ভাইফোঁটার দিন গরু খুঁটানো দিয়ে শেষ হলো পুরুলিয়ার বাঁদনা পরব

ভাইফোঁটার দিন গরু খুঁটানো দিয়ে শেষ হলো পুরুলিয়ার বাঁদনা পরব
আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়, পুরুলিয়া
কালীপুজোর দিন থেকে শুরু হওয়া বাঁধনা পরব বৃহস্পতিবার বিকেলে শেষ হলো গোরু খুঁটানোর মধ্য দিয়ে রাজ্যের ঝাড়খন্ড লাগোয়া সীমানা এলাকায় পুরুলিয়ার বিভিন্ন এলাকায়।
বাঁদনা পরবে মাতেন পুরুলিয়া, বাঁকুড়া ও পশ্চিম মেদিনীপুরের বিস্তীর্ণ এলাকার মানুষজনেরা। এইবারেও তার অন্যথা হয়নি। ভাইফোঁটার দিন অর্থাৎ বৃহস্পতিবার গোরু খুঁটানো দেখতে শয়ে শয়ে মানুষ ভিড় জমিয়েছিল পুরুলিয়ার বিভিন্ন গ্রামে গ্রামে। বিশেষত মাহাতো, ভূমিজ, সাঁওতাল, কড়া সহ বিভিন্ন তপসিলি জাতি, উপজাতি সম্প্রদায়ের মানুষ এই উৎসবে মেতে ওঠেন।
এই পরবের প্রথম দিন অর্থাৎ কালীপুজোর সন্ধ্যেতে পাঠ কাটিতে ছেঁড়া কাপড় বেঁধে কেরোসিন তেলে চুবিয়ে তাতে আগুন ধরিয়ে ধো - মশাল বা ইঁবোল-পিজোলে মাতে গ্রামের ছেলেমেয়েরা। তারপর গরু ও মোষের শিংয়ে তেল মাখান বড়রা। রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কালী মন্ডপ গুলোতে যখন শঙ্খের আওয়াজে মুখর, তখন আদিবাসী অধ্যুষিত এই গ্রামগুলি মুখরিত হয় 'অহিরা' গানে। ঢাক, ঢোল ,ধামসা মাদল সহকারে বাড়ি বাড়ি গিয়ে অহিরা গান গাওয়া হয়। এই অনুষ্ঠানটিকে বলে "গরুজাগা"। সারারাত ধরে গরুজাগা অনুষ্ঠান চলার পর পরের দিন সকাল থেকে শুরু হয় 'লে হাগি'। আদিবাসী সম্প্রদায়ের ছেলেরা সঙ সাজে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যুবকরা ঢাক, ঢোল ধামসা বাজিয়ে গ্রামের রাস্তায় নাচ-গান করেন। গ্রামের সবাই মেতে ওঠেন রং খেলায়।
বাঁদনা পরবের শেষ দিন অর্থাৎ ভাতৃদ্বিতীয়াতে পালন করা হলো গরু ও মহিষ (কাড়া) খুঁটানো অনুষ্ঠান। এদিন বিকেলে গরু ও মহিষ (কাড়া ) শক্ত খুঁটিতে বেঁধে চামড়ার ঢাল দিয়ে তাদের মাথায় ঠেকানো হয়। গরু উত্তেজিত হয়ে উঠে সেই ঢালকে গুঁতিয়ে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। এইভাবে গ্রামে গ্রামে ভাইফোঁটার দিন গরু খুঁটানো দিয়ে শেষ হলো পুরুলিয়ার বাঁদনা পরব।


