অতি আত্মবিশ্বাস আজ জেন ওয়াইয়ের ভূষণ, সর্বনাশের চূড়ান্ত প্রযুক্তি হাতে পেয়ে?

অতি আত্মবিশ্বাস আজ জেন ওয়াইয়ের ভূষণ, সর্বনাশের চূড়ান্ত প্রযুক্তি হাতে পেয়ে?
08 Dec 2022, 10:10 AM

অতি আত্মবিশ্বাস আজ জেন ওয়াইয়ের ভূষণ, সর্বনাশের চূড়ান্ত প্রযুক্তি হাতে পেয়ে?

. গৌতম সরকার

 

   

আত্মবিশ্বাস ভালো, কিন্তু অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস কদাপি নয়। দুটোর মধ্যে পার্থক্য এতটাই সূক্ষ্ন  যে উদ্দিষ্ট ব্যক্তিটি বুঝতেই পারেননা কখন ব্যাপারটা অতিরিক্তের দিকে ঝুঁকে পড়েছে, ফলে সর্বনাশ আটকানোর আগেই বিপর্যয় নেমে আসতে পারে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস জিনপ্রবাহের ফল হলেও বেশিরভাগটাই অনুশীলনের মধ্যে দিয়ে অর্জিত হয়। ছোটবেলায় স্কুলের ক্লাসে, পাড়ার বন্ধু বা বন্ধুর দাদা-কাকার মধ্যে এরকম দুয়েকটা চরিত্র সকলেরই চোখে পড়েছে। আমার এই মুহূর্তে এক বন্ধুর কথা মনে পড়ছে যার অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস দেখে মাঝেমধ্যে মাথার মধ্যে আগুন জ্বলে উঠতো৷ ওয়েস্ট ইন্ডিজ ভারতকে চতুর্থ ইনিংসে জেতার টার্গেট দিয়েছে তিনশো নব্বই রান। ভারত পাঁচ উইকেটে বিরানব্বই রানে ধুঁকছে, তখনও কমলালেবুর খোসা ছাড়াতে ছাড়াতে অম্লান বদনে বলে যাচ্ছে, চিন্তা করিস না, এ টেস্ট ইন্ডিয়া জিতবে। কয়েক হাজারের মধ্যে এইরকম এক-আধজন অপরিণামদর্শী থাকলে অসুবিধা নেই, কিন্তু একটা গোটা জেনারেশন যখন একসাথে 'অতি আত্মবিশ্বাস' রোগে ভুগতে থাকে, তখন সেটা রীতিমতো ভাববার বিষয় হয়ে উঠে। একটু চোখকান খোলা রাখলেই বিষয়টির সম্যক প্রতীতি ঘটবে। আমি ‘জেন ওয়াই’-এর কথা বলছি, যারা মূলত ১৯৮১ থেকে ১৯৯৬ সালের মধ্যে জন্মেছে। এদের মধ্যে একদম ওপরের  কিছু শতাংশ বাদ দিলে মধ্যমেধা এবং নিম্নমেধার আপামর প্রজন্মটি অতি আত্মবিশ্বাসে ভুগতে ভুগতে একটা দিশাহীন অন্ধ আবর্তের দিকে ছুটে চলেছে, এদের ভবিষ্যৎ কী হবে?

     

প্রথমেই স্বীকার করে নেওয়া ভালো এই প্রজন্মের অর্থহীন আত্মবিশ্বাসের পিছনে তাদের পূর্বসূরি জেন এক্স অনেকাংশে দায়ী। মূলত এক বা দুই সন্তানের পরিবারে বড় হয়ে উঠবার কালে এদের সচেতনভাবে অভাব কাকে বলে সেটা জানতে দেওয়া হয়নি। জীবনে সবকিছু চাওয়ার আগে পেয়ে যাওয়ায় না পাওয়ার কষ্ট বা শৈশবে কোনও কিছু অ্যাচিভ করতে না পারার ঈর্ষা বা জেদ এদের মধ্যে তৈরি হয়ে ওঠেনি। এককথায় জেন ওয়াইয়ের জীবনে কোনও স্থির লক্ষ্য নেই। এর মধ্যে সর্বনাশের চূড়ান্ত হয়েছে প্রযুক্তি হাতে পেয়ে। প্রযুক্তিকে সম্বল করে তাদের ধারণা হয়ে গেছে তারা সবজান্তা, আর কে না জানে সবজান্তাদের নতুন করে কিছু জানার বা শেখার থাকতে পারে না। তাই এদের অধ্যয়ন, চর্চা, আলোচনা, সমালোচনা কোনওকিছুরই দরকার পড়েনা।

মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন, অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস একটি মানসিক রোগ। এই রোগ জিনবাহিত হতে পারে, আবার কোনও ব্যক্তি সবার মধ্যে বিশেষ একজন হয়ে ওঠার অভিষ্টে অভ্যাসের মধ্যে দিয়ে  আত্মস্থ করে ফেলে। অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস মানুষকে যুক্তিগ্রাহ্য ভাবনা থেকে দূরে রাখে, নিজের ক্ষমতার পরিধির বাইরে গিয়ে কিছু ভাবতে গিয়ে মানুষ নিজের এবং পরের ক্ষতি করে বসে। আত্মবিশ্বাস মানুষকে নিজের সম্পর্কে ভুল ধারণা পোষণ করতে শেখায়, ঝুঁকিকে ছোট করে দেখতে শেখায়, আর যেকোনও সমস্যা সমাধানে নিজ ক্ষমতার পরিসর সম্পর্কে ভুল ধারণা দেয়। আজকের জেন ওয়াই ঠিক সেই ভুলটিই করে চলেছে। আধুনিক প্রযুক্তির টিআরপি হল কে  কতটা ভালোভাবে নিজেকে প্রেজেন্ট করতে পারছে। ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, ট্যুইটার হ্যান্ডেল, ইউ টিউব সবজায়গায় প্রতিমুহূর্তে হাজার হাজার লক্ষ লক্ষ ভিডিও আপলোড হচ্ছে। যতবেশি লাইক, ভিউয়ার, কমেন্টস তত বেশি প্রচার। কি নেই সেখানে! নাচ, গান, নাটক, কবিতা, রান্না, উদ্যানচর্চা, শরীরচর্চা, ভ্রমণ, এছাড়া অতি নিকৃষ্ট রুচির ‘হা হা হো হো’ ভিডিও  যেগুলোকে স্ল্যাং ভিডিও বললে অত্যুক্তি হয় না। আমি প্রযুক্তি বা বিনোদন চর্চার বিরোধী নই, আমার আপত্তি এদের একটা বড় অংশ এটাকেই তাদের আগামী দিনের পেশা বা রুটি রোজগারের মাধ্যম ভেবে বিশ্বাস করে বসে আছে। আমি চিন্তিত তার অন্যতম কারণ হল, অর্থনীতির সূত্র মেনে কোনও জিনিস শুধু উপার্জন করলেই হবে না তাকে বাজারজাত করার জন্য সমপরিমাণ চাহিদা সৃষ্টি হওয়া প্রয়োজন। প্রশ্ন হল, এই লক্ষ লক্ষ কোটি কোটি আপলোড হয়ে চলা ভিডিওর ক্রেতা কারা? এই প্রশ্নের জবাবে, আমার এক পরিচিত জেন ওয়াইয়ের উত্তর ছিল, আমার আপলোড করা ভিডিওর ভিউয়ারস্ একটা সংখ্যা অতিক্রম করলে গুগল আমাকে পয়সা দেবে। গত তিরিশ বছর ধরে অর্থনীতি শাস্ত্রে অধ্যাপনা করেও ব্যাপারটা একশো শতাংশ খোলসা না হওয়া সত্ত্বেও যদি ধরেই নিই গুগল পয়সা দেবে, সঙ্গে সঙ্গে আরেকটা প্রশ্ন উঠে আসে, কতবার দেবে আর কতজনকে দেবে! সেই অনিশ্চয়তার পরিপ্রেক্ষিতে এটাকে কি রুজিরোজগারের অন্যতম প্রধান হাতিয়ার হিসেবে নেওয়াটা ঠিক হবে!

 

অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস মানুষকে ভুল দিশা দেখায়। মানুষের স্বাভাবিক প্রবৃত্তি হল, যেকোনও ঘটনার একটা মনোমত ফল কল্পনা করে নেওয়া। অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসসম্পন্ন মানুষেরা শুধু ভেবেই ক্ষান্ত থাকেন না, তাঁরা বিশ্বাস করে বসে থাকেন যে সেটাই ঘটবে। এই ধরণের মানুষেরা নিজের সমালোচনা সহ্য করতে পারেন না, ত্রুটি স্বীকার করেন না, তাই সেইসব ভুলত্রুটির সংশোধনের কোনও চেষ্টা থাকে না। যখন একটা গোটা প্রজন্ম এর শিকার হয়ে পড়ে তখন কৃষ্টি, সৃষ্টি, সভ্যতা, সংস্কৃতি সবই থমকে যায়। প্রযুক্তি এই প্রজন্মের হাতে এমন একটি আলাদিনের আশ্বর্যপ্রদীপ ধরিয়ে দিয়েছে যে একটা ক্লিকেই জ্ঞানভান্ডারের সমস্ত দরজা খুলে যাবে। কিছুদিন আগে এক আত্মীয়ের বাড়িতে চায়ের আড্ডায় কাতার বিশ্বকাপ নিয়ে আলোচনা হচ্ছিল। পরিবারের সবচেয়ে খুদে সদস্য আমাদের আলোচনার মধ্যে ঢুকে বিশ্বকাপের ইতিহাস-ভূগোল হালহকিকত বাতলে দিল। আমি অত্যন্ত অনুপ্রাণিত হয়ে জিজ্ঞাসা করলাম, তুই কোন দেশের সাপোর্টার? বাচ্ছাটার স্পষ্ট উত্তর, আমার ফুটবল ভালো লাগে না। উত্তর শুনে থমকে গেলাম। জেন ওয়াইয়ের এই ভালোলাগহীন, ভালোবাসাহীন জ্ঞানের চর্চা ভীষণ ভাবে ভাবিয়ে তুলল।

    

সমস্যা শুধু এই প্রজন্মেরই উপজাত বললে ভুল হবে। জেন এক্সও অনেক সমস্যায় ভুগত বা এখনও ভোগে। তার মধ্যে একটা হল, ইংরেজি মাধ্যমের স্কুলে পড়াশোনা করে ইংরেজিটা একটু বলতে-কইতে পারলেই শিক্ষিত হওয়া গেল। এটা খুব অনভিপ্রেত নয়, কারণ ব্রিটিশরা দেশ থেকে মাত্র পঁচাত্তর বছর আগে বিদায় নিয়েছে, তাই হ্যাংওভার কিছুটা থাকতেই পারে। আমার আপত্তি ইংরেজি শিক্ষায় নয়, আপত্তি বাংলা ভোলায় আর ইংরেজি জানা নিয়ে আদিখ্যেতা করায়। আমার এক পরিচিত ভদ্রলোককে সারাজীবন বলতে শুনলাম, আমার মেয়ের মত ইংরেজি বলতে আর আমার ছেলের মত ইংরেজি লিখতে খুব কম লোককেই দেখেছি। আমি ভদ্রতার বেড়া ভেঙে গুরুজনস্থানীয় ওই ভদ্রলোককে কোনোদিনই বলে উঠতে পারলাম না, তার পরেও তো আপনার ছেলে এক সরকারি আপিসের লোয়ার ডিভিশনের ক্লার্ক আর মেয়ে একটা সাধারণ বেসরকারি স্কুলের দিদিমণি হয়ে সারাজীবন কাটিয়ে দিল।

     

মনোবিজ্ঞানীরা অতি আত্মবিশ্বাস কাটিয়ে ওঠার কতকগুলি উপায়ের সন্ধান দিয়েছেন।

 

এক, ভবিষ্যতের অনিশ্চিত এবং অজানা আউটকামের উপর জোর দিতে হবে। আগামী দিনে কি ঘটতে চলেছে সেটার ওপর আমাদের কন্ট্রোল থাকেনা। তাই অনিশ্চয়তার সম্ভাবনার কথা মাথায় রেখে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা জরুরী।

 

দুই, দলে সবসময় একটা সমালোচনামুখর সদস্য রাখতে হবে, যে ভালোকাজেরও সমালোচনা করবে। দলের মধ্যে সবথেকে অপ্রিয় হয়ে উঠলেও তার সমালোচনাগুলো যেকোন সিদ্ধান্ত গ্রহণের আগে টিমকে পাঁচবার ভাবতে বাধ্য করবে।

 

তিন, প্ল্যান 'এ'-এর সাথে সবসময় প্ল্যান 'বি' ও 'সি'কেও প্রস্তুত রাখতে হবে। কিন্তু এখানে একটা সমস্যা আছে, যেকোনো প্রজেক্টের একটা ডেডলাইন থাকে, সেক্ষেত্রে প্ল্যান পরিবর্তন করে নতুন করে কাজ সাজাবার জন্য্য যথেষ্ট সময় নাও পাওয়া যেতে পারে।

 

চার, সাফল্যের পাশে পাশে নিজের বিষয়ে নেতিবাচক ধারণাগুলোকে নিয়ে ভাবতে হবে। এটা সম্ভব হবে যখন একজন মানুষ সমালোচনাকে খেলোয়াড়সুলভ মানসিকতায় গ্রহণ করতে শিখবে।

 

পাঁচ, যেকোনও ব্যাপারে অন্যের মতামতকেও গুরুত্ব দিতে হবে।

 

ছয়, আত্মপ্রত্যাশা সবসময় বাস্তবসম্মত হওয়া জরুরি। আত্মবিশ্বাসের মধ্যে অনেকটাই হল আত্মমূল্যায়ন। নিজের মূল্যায়ন আর কাজের জায়গায় মূল্যায়নের মধ্যে বড়সড় ঘাটতি থাকলে অবশ্যম্ভাবী বিপর্যয় দেখা দেবে।

 

পরিশেষে, অসফলতাকে মেনে নিতে হবে। সব কাজে প্রথম চেষ্টাতেই সফলতা আসবে এই ধারণা ঠিক নয়। স্টিভ জোবস, জেফরি বেজস, এলন মাস্ক কেউই প্রথমবারেই সফল হননি। যেটা গুরুত্বপূর্ণ সেটা হল, খুব তাড়াতাড়ি অসাফল্যের কারণটি খুঁজে পেয়ে সংশোধন করে পূর্ণ উদ্যমে পুনরায় ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। এই বিষয়গুলির চর্চা খুব জরুরি। কিন্তু প্রযুক্তির দুনিয়ায় ভাসতে থাকা অতি আত্মবিশ্বাসী, উচ্চাভিলাসী জেন ওয়াই কি গ্রহণ করতে প্রস্তুত?

 

অতি আত্মবিশ্বাস যুগে যুগে অপরিনামদর্শিতার নিদর্শন রেখে গেছে। উইলিয়াম শেকসপিয়ার তাঁর বিখ্যাত 'জুলিয়াস সিজার' নাটকে রোম সম্রাট সিজারের খুনের জন্য সম্রাটের অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসকেই দায়ী করেছেন। সিজারের খুনের প্রাকমুহূর্তে তাঁর স্ত্রী ক্যালিফোর্নিয়ার মুখের কথাতেই ব্যাপারটি স্পষ্ট হয়, ক্যালিফোর্নিয়া বলছেন, "Alas my lord! Your wisdom is consumed in confidence.....". অন্যদিকে বাংলাদেশের জাতির জনক মুজিবুর রহমানের খুনের ঘটনাও অতি আত্মবিশ্বাসের ফসল। মুজিবুরের বিশ্বাস ছিল, পাকিস্তান যখন তাঁকে মারতে পারেনি তখন বাংলাদেশের মানুষ, যাদের তিনি একটা স্বাধীন দেশ উপহার দিয়েছেন, তারা তাঁকে কখনও মারবেন না। মুজিবুর রহমান কতটা ভুলের জগতে বিচরণ করছিলেন ইতিহাস তার সবচেয়ে বড় সাক্ষী। ভারতের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর ক্ষেত্রে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি লক্ষ্য করা যায়। পাঞ্জাবের স্বর্ণমন্দিরে 'অপারেশন ব্লু স্টার' সংঘটিত হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা উপদেষ্টা দুই শিখ দেহরক্ষীকে বদলি করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। অতি আত্মবিশ্বাসী শ্রীমতী গান্ধী সেই প্রস্তাবে সাড়া দেননি, ভাগ্যের নিষ্ঠুর পরিহাসে সেই দুই দেহরক্ষীর হাতেই তাঁকে খুন হতে হল। একই ব্যাপার তাঁর পুত্র রাজীব গান্ধীর ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।

   

যুগে যুগে এইসব ঘটনাগুলি বিক্ষিপ্তভাবে ঘটে গেছে। তবে আজকের সমস্যা সম্পূর্ণ আলাদা। সমাজ, পরিস্থিতি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি অসামাজিক, পরিশ্রমবিমুখ, আত্মপ্রচার সর্বস্ব একটা প্রজন্ম সৃষ্টি করেছে, যারা একটা দিশাহীন অন্ধ ভবিষ্যতের দিকে অতি আত্মবিশ্বাসকে মূলধন করে ছুটে চলেছে। তারা পড়তে ভুলেছে, লিখতে ভুলেছে, চিন্তাভাবনা করে না, স্মৃতির চর্চা বহুকাল আগে বন্ধ হয়ে গেছে, প্রযুক্তিসৃষ্ট অস্ত্র সম্বল করে দর্শকহীন প্রেক্ষাগৃহে আত্ম প্রদর্শনে এতটাই মোহাবিষ্ট যে কিছুতেই বুঝতেই চাইছেন না,  লাইকস আর ভিউয়ারস্ সংখ্যা কখনও কোনও গুনগত কৃষ্টির মাপকাঠি হতে পারেনা। অতি আত্মবিশ্বাসের জোরে তারা নিজেদেরকে এমন এক অলীক আসনে বসিয়ে ফেলছে যেখান থেকে বাস্তবের ঘুনধরা ও মরচে লাগা দিকগুলো চোখে পড়ছে না, কিন্তু এদের উপস্থিতি তাদের এগিয়ে চলার পথকে বন্ধুর করে তুলছে৷ এই জেন ওয়াইকে সেই আপ্তবাক্য শোনাবার মহা দায়ভার কে নেবে, 'সুস্থ আত্মবিশ্বাসের অর্থ হল কিছু জিনিস জানা আর কিছু জিনিস 'জানি না' বা 'পারি না'-এর তালিকায় থাকা'।

    

যেকোনও ব্যাপারে বিষয়ে আত্মমূল্যায়ন খুব গুরুত্বপূর্ণ। আত্মসমীক্ষার সময় মাথায় রাখতে হবে একটা রেসে প্রথম স্থানের পরও দ্বিতীয়-তৃতীয়-চতুর্থ স্থান থাকে। যে বিষয়টি বেশি করে দেখা দরকার সেটি হল, কাজটা যথেষ্ট সততা এবং দরদ দিয়ে করা হচ্ছে কিনা। অতি আত্মবিশ্বাসকে ঝেড়ে ফেলে মাটিতে পা রেখে জেন ওয়াইকে পথচলা শুরু করতে হবে, তবেই স্বপ্নগুলো বেঁচে থাকবে, মানুষ হাঁসতে ভুলবে না, সুখ-দুঃখ, চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে গুটি গুটি পায়ে আত্মবিশ্বাসী মানুষগুলো উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাবে। ভুললে চলবে না নিজের ক্ষমতাকে ঠিকঠাক চিনে ফেলে সেটাকে ঠিকঠাক কাজে লাগানোর ক্ষমতাকেই 'আত্মবিশ্বাস' বলে।

 

লেখক: অর্থনীতির সহযোগী অধ্যাপক

Mailing List