শরৎচন্দ্রের গোপাল খুড়োর দেখা মেলে বাগনানে, পাঁচশো মড়া পোড়ানো কেষ্ট কাকাকে চেনেন?

শরৎচন্দ্রের গোপাল খুড়োর দেখা মেলে বাগনানে, পাঁচশো মড়া পোড়ানো কেষ্ট কাকাকে চেনেন?
17 Sep 2023, 03:40 PM

শরৎচন্দ্রের গোপাল খুড়োর দেখা মেলে বাগনানে, পাঁচশো মড়া পোড়ানো কেষ্ট কাকাকে চেনেন?

 

সুলেখা চক্রবর্তী, হাওড়া

 

শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের লালু গল্পের গোপাল খুড়োকে মনে নেই এমন মানুষের দেখা মেলা ভার। বাংলা কথা সাহিত্যের শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের এই লালু গল্পটিকে একটি মাইলস্টোন হিসেবে ধরা হয়। গ্রামীন পরিকাঠামোর মধ্যে যুবক লালুর সমাজ সংস্কার মূলক কর্মকাণ্ড পাঠকের মনে দাগ কেটে যায়। এই লালু গল্পের একটি চরিত্র গোপাল খুড়ো। মড়া পোড়ানোই যার ব্রত ছিল। কারো মৃত্যুর খবর কানে এলেই ঝাঁপিয়ে পড়তেন দাহ কাজে।

এবার এই গোপালখুড়োর দেখা মিললো হাওড়া বাগনানে। শীতলপুর গ্রামের বাসিন্দা কৃষ্ণপদ রায় ওরফে "কেষ্ট কাকা" মড়া পুড়িয়ে রীতিমতো রেকর্ড তৈরি করেছেন বাগনান এলাকায়। জানা গিয়েছে, বছর ৫৫ বয়সী কৃষ্ণপদ রায় ওরফে কেষ্ট কাকা ইতিমধ্যেই পাঁচশোরও বেশি শব দাহ করেছেন। এখনো কারো মৃত্যু সংবাদ শুনলেই সব কাজ পেলে ছুটে যান শ্মশানে। দাহ কার্য সমাধা করে সোজা চলে যান নিজের বাড়িতে।

না, না। কোথাও জলস্পর্শও করেন না তিনি। বিষয়টি শোনার পর খোঁজ নিয়ে জানা গেল কৃষ্ণ বাবু রীতিমতো সংসারী মানুষ। বাড়িতে স্ত্রী ছাড়াও দুই সন্তান রয়েছেন। মা রয়েছেন। পেশায় ছোট ব্যবসায়ী কেষ্ট বাবু "বাগনানের গোপাল খুড়ো" বলেই পরিচিত হয়ে উঠেছেন। ছেলের এ হেন কাজে প্রথম দিকে বাধা দিলেও পরে যত দিন গিয়েছে ততই বিষয়টি যে সমাজসেবা তা বুঝে আর বাধা দেননি মা গীতা রানী রায়। কোভিড পরিস্থিতিতেও তিনি শব দাহ করেছেন। ছেলে ঋতব্রত কিংবা মেয়ে ঋতিকাও বাবার এই ধরনের কাজকে কুর্নিশ জানিয়েছে। আর স্বামীর এই বিরল সমাজসেবামূলক কাজকে প্রথম দিকে এড়িয়ে গেলেও পরে মানিয়ে নিয়েছেন স্ত্রী কাকলি দেবী।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, শুধু শব দাহ নয়, অনেক ক্ষেত্রে নিজের গাঁটের কড়ি খরচ করে মৃতদেহ সৎকারের আয়োজন করেন। কৃষ্ণপদ রায় ওরফে "কেষ্ট কাকা "ওরফে "বাগনানের গোপাল খুড়ো" আজ একটি ব্যতিক্রমী সমাজ সেবায় নজির তৈরি করেছেন। বিষয়টি নিয়ে খোদ কৃষ্ণ বাবু জানান, "ওই সময়ে মৃতের পরিবার কতটা অসহায় হয়ে পড়ে তা যেদিন চোখে দেখে বুঝলাম সেদিন থেকেই নিজেকে এই ধরনের কাজের সঙ্গে জড়িয়ে নেব বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। প্রথমদিকে পরিবারের লোকজন আপত্তি করলেও পরে আর তা করেনি। তাই ছুটে যাই বারবার।" বলাই বাহুল্য কৃষ্ণ বাবু এখন বাগনানের "গোপাল খুড়ো" বলেই পরিচিত হয়ে উঠেছেন। এলাকার মানুষও তাঁকে নিয়ে গর্ব বোধ করেন।

Mailing List