রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধটা এড়ানো গেল না, দায়ী কে?

রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধটা এড়ানো গেল না, দায়ী কে?
25 Feb 2022, 07:15 PM

রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধটা এড়ানো গেল না, দায়ী কে?

 

শান্তনু দে

 

এই যুদ্ধ অনায়াসে এড়ানো যেতো। যদি মার্কিন প্রশাসন/ন্যাটো ইউক্রেন নিয়ে রাশিয়ার স্বাভাবিক নিরাপত্তা-উদ্বেগকে মেনে নিত। ন্যাটো ইউক্রেনকে তার সদস্য করতে চাইছে। যার অর্থ রুশ সীমান্তে থাকবে মার্কিন/ন্যাটোর বাহিনী, অত্যাধুনিক সমরাস্ত্র!

 

বর্ষশেষের সাংবাদিক বৈঠকেও পুতিন সরাসরি প্রশ্ন তুলেছিলেন: ‘আমরা স্পষ্ট করে জানিয়ে দিতে চাই, পূর্ব দিকে ন্যাটোর আর কোনো অগ্রগতি কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। আর এতে কী কোনো অস্পষ্টতা রয়েছে? আমরা কী মার্কিন সীমান্তের কাছে ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করতে গিয়েছি? না, আমরা তো যাইনি। বরং, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রই তার ক্ষেপণাস্ত্র নিয়ে আমাদের ঘরে এসেছে, দাঁড়িয়ে আছে আমাদের দোরগোড়ায়। আমাদের ঘরের কাছে কোনো আঘাত করার ব্যবস্থা রাখা যাবে না, এই দাবি করা কী তাহলে ভুল হবে, খুব অস্বাভাবিক হবে?’

দায়ী তাহলে কে?

১। সোভিয়েত পতনের এক বছর আগে, তৎকালীন মার্কিন বিদেশসচিব জেমস বেকার রাশিয়ার কাছে প্রস্তাব দিয়েছিলেন, ‘ন্যাটো পূর্বদিকে এক ইঞ্চি-ও এগোবে না’, যদি মস্কো দুই জার্মানির মিলনে সম্মতি দেয়। পূর্বদিকে এক ইঞ্চি-ও নয় অর্থঃ পূর্ব বার্লিনের পূর্বে ‘এক ইঞ্চি-ও এগোবে না’ ন্যাটো।

২। গর্বাচভ সেই চুক্তিতে সহমত হয়েছিলেন। কিন্তু, ওয়াশিংটন তার কথা রাখেনি।

৩। সেদিন সবাই আশা করেছিলেন এবারে ন্যাটোকে গুটিয়ে দেওয়া হবে। কারণ, যে উদ্দেশে ন্যাটো তৈরি করা হয়েছিল, সেই সোভিয়েত ইউনিয়নই আর নেই। তাছাড়া, ন্যাটোর মোকাবিলার লক্ষ্যে যে ওয়ারশ চুক্তি হয়েছিল, সোভিয়েত ইউনিয়ন ও পূর্ব ইয়োরোপের সমাজতান্ত্রিক দেশগুলির বিপর্যয়ের পর তারই যখন অবসান হয়েছে, তখন ন্যাটোর প্রাসঙ্গিকতা আর কোথায়? ধাপে ধাপে নিরস্ত্রীকরণ এবং পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচি কমানোর চুক্তিও সই হয়ে গিয়েছে। সেকারণে স্বাভাবিক ভাবনা ছিল ন্যাটোর আর কোনো প্রয়োজন নেই।

৪। ঠান্ডা যুদ্ধের অবসানের পর পেরিয়ে গিয়েছে তিন দশক। ন্যাটোকে কেন সম্প্রসারিত হচ্ছে? ভেঙে দেওয়ার পরিবর্তে কেন সে নিজেকে সম্প্রসারিত করে চলেছে? ওয়ারশ নেই, তবে ন্যাটো কেন? আজ সোভিয়েত নেই, তাহলে শত্রু কে?

৫। লাটভিয়া, লিথুয়ানিয়া এবং এস্তোনিয়ার মতো বাল্টিক রাষ্ট্র-সহ পোলান্ড, বুলগেরিয়া, হাঙ্গেরি, চেক সাধারণতন্ত্র, স্লোভাকিয়া, স্লোভানিয়া, রোমানিয়ার মতো পূর্ব ইয়োরোপের সাবেক ‘সোভিয়েত’ সাধারণতন্ত্রগুলির অধিকাংশই এখন ন্যাটোর শৃঙ্খলে। যুগোস্লাভিয়ার উপর বর্বর বোমাবর্ষণ-সহ ন্যাটো একাধিক যুদ্ধ চালিয়েছে বলকান অঞ্চলে। আর এখন রাশিয়া সীমান্তে ইউক্রেন, জর্জিয়াকে তাদের সদস্য করতে চাইছে।

৬। ১৯৯০ থেকে ন্যাটো আজ বেড়ে হয়েছে প্রায় দ্বিগুণ। সদস্য সংখ্যা ষোল থেকে বেড়ে এখন

৭। পূর্ব ইয়োরোপ, বলকান ছাড়িয়ে এমনকী সামরিক হস্তক্ষেপ করেছে আফ্রিকায়। এবং মধ্য ও পশ্চিম এশিয়ায়। আফগানিস্তানে ন্যাটো’র বর্বরতাকে দেখেছে গোটা দুনিয়া। নামে নর্থ অতলান্তিক ট্রিটি অর্গানাইজেশন। কোথায় উত্তর অতলান্তিক, আর কোথায় কাবুল!

৮। কেন লাগাতার যুদ্ধের প্ররোচনা দিয়ে গেল ওয়াশিংটন, লন্ডন? যেমন প্রচার তোলা হয়েছিল ১৯৯৯-তে সাবেক যুগোস্লাভিয়ার বিরুদ্ধে, ২০০১ সালে আফগানিস্তান, ২০০৩ সালে ইরাক এবং ২০১১-তে লিবিয়া এবং সিরিয়ার বিরুদ্ধে।

৯। ‘শান্তিপূর্ণ পথে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে ডনবাস সমস্যার সমাধান হওয়া উচিত’ বলে দাবি জানিয়েছিলেন ইউক্রেনের কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক পেত্রো সিমোনেঙ্কো। প্রশ্ন তুলেছিলেন, ‘গত সাতবছর ধরে নিরাপত্তা পরিষদ কেন ইউক্রেনের রাষ্ট্রপতিকে একবারের জন্যও আমন্ত্রণ জানাল না, যাতে সংঘাতের শান্তিপূর্ণ নিস্পত্তির জন্য তিনি কী করেছেন, তা নিয়ে রিপোর্ট করতে পারেন? কেন একের পর এক সমরাস্ত্র-বোঝাই মার্কিন ও ব্রিটিশ বিমান কিয়েভে (ইউক্রেনের রাজধানী) নামছে? ওরা কী আদৌ শান্তি চায়?’ মোটেই চায় না। আসলে ব্রিটেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও পোলান্ডের মধ্যে সম্প্রতি হয়েছে একটি ‘ত্রিপাক্ষিক সামরিক জোট’, যার সঙ্গে জুড়ে রয়েছে ‘ইউক্রেনের নাৎসি-অলিগার্কের শাসক জমানা’।

তাঁর বক্তব্য, ‘আন্তর্জাতিক লগ্নি পুঁজির নির্দেশে নতুন করে ইয়োরোপের পুনর্বণ্টনের লক্ষ্যেই’ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটোর এই তৎপরতা। আর নেপথ্যে রয়েছে মার্কিন গুপ্তচর সংস্থা সিআইএ এবং ব্রিটিশ সংস্থা এম ১৬। নাহলে ‘কেন ২০০০ সালে ইউক্রেনের রাষ্ট্রপতি ভলোদিমির জেলেনস্কি লন্ডনে এম ১৬-র প্রধানের সঙ্গে কথা বলবেন? আর কেনই বা এবছর জানুয়ারিতে কিয়েভে সিআইএ-র প্রধানের সঙ্গে বৈঠক করবেন?’

Mailing List