ছাত্রবন্ধু ক্রেডিট কার্ড: কিছু আশা, জিজ্ঞাসা, ধোঁয়াশা

ছাত্রবন্ধু ক্রেডিট কার্ড: কিছু আশা, জিজ্ঞাসা, ধোঁয়াশা
ড. গৌতম সরকার
নির্বাচনী ইস্তেহারে প্রতিশ্রুতি ছিল। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর সরকারের তৃতীয় সংস্করণের দ্বিতীয় মাসে সেই প্রতিশ্রুতি পূরণ করলেন। গত ৩০ জুন নবান্নে সাংবাদিক সম্মেলন করে রাজ্যে ছাত্রছাত্রীদের জন্য 'ক্রেডিট কার্ড প্রকল্প' চালু করলেন রাজ্যের নেত্রী। এই প্রকল্পের আওতায় উচ্চশিক্ষার জন্য সর্বোচ্চ দশ লক্ষ টাকার ঋণের সুবিধা পাবে ছাত্র-ছাত্রীরা। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, এই ক্রেডিট কার্ড প্রকল্প বাংলার শিক্ষার্থীদের উত্তরণের পথে নিয়ে যাবে। বাংলার ছাত্রছাত্রীরা বিশ্বের দরবারে বাংলার মুখ উজ্জ্বল করবে। লেখাপড়ার জন্য তাদের আর চিন্তা করতে হবে না, রাজ্যসরকার গ্যারাণ্টার হয়ে তাদের পাশে থাকবে।
পশ্চিমবঙ্গে উচ্চশিক্ষার চিত্রটি মোটেই উল্লেখ করার মত নয়। এই রাজ্যে উচ্চশিক্ষার হার মাত্র ১৮.৭১ শতাংশ, যেখানে জাতীয় গড় হল ২৫.৮ শতাংশ। মেয়েদের ক্ষেত্রে এরাজ্যে অবস্থাটা আরও করুন, মাত্র ১৭.৬ শতাংশ। এমতাবস্থায় রাজ্য সরকারের এই প্রকল্প ভোট পরবর্তী রাজনৈতিক অঙ্গনে তাদের হাতে 'তুরুপের তাস' হয়ে উঠলে অবাক হওয়ার কিছু নেই। প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, " ছাত্র-ছাত্রীদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য একাধিক প্রকল্প রয়েছে রাজ্যের- কন্যাশ্রী, স্বামী বিবেকানন্দ মেরিট এন্ড মিনস স্কলারশিপ, শিক্ষাশ্রী ইত্যাদি। এবার তার সাথে দশ লক্ষ টাকার স্টুডেন্টস ক্রেডিট কার্ড যোগ হল। পশ্চিমবঙ্গ সরকার এই ঋণের গ্যারান্টার হবে। ছাত্র-ছাত্রীরা আমাদের গর্ব। তাদের শিক্ষা দেওয়ার জন্য বাবা-মাকে আর চিন্তা করতে হবে না। ঘর-বাড়ি বেচতে হবে না। রাজ্য সরকার পাশে থাকবে।"
আশা:
না, এবার আর কোনো খয়রাতি বা দান নয়। শিক্ষার উন্নয়নে এবং প্রসারে এই 'ছাত্র ক্রেডিট কার্ড প্রকল্প' শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের কাছে নিঃসন্দেহে একটা আনন্দের খবর। এটি আপাতদৃষ্টিতে একটা আকর্ষণীয় প্রকল্প, একজন ছাত্র বা ছাত্রী এই ঋণগ্রহণের মাধ্যমে তাঁর উচ্চশিক্ষা সম্পূর্ণ করতে পারবে। শিক্ষান্তে একবছরের গ্রেস পিরিয়ড পেরিয়ে পনের বছর সময় পাবে ঋণ পরিশোধের জন্য। আর সবচেয়ে বড় কথা এই ঋণের সুদের হার নগন্য, মাত্র চার শতাংশ। সুতরাং ভেবে নেওয়া যেতেই পারে এই রাজ্যের ইচ্ছুক ছেলেপুলের উচ্চশিক্ষা অর্জনে আর কোনও বাধা রইলো না। এখন প্রশ্ন হল এই ঋণ পেতে হলে একজন ছাত্র বা ছাত্রীকে কী করতে হবে?
ক্রেডিট কার্ড পাওয়ার জন্য আবেদনকারীকে সেল্ফ ডিক্লারেশন দিতে হবে। শর্তের মধ্যে -
প্রথম শর্ত হল, আবেদনকারীকে অন্ততপক্ষে দশ বছর এই রাজ্যের বাসিন্দা হতে হবে।
দ্বিতীয় শর্ত হল ন্যূনতম দশম শ্রেণিতে পাঠরত অবস্থায় আবেদন করা যাবে।
তৃতীয় শর্ত, আবেদনকারীর বয়স অনুর্ধ চল্লিশ হওয়া চাই।
চতুর্থ শর্ত, এই পরিষেবা পাওয়ার জন্য সঠিক পরিচয়পত্র, পরিবার বা কো-বরোয়ারের আয় সংক্রান্ত তথ্য, বাবা-মায়ের পরিচয়পত্র, ঠিকানা, আরও কিছু নথি সরকার নির্ধারিত ওয়েবসাইটে আবেদনপত্রের সাথে আপলোড করতে হবে।
শেষ শর্ত হিসাবে ঋণগ্রহীতার সিবিল বা ক্রেডিট স্কোর ভালো হতে হবে।
ঋণের জন্য কারা আবেদন করতে পারবেন সেটিও মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যে পরিষ্কার হয়ে গেছে। স্নাতক, স্নাতকোত্তর, ডক্টোরাল, পোস্ট ডক্টোরাল কোর্সের জন্য দেশে বা বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত, ডাক্তারি, ইঞ্জিনিয়ারিং, আইএস, ডব্লিউবিসিএস এবং কোনো বিষয়ে ডিপ্লোমা কোর্সে পড়াশোনা করলে সেই ব্যক্তি ঋণের আবেদন করতে পারেন। এছাড়া ব্যাংক, রেলওয়ে, স্টাফ সিলেকশন বা অন্যান্য প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য কোনও বৈধ প্রতিষ্ঠানে কোচিং ক্লাসে ভর্তি হলেও তিনি এই ঋণ পাওয়ার যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন। এই ঋণের সবচেয়ে বড় সুবিধা হল পনের বছর ধরে সরল সুদের হারে ঋণ পরিশোধ করতে হবে। সুদের হিসাব চক্রবৃদ্ধি নয়, অর্থাৎ সুদের ওপর সুদের হিসাব হবেনা। এছাড়া কোনও অভিভাবক চাইলে আগেভাগেই ঋণের কিস্তি শোধ করতে পারবেন। অগ্রিম কিস্তি মেটানোর জন্য আলাদা করে কোনো পেনাল্টি বা প্রসেসিং চার্জ লাগবে না। উপরন্তু কেউ পড়াশোনা চলাকালীন সম্পূর্ণ সুদ মিটিয়ে দিলে সুদের হারে এক শতাংশ ছাড় পাবে।
ঋণের অর্থ ব্যবহারের দুটি দিক আছে- একটি প্রাতিষ্ঠানিক খরচ, অন্যটি অপ্রাতিষ্ঠানিক খরচ। প্রাতিষ্ঠানিক খরচ বলতে কলেজ/ইউনিভার্সিটি/ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের ফিস। যেমন-টিউশন ফি, পরীক্ষার ফি, লাইব্রেরি ফি, এছাড়া বিল্ডিং ফান্ড, লাইব্রেরি এবং ল্যাবরেটরি কশন ফি ইত্যাদি।
অপ্রাতিষ্ঠানিক খরচের মধ্যে ধরা হবে হোস্টেল/ মেসে থাকার খরচ, বই, কম্পিউটার, ল্যাপটপ বা ট্যাবলেট কেনার খরচ, শিক্ষামূলক ভ্রমণের খরচ, প্রজেক্ট বা থিসিস তৈরির যাবতীয় খরচ। একজন শিক্ষার্থী অপ্রাতিষ্ঠানিক খরচের জন্য মোট ঋণের তিরিশ শতাংশের বেশি খরচ করতে পারবেন না। প্রতিষ্ঠানের কোর্স ফি এবং অন্যান্য ফি-এর টাকা সরাসরি প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে চলে যাবে, আর বাকি টাকাটা যাবে স্টুডেন্টের অ্যাকাউন্টে। নির্দিষ্ট ছাত্র/ছাত্রী, এবং সহ ঋণগ্রহীতা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ঋণ পরিশোধ করতে বাধ্য থাকবেন।
জিজ্ঞাসা:
এক, আপাত দৃষ্টিতে ক্রেডিট কার্ড পাওয়ার পদ্ধতিটি সহজ সরল মনে হলেও, এই ব্যবস্থাটি পরিচালনার সাথে যারা যুক্ত আছেন, তাঁদের কাছে কিছু প্রশ্ন অনুত্তর থেকে গেছে। নিয়ম অনুযায়ী ছাত্ররা তাদের আবেদনটি পাঠাবেন তাঁর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানকে; ওই প্রতিষ্ঠান পাঠানো সমস্ত তথ্য পরীক্ষা করে দেখবেন। কোথাও অসঙ্গতি থাকলে সেটি সংশোধনের জন্য নির্দিষ্ট ছাত্রের কাছে ফিরত পাঠাবেন, আর সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে উচ্চ শিক্ষা দপ্তরে অনুমোদনের জন্য পাঠাবেন। উচ্চ শিক্ষা দপ্তর তাদের পক্ষ থেকে আরও একবার সবকিছু খুঁটিয়ে দেখে ব্যাংকে লোনের জন্য রেকমেন্ড করবে। এখন এখানে একটা ব্যাপার দেখতে হয়, সেটি হল আবেদনকারী এবং তাঁর পরিবারকে ন্যূনতম দশ বছর এই রাজ্যে বসবাস করতে হবে। সেটি বিচার করার সঠিক পদ্ধতি বা নথির কথা কোথাও জানানো হয়নি। ফলে এই ব্যাপারটি অপরিক্ষিতই থেকে যাবে বলে মনে করা হচ্ছে।
দুই, ওয়েবসাইটে বলা আছে, কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তিরত অবস্থায় কোনো একজন ঋণের আবেদন করতে পারে। অভিভাবকদের জিজ্ঞাসা বা বক্তব্য হল, এমন অনেক কোর্স আছে যেখানে ভর্তির শুরুতেই অনেকটা অর্থ জমা দিতে হয়। সেই মুহূর্তে একজন ছাত্র বা ছাত্রী যেহেতু একটা প্রতিষ্ঠান থেকে পাশ করে বেরিয়ে গেছে এবং অন্য প্রতিষ্ঠানে তখনও ভর্তি হয়নি, তাই সে আইনত ঋণের জন্য আবেদন করতে পারবে না। এই ব্যাপারটি একটু গুরুত্ব দিয়ে ভাবা উচিত ছিল বলে তাঁরা মনে করেন৷
তিন, নিয়মাবলীতে বলা আছে, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা শেষ করার পর চাকরির পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য কেউ কোনো বৈধ কোচিং সেন্টারে ভর্তি হলে এই ঋণের আবেদন করতে পারেন। এখানে প্রশ্ন হল, কোন প্রতিষ্ঠানগুলো বৈধ আর কোনগুলো নয় তার একটি তালিকা নিয়মাবলীর সারণীতে থাকলে ছাত্রছাত্রীদের সুবিধা হত। এছাড়া অনেকেই কোনো প্রতিষ্ঠানে ভর্তি না হয়ে বাড়িতেই এইসব পরীক্ষার প্রস্তুতি নেন। প্রস্তুতির জন্য কম্পিউটার, ল্যাপটপ, বই-পত্র আরও অনেক কিছুর জন্যে তাঁদেরও খরচ কিছু কম হয়না। এনারা কিছু লোনের জন্য গ্রাহ্য হবেন না।
ধোঁয়াশা:
হায়ার এডুকেশন ডিপার্টমেন্ট বিভিন্ন কলেজের অধ্যক্ষ, নোডাল অফিসার এবং হেল্পডেস্ক অফিসারদের সাথে ভার্চুয়াল মিটিংয়ের মধ্যে দিয়ে প্রত্যেকের নিজ নিজ কাজের দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়েছেন। সেই মিটিংয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন ওঠে এসেছিল, যার সবকটির উত্তর সেই মুহূর্তে মেলেনি ফলে সমগ্র প্রক্রিয়াটিতে কিছু ধোঁয়াশা রয়ে গেছে।
এক, একটা জিজ্ঞাসা কিন্তু ঘুরে বেড়াচ্ছে। যখন দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত এই রাজ্যে শিক্ষা অবৈতনিক তখন প্রকল্পটি দশম শ্রেণি থেকে চালু হল কেন? যে সমস্ত অভিভাবক তাঁদের সন্তানদের প্রচুর পয়সা খরচ করে প্রাইভেট স্কুলে পাঠান, তাঁরাই এই প্রকল্পে লাভবান হয়ে গেলেন।
তবে জয়েন্ট এন্ট্রান্স, আইআইটি, নিট প্রভৃতি পরীক্ষার কোচিং নামি-দামি সেন্টারগুলোতে দশম শ্রেণি থেকেই শুরু হয়ে যায়, আর সেখানে তিন বছরের কোর্স আকাশছোঁয়া। সেইসব ক্ষেত্রে এই ঋণের অর্থ কাজে আসবে।
দুই, একজন ছাত্র তাঁর শেষ পরীক্ষা দেওয়ার এক বছর পর থেকে ঋণ শোধ করতে শুরু করবেন। এখন ধোঁয়াশা হল, এই শেষ পরীক্ষাটি কিভাবে নির্ধারিত হবে! একজন যদি প্রথাগত শিক্ষা শেষে কোনো কোচিং সেন্টারে ভর্তি হয়ে বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক দিতে থাকেন, এবং সফল না হন। তাঁর ক্ষেত্রে ঋণ শোধের কাল কিভাবে ঠিক করা হবে?
তিন, এই ক্রেডিট কার্ড বিভিন্ন সরকারি এবং বেসরকারি ব্যাংক দিতে পারবে। তবে সরকার ভরসা করছেন মূলত সমবায় ব্যাংকের ওপর। রাজ্য এবং জেলা সমবায় ব্যাংকগুলো এব্যাপারে অগ্রণী ভূমিকা নেবে বলে মনে করা হচ্ছে। কিন্তু ব্যাংকগুলো তো আসলে একটা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, যাদের মুখ্য উদ্দেশ্য হল মুনাফা সর্বাধিকীকরণ। এখন সরকার গ্যারান্টার হলেও ঋণদানের ক্ষেত্রে ব্যাংক অবশ্যই আবেদনকারীর ঋণ পরিশোধ করার ক্ষমতা যাচাই করে নেবে। যদিও সরকারি বক্তব্যে বলা হয়েছে, ঋণদানের ক্ষেত্রে ছাত্রছাত্রীর পরিবারের সম্পত্তির পরিমাণ কত, কোল্যাটেরাল সিকিউরিটি আছে কিনা, অভিভাবক আদৌ ঋণ শোধ করতে পারবেন কিনা ইত্যাদি সংক্রান্ত কোনো ব্যাপারে ব্যাংক আলাদা পদক্ষেপ নিতে পারবে না। ছাত্র বা ছাত্রী ঋণের বৈধ কারণ দেখাতে পারলেই ঋণ পাবার যোগ্য হিসাবে বিবেচিত হবে। তবে সরকারের সাথে ব্যাংকের এই সংক্রান্ত চুক্তির শর্তাবলীগুলি কিন্তু ছাত্র বা তাঁর পরিবার জানতে পারছেন না। এই প্রকল্প এখন আঁতুর ঘরে, ক্রেডিট কার্ড দেওয়া শুরু হলে ঋণপ্রার্থীদের ব্যাংকে গিয়ে কি কি প্রশ্ন বা পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হবে সেটি চরম ধোঁয়াশায় আচ্ছন্ন।
চার, শেষ ধোঁয়াশাটি হল কোনো ব্যক্তি যদি ঋণ পরিশোধ করতে না পারেন সেক্ষেত্রে কি হবে সেটি কোথাও পরিষ্কার করে বলা নেই, এমনকি ৩০ জুন প্রকাশিত সরকারি গেজেটও এ ব্যাপারে নীরব। ব্যাংকের কথা বলতে গেলে, তারা হয়ত সরকারের পরিবর্তে কোনো ব্যক্তি গ্যারান্টার হলেই বেশি খুশি হত। ঋণ অনাদায়ে একজন ব্যক্তিকে ঋণ পরিশোধে বাধ্য করতে তারা যে সমস্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে সেগুলো সরকারের ক্ষেত্রে পারবে না। আবার কোনও নির্বাচনী ইস্তাহারে সরকার যে কোনোদিন এই ঋণ মকুব করে জনগণের চিত্ত হরণ করবেনা সেই গ্যারান্টিই বা কে দিতে পারবে?
পরিশেষে এই প্রকল্পের সাফল্য অনেকটাই নির্ভর করছে ব্যাংকের সার্বিক সহযোগিতার ওপর। 'স্বাস্থ্য সাথী' কার্ডের ক্ষেত্রে সরকার বিভিন্ন হসপিটাল এবং নার্সিংহোমের কাছ থেকে যেমন অসহযোগিতা পাচ্ছে সেরকম ঘটলে এই প্রকল্পের অঙ্কুরেই বিনষ্ট হবার সম্ভাবনা দেখা দেবে। ১৯৯৫ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী পি.ভি.নরসীমা রাও এদেশে প্রথম শিক্ষাঋণ চালু করেছিলেন। স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষাঋণ প্রকল্পের অনুকরণ করতে গিয়ে অনাদায়ী ঋণের পরিমাণ এতটাই বাড়িয়ে ফেলেছিল যে ২০০১ সালে পুনর্মূল্যায়নের মাধ্যমে ঋণ প্রদানের নয়া কৌশল অবলম্বন করতে হয় ভারত সরকারকে। ওই সময় এসবিআই ছাড়া অন্যান্য সরকারি এবং বেসরকারি ব্যাংকও শিক্ষাঋণ দিতে শুরু করে, তবে তাদের সুদের হার ছিল অত্যন্ত চড়া। সেদিক থেকে দেখতে গেলে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের এই প্রকল্প অবশ্যই ছাত্রদরদি। তবে এই প্রকল্প রুপায়নে অন্যান্য ব্যাংকের চেয়ে সরকার সমবায় ব্যাংকের উপরেই বেশি নির্ভর করছে। কিন্তু ২০২০ সালে একটি ব্যাপার ঘটে গেছে, যেটা নয়া কৃষি বিলের চাপান-উতোর, ক্ষোভ-বিক্ষোভে চাপা পড়ে গেছে। সেটি হল, নতুন সমবায় আইনে এতদিন ভারতীয় সংবিধান অনুযায়ী রাজ্যের হাতে থাকা সমবায় ব্যবস্থা কেন্দ্রের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। এখন থেকে সমবায় ব্যাংকগুলি রিজার্ভ ব্যাংক দ্বারা পরিচালিত হবে। এই রকম পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে রাজ্য সরকারের জনমোহিনী এই প্রকল্প কতটা সাফল্যের মুখ দেখবে সেটা আগামী দিনে কেন্দ্র-রাজ্য দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উপর নির্ভর করবে৷
লেখক: অর্থনীতির সহযোগী অধ্যাপক
তথ্যঋণ: ইন্টারনেট


