প্রকৃতির বিস্ময়: রক্তগঙ্গা প্রবাদ কে সত্যি করে বয়ে চলা নদী

প্রকৃতির বিস্ময়: রক্তগঙ্গা প্রবাদ কে সত্যি করে বয়ে চলা নদী
08 Mar 2023, 01:45 PM

প্রকৃতির বিস্ময়: রক্তগঙ্গা প্রবাদ কে সত্যি করে বয়ে চলা নদী

 

শ্রীপর্ণা মিত্র মজুমদার

 

হোলি আসছে, লাল, নীল, হলুদ, সবুজের পসরা সাজিয়েছে দোকানীরা। রং, পিচকারী, রাজস্থানী টুপিতে বাজার ছেয়ে গেছে। ইংরেজির সাত আর আট এই দুদিন মানুষ ইচ্ছে মতো রং খেলবে, রং মাখবে আর রং মাখাবে একে অপরকে। প্রতি বছরই দোল আসে আর এই চিত্র আমরা দেখতে পাই।

 

কিন্তু নদীও যে বছরের বিশেষ কয়েক মাস লাল হোলিতে মেতে ওঠে রাশিয়া ও পেরুদেশে! সে খবর কে রাখে? লাল বলতে লাল!! এক্কেবারে যেন রক্ত গঙ্গা বয়ে যায় নদীর বুকে। মনে হয় যেন হোলির সব লাল রঙ গোলানো হয়েছে এই নদীর জলে।

প্রথমেই বলি রাশিয়ার উত্তরে অবস্থিত নরিলস্ক শহরের কথা। সুমেরু বলয়ে অবস্থিত এই শহরে নয় মাসই শীতকাল। তিনমাস তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেলেও বরফ পুরোপুরি গলে না। এখানে নিকেল, তামা, কোবাল্ট, প্লাটিনাম, কয়লা, প্যালাডিয়াম প্রভৃতির খনি বিদ্যমান। শতাব্দী প্রাচীন নিকেলের কারখানা আছে এই শহরে। নিকেলের জন্য শহরটি জগত বিখ্যাত। এত নিকেলের কারখানা যেখানে আছে সেখানে ফ্যাক্টরি থেকে নির্গত বিষাক্ত ধোঁয়া ও কারখানার বর্জ্য যে এই হিমশীতল শহরকে দূষিত করবে এটাই স্বাভাবিক। অ্যাসিড বৃষ্টি ও কালো বরফ ছাড়াও এই দূষণের মাত্রা যে কতটা চরম আকার ধারণ করতে পারে তার প্রমাণ হলো এই এলাকার নদী ড্যালডিক্যান। প্রতি বসন্তে এই নদীর জল যেন রুধির ধারা। সরকার থেকে উদ্যোগ নিয়ে নিকেল কারখানার ধাতব  বর্জ্য পাইপ দিয়ে বহুদূরে ফেলা হলেও এখনো বসন্তে লাল হয় এই নদী। কি অদ্ভুত ব্যাপার তাই না!!!!

******

আর আছে দক্ষিণ আমেরিকার প্রশান্ত মহাসাগরের তীরে পেরু দেশের নদী পুকামায়ু বা আন্তাচাকা। প্রতি বর্ষায় ড্যালডিক্যানের মতো এই নদীও রক্তিম বর্ণ ধারণ করে। মনে করা হয়, বর্ষাকালের ভূমিক্ষয় এর কারণ। প্যালকোয়ো রেনবো নামের যে পাহাড়ে এই নদীর উৎপত্তি সেখানের মাটিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে খনিজ। বর্ষাকালে বৃষ্টির জলের সাথে এই খনিজ পদার্থ ধুয়ে নদীর সাথে মিশে যায়। ফলে ওই সময় নদীর জল হয় টকটকে লাল আর বছরের বাকি সময় এখানে নদীর জল ঘোলাটে,কর্দমাক্ত।

কাজেই যা দেখছি "হোলি " শুধু মানুষের নয়। সেই সাথে প্রকৃতিরও। মনুষ্য সৃষ্ট দূষণই হোক আর প্রাকৃতিক কারণ "আজ সবার রঙে রং মেলাতে" প্রস্তুত ড্যালডিক্যান ও পুকামায়ু।

লেখক: শিক্ষিকা, শিলিগুড়ি।

Mailing List