মুসলিম ধর্মের গোড়ার কথা (৪২)

মুসলিম ধর্মের গোড়ার কথা (৪২)
রোশেনারা খান
মরিয়ামের স্তন পানের সময় উত্তীর্ণ হলে প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ইমরানের স্ত্রী মেয়েকে আল্লার কাছে উৎসর্গ করলেন। হজরত জাকারিয়ার তত্ত্বাবধানে মারিয়ামকে রাখার জন্য বায়তুল মোকাদ্দস মসজিদের পাশে একটি ঘর তৈরি করা হল। আল্লার কাছ থেকে অলৌকিক উপায়ে মারিয়ামের জন্য খাবার আসত। এভাবে মরিয়াম বড় হতে থাকে। মরিয়ামের যখন আট বছর বয়স, সেই সময় তাঁর মা হান্নার মৃত্যু হয়।
যেভাবে পিতা ছাড়াই হজরত আদম ও বিবি হাওয়ার জন্ম হয়েছিল, সেভাবেই মরিয়ামের গর্ভে হজরত ইসার জন্ম হয়। হজরত মরিয়াম কুমারী থাকার ব্রত নিয়েছিলেন। ছোটবেলা থেকে তিনি আল্লাহর প্রতি অনুরক্ত ও ধর্ম পরায়ণ ছিলেন। তিনি অতি পবিত্রভাবে জীবনযাপন করতেন। তাঁর গর্ভে ইসার জন্মগ্রহণ খুবই বিশ্বয়কর ব্যপার। একদিন মরিয়াম পানির জন্য একটি কুয়োর কাছে যান। হঠাৎ সেখানে ফেরেস্তা জিবরাইল উপস্থিত হয়ে বলেন, আল্লাহ্ তোমার প্রতি প্রসন্ন হয়েছেন, তুমি নারী হিসেবে ধন্য। আল্লাহ্ তোমাকে একটি সুখবর পাঠিয়েছেন। ইসা তোমার পুত্র হিসেবে পৃথিবীতে আসবে। ইহলোক ও পরলোকে সে সম্মান পাবে। সে দোলনায় থাকা অবস্থায় মানুসের সাথে কথা বলবে। বয়সকালে সে সাধু-সন্তদের সঙ্গে কথা বলবেন এবং তাঁদের অন্তর্ভুক্ত হবেন।
মরিয়াম বললেন, আমাকে তো কোনো পুরুষ স্পর্শ করেনি। আমি কি করে মা হব? আমি চরিত্রহিনা নই। জিবরাইল তখন বললেন, তোমার প্রতিপালক বলেছেন, তাঁর পক্ষে এটা খুবই সহজ কাজ। আল্লাহ্ যখন কোনো কাজ করার কথা ভাবেন, তখন তিনি ‘হও’ ছাড়া কিছু বলেন না। তাতেই তাঁর ইচ্ছাপূরণ হয়ে যায়।
মরিয়াম গর্ভবতী হলে তাঁর চরিত্র নিয়ে চারিদিকে নানা কথা ছড়াতে লাগল। কিন্তু মরিয়াম এইসব কুৎসা থেকে দূরে থাকতেন। এসব কথা কানে নিতেন না। তিনি সম্পূর্ণ পবিত্র ছিলেন। পবিত্র কোরানে উল্লেখ আছে, মারিয়ম তাঁর শারীরিক পবিত্রতা রক্ষা করেছিলেন। খোদার ফুতকারে মারিয়ামের গর্ভে ইসার জন্ম হয়। প্রসব বেদনা শুরু হলে মারিয়াম একটি শুকনো খেজুর গাছের নিচে দাঁড়িয়ে বলতে লাগলেন, এই সন্তান জন্মের আগে যদি মরে যেতাম, ভাল হত। তখন গায়েবি কণ্ঠস্বর ভেসে এলো, তুমি দুঃখ পেওনা। তোমার প্রতিপালক তোমার পায়ের নিচে একটি ঝর্ণা প্রবাহিত করবেন। এই খেজুর গাছ তোমাকে টাটকা ফল দেবে। তুমি ফল খাও এবং পানি পান কর।
শুকনো খেজুর গাছের নিচে ইসার জন্ম হয়। এই শুভ ঘটনায় শুকনো খেজুর তলা দিয়ে একটি ঝর্ণা প্রবাহিত হতে শুরু করে। গাছটি জীবিত হয়ে ওঠে এবং তাতে পাকা খেজুরে ভরে যায়। মারিয়মের পায়ের কাছে খেজুরও পড়তে থাকে।


