ভূগোল শিক্ষা: বহির্জাত প্রক্রিয়া, প্রথম পর্ব, দশম শ্রেণীর প্রাকৃতিক ভূগোল, প্রথম অধ্যায়

ভূগোল শিক্ষা: বহির্জাত প্রক্রিয়া, প্রথম পর্ব, দশম শ্রেণীর প্রাকৃতিক ভূগোল, প্রথম অধ্যায়
দীপান্বিতা ঘোষ
প্রশ্নঃ ভূমিরূপ গঠনকারী প্রক্রিয়া বলতে কী বোঝো ?
যে সকল ভৌত ও রাসায়নিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ভূত্বকের উপরিভাগে নানা ভূমিরূপের সৃষ্টি, বিনাশ,পরিবর্তন ও বিবর্তন হয়ে চলেছে তাদের একত্রে ভূমিরূপ গঠনকারী প্রক্রিয়া(Geomorphic process)বলে।
প্রশ্নঃ কোন দুটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ভূমিরূপ গঠনকারী প্রক্রিয়া কার্যকর হয়?
(i)অন্তর্জাত প্রক্রিয়া(Endogenic process)
(ii)বহির্জাত প্রক্রিয়া(Exogenic process)
অন্তর্জাত প্রক্রিয়া (Endogenic process)
ভূ-অভ্যন্তরে উদ্ভূত বলের প্রভাবে স্থানীয় বা আঞ্চলিকভাবে কঠিন ভূত্বকের যে ধীর ও আকস্মিক পরিবর্তন ঘটে তাকে অন্তর্জাত প্রক্রিয়া বলে।
উদাহারন: ভূগাঠনিক পাত-সঞ্চালনের ফলে সংঘটিত ভূ-আলোড়ন, ভূমিকম্প, আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত প্রভৃতি।
বহির্জাত ভূমিরূপ গঠনকারী প্রক্রিয়া(Exogenic process) বলতে কি বোঝ?
ভূ-বহিঃস্থ বা পৃথিবীরপৃষ্ঠে বিভিন্ন প্রাকৃতিক শক্তির মাধ্যমে যান্ত্রিক ও রাসায়নিক পদ্ধতিতে ভূপৃষ্ঠের বিবর্তন ও পরিবর্তনকেই বহির্জাত ভূমিরূপ গঠনকারী প্রক্রিয়া বলে।
উদাহরণ: নদী,হিমবাহ,বায়ু,সমুদ্রতরঙ্গ ইত্যাদি হোলো ভূমিরূপ গঠনকারী শক্তি।এবং এদের দ্বারা সংঘটিত প্রক্রিয়া গুলোই ভূমিরূপ গঠনকারী প্রক্রিয়া।
বহির্জাত শক্তি প্রধান কার্যকরী অঞ্চল
নদীপ্রবাহ—বৃষ্টিপাতযুক্ত আর্দ্র অঞ্চল।
হিমবাহ—উচ্চপার্বত্য অঞ্চল ও উচ্চঅক্ষাংশ।
বায়ু— মরু ও মরুপ্রায় অঞ্চল।
সমুদ্র তরঙ্গ—উপকূল অঞ্চল।
অন্তর্গত ও বহির্জাত প্রক্রিয়া পার্থক্য লেখ:
1.কার্যকরী অঞ্চল
অন্তর্জাত প্রক্রিয়া ভূগর্ভের অভ্যন্তরে ক্রিয়াশীল হয়।
বহির্জাত প্রক্রিয়া ভূপৃষ্ঠের উপরিভাগে ক্রিয়াশীল হয়।
2.পদ্ধতি
অন্তর্জাত প্রক্রিয়ার পদ্ধতিগুলো হল পাত সঞ্চালনের ফলে সংগঠিত ভূ আলোড়ন,ভূমিকম্প ও আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাত।
বহির্জাত প্রক্রিয়ার পদ্ধতিগুলো হলো নদী, বায়ুপ্রবাহ, হিমবাহ,সমুদ্রতরঙ্গ দ্বারা ভুমিরূপের ক্ষয়, বহন ও সঞ্চয়।
3.কাজের ধরন
অন্তর্জাত প্রক্রিয়া আকস্মিকভাবে কাজ করে আবার ধীরগতিতেও কাজ করে।
বহির্জাত প্রক্রিয়া অনেক সময় ধরে ধীরে ধীরেই কাজ করে।
4.ফলাফল
অন্তর্জাত প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পর্বত, মালভূমি,সমভূমি প্রভৃতি ভূমিরূপ গড়ে ওঠে।
বহির্জাত প্রক্রিয়ায় ভূপৃষ্ঠে ক্ষয় ও সঞ্চয়ের মাধ্যমে ভূমিরূপের পরিবর্তন ঘটে ও বিভিন্ন অনুভূমিরূপ যেমন— গিরিখাত, রসমোতানে, ইনসেলবার্জ গড়ে ওঠে।
পর্যায়ন(Gradation) বা পর্যায়ন প্রক্রিয়া কাকে বলে?
ক্ষয়সীমার সাপেক্ষে অসমতল ও বন্ধুর ভূমির সমতলে পরিণত হওয়ার প্রক্রিয়াকে পর্যায়ন বলা হয়।
কোন দুটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পর্যায়ন প্রক্রিয়া কার্যকর হয়
অবরোহন এবং আরোহন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পর্যায়ন প্রক্রিয়া কার্যকর হয়।
অবরোহন(Degradation)প্রক্রিয়া কাকে বলে?
যে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিভিন্ন
বহির্জাত শক্তিসমূহ ভূপৃষ্ঠের কোন উঁচু
ভূমিকে ক্রমাগত ক্ষয়ের ফলে সমতল ভূমিতে পরিণত করে তাকে অবরোহন প্রক্রিয়া বলে।
আরোহন প্রক্রিয়া কাকে বলে?
যে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিভিন্ন বহির্জাত প্রাকৃতিক শক্তি সমূহের মাধ্যমে সঞ্চয় কাজের ফলে স্থল ভূমির নিচু অংশ বা নিম্নভূমি ভরাট হয়ে উঁচু হয়ে যায়,সেই প্রক্রিয়াকে আরোহন প্রক্রিয়া বলে।
অবরোহন এবং আরোহন প্রক্রিয়ার পার্থক্য লেখ
- প্রধান কাজ
অবরোহন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ভূপৃষ্ঠের কোন উঁচু জায়গা ক্রমাগত ক্ষয়ের ফলে সমতল ভূমিতে পরিণত হয়।
আরোহন প্রক্রিয়ায় ক্ষয়জাত পদার্থ ভূপৃষ্ঠের নীচু অংশে সঞ্চিত হয়।
2.বৈশিষ্ট্য
অবরোহণ প্রক্রিয়ায় ভূমির উচ্চতা হ্রাস পায়।
আরোহন প্রক্রিয়ায় ভূমির উচ্চতা বৃদ্ধি পায়।
3.পদ্ধতি
বিভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিক শক্তির ক্ষয়ের মাধ্যমে অবরোহন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়।
বিভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিক সঞ্চয়কাজের ফলে আরোহন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়।
- নিয়ন্ত্রক
আবহবিকারের মাত্রা, প্রাকৃতিক শক্তি দ্বারা ক্ষয় করার ক্ষমতা,পুঞ্জিতক্ষয়,ক্ষয়ীভবন ইত্যাদি হলো অবরোহনের নিয়ন্ত্রক।
ভূমির ঢাল,পলি-বালির পর্যাপ্ত ও নিয়মিত যোগান হল আরোহণের নিয়ন্ত্রক।
অবরোহন ও আরোহণের মূল পার্থক্য কি?
অবরোহন প্রক্রিয়ায় ক্ষয়ের মাধ্যমে উঁচু ভূমির উচ্চতা হ্রাস পায়।
আরোহন প্রক্রিয়ায় সঞ্চয়কাজের মাধ্যমে নিচু ভূমি ভরাট হয়ে ভূমির উচ্চতা বৃদ্ধি পায়।
পর্যায়িত ভূমি কাকে বলে?
ক্ষয় ও সঞ্চয় কাজের মাধ্যমে কোন ভূমিরূপের মধ্যে যখন সাম্য অবস্থা বিরাজ করে,তখন সেই ভূমিরূপকে পর্যায়িত ভূমি বলে।
আবহবিকার কাকে বলে?
যে প্রক্রিয়ায় আবহাওয়া ও জলবায়ুর বিভিন্ন উপাদান দ্বারা ভূপৃষ্ঠের শিলাস্তর যান্ত্রিকভাবে চূর্ণ-বিচূর্ণ ও রাসায়নিকভাবে বিয়োজিত হয়ে স্ব-স্থানে অবস্থান করে তাকে আবহবিকার বলে।
ক্ষয়ীভবন কি?
যে প্রক্রিয়ায় আবহবিকারজাত পদার্থসমূহ উৎপত্তিস্থল থেকে অন্যত্র পরিবাহিত বা অপসারিত হয়ে ভূপৃষ্ঠের উচ্চতা হ্রাস করে তাকে ক্ষয়ীভবন বলে।
পুঞ্জিত ক্ষয় কাকে বলে?
উচ্চভূমির ঢালের মৃত্তিকা ও শিলাস্তর অভিকর্ষের টানে ঢাল বেয়ে নিচে নেমে আসার ঘটনাকে পুঞ্জিত ক্ষয় বলে।
নগ্নী ভবন কাকে বলে
আবহবিকার,পুঞ্জিতক্ষয় এবং ক্ষয়ীভবন এই তিনটি পদ্ধতির যৌথ ক্রিয়াশীলতায় ভূপৃষ্ঠের উপরিভাগের শিলাস্তর ক্ষয়ীভূত হয়ে অপসারিত হয়।এর ফলে নিচের শিলাস্তর উন্মুক্ত হয়ে পড়ে। এই প্রক্রিয়াকেই নগ্নীভবন বলে।
ক্ষয়সীমা কাকে বলে?
ক্ষয়কারী শক্তিগুলি ভূপৃষ্ঠের নিচে যতটা পর্যন্ত ক্ষয় করতে পারে তা হল ক্ষয়সীমা।
সমুদ্রতল হলো ক্ষয়কাজের শেষসীমা(Base level of erosion)
ক্ষয়ীভবন ও পুঞ্জিত ক্ষয়ের মূল পার্থক্য কি?
ভূ-পৃষ্ঠস্থ বিভিন্ন শক্তির মাধ্যমে পদার্থের অপসারণ হল ক্ষয়ীভবন।
অভিকর্ষজ বলের প্রভাবে ভূমির ঢাল বরাবর পদার্থ নেমে আসা হল পুঞ্জিত ক্ষয়।
লেখক: ভূগোলের শিক্ষিকা, নান্দারিয়া হাইস্কুল, শালবনি, পশ্চিম মেদিনীপুর।
—-----------০—-----------


