নিখোঁজ-সংবাদ / বাংলাদেশের একুশে পুরষ্কারপ্রাপ্ত কবি অসীম সাহার কবিতা

নিখোঁজ-সংবাদ
অসীম সাহা
.........................
ভাষাবাহিনীর কাছে চলে গেছে নিখোঁজ-সংবাদ।
বর্ণের প্রতিটি কক্ষে সতর্ক নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।
অক্ষর-নগরীজুড়ে রেড অ্যালার্ট জারি হয়ে গেছে।
বর্ণ ও অক্ষরের মোড়ে মোড়ে টহল দিচ্ছে যৌথবাহিনী।
ম-বর্ণ যেখানেই থাক, তন্ন তন্ন করে তাকে খুঁজে বের করতেই হবে।
মহাপ্রাণ ধ্বনির এই আকস্মিক অন্তর্ধান গণতান্ত্রিক-ব্যবস্থায়
শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষেরা কিছুতেই মানতে পারে না!
সে কি তবে পলাতক? নাকি স্বেচ্ছানির্বাসন নিয়ে
ঢুকে গেছে অন্য কোনো বর্ণের ভেতরে?
অথবা সে ভুল করে ঢুকে গেছে
অন্য কোনো বৈয়াকরণের লেখা ‘বর্ণপরিচয়ে’?’
ঘটনা যেটাই হোক, ভাষাবাহিনীর কাছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর
বার্তা পৌঁছে গেছে দ্রুত---প্রয়োজনে তাদেরই সঙ্গে
অন্য কোনো ভাষাবাহিনীর যৌথ মহড়া হবে।
সিআইডির গোয়েন্দারা দলে দলে নামবে ময়দানে।
সংবাদসম্মেলনে মন্ত্রী আশ্বাস দিক---যে করেই হোক
প-বর্গীয় ধ্বনির এই মহাপ্রাণ বর্ণটিকে উদ্ধার করতেই হবে।
এতোটা সহজ, কোমল আর মর্মস্পর্শী বর্ণের এই রহস্যজনক
অন্তর্ধান গোটা ভাষাপ্রশাসনের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ভাষার নিজস্ব রাষ্ট্র তার দায় কিছুতেই এড়াতে পারে না!
ভাষার আইজি নেই? বর্ণের অন্তর্ধান-রহস্যের উন্মোচন কিছুতে হবে না?
বিশেষ বাহিনীর নতুন দায়িত্ব নেয়া প্রধানেরা কছুই করবে না?
আদ্য-বর্ণের এক ক্রীতদাস কী করে বাঁচবে তবে?
তা হলে কেমন করে প-বর্গীয় ধ্বনির ভেতরে
দোল খাবে স্বরবর্ণের প্রথম অক্ষর?
ভাষাবাহিনীর কাছে তাই আজ আকুল আবেদন :
যেভাবেই হোক, আদর্শলিপির পাতা থেকে ঝরে যাওয়া
একটি কোমল বর্ণ যৌথবাহিনীর সমন্বিত আক্রমণে উদ্ধার পাক।
অ-বর্ণের অন্তরালে ডুবে যাক স্বর ও ব্যঞ্জনের মিলিত অক্ষর।
ভাষা হোক জীবনের মিলিত সিম্ফনী।
দূরে যাক ব্যাকরণ। গোপন সংবাদ নিয়ে অভিযান সর্বত্র চলুক।
ম-বর্ণের উদ্ধারে ঘন ঘন টহল দিক সকল বাহিনী।
সম্মিলিত অভিযানে অবশেষে মিলে যাক মহাপ্রাণ ধ্বনির সন্ধান!
………………………………
আজ ২০ ফেব্রুয়ারী, শনিবার শুদ্ধতার কবি অসীম সাহার জন্মদিন। কবির জন্মদিনে কবির স্বরচিত কবিতা।
★ কবি অসীম সাহা বাংলাদেশের একুশে পদক ও বাংলা একাডেমী সাহিত্য পুরস্কার প্রাপ্ত কবি ও ঔপন্যাসিক।

