শুধু সিঁড়ি ভাঙা নয়, শুভেন্দু যে ছক ভাঙা

শুধু সিঁড়ি ভাঙা নয়, শুভেন্দু যে ছক ভাঙা
16 Dec 2020, 11:45 PM

শুধু সিঁড়ি ভাঙা নয়, শুভেন্দু যে ছক ভাঙা

তৃণমূলের জন্মলগ্ন। তখন শুভেন্দু হয়তো অনেক দূরে। কিন্তু পরে যে শুভেন্দুই জঙ্গলমহল থেকে শুরু করে রাজ্য – দলের হাল ধরবেন, তা হয়তো ঘড়ির সময়ে বাঁধা ছিল।

আসলে অধিকারী গড়ে তখনও শিশির অধিকারীই শেষ কথা। তবে ভাই দিব্যেন্দু অধিকারীকে প্রায় সকলেই চিনতেন। কারণ, বাবার কাজকর্ম দেখাশোনার দায়িত্বে তাঁকেই দেখা যেত। আর তৃণমূলে? পঙ্কজ বন্দ্যোপাধ্যায়, সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, এমনকী, সঞ্জয় বক্সীও তখন অনেক ওপরে। সুব্রত বক্সীর কথা ছেড়েই দিলাম। তিনি তো সর্বত্রই মমতাময়ী। অথচ, নীরব। পরে তৃণমূলের সমস্ত ক্ষমতা তো মুকুল রায়ের হাতে। সে কথা সকলের জানা।

সময় পাল্টানোর সঙ্গে সঙ্গে দেখা যেতে লাগল তাঁকে। তিনি শুভেন্দু অধিকারী। বড় বড় গ্রহ, নক্ষত্রদের মাঝে নিজের আলো বিকিরণ করছেন। মাওবাদী এলাকা থেকে গড়বেতা, কেশপুর... অবলীলায় সভা করেছে‌ন। তখনও বামফ্রন্ট রাজ্যের ক্ষমতায়। মাওবাদীদের বাড়বাড়ন্তও চলছে। চলার পথে ল্যান্ডমাইন ব্লাস্ট। কেশপুরে সভা করতে গেলে অলিখিত বনধ। যাতে কর্মী-সমর্থকরা জলও একটু না পান। গড়বেতাতেও তাই। ভয়কে মনে স্থান দেননি। শুধু লড়াই করেছিলেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও তাঁকে দায়িত্ব দিয়ে নিশ্চিন্ত থাকতেন। কারণ, উনিও জানতেন শুভেন্দু লড়ে নেবে। এই কঠিন পরিস্থিতিতে লড়াই করেও জঙ্গলমহল থেকে দুই মেদিনীপুর তুলে দেন তিনি।  তাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও তাঁকে স্নেহে বুকে আগলে রেখেছি‌লেন। নন্দীগ্রামের আন্দোলনের কথা আলাদা করে বলার অপেক্ষা রাখে না। দল ক্ষমতায় এলো রাজ্যে।

কিন্তু কোথায় মালদা, কোথায় মুর্শিদাবাদ? সে তো তখন তৃণমূলের অধরা। দু’টি জেলাতেই রাজ করছে কংগ্রেস। একদিকে অধীর চৌধুরী, অন্যদিকে কংগ্রেসের প্রখ্যাত নেতার বংশধর মৌসম বেনজির নূর, আবু হাসেম খান চৌধুরীরা। দায়িত্ব নেওয়ার পর নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করলেন। তখনও কিন্তু তিনি বাড়ছেন। তখনও প্রশান্ত কিশোর রাজ্যে আসেনি। তৃণমূলের সংগঠন দেখার দায়িত্ব নেননি। তারপর প্রশান্ত কিশোর এলেন। প্রথম প্রথম সব শান্তই ছিল। ধীরে ধীরে পরিস্থিতিতে হতে থাকল অশান্ত। মানুষের সেবা, চিকিৎসা, থেকে গরিব মানুষের বিয়ে, সংগঠনকে চাঙ্গা - কাজ করে চলেছেন শুভেন্দু। কিন্তু কোথাও যেন দূরত্ব। অভিষেকের সঙ্গেও তো একাধিক মিটিও করেছেন। কোথাও তো তেনন সমস্যা দেখা যায়নি।  হঠাৎ কী এমন হল।

পরের ঘটনা সকলের জানা। আর আজ তো ইতিহাস। মাওবাদী ভীতি থেকে সিপিএমের রক্তচক্ষু - ভয় কে জয় করে এগিয়ে ছিলেন ছক ভেঙেই। তা বহুচর্চিতও। এবারও ছক ভাঙলেন।

নতুন ইতিহাস হয়তো শনিবার। ছকে থেকেও শুভেন্দু যে ছকভাঙা, ফের প্রমাণ করলেন নিজেই।   

 

Mailing List