শাসক-বিরোধীর জাঁতাকলে পড়ে নাভিশ্বাস সাধারণ মানুষের

শাসক-বিরোধীর জাঁতাকলে পড়ে নাভিশ্বাস সাধারণ মানুষের
বিধানসভা নির্বাচনের বহু আগে থেকেই রাজ্যের নানা প্রান্তে শুরু হয়েছে অশান্তি। সম্মুখ সমরে শাসক তৃণমূল ও বিরোধী বিজেপি। দু'টো দলই কারণে-অকারণে তাল ঠুকছে। রাজ্যে, কেন্দ্রে যারা মসনদে বসে আছে তারা এই করোনাকালে মানুষকে সতর্ক করতে গিয়ে কেউ দু'গজের দূরত্বের কথা বলছে, কেউ মাস্ক ব্যবহারে জোর দেওয়ার কথা বলছে, আবার কেউ বৃত্ত এঁকে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখার কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে। কিন্তু সেই রাজনৈতিক দলগুলোই করোনার কঠিন মুহূর্তে প্রতিদিন প্রতি মুহূর্তে এসবকে তুড়ি মেরে ভাঙছে। মিছিল, মিটিং, জমায়েত, অবরোধ, মারামারি পুরো দস্তুর চলছে। ক্রমশ পরিস্থিতি জটিল হয়েছে। এই মুহুর্তে রাজ্য রাজনীতি টগবগ করে ফুটছে। রাজ্যে আইনশৃঙ্খলার অবনতির অভিযোগে ৩৫৬ ধারা লাগু করে রাষ্ট্রপতি শাসন জারির আওয়াজও উঠছে। তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডায়মণ্ডহারবার কেন্দ্রে দিন কয়েক আগে বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জগৎপ্রকাশ নাড্ডার সভা করতে যাওয়ার পথে তাঁর কনভয়ে হামলাকে ঘিরে বঙ্গ রাজনীতি তুমূল উত্তপ্ত। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব অজয় ভাল্লা তলব করেছেন রাজ্যের মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়, ডাইরেক্টর জেনারেল বীরেন্দ্রকে। দিল্লির মিটিংয়ে অব্যাহতি চেয়ে চিঠি পাঠিয়েছেন মুখ্যসচিব। নাড্ডার জেড ক্যাটেগরির কনভয়ে এভাবে হামলা কি করে হল, এর কৈফিয়ৎ চাওয়াটাই মূল বিষয়। তাঁর নিরাপত্তারক্ষীদের ওপরও হামলার অভিযোগ আছে। ফলে সব মিলিয়ে সঙ্ঘাত চরমে। কিন্তু এই পরিস্থিতির জন্য উভয় পক্ষই সমান দায়ী। তৃণমূলের পক্ষে বর্ষীয়ান অভিজ্ঞ সাংসদ সৌগত রায় বলেন, ডায়মণ্ডহারবারে গিয়ে কেন ওরা খোঁচাতে গেল? এ কেমন কথা! তাহলে আগামী দিনে কেউ করও কেন্দ্রে যাবেন না তো? উল্টোদিকে বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেছেন, এখানকার তৃণমূল নেতারা অন্য রাজ্যে গেলে ছবি হয়ে ফিরতে পারেন। এটাই বা একজন তথাকথিত দায়িত্বশীল নেতা কি করে বলতে পারেন? ফলে নির্বাচনের ৫ মাস আগে রাজ্যের বিভিন্ন জায়গার পরিস্থিতি যদি এমনই হয় তাহলে নির্বাচনের দিনগুলোতে কী হতে পারে তা ভেবে শিউরে উঠতে হচ্ছে।
অন্যদিকে অভিষেক সেদিনের ঘটনার পর বলেন, এটা মানুষের স্বতস্ফূর্ত আক্রোশের বহিঃপ্রকাশ। মুখ্যমন্ত্রী বলে বসলেন, নাড্ডা, চাড্ডা, ফাড্ডা ইত্যাদি। তার আগে বলেন, নাড্ডার কনভয়ে কিছুই হয়নি। ঘটনার পরম্পরাতে তিনি বয়ান বদলে বললেন, বিজেপির নিজেদের লোকরাই এটা ঘটিয়েছে। পুলিশ টুইটারে কোন ঘটনা ঘটেনি বলে টুইট করল। কারও কথার সঙ্গে কারও মিল নেই। তাহলে এ কেমন প্রশাসন! বিরোধী নেত্রী থাকাকালীন আজকের মুখ্যমন্ত্রী যা যা করেছিলেন, তাকে হুবহু নকল করে চলেছে বিজেপি। আবার রাজ্যপাল একতরফা শাসক দলকে বিঁধছেন। ফলে তাঁর নিরপেক্ষতা নিয়ে বড়সড় প্রশ্নচিহ্ন তৈরি হচ্ছে। এর মাঝে পড়ে রাজ্যবাসীর নাভিশ্বাস উঠছে। সবাই নাকি মানুষের পাশে! রাজ্যপাল একবারের জন্যও দিলীপ ঘোষকে এই ধরণের চূড়ান্ত প্ররোচনামূলক কথার জন্য সংযত হতে বলছেন না কেন? এর মাঝে ফের রাজ্যে আসছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ্। প্রমাদ গুনছেন কিন্তু রাজ্যের সাধারণ মানুষ।


