এক পদ, এক বিচারপতি আর তিন কন্যা, পাঁচ বছরেও বৃত্তটা কী সম্পূর্ণ হল?  

এক পদ, এক বিচারপতি আর তিন কন্যা, পাঁচ বছরেও বৃত্তটা কী সম্পূর্ণ হল?   
18 May 2023, 08:50 PM

এক পদ, এক বিচারপতি আর তিন কন্যা, পাঁচ বছরেও বৃত্তটা কী সম্পূর্ণ হল?

 

আনফোল্ড বাংলা প্রতিবেদন: চেয়ার একটি। বিচারপতিও একজন। কাকতালীয় হলেও সেখানেই জড়িয়ে ছিলেন তিন নারী। ২০১৮ থেকে ২০২৩ – পাঁচ বছরে বৃত্তটা সম্পূর্ণ হল।

লড়াইটা শুরু হয়েছিল অনেক আগেই। কারণ, মন্ত্রী পরেশ অধিকারীর কন্যা অঙ্কিতা অধিকারী চাকরিটা পেয়েছিলেন ২০১৮ সালে। তারপর খোঁজ-খবর নিয়ে ববিতা সরকার জানতে পারেন, মেধা তালিকায় তিনি অঙ্কিতার থেকে আগেই থাকবেন। তথ্য-প্রমাণ জোগাড় করতে অবশ্য কম কাঠখড় পোড়াতে হয়নি। তারপর তো আদালতে যাওয়া। আর সেই কাজে সফল হলেন দীর্ঘ লড়াই শেষে। ২০২২ সালের ২০ মে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশে চাকরি যায় অঙ্কিতার।

না, এখানেই শেষ নয়। মন্ত্রী কন্যাকে টাকা ফেরতেরও নির্দেশ দেয় আদালত। সেই টাকাও ফিরিয়ে দেন তিনি। যে টাকা পেয়ছিলেন তাঁর পদে চাকরি পাওয়া ববিতা সরকার। ববিতা কিন্তু চাকরি পেয়েছিলেন অঙ্কিতা যে স্কুলে চাকরি করতেন সেই একই স্কুলে। অর্থাৎ মেখলিগঞ্জ ইন্দিরা গার্লস হাই স্কুলে।

হাই কোর্ট এ-ও নির্দেশ দেয়, অঙ্কিতাকে সরকারের কাছ থেকে নেওয়া সমস্ত বেতনও ফেরত দিতে হবে। দু’টি কিস্তিতে ওই টাকা ফেরানোর নির্দেশ দেওয়া হয় অঙ্কিতাকে। এই ঘটনার পর রাজ্যজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়। উল্টোদিকে স্কুলে যোগ দিয়ে চাকরি করতে শুরু করেন ববিতা। ঠিক এমন সময় হাজির হন অনামিকা রায়। অনামিকার দাবি ছিল, মেধা তালিকায় তিনি ববিতার থেকেও আগে থাকবেন। কারণ, ববিতা স্কুল সার্ভিস কমিশনে যে তথ্য দিয়েছিল সেখানে রয়েছে ভুল। ববিতার আবেদনপত্র অনুযায়ী, স্নাতক স্তরে ৮০০ নম্বরের মধ্যে ৪৪০ নম্বর পেয়েছিলেন ববিতা। অর্থাৎ, শতকরা হিসাবে ৫৫ শতাংশ। অথচ, স্নাতক স্তরের প্রাপ্ত নম্বরের শতকরা হিসাব ৬০ শতাংশ বা তার বেশি উল্লেখ করা হয়েছে আবেদনপত্রে।

শুরু ফের আইনি লড়াই। এখানেও বিচারপতি সেই অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। অবশেষে তিনিই নির্দেশ দিলেন, ববিতা নয়, ওই চাকরি পাবেন অনামিকা। শুধু তা-ই নয়, অঙ্কিতা যে টাকা ববিতাকে দিয়েছিলেন সেই টাকাও ফেরৎ দিতে হবে ববিতাকে। আগামী ৬ জুনের মধ্যে ববিতাকে ১৫ লক্ষ ৯২ হাজার ৮৪৩ টাকা হাই কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলের কাছে জমা দিতে হবে। হাই কোর্টের রেজিস্ট্রার সেই টাকা নতুন চাকরি প্রাপক অনামিকার হাতে তুলে দেবেন। তবে ববিতা চাকরি করে যে টাকা মাইনে পেয়েছেন সেই টাকা অবশ্য তাঁকে ফেরৎ দেওয়ার নির্দেশ দেয়নি আদালত।

অর্থাৎ পাঁচ বছরে এক পদে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বসতে চলছেন তিন কন্যা। অঙ্কিতার পর ববিতা, এবার বসবেন অনামিকা। তবে ববিতাও এবার বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে ডিভিশন বেঞ্চে আবেদন জানিয়েছেন। অর্থাৎ যে বিচারপতির কলমে অঙ্কিতার চাকরি গিয়েছিল, পরিবর্তে ববিতা পেয়েছিলেন চাকরি, এবার তাঁর নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করলেন ববিতা। ডিভিশন বেঞ্চ মামলার অনুমতিও দিয়েছে। এখন দেখার শেষ পর্যন্ত এক পদ আর তিন কন্যার গল্প আরও এগোয় কিনা।

Mailing List