স্কুল-কলেজে শুরু হতে চলেছে অফলাইন ক্লাস-কিছু ধন্ধ, কিছু জিজ্ঞাসা, কিছু পরামর্শ  

স্কুল-কলেজে শুরু হতে চলেছে অফলাইন ক্লাস-কিছু ধন্ধ, কিছু জিজ্ঞাসা, কিছু পরামর্শ   
12 Nov 2021, 01:45 PM

স্কুল-কলেজে শুরু হতে চলেছে অফলাইন ক্লাস-কিছু ধন্ধ, কিছু জিজ্ঞাসা, কিছু পরামর্শ

 

ড. গৌতম সরকার

    

 

'আগামী ১৬ নভেম্বর, দীর্ঘ কুড়ি মাস অবসানে এই রাজ্যের (পশ্চিমবঙ্গ) স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় খুলতে চলেছে', এই বাক্যবন্ধে ঘোরতর আপত্তি আছে। তার কারণ হল লকডাউনের কয়েকটা দিন বাদ দিলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কখনোই বন্ধ ছিল না। হ্যাঁ, সেই সময় পঠনপাঠন রাতারাতি ক্লাসরুম, চোখ-ডাস্টারের সাবেকি ব্যবস্থাপনা থেকে বদলে পুরোটাই অনলাইন মোডে (ই-লার্নিং) প্রতিসারিত হয়ে গিয়েছিল।

কিন্তু স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারা মিড-ডে মিল তৈরি করা থেকে শুরু করে, বিধানসভা ইলেকশনের টেনিং নেওয়া, ভোটে এবং রেসাল্ট কাউন্টিং সেন্টারে ডিউটি দেওয়া, পরীক্ষা পরিচালনা, রেসাল্ট তৈরি ইত্যাদি হাজারটা কারণে বারংবার স্কুলে গিয়েছেন এবং সাথে অতীব যোগ্যতার সঙ্গে অনলাইন ক্লাস সামলেছেন। এছাড়া চলতি বছরে বিধানসভার ভোটের আগে নবম থেকে দ্বাদশ পর্যন্ত ছাত্রছাত্রীদের জন্য পরীক্ষামূলক ভাবে দুমাস স্কুল খুলে দেওয়া হয়েছিল। অন্যদিকে কলেজেরও অনেক শিক্ষককে ভোটের দায়িত্ব পালন করতে হয়েছে, তারপর এই দুই বছরে অনলাইন ক্লাস নেওয়ার পাশাপাশি চারটে সেমিস্টারের প্রশ্নপত্র তৈরি করা, পরীক্ষার পর নিজের মেইলে আসা উত্তরপত্র বুঝে নেওয়া, অ্যানোটেশন পদ্ধতিতে উত্তরপত্র পরীক্ষা করা, বিশ্ববিদ্যালয় নির্ধারিত সময়ের মধ্যে রেসাল্ট নির্দিষ্ট পোর্টালে আপলোড করা, এছাড়া দুইবছর ধরে প্রথম সেমিস্টারের ছাত্রছাত্রীদের অনলাইন মাধ্যমে ভর্তি করা ইত্যাদি কাজকর্ম সামলাতে হয়েছে। রেসাল্ট প্রস্তুত ও প্রকাশ এবং হাজারটা অফিসিয়াল কাজের জন্য কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের জীবন বাজি রেখে বারংবার কর্মক্ষেত্রে যেতে হয়েছে। আর প্রিন্সিপাল, এবং অন্যান্য আধিকারিকদের কথা তো সম্পূর্ণ আলাদা। যাঁরা চূড়ান্ত সংক্রমণ কালেও শিক্ষাব্যবস্থাটিকে টিকিয়ে রাখতে সপ্তাহে তিনদিন, চারদিন এমনকি রোজ দীর্ঘ সময়ের জন্য উপস্থিত থেকেছেন।

এরপরও সমাজের এক অংশের মানুষের বক্তব্য হল- শিক্ষক সম্প্রদায় বাড়িতে বসে বসে মাইনে পাচ্ছেন। এই প্রসঙ্গে একটা বিনীত প্রশ্ন, উৎপাদন ও সেবার সমস্ত ক্ষেত্র খুলে গেলেও স্কুল-কলেজ খুলল না কেন? সে কি এমনি এমনি? সরকার, ছাত্রছাত্রী, অভিভাবক সবাই চোখ বুজে না দেখার ভান সমাজের কেবলমাত্র এই সম্প্রদায়টিকে অন্যায় সুযোগসুবিধা দিয়ে চলছিল! কথাটা একদম ভুল। হ্যাঁ, এটা সত্যি অনলাইন পঠনপাঠনের সুবিধা সমাজের সর্বস্তরের ছাত্রীছাত্রীদের কাছে পৌঁছনো যায়নি, তবে এটাও সত্যি যখন অনলাইন শিক্ষামাধ্যমই একমাত্র উপায় তখন শিক্ষকসমাজ নিজেদের প্রযুক্তিতে শিক্ষিত করে, অনলাইন মাধ্যমে শুধুমাত্র সিলেবাস শেষ করেই ক্ষান্ত থাকেননি, ঘরবদ্ধ, দমবন্ধ, সমাজ ও বন্ধুবিহীন জীবনে ছাত্রীছাত্রীদের মানসিকভাবে চাঙ্গা থাকার পাঠও দিয়েছেন। এককথায় কোভিড-১৯ ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্কটিকে একটি নতুন আঙ্গিক দিয়েছেন। তাই শিক্ষক সমাজ গত দুবছর ধরে ঘরে বসে বসে মাইনে পেয়েছেন কথাটি সর্বৈব মিথ্যে, আর আগামী ১৬ নভেম্বর থেকে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় খুলছে কথাটি অর্ধ সত্য।

ধন্ধ ও সংশয়: তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার মাহেন্দ্রক্ষণটি নিয়ে বেশ কিছুটা ধন্দ আছে। উল্লেখ্য, গত জুলাইয়ের শেষের দিকে সাংবাদিক সম্মেলনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন, আগামী ৫ সেপ্টেম্বর শিক্ষক দিবসের দিন করোনা পরিস্থিতি বিবেচনা করে স্কুল খোলা হতে পারে। যদিও পরিস্থিতির সার্বিক মূল্যায়নের পর স্কুল-কলেজ খোলা হয়নি। কিন্তু এই মুহূর্তে বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গাপুজোর পর সংক্রমণের হার ঊর্ধ্বমুখী, এছাড়া অধিকাংশ ছাত্রছাত্রীর ভ্যাকসিন হয়নি, সেই পরিস্থিতিতে ১৬ তারিখ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা কতটা সঠিক সিদ্ধান্ত?

বিকাশ ভবনের পক্ষ থেকে স্কুল-কলেজের প্রধানের কাছে কোভিড-নির্দেশিকা পাঠানো হয়েছে। একই নির্দেশিকা জেলাশাসকদেরও পাঠানো হচ্ছে। নির্দেশিকায় বলা ছিল ৩১ অক্টোবরের মধ্যে স্কুলকলেজ সম্পূর্ণ ভাবে সাফাই ও জীবাণুমুক্ত করে ফেলতে হবে। কর্মীরা ১ অক্টোবর থেকে কর্মক্ষেত্রে যেতে পারবেন, ইত্যাদি। সেই পদ্ধতি অনুসরণ করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলি আগামী ১৬ তারিখ ছাত্রছাত্রীদের স্বাগত জানাতে প্রস্তুত। কিন্তু ধন্দ এখনও সমস্ত 'স্টেকহোল্ডারদের' মধ্যেই রয়ে গেছে। সমস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে আগে এটা নিশ্চিত করতে হবে যাতে প্রতিষ্ঠানের পদ্ধতিগত গাফিলতিতে ছাত্রছাত্রী, কর্মী এবং তাদের পরিবারের মধ্যে সংক্রমণ ছড়িয়ে না পড়ে। আর এখানেই একাধিক ধন্দ বা সংশয় তৈরি হচ্ছে। 'ডু অ্যান্ড ডোন্টস'-এরও একটি তালিকা বিকাশ ভবনের 'রিওপেন বুকলেটে' আছে। সেখানে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, সন্তানের জ্বর হলে অভিভাবকরা যেন তাদের স্কুলে না পাঠান। এছাড়া স্কুল ও কলেজকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে একটা নির্দিষ্ট সময় পর পর ক্লাসরুম, ল্যাবরেটরি এবং অফিস ঘরগুলি স্যানিটাইজ করতে হবে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এই ধরণের পরিকাঠামো এবং আর্থিক সক্ষমতা কটি প্রতিষ্ঠানের আছে। বিকাশভবন প্রেরিত কলেজ নির্দেশিকায় বলা আছে –

 

এক, অধ্যাপক ও শিক্ষাকর্মীদের কোভিড প্রটোকল ট্রেনিং দিতে হবে;

 

দুই, ক্যাম্পাসে আবশ্যকীয় থার্মাল স্ক্যানিংয়ের ব্যবস্থা রাখতে হবে;

 

তিন, কোনোরকম উপসর্গ থাকলে কলেজে প্রবেশ করা যাবে না;

 

চার, জলের বোতল ও বই শেয়ার করা যাবে না;

 

পাঁচ, টিফিন শেয়ার করা যাবে না; এবং

 

ছয়, সহপাঠীদের কাছাকাছি আসা বা খেলাধুলা করা যাবে না।

  

বাস্তব হচ্ছে, আমাদের রাজ্যের অধিকাংশ স্কুল-কলেজের ক্ষেত্রে এই সবটাই বড় বেশি 'হাইপোথিটিকাল'। যেহেতু সরকারের তরফে ছাত্রছাত্রীরা কোন পদ্ধতিতে স্কুল-কলেজে আসবে সেই ব্যাপারে নির্দিষ্ট কোনো নির্দেশ নেই, সরকার এই বিষয়টি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের হাতেই ছেড়ে দিয়েছেন, এর ফলে বিষয়টি আরও জটিল হয়ে উঠেছে। করোনা গ্রাফের ঊর্ধ্বমুখী সঞ্চালনের সময় কতজন পড়ুয়ার একসাথে প্রতিষ্ঠানে উপস্থিত স্বাস্থ্যসম্মত এবং নিরাপদ সে ব্যাপারে যথেষ্ট ধন্দের মধ্যে আছেন বহু কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসকগণ। পশ্চিমবঙ্গের বহু কলেজের ছাত্র সংখ্যা চারহাজার থেকে ছয় হাজার, তার ওপর অনেক কলেজে একই ক্যাম্পাসে প্রাত, দিবা এবং সন্ধ্যা তিনটি শিফটে ক্লাস হয়। তাই যে প্রশ্নটা খুব স্বাভাবিক ভাবেই উঠে আসে সেটি হল, সরকার, চিকিৎসক এবং উচ্চশিক্ষা দপ্তরের নির্দেশিকা সম্পূর্ণ ভাবে মেনে আগামী ১৬ তারিখ থেকে অফলাইনে পঠনপাঠন শুরু করা কতটা সম্ভবপর।

  

মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, স্কুল-কলেজ খুলে গেলে শিক্ষার্থীদের রোজ আসতে হবেনা, একদিন অন্তর আসবে। কিন্তু এবিষয়ে কোনো নির্দিষ্ট নির্দেশিকা না থাকায় ধন্দে শিক্ষা প্রশাসকরা। একসময় বিকাশভবনের তরফ থেকে ঘোষণা হয়েছিল, আগামী বছরের (২০২২) জুন-জুলাই মাসে যাদের ফাইনাল সেমিস্টারে বসার কথা তাদের নিয়েই কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় অফলাইন ক্লাস শুরু করুক। কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ও চাইছে স্কুলের মতোই সমস্ত ছাত্রদের একসাথে না ডেকে ভাগভাগ করে ডাকা হোক।

 

জিজ্ঞাসা: যদিও একটা বড় অংশ অভিভাবক বলেছেন তাঁরা করোনা বিধি যথাযথ মেনেই বাচ্ছাদের স্কুল-কলেজে পাঠাবেন, তবু কিছু জিজ্ঞাসা তাদের মধ্যেও রয়ে গেছে।

প্রশ্নগুলি এখানে উল্লেখ করা যাক, উত্তর গুলি সময় দেবে। এক, ক্লাস শুরু হওয়ার পর তাঁদের সন্তানেরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দীর্ঘ সময় কতটা নিরাপদ থাকতে পারবে। ইতিমধ্যেই সমস্ত স্কুল অভিভাবকদের কাছ থেকে একটি কবুলনামা চাইছে যেখানে উল্লেখ থাকবে, স্কুলে আসার পর কোনো ছাত্র বা ছাত্রীর করোনা হলে স্কুল কর্তৃপক্ষ কে দায়ী করতে পারবে না; দুই, সরকার কতদূর স্বাস্থ্যসম্মত ও নিরাপদ যানবাহনের ব্যবস্থা করতে পারবে; তিন, দীর্ঘদিন অফলাইন শিক্ষাব্যবস্থা বন্ধ থাকায় তাদের সন্তানেরা প্রতিযোগিতায় আদৌ পিছিয়ে পড়েছে কিনা আর পড়লে সেটা কিভাবে পূরণ হবে; চার, একটা বড় সময় সামাজিক যোগাযোগ থেকে দূরে থাকায় তাঁদের সন্তানদের মানসিক প্রক্ষেপ কতটা বিঘ্নিত হয়েছে। সমস্ত প্রশ্নের উত্তর আগামী দিনে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকেই দিতে হবে।

সরকারের তরফে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিকে কতকগুলি আবশ্যকীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলা হয়েছে। সেগুলি হল-

 

এক, ক্লাস শুরু ও শেষের সময়সূচীর পরিবর্তন করতে হবে;

 

দুই, নির্দিষ্ট সময় অন্তর হ্যান্ড স্যানিটাইজেশনের ব্যবস্থা থাকা জরুরি;

 

তিন, অধিক সংখ্যক শ্রেণী কক্ষের ব্যবস্থা করা;

 

চার, টিফিনের সময় ছাত্রীছাত্রীদের একসাথে হওয়া থেকে বিরত করা;

 

পাঁচ, ছাত্র সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করতে একাধিক শিফটে ক্লাসের ব্যবস্থা করা;

 

ছয়, পরিশ্রুত পানীয় জলের ব্যবস্থা থাকতে হবে;

 

সাত, পরিচ্ছন্নতা সুনিশ্চিত করা;

 

আট, ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।

    

এখানে প্রশ্ন বা জিজ্ঞাসাটি হল, আদৌ কি এই সবকিছু নির্দেশ মেনে স্কুল-কলেজ চালু করা সম্ভব! বিশেষ করে গ্রামের স্কুল-কলেজ, যাদের আর্থিক সংস্থান ও পরিকাঠামো দুটোই অপ্রতুল।

পরামর্শ: এই সময়ে স্কুল খোলা কতটা ঠিক হচ্ছে তা নিয়ে চিকিৎসক দের মধ্যেও বিতর্ক রয়েছে। এই প্রসঙ্গে জনৈক চিকিৎসক সুমন পোদ্দার বলেছেন, 'স্কুল খুলে গেলে বাবা-মাকে খুব বেশি করে সতর্ক হতে হবে। ছেলেমেয়েরা বন্ধুদের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে স্কুলে যাচ্ছে, একই পাতে টিফিন ভাগ করে খাচ্ছে, এগুলো যেন না হয়। এতদিন পর বন্ধুদের দেখা হওয়ায় একটা লাগামছাড়া হবার সম্ভাবনা থাকবে। সেটা যেন কোনোভাবেই অভিভাবকরা মান্যতা না দেন। সমস্ত সতর্কতা বাচ্ছারা যাতে মেনে চলে সেদিকে অভিভাবকদের সতর্ক নজর রাখতে হবে।' শিশু চিকিৎসক অপূর্ব ঘোষের মতে করোনার তৃতীয় ঢেউয়ের আশঙ্কার মধ্যে স্কুল খুললে বিপদ বাড়তে পারে। তিনি বলেছেন, সরকারের উচিত ছিল আরেকটু সুস্থির পরিস্থিতির জন্য অপেক্ষা করা। তবে বেশিরভাগ চিকিৎসক এবং শিক্ষাবিদরা মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছেন। একদল চিকিৎসকের মতে সঠিক পরিকল্পনা নিয়ে, শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের টিকা দিয়ে স্কুল খোলা যেতে পারে। গত কুড়িমাস ধরে চলতে থাকা ই-লার্নিং শিক্ষাপদ্ধতি বাচ্ছাদের চোখ ও মনের সমস্যা বাড়িয়ে তুলেছে। নয়াদিল্লির 'এইমস'-এর প্রধান রণদীপ গুলেরিয়া বেশ কিছুদিন আগে থেকেই ধীরে ধীরে স্কুল প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার পক্ষে সওয়াল করছিলেন। এই রাজ্যে করোনার তৃতীয় ঢেউ মোকাবিলার জন্য গঠিত দলের সদস্য চিকিৎসক যোগীরাজ রায় মমতার ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন, 'সাহস করে স্কুল-কলেজ খুলতে হবে। তবে একটি সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা মাফিক খুলতে হবে। সংক্রমণ বাড়লে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করার জন্যও প্রস্তুত থাকতে হবে। পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য উপযুক্ত স্বাস্থ্য পরিষেবা প্রস্তুত রাখতে হবে'। বেশ কিছু ডাক্তার মনে করছেন, বড়দের যদি টিকা হয়ে যায় এবং তাঁরা যদি যথাযথ স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলেন তাহলে ছোটদের সংক্রামিত হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কমে যায়। তাই স্কুল-কলেজের সমস্ত স্টাফদের টিকা নেওয়াটা খুব জরুরি।

  

 

তবে সকল চিকিৎসকদদেরই বক্তব্য, কোনোধরনের হঠকারী সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত হবে না। সমস্ত ধরণের সতর্কতা মূলক ব্যবস্থাকে সঠিক পরিকল্পনায় পর্যবসিত করেই ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আনতে হবে। এর আগে দেশের দশটি রাজ্যে স্কুল খোলার চেষ্টা করা হয়েছিল, প্রায় প্রতিটি রাজ্যেই ছাত্রদের মধ্যে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ায় অফলাইন শিক্ষাদান ব্যবস্থা পুনরায় বন্ধ করতে হয়, তারমধ্যে কেরালায় অবস্থা ভয়ংকর রূপ নেয়। চিকিৎসকদের পক্ষ থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য কতকগুলো গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ আছে। সেগুলি হল-

 

এক, প্রথমে দুসপ্তাহের জন্য স্কুল খুলে পরিস্থিতির দিকে নজর রাখতে হবে;

 

দুই, পরিস্থিতি ঠিক থাকলে সময়সীমা বাড়ানো যেতে পারে;

 

তিন, স্কুলের সাথে যুক্ত সবাইকে টিকাদান জরুরি;

 

চার, দূরত্ববিধি মানতে সমস্ত ছাত্রকে একদিনে ক্লাসে আনা সঙ্গত হবে না;

 

পাঁচ, পড়ুয়াদের একাধিক গ্রূপে ভাগ করে ক্লাসের সময় আলাদা করে দিতে হবে।

   

এরমধ্যে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, ছাত্র সংগঠন স্কুল খোলার জন্য বারংবার দাবি জানিয়েছেন। এই দাবিদাওয়া তারা ২০২০ সাল থেকে করে আসছেন। মুশকিল হল তাঁদের দাবি হল একমুখী, সরকারকে কিন্তু সবদিক বিচার-বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে হয়। এই বিষয়ে প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী এবং তৃণমূল মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য প্রণিধানযোগ্য। আগস্ট মাসের শেষে স্কুল খুলবে কিনা এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেছিলেন, 'রাজ্যে অনলাইন ক্লাস রমরমিয়ে চলছে। স্কুল খোলার ব্যাপারে সরকার নিশ্চয়ই আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেবে, তবে কারোর প্রাণের বিনিময়ে শিক্ষা হতে পারেনা।' ছাত্র সংগঠনের দাবি নিয়ে প্রশ্ন করায় শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন, 'ওদের জেনে রাখা প্রয়োজন করোনায় ৪০০ পড়ুয়া আক্রান্ত হওয়ার কারণে কেরলের স্কুল-কলেজ অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রাখা হয়েছে।' এইসব কারণে পশ্চিমবঙ্গ সরকার এর আগে কয়েকবার ভাবনাচিন্তা করেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার সমর্থনে সিলমোহর লাগাতে পারেনি। আগামী ১৬ তারিখ থেকে স্কুলকলেজে পুনরায় অনলাইন লেখাপড়া শুরুর সিদ্ধান্তকে সফল করতে গেলে শুধু সরকার নয় প্রতিটি নাগরিককে সচেতন হতে হবে, যে সচেতনতার অভাব রাস্তাঘাটে বড়ই চোখে পড়ে।

 

লেখক: অর্থনীতির সহযোগী অধ্যাপক

Mailing List