অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে আগেই নেতা মেনেছিলেন নরেন্দ্র মোদি, অমিত শাহরা

অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে আগেই নেতা মেনেছিলেন নরেন্দ্র মোদি, অমিত শাহরা
07 Jun 2021, 11:45 AM

অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে আগেই নেতা মেনেছিলেন নরেন্দ্র মোদি, অমিত শাহরা

 

আনফোল্ড বাংলা বিশেষ প্রতিবেদন: ২০১৪ সালের মে মাসে সাংসদ হয়েছিলেন। ডায়মন্ড হারবার কেন্দ্র থেকে জিতে। ওই বছরই অক্টোবর মাসে তৃণমূল যুব কংগ্রেসের সভাপতি হন। আর ২০২১ সালের জুন মাসে হলেন সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক।

 

সময়ের ব্যবধান মাত্র সাত বছর! রাজনীতির পরিসরে যে সময়টা হয়তো নিতান্তই অল্প। তবু তিনি নেতা। সর্বভারতীয় নেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।

 

না, সর্বভারতীয় পদ পাওয়ার জন্য নয়। তার আগেই তিনি নিজেকে মেলে ধরতে সক্ষম হয়েছিলেন। নাহলে সদ্য সমাপ্ত বিধানসভা লোকসভার প্রতিটি জনসভায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি থেকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, বিজেপির সর্বভারতী সভাপতি জে পি নাড্ডাদের আক্রমণের লক্ষ্য তিনি হবেন কেন? যে বিজেপি নেতারা নিজেদের দলকে বিশ্বের বৃহত্তম দল বলে দাবি করেন, সেই দলের শীর্ষ নেতাদের আক্রমণের লক্ষ্য কে হবেন? যদি উপযুক্ত প্রতিপক্ষ না হন, তাহলে তাঁরা আক্রমণ শানাবেন কেন?   

 

কিন্তু কিভাবে নিজেকে এই উচ্চতায় নিয়ে গেলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। পথটা কী আদৌ মসৃণ ছিল?

উত্তরটা, অবশ্যই না।  

কেন? প্রথম থেকেই তাঁর গায়ে একটা তকমা সেঁটে দিতে চেয়েছিল তৃণমূলেরই একাংশ। তা হল, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাইপো বলেই তাঁকে উচ্চ পদে বসিয়ে দেওয়া হয়েছে। আর যাঁরা দলের জন্মলগ্ন থেকে লড়াই করেছেন তাঁদের বঞ্চিত করা হচ্ছে। ঘরের ভেতরে এই লড়াইটা কিন্তু আদৌ সহজ ছিল না। বিভিন্ন জনসভাতেও পরোক্ষে তা বুঝিয়ে দিয়েছিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেও। বিশেষত, শুভেন্দু অধিকারী দল ছাড়ার পর, লিফটে ওঠা, প্যারাসুটে নামার তত্ত্বের জবাব দিতে গিয়ে। দলের ভেতরে, যতদিন শুভেন্দু অধিকারী তৃণমূলে ছিলেন, ততদিন ভেতরে ভেতরে ঠান্ডা লড়াইটা চলছিল। কিন্তু কখনও সেই লড়াইটাকে বাইরে বেরোতে দেননি অভিষেক। অথচ, মনে করলে তা পারতেন। কিন্তু তিনি সেই সহজ পথটা নিলেন না। উল্টে নিজেকে উপযুক্ত করে গড়ে তুলতে রাজনীতির পাঠ নিয়ে গেলেন নীরবে।

 

অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় যে নিজেকে পুরোদস্তুর রাজনৈতিক নেতা হিসেবে গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছেন, তার প্রমাণ সকলের সামনে এলো সদ্য সমাপ্ত বিধানসভা নির্বাচনে। এক্ষেত্রে তিনটি বড় কারণ রয়েছে।

প্রথমটি হল, একদিকে প্রবল প্রতিপক্ষ বিজেপি। তৃণমূল থেকে একের পর এক নেতা-মন্ত্রী-বিধায়ক-কর্মী-সমর্থকদের ভাঙিয়ে নিচ্ছে বিজেপি। ডেইলি প্যাসেঞ্জারি করছেন প্রধানমন্ত্রী, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী থেকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি, ধর্মেন্দ্র প্রধান, উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ, বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডারা। উল্টোদিকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেক নিজে।

দ্বিতীয়ত, নন্দীগ্রামে দুর্ঘটনায় পায়ে আঘাত পেলেন মুখ্যমন্ত্রী। বাড়িতে গেল সিবিআই। স্ত্রীর বিরুদ্ধে অভিযোগের তদন্ত করতে। মনে চাপ বাড়ল।

তৃতীয়ত, বাম-কংগ্রেস জোটে আব্বাস সিদ্দিকী। অর্থাৎ মুসলিম ভোট ভাগ হওয়ার আশঙ্কা।

ব্যক্তিগত আক্রমণ, দুর্ঘটনা, রাজনৈতিক চাপ – সব কিছুকে সহ্য করেও জঙ্গল থেকে পাহাড় -সর্বত্রই ছুটে বেড়ালেন। মানুষকে বোঝাতে সক্ষম হলেন, ভাষণ নয় দূয়ারে রেশন জরুরি। মানুষ বিশ্বাস করেছে বলেই না উজাড় করে ভোট দিয়েছে।

আর বিজেপির তাবড় কেন্দ্রীয় নেতারাই প্রমাণ ও প্রতিষ্ঠা করে দিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ‘ভাইপো’ নয়। নেতা। এবং সর্বভারতীয় স্তরের।

চক্রব্যুহ ভেদ করে বাইরে বেরোনোর অর্থই তো জয়। তার পুরষ্কারও মিলল। দল তাঁকে সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক করল।

 

তিনি যে এখন পোক্ত রাজনীতিবিদ, আবারও প্রমাণ দিলেন সেকথা। পদ পাওয়ার পরেই নিজে ছুটে গেলেন প্রবীণ নেতা সুব্রত বক্সী, সুব্রত মুখোপাধ্যায় ও পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বাড়িতে। আশীর্বাদ নিলেন। অর্থাৎ চলার পথ সুগম করলেন। কারণ, আগামিদিনে চলার পথে এই সমস্ত নেতাদের পরামর্শ যে ভীষণ প্রয়োজন। উল্টোদিকে প্রবীণদের সম্মান দেওয়ায় তো দস্তুর। যার কোথাও কোনও খামতি না রেখে আবারও প্রমাণ করলেন রাজনীতির জলে তিনিও এখন সাঁতার কাটতে পারদর্শী।

Mailing List