলে শুধু কেমো থেরাপি দেওয়া ছাড়া আর কোনও পরিষেবা দেওয়ার সুযোগ থাকছে না। ক্যানসার চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি কেনার জন্য আবেদন করা হয়েছে। ওই যন্ত্র চালানোর জন্য কর্মীও চাওয়া হয়েছে স্বাস্থ্য ভবন থেকে। সেটি পদ্ধতির মধ্যে রয়েছে। এর পর যন্ত্রগুলো চালু করার জন্য কেন্দ্রীয় সংস্থা অ্যাটমিক এনার্জি রেগুলেটরি বোর্ড থেকে সবুজ সংকেত দিলে তার পর চালু হবে রেডিয়েশন পরিষেবা। সব মিলিয়ে কেন্দ্রটি সামান্য এগোনোর জন্যও বহু দূরের পথ।                               

কিন্তু প্রাথমিক সব কাজ হয়ে গেলেও যা অবস্থা দাঁড়াবে তাতে একে টার্সিয়ারি ক্যানসার কেয়ার সেন্টার বলা যাবে না বলে অভিযোগ জানান, চিকিৎসক সংগঠন, অ্যাসোসিয়েশন অফ হেল্থ সার্ভিস এর সাধারণ সম্পাদক ড. মানস গুমটা। তিনি বলেন, 'যদি যন্ত্রগুলি লেগে যায় এবং সেগুলি চালিত করার জন্য কর্মী নিয়োগও হয় তাহলেও এটি এখন শুধু কেমো থেরাপি দেওয়ার জন্য ডে কেয়ার সেন্টার এবং রেডিয়েশন সেন্টার হয়েই থেকে যাবে। প্রকৃত টার্সিয়ারি ক্যানসার সেন্টার বলতে যেটা বোঝায় সেটি এখনই হচ্ছে না। তার জন্য অস্ত্রোপচার করার মত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দরকার। মাত্র চারজনকে দিয়ে ক্যানসারের সমস্ত পরিষেবা দেওয়া যায়না।' তাঁর যুক্তি যদি পরে মানবসম্পদ বৃদ্ধিও পায় তাহলে এখনই যদি একে টার্সিয়ারি সেন্টার নামে চিহ্নিত করা হয় সেটি ভুল হবে।                

হাসপাতাল সূত্রে খবর, এখানে এখন শুধু জেনারেল সার্জারি বিভাগ আছে। ক্যানসার রোগীদের জন্য অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন পড়লে যেটুকু ওই বিভাগের শল্য চিকিৎসকদের আওতার মধ্যে পড়ে সেই অস্ত্রোপচারগুলি তাঁরা করেন। এমনকি এখানে অঙ্কো সার্জারি বিভাগও নেই। যদি কোনও রোগীর মস্তিষ্কে ক্যানসার হয় তাহলে অস্ত্রোপচার করতে নিউরো সার্জেনের প্রয়োজন, যদি ফুসফুসে ক্যানসার হয় সেক্ষেত্রে সিটিভিএস বিশেষজ্ঞদের প্রয়োজন আবার কিছু ক্ষেত্রে প্লাস্টিক সার্জেনদের প্রয়োজন। ক্যানসারের চিকিৎসার জন্য প্রয়োজন আরও অনেক বিশেষজ্ঞ বিভাগ ও চিকিৎসক। কিন্তু এই বিভাগগুলিই সাগর দত্তে  নেই। তাই যেখানে এখান থেকেই ক্যানসার রোগীদের অন্যত্র রেফার করতে হয় সেখানে এটিকে এক ছাতার তলায়একটি পরিপূর্ণ ক্যানসার চিকিৎসার কেন্দ্র তৈরি করতে গেলে সেটা এখনই সম্ভব নয় বলে মনে করছেন চিকিৎসকদের একাংশ। তাদের মতে এই কেন্দ্রটি চালু হলে এখন যেখানে তিন, চারজন রোগীর কেমো দেওয়া সম্ভব হচ্ছে সেখানে তিরিশজনকে দেওয়া যাবে। আর বহির্বিভাগে জায়গা কিছুটা বাড়বে। কিন্তু এই মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ ড. পার্থ প্রতীম প্রধান এই বিষয়ে আশাবাদী। তিনি বলেন, 'প্রাথমিক পর্যায়ে কেন্দ্রটি শুরু করা গেলে সব ধীরে ধীরে হয়ে যাবে।'                                   

কিন্তু এটিকে উদ্বোধনের পরই আদৌ টার্সিয়ারি ক্যানসার পরিষেবা কেন্দ্র বলা যাবে কি না সেই নিয়ে প্রশ্ন উঠছে চিকিৎসকদের মধ্যে।

Mailing List