পুলিশ কী মানুষ নয়!!

পুলিশ কী মানুষ নয়!!
31 Mar 2020, 11:43 AM

পুলিশ কী মানুষ নয়!!

সুমন ঘোষ

পুলিশ। মানে রাস্তার ধারে হাত বাড়িয়ে লরি থেকে টাকা তোলে!

পুলিশ। মানে থানায় গেলে অকারণ হেনস্থা করে। কোনও ঘটনায় বেধড়ক লাঠিচার্জ করে। অতি নিরীহ মানুষকেও ছাড়ে না। মেরে জখম করে দেয়। ন্যুনতম মনুষ্যত্বও নাকি পুলিশের মধ্যে থাকে না।

এই চিত্রগুলো কী এখনও চোখের সামনে ভাসছে! নাকি মনে হচ্ছে অন্য কিছু। কখনও মনে এ প্রশ্ন ওঠেনি, পুলিশ কী মানুষ নয়!

কেন প্রশ্নটা উঠবে? ওঠাই তো স্বাভাবিক। পুলিশের খারাপ ভূমিকায়, পুলিশকে মামা, পুলিশ তুমি যতোই মারো, মাইনে তোমার একশ বারো, কত রকম কথাই তো বলা হয়েছে বারেবারে। পরিস্থিতির পরিবর্তনে এই প্রশ্নটা এখন উঠবে না কেন?

প্রথমেই ধরা যাক লকডাউন শুরুর কথা। সকলকে গৃহবন্দি করতে হবে। নতুবা সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা। সচেতন মানুষ সংক্রমণের ভয়ে আগেই গৃহবন্দি হয়ে গিয়েছেন। কিন্তু সব সময় একটা অংশ তো থাকেই, যাঁরা ভালোমন্দ না বুঝেই স্রোতের বাইরে হাঁটতে থাকেন। তাঁদের স্রোতের অনুকুলে অর্থাৎ সংক্রমণ রুখতে বাড়ি ঢোকানোর দায়িত্ব নিল কে? সংক্রমণের ভয় ভীতি সরিয়ে রাস্তায় নেমে তাঁদের ঘরে ঢোকানোর দায়িত্ব নিল সেই পুলিশ। কেন, পুলিশ কী মানুষ নয়? তাঁদের সংক্রমণ হবে না।

আসলে তা নয়, নিজেদের সংক্রমণের পরোয়া না করে সমাজকে বাঁচাতেই এই প্রচেষ্টা পুলিশের। সেক্ষেত্রে কোথাও কোনও ত্রুটি ধরা পড়েনি। অন্তত, এখন পর্যন্ত। ত্রুটি তো অনেক পরের কথা। বরং বেড়েছে আরও আশা-ভরসা। কেমন?

যে বৃদ্ধ বা বৃদ্ধা অসুস্থ, এতদিন কাজের লোকের ভরসায় বিছানা শয্যা হয়েও প্রাণটুকু রেখেছেন। কাজের মেয়েই ওষুধ কিনে দিত, রান্না করে দিত। তবে খাবার জুটত। প্রাণ বাঁচত। কিন্তু লকডাউনে সংক্রমণের ভয়। কাজের লোকও বন্ধ। তাহলে তিনি খাবার বা ওষুধ পাবেন কিভাবে? এখানেও নবকুমারের ভূমিকায় সেই পুলিশ। থানায় ফোন করলেই বাড়িতে পৌঁছে যাচ্ছে খাবার, ওষুধ। কে দিচ্ছে, না পুলিশ! এমনকী, এবার পুলিশ এসব কাজ করার জন্য লকডাউনের সময় খুলতে বাধ্য হল হোম ডেলিভারিও!

হঠাৎ কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে কে হাসপাতালে পৌঁছে দিচ্ছে? ত্রাতা সেই পুলিশ।

রাস্তায় ভবঘুরে মানুষজন এখন একা আর একা। ভিক্ষের ঝুলিটা চোখ বন্ধ করে কাঁদছে। বহুতলের ছাদ থেকে অনেকে দেখেও দেখছে না। তাঁদের খাবার দেবে কে? পুলিশ।

এখন আবার নতুন সঙ্কট। এই সময়ে রক্তদান শিবির করাও কঠিন। কিন্তু রোগ তো আর লকডাউন মানে না। রক্তের প্রয়োজন সব সময়ই। রক্তদান শিবির করবে কে? পুলিশ।

আবারও প্রশ্নটা উঠছে। পুলিশ কী মানুষ নয়! তার মধ্যে কী সংক্রমণ ঠেকানোর আলাদা কোনও গুণ রয়েছে? উত্তরটা অবশ্যই না। তবু তারাই এখম ত্রাতা। শুধু ব্যক্তির নয়, সমষ্টির। সমাজের। সত্যিই রক্ষকের ভূমিকায়। নিজের প্রাণ, সংসার বিসর্জন দিয়েই। অথচ, তাঁদেরও বাড়ি রয়েছে। স্ত্রী, পুত্র, আত্মীয় পরিজন রয়েছেন। আমরা যখন, বাড়িতে বসে কিছু না করেই দিনে বিশ বার সাবান দিয়ে হাত ধুচ্ছি, পুলিশ তখন বাইরে ঘুরে বেড়াচ্ছে। দিনের শেষে কাজ সেরে যখন বাড়ি ফিরছে? স্ত্রী, পুত্র কী প্রশ্ন করছে না? কারণ, তিনিই যে স্ত্রী-পুত্রকে লকডাউনের অর্থ বুঝিয়ে গৃহবন্দি রেখেছেন। আর সেই প্রশ্নই যখন তাঁর কাছে ফিরে আসছে? কী উত্তর দিচ্ছেন তিনি? তা আমার জানা নেই। তবে এটুকু জানি, সে উত্তরে সন্তুষ্ট হতে পারেন না তাঁর স্ত্রী-পুত্র। তবু পরদিন সকালে আবার তাঁকে বেরোতে হয়।

তখনই প্রশ্নটা ফিরে আসে, পুলিশ কী মানুষ নয়??

সব সঙ্কটই একটা সময় মিটে যায়। করোনার ভয়াবহ সঙ্কটও নিশ্চয় দুর হবে। আবার পৃথিবী সুস্থ ও স্বাভাবিক হবে। আতঙ্কের কালো মেঘ কাটিয়ে সবুজ পাতার সঙ্গে জনজীবনও শুরু হবে নতুন স্রোতে। তখনও পুলিশের এই ভূমিকাটা মনে থাকবে তো!

 

Mailing List