পুজোর বাংলাদেশে 'জাতের নামে বজ্জাতি'

পুজোর বাংলাদেশে 'জাতের নামে বজ্জাতি'
উৎপত্তি আর অস্তিত্বের আস্ফালন। নিদারুণ সঙ্ঘাত। ধর্ম এবং তার সভ্যতার সঙ্কট। ধর্মের নামে বিভেদ আর সুচতুর ভাবে তাকে সুড়সুড়ি দিয়ে তার পবিত্রতাকে কলুষিত করা এ পৃথিবীর এক সেরা পণ্য। তাকে নিয়ে এ মহাবিশ্বের যে কোনও প্রান্তে যে কোন স্বার্থাণ্বেষী অবলীলাক্রমে ব্যবসা ফেঁদে বসবে এটাই দস্তুর। আর আমাদের মতো একটা বড় অংশের মানুষ কোন কিছু যাচাই না করে সেই আগুনের লেলিহান শিখায় সহজেই ঝাঁপিয়ে পড়তে উদ্যত হই। ফলে 'পিপিলিকার পাখা ওড়ে মরিবার তরে,' এই প্রবাদটি জ্বলন্ত সত্যে পরিণত হয় আমাদের জীবনে।
আশি উর্দ্ধ রবি ঠাকুর সভ্যতার সঙ্কটকে অনুধাবন করেছিলেন। স্বামী বিবেকানন্দ পাশ্চাত্যে বেদান্ত দর্শন প্রচারে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলেন। সেই সঙ্গে ভারতেও ধর্মসংস্কারে তাঁর বিশেষ অবদান আছে। রবি ঠাকুর স্বামী বিবেকানন্দের শিক্ষা সম্পর্কে বলেছেন, "যদি ভারতকে জানতে চাও, তবে বিবেকানন্দকে জানো। তাঁর মধ্যে যা কিছু আছে সবই ইতিবাচক; নেতিবাচক কিছুই নেই।" বিবেকানন্দ অনুভব করেছিলেন, দেশের ভবিষ্যৎ জনগণের উপর নির্ভর করে। তাই তিনি মানুষের উপর বিশেষ জোর দিয়েছিলেন। বলেছিলেন, "আমার উদ্দেশ্য হল মানুষের চরিত্র গঠন"। এইভাবেই তিনি নিজের শিক্ষা বর্ণনা করেন।
ফেলে আসা এমন উদারতার ইতিহাসকে কী তাহলে উন্মত্ততার আগুনে সহজেই বিসর্জন দিয়ে বসবো? তাহলে মানবিক সত্ত্বার বিকাশ হলো কোথায়! 'জাতের নামে বজ্জাতি'র কথা সেই কবেই শুনিয়ে গিয়েছেন আমার, আপনার আদরের বিদ্রোহী কবি। আপামর মানুষের ধমনীতে যে রক্ত বইছে, তার বর্ণের কোন তারতম্য নেই। জাতি একটাই, মানবজাতি। একটাই পৃথিবী, তারই বৃহত্তর সংসারের সন্তান আমরা। বাংলাদেশের ঘটনা এই উপ মহাদেশের বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষের ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত করেছে বটেই। কিন্তু তার জন্য দু'ই বাংলার মানুষের পবিত্র দর্শন আর অখণ্ডতাকে কখনোই বিচ্ছিন্ন করতে পারবে না। এ বিশ্বাস মণীষীদের পথ ধরেই আমরা রপ্ত করেছি। এ কোন সুস্থ মানুষের ভাবনার বহিঃ প্রকাশ নয়, একশ্রেণির দুষ্কৃতীদের অপকর্ম। তাই আমাদের জন্য সবসময় নতুন দিনের সু-চিন্তিত ভাবনাই রসদ। আর ওদের জন্য থাকবে হতাশার এক চিলতে জমি।


