অতীত আবাহনে জেগে ওঠেন পুরুলিয়ার মৌতড়ের বুড়ি দুর্গা, মোষহীন বুড়িদুর্গায় উল্টো দিকে থাকেন গণেশ কার্তিক, প্রসাদে দেওয়া হয় মদ

অতীত আবাহনে জেগে ওঠেন পুরুলিয়ার মৌতড়ের বুড়ি দুর্গা, মোষহীন বুড়িদুর্গায় উল্টো দিকে থাকেন গণেশ কার্তিক, প্রসাদে দেওয়া হয় মদ
আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়, পুরুলিয়া
দেবী দুর্গার নাম বুড়ি দুর্গা। দশভূজা শিবানীর পায়ের তলায় নেই মোষ। তবে আছে নতজানু অসুর। পাঁচশো বছরের প্রাচীন বুড়ি দুর্গার সঙ্গে গণেশ ও কার্তিকের অবস্থান এখানে উল্টো অর্থাৎ দেবীর ডানে কার্তিক আর বাম দিকে থাকে গণেশ। দেবীর প্রসাদে দেওয়া হয় মদ। প্রায় পাঁচশো বছর ধরে চলছে
পুরুলিয়ার রঘুনাথপুর 2ব্লকের মৌতড় গ্রামের বুড়িদুর্গার বৈচিত্র্যময় এই পূজো। ছোট বাজেট হলেও প্রাচীনত্ব ,ঐতিহ্য আর প্রাণের টানে বুডিদুর্গার থানে ভিড় জমান দর্শনার্থীরা।
মৌতড়ের বুড়িদুর্গার পুজোর দায়িত্বে রয়েছেন শক্তিপদ ভট্টাচার্য, মাধবচন্দ্র মুখোপাধ্যায়, সুবল ও সমীর, দেবদাস ভট্টাচার্যরা। তাঁরা জানান, 500 বছরের বেশি সময় ধরে এই পুজো চলছে। এই বুড়ি দুর্গার পূজো চালু করেছিলেন গৌরীকান্ত ভট্টাচার্য। তার আদি বাড়ি নদীয়ার বাঁশবেড়িয়ায়। তিনি সেন বংশের রাজা বল্লাল সেনের রাজসভায় পন্ডিত হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন। পুরুলিয়ার কাশিপুরের রাজা জ্যোতিপ্রসাদ সিং দেও তাঁকে রাজসভায় নিয়ে আসেন। কয়েক বছর কাশীপুরের রাজ দরবারে থেকে তিনি ফিরে যেতে চান। কিন্তু রাজা গৌরিকান্ত বাবু কে আর ফিরে যেতে দেননি। রাজা তাঁকে রঘুনাথপুর 2 ব্লকের বাঁন্দা এলাকায় জমি দেন। বসবাস করার জন্য বান্দার কাছে মধুতটি ওরফে মৌতড়ে জমি দেন। তখন মৌতড় গ্রামটি ছিল ঘন জঙ্গলে ঘেরা। কিছু মানুষজন বসবাস করত। বসতবাড়ি করার পরে তিনি রাজার দেওয়া জমি চাষিদের চাষ করতে দেন। কিন্তু, জমির ফসল ওঠার আগে কে বা কারা তা নিয়ে পালিয়ে যায়। বেশ কয়েকবার চাষ করে ফসল পেলেন না তিনি।
সেই খবর রাজাকে জানাতেই রাজা ধান চাষ করার পরে সৈন্য পাঠিয়ে দিতেন পাহারা দেওয়ার জন্য। ধান ঘরে তোলার আগে একদিন গৌরীকান্তবাবু রাতে সৈন্যরা ঠিকমত পাহারা দিচ্ছে কিনা তা দেখতে গিয়েছিলেন। তখন তিনি দেখেন একটি বুড়িকে মাঠ থেকে সৈন্যরা আটক করেছে। ওই বুড়ি মহুল ফল খেয়ে মাতালের মত ঢুলছিলেন। সৈন্যরা আটক করতেই বুড়ি দেবী দুর্গার রূপ ধারণ করেন। পন্ডিত গৌরীকান্ত দেবীকে সেদিন যেমন রূপে দেখেছিলেন সেইমতো দুর্গার প্রতিমা তৈরি করে পুজোর নির্দেশ দেন। সে বছরই মৌতড়ে মন্দির গড়ে দুর্গাপূজা শুরু হয়। তখন থেকে ওই পূজোর নাম হয় বুড়িদুর্গা। গৌরিকান্ত ভট্টাচার্যের পরিবারের লোকেরাই এখন এই পুজো পরিচালনা করছেন।
পরিবারের সদস্যরা জানান,এখনো বোধনের দিন দেবীকে গ্রামের বড়পুকুর থেকে পালকিতে মন্দিরে আনা হয়। দেবীর প্রসাদে মাছ,মাংস, ভাত সহ মোট ১৩ রকমের ভোগ থাকে। সঙ্গে মদ দেওয়ার রীতি রয়েছে। কারণ পূর্বপুরুষদের দেখা বুড়িরূপী দেবী দূর্গা মহুলের নেশায় ঢুলছিলেন।মোষ বিহীণ দুর্গা কেন? উত্তরে পরিবারের লোকেরা জানান, পুজোর প্রতিষ্ঠাতা গৌরাকান্ত ভট্টাচার্য দেবীকে যখন দেখতে পেয়েছিলেন, সেদিন দেবীর পায়ের কাছে নতজানু অসুরকে দেখতে পেয়েছিলেন। কিন্তু মোষ ছিল না। কার্তিক ও গণেশের অবস্থানও ছিল উল্টো। তাই সেই রীতি এখনো চলছে। পরিবারের সদস্য দেবদাস ভট্টাচার্য বলেন,মৌতড় গ্রামের মা বড় কালী পুরুলিয়া জেলার প্রথম তথা রাজ্যের অন্যতম। সেই মা বড়কালীর প্রতিষ্ঠার আগে এই বুড়িদুর্গার প্রতিষ্ঠা।তিনি আরো বলেন সরকারের দেওয়া পুজো কমিটি গুলিকে সাহায্য দেওয়া হলেও প্রচীন মৌতড়ের বুড়িদুর্গা পুজোই বঞ্চিত।


