অজয় ঘোষের কবিতা

অজয় ঘোষের কবিতা
পরাভব
****
পরাভব মেনে নিয়ে বসে আছি সেই থেকে
নদীটির দিকে মুখ,
ওপারে নাবাল জমি দিগন্তের দিকে চলে গেছে ঢেউ
আরো কিছু পরে সূর্যাস্তের আলোতে
দুঃখী মানুষের বুক থেকে গড়াবে পাথর
যা তোমার দেখার কথা নয়
যা আমার বোঝানোর কথা নয়
শুধু পরম্পরা মেনে শার্ট খুলে বুকের আঁচড়গুলো
একদিন দেখাবো তোমাকে
সন্ধি হয় মাঠ জুড়ে দিন ও রাত্রির
কে কতটা দখল নেবে সময়ের ঋতুতে,
কিন্তু নর ও নারীরা সন্ধি করেনা
ভেঙে গেলে কাঁচ--
দাগ তার আজীবন থেকে যায় বৃক্ষ শরীরে
উপদ্রুত এলাকা জুড়ে কঠোর পাহারা বসে
বাঘ ও থাবা চাটে গাছের আড়ালে
উদ্ধত বুকের নিচে শামুকের কঠিন খোলস
আজীবন গিলে নেয় সুখ
যতটা এগিয়ে যাই প্রতিটি সকালে
ততটা পিছিয়ে আসি রাতে ---
মৃদু আর সুগন্ধি রাত বিছানায় এঁকে রাখতো
নদ নদী পাহাড় জঙ্গল
এলা আর বন্যাকে দেখতাম সে সময়
সমুদ্রের রাতে আসতো অলিভ রিডলেরা
মেখলায় মেখে নিতে অশ্রুর জল
সোয়ান লেকের পরীরা স্থির ত্রিশঙ্কু তখন
পাখিরা উড়াল দিতো যখন তখন
সেইসব মধ্যযুগীয় উপকথা সার কিছু নেই
আজ দেখো পড়ে আছে সাদা হাড় দু চার দশটা
মাধুকরী শেষে
ঘুম নেমে আসে শ্রান্ত ওই বুকে,
খড়কুটো জড়ো করে বসে আছি
বড় যত্ন করে
আগুন জ্বালাবো।
……………………
পরাবাস্তব
****
আমাকে ছুঁয়ে দিলে এখনও আমি সোনা হয়ে যাই
আমাকে ছুঁয়ে দিলে এখনও আমি সমুদ্র গভীর
দূরে বৃষ্টিরাত
দূরে বিন্দু আলো
ট্রেনের জানালা থেকে সরে সরে যায়
দূরে কদম্ব রেনু
দূরে আতপ্ত দিন
ক্রমশঃ প্রকাশ্য জেনে উড়ন্ত চুম্বন ছুঁড়ে দিই
নিজের ভিতর থেকে
নির্মান সব ভেঙে ভেঙে
বিলীন করবো ভেবে এসেছি মিনার শিখরে
প্রতিরোধ ছিল খুব
মধ্যরাতে নিশীথ সূর্যতে
তবু মুক্তি দিতে হয়, একদিন ভেঙে পড়ে সব
ভোরের শিশিরের কাছে পরাভূত হয় সমস্ত নীল
দাঁত নখ যাবতীয় জীবাশ্ম সাজানো থাকে মাটির গভীরে।
…………………………………..
আত্মজন
***
কোনো কোনো ভোরে ঘুম ভেঙে দেখি
শরীরটা একটা গান হয়ে গেছে
আড়ালে আবডালে কেউ সেতার বাজাচ্ছে
অচেনা পাখিরা এসে বসে আছে শরীরের ওপরে
খুঁটে খাচ্ছে আত্মার দানা
আমার কোনো দায় নেই
কোনো দায়িত্ব নেই
কোনো পক্ষপাত নেই
শুধু শব্দগুলো ছড়িয়ে পড়ছে সুরে
দূর থেকে দূরে
একদিন ঠিক আমিও খুঁজতে খুঁজতে যাব দূরে
সেইসব পুরানো ঠিকানা
পুরানো অলিগলি পুরানো পাশের বাড়ি
ধূ ধূ মাঠে ছড়ানো ইশারা
নামিয়ে রাখা অবলম্বনগুলি
সরেজমিন তদন্তের পর
যার কোনো হয়নি কিনারা
পিছনে দাঁড়িয়ে থাকা ছায়া
হয়তো তখনও টানবে পিছে
অতীতের গোপন সিঁড়িতে
সকালের প্রথম আলোতে এইভাবে গান হয়ে ওঠা
প্রসাধিত মুখ নয়
বিষাদ আকাশ
একটু আগেই গেছে ডুবে
সন্ধ্যাতারা আলোর গভীরে
শুধু অশ্রুময়ী ওই চোখ
এখনও ভিতরে কেনো বাজে
ওই সুর নখ দিয়ে চিরে দেয় বুক
তবু আত্মজন মনে হয় তাকে।
………………………………………..

