দেবী দুর্গার পরিবর্তে মহিষাসুরের পূজা করল সাঁওতাল রমণীরা, ব্যতিক্রমী উৎসবে মাতলো পুরুলিয়ার কাশীপুর

দেবী দুর্গার পরিবর্তে মহিষাসুরের পূজা করল সাঁওতাল রমণীরা, ব্যতিক্রমী উৎসবে মাতলো পুরুলিয়ার কাশীপুর
আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়, পুরুলিয়া
সমগ্র রাজ্য সহ দেশজুড়ে যখন অনুষ্ঠিত হলো দেবী দুর্গার মাতৃ আরাধনা, ঠিক তারই মাঝে ব্যতিক্রমী এক উৎসব পালিত হল পুরুলিয়ার কাশীপুরে। দেবী দুর্গা এখানে পূজা পান না। কারণ, তাদের কাছে তিনি জগন্মাতা নন। তিনি বিদেশিনী আর্য রমণী মাত্র। দশভূজা শিবানীর তাই পায়ের তলায় নতজানু ত্রিশূলবিদ্ধ মহিষাসুর অনাচার আর ধ্বংসের প্রতীক নয়। খেরওয়াল আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষের বিশ্বাস, বিদেশিনী আর্য রমণীর হাতে তাদের আদিপুরুষ মহিষাসুরকে অন্যায় ভাবে নিধন করা হয়েছিল। সেই কারণেই ভারত ভূমিপুত্র আদিবাসী খেরওয়ালরা দেশের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা হারিয়েছিলেন।
শিকার দিশম খেরওয়াল বীর লাকচার কমিটির সম্পাদক অজিত প্রসাদ হেমব্রম বলেন, ২০১১ সাল থেকে তারা তাদের পূর্ব পুরুষের অর্থাৎ মহিষাসুরের স্মরণে এই উৎসব পালন করে আসছেন। পুরুলিয়ার কাশীপুরের ভালাগোড়া স্কুল মাঠে এই উৎসব পালন করা হয়। এই বছরও আনুষ্ঠানিকভাবে উৎসব পালিত হয়। পুরুলিয়ার-বাঁকুড়া-মেদিনীপুর ছাড়াও ঝাড়খন্ড ও বিহার থেকে এসেছিল আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষজনেরা। মহিষাসুরের মৃন্ময় মূর্তিতে করা হয় মাল্যদান। তার মূর্তিতে পূজা করেন তাদের সাঁওতাল রমণীরা। এবার মহিষাসুরের মৃন্ময় মূর্তিতে মাল্যদান সহ তার পূজা করতে এসেছিলেন রাঁচি থেকে সাঁওতাল রমণীরা। এছাড়া আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষজনকে আরো বেশি করে জাগরিত করার জন্য মেদিনীপুর থেকেও এসেছিলেন সাঁওতাল রমণীরা।
মহানবমীর পুন্য তিথিতে বাংলার পূজা মন্ডপে মন্ডপে যখন নামে মানুষের ঢল, তখন ভিন্ন ভাবনায় মহিষাসুরের স্মরণ দিবস পালন করে তার পুজোয় মেতে উঠেন পুরুলিয়ার কাশীপুরের ভালাগোড়া গ্রামের রাস্তায় আদিবাসী, সাঁওতাল সম্প্রদায়ের মানুষজন। তারা দাঁসাই নাচ ও কাঠি নাচের মধ্য দিয়ে স্মরণ করে হুদুড় দূর্গা অর্থাৎ মহিষাসুরকে। মহিষাসুরের মৃন্ময় মূর্তিতে মাল্যদান করে পূজা করেন সাঁওতাল রমণীরা। পূজার পর আদিবাসীরা তাদের পিতৃপুরুষ হুদুড় দুর্গার (মহিষাসুরের) স্মরণে অতি করুণ সুরে হায়-রে -হায়-রে শব্দ যোগে পুরুষ ও মহিলা মিলে দাঁসাই নাচ ও কাঠি নাচ করেন মহিষাসুরের মূর্তির সামনে।
অজিত প্রসাদ হেমব্রম বলেন, অনার্য আদিবাসী খেরওয়ালদের মুখ্য দুর্গের পরিচালক ছিলেন তাদের আদিপুরুষ মহিষাসুর। সে কারণে তিনি আমাদের কাছে হুদুড় দুর্গা। তাই আমাদের দাঁসাই ও কাঠি নাচ দুর্গা উৎসবের বিপক্ষে। তিনি বলেন, বিদেশিনী আর্য রমণীর পায়ের তলায় তাদের আদি পুরুষকে ফেলে রেখে পা দিয়ে থাকা রমনীর এই মূর্তি তাদের সম্প্রদায়ের মানুষকে অপমানিত করা হচ্ছে। তাই তাদের সম্প্রদায়ের মানুষজনকে জাগরিত করার জন্যই "আর ভেতর ঘরে নয়" আনুষ্ঠানিকভাবে তারা মহিষাসুরের স্মরণ দিবস পালন করে তার পূজা দেওয়া হয় পুরুলিয়ার কাশীপুরের ভাঙাগোড়ায়। আর সেই ব্যতিক্রমী উৎসবের আয়োজনে পুরুলিয়া- বাঁকুড়া- মেদিনীপুর সহ ঝাড়খন্ড ও বিহারের আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষজনেদের মধ্যে দেখা দিয়েছিল তুমুল উন্মাদনা


