তালিবান, আতঙ্ক ও বর্তমান আফগানিস্তান

তালিবান, আতঙ্ক ও বর্তমান আফগানিস্তান
তালিবান ও আতঙ্ক। দু’টি শব্দ সমার্থক হয়ে উঠেছিল অনেক আগেই। কোনও ব্যক্তির মাত্রাতিরিক্ত আগ্রাসন দেখলেই, এক বাক্যে সকলে বলে ওঠেন, তালিবানি কায়দা। তারই সঙ্গে প্রতিবাদে বলে ওঠেন, তালিবানি কায়দায় এসব চলবে না।
এমনকি, ভালোবাসার ক্ষেত্রেও এই শব্দবন্ধ ব্যবহৃত হয়। প্রেমিক যদি প্রেমিকাকেও জোরজবরদস্তি আদর করতে যায়, সেক্ষেত্রেও স্বতঃস্ফুর্ত এই কথা বেরিয়ে আসে। যা থেকে আরও পরিষ্কার তালিবানি কায়দা ঠিক কী রকম।
বিশ বছর আগের সেই তালিবান ফের স্বমহিমায়। একটি দেশের শসন ক্ষমতা দখল করতে এগিয়ে এলো বন্দুক হাতে। রাজধানীর রাস্তায় সারি সারি ট্যাঙ্ক। অর্থাৎ বন্দুকের নলে ক্ষমতা দখল। আর যা দেখে দেশ ছেড়ে পালালেন দেশের তাবড় নেতা। সেনাবাহিনী অস্ত্র ছেড়ে আত্মসমর্পণ করল।
না, যুদ্ধ হয়নি। রক্তপাতও ঘটেনি। বিনা রক্তপাতে দেশের দখল নিল জঙ্গিরা, আতঙ্কবাদীরা। প্রশ্ন উঠল, আমেরিকা কোটি কোটি টাকা খরচ করে বিশ বছর ধরে একটি দেশের সেনাকে প্রশিক্ষণ দিল। অত্যাধুনিক অস্ত্র দিল। কিন্তু আমেরিকা সেনা সরিয়ে নেওয়ার একশ দিনের মাথায় একটি জঙ্গি গোষ্ঠী বা আতঙ্কবাদীরা দখল করে নিল একটি দেশ। যে দেশের সেনার সংখ্যা নাকি প্রায় সানে তিন লক্ষ। আর আতঙ্কবাদী বা তালিবানিদের সংখ্যা ৭৫ হাজারের আশপাশ। কিভাবে এটা সম্ভব হল?
এর পিছনে আমেরিকার প্রশিক্ষণ থেকে অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র দেওয়া নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এর পিছনে পাকিস্তান ও চিনের হাত রয়েছে বলে সরব হয়েছেন একাংশ। কিন্তু এখনও কাউকে ঘটনার প্রতিবাদে কোনও দেশকে পথে নামতে দেখা যায়নি।
আতঙ্কিত আফগানবাসীরাই এবার পথে নামতে চলেছেন। কারণ? তাঁরা বুঝে গিয়েছেন, নীরবে থাকলেও প্রাণ যাবে। তার থেকে প্রতিবাদ করেই না হয় প্রাণ যাক। কেন দেশে থাকলেই প্রাণ যাবে? তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ আফগান নাগরিকরাই। তালিবানরা আশ্বাস দিয়েছে, সাধারণ মানুষের উপর নাকি কোনও রকম অত্যাচার বা নিপীড়ন করা হবে না। তবু দেখা যাচ্ছে প্রাণ বাঁচাতে উড়োজাহাজের ছাদে উঠে ফেলেছেন মানুষ! আর উড়ান চলতেই আকাশ থেকে পড়ছেন। বিমান বন্দরে ঢুকতে কী কসরৎই না করলেন সকলে। নিজের কোলের বাচ্চাকে পর্যন্ত পড়ে থাকতে দেখা গেল বিমানবন্দরে! এই চিত্র থেকেই বোঝা যায়, তালিবান শব্দটিই কতটা আতঙ্কের।
এবার তালিবানরা সরকার তৈরি করবে। মন্ত্রীসভাও নাকি গঠনকরে ফেলেছে। শুধু প্রকাশ্যে ঘোষণা বাকি। আর মহিলারা ভয়ে কাঁপছেন। আবার তাঁদের পড়াশোনা বন্ধ। রাস্তায় বেরোনো নিষেধ। বোরখা না পরলে প্রকাশ্যে অকথ্য মারধর। খেলাধূলো, বিনোদন থেকে প্রায় সব কিছুতেই নাকি রাশ টানা হবে। আবার নাকি কুড়ি বছর পিছিয়ে যাবে আফগানিস্তান। কিন্তু এমনটা হঠাৎ ঘটল কেন? মাত্র ১০ দিনে একটি আতঙ্কবাদী সংগঠন কিভাবে একটি দেশের দখল নিল? এই প্রশ্নে উত্তাল গোটা বিশ্ব। বিশ্বের ক্ষমতাধর দেশগুলি এখন আফগানিস্তানের স্বাধীনতা ফিরিয়ে দিতে কী করে, সেদিকেই তাকিয়ে বিশ্ব।


