সুন্দরবনের বেশিরভাগ অংশই বাংলাদেশে, তবু পর্যটক এত কম কেন?

সুন্দরবনের বেশিরভাগ অংশই বাংলাদেশে, তবু পর্যটক এত কম কেন?
আনফোল্ড বাংলা প্রতিবেদন: শীত মানেই বেড়ানোর সময়। পিকনিকে মেতে ওঠেন মানুষ। আবার তা যদি হয় নদী-জঙ্গলে ঘেরা রহস্যময় স্থান? তাহলে তো বলার কথা নয়। আর সুন্দরবনের কথা কারও অজানা নয়। এই দিক দিয়ে সুন্দরবন একটি আদর্শ স্থান। কারণ, যেখানে একসঙ্গে থাকে বাঘ, কুমীর থেকে শুরু করে নানা ধরণের পাখি। চারদিকে জঙ্গল আর মাঝে বয়ে চলা নদী বা তার খাড়ি। নৌকায় বা লঞ্চে চেপে ঘুরে বেড়ানোর মজাই আলাদা।
কিন্তু আশ্চর্যের বিষয়, তবু নাকি বাংলাদেশে সুন্দরবনে তেমন ভিড় নেই পর্যটকদের। কেন এমন অবস্থা? সুন্দরবনের করমজল পর্যটন ও বন্য প্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজাদ কবির হাওলাদার জানান, চলতি বছরের প্রথম দিন থেকে ১৬ তারিখ পর্যন্ত দেশি–বিদেশি মোট পর্যটকের সংখ্যা ১২ হাজারের কিছুটা বেশি। করোনা অতিমারির কারণে গত দু’বছর মানুষ বেড়াতে পারেননি। তা সত্ত্বেও মাসে এক হাজার পর্যটকও নেই সুন্দরবনে! বিষয়টি সত্যিই বিস্ময়ের নয় কী?
কিন্তু এর পিছনে কী কারণ রয়েছে? দর্শনার্থীদের মতে, দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা পর্যটকদের বিশ্রামের জন্য বিশ্রামাগার বা স্থানে স্থানে গোলচত্বর থাকলে ভালো হতো। সুপেয় পানীয় জলেরও সংকট রয়েছে। ফলে বেশি দাম দিয়ে বোতলজাত জল কিনতে হয়। পর্যটকদের আরও কিছু সমস্যা রয়েছে। মোংলা বন্দর জালি বোট মালিক সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি এইচ এম দুলাল বলেন, মোংলা থেকে সুন্দরবন যাওয়ার একমাত্র সহজলভ্য মাধ্যম হল জালি বোট (ইঞ্চিনচালিত একধরনের ছোট ট্রলার। কিছু ক্ষেত্রে মানুষ লঞ্চেও যান। কিন্তু সেগুলোয় পর্যটকদের ওঠানোর জন্য নির্দিষ্ট কোনো ঘাটের ব্যবস্থা নেই। ফলে পর্যটকদের জালি বোটে তুলতে বিপাকে পড়তে হয় মাঝিদের। পর্যটকেরাও এসব অসুবিধার কারণে দ্বিতীয়বার এখানে আসতে চান না। তবে পর্যটকদের সমস্যার বিষয়টি দেখার আশ্বাস দিয়েছে প্রশাসন। পর্যটকদের মতে, সরকার পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে পরিকাঠামো উন্নয়নে জোর দিলে সুন্দরবন কখনও পর্যটকহীন থাকতো না। বহু মানুষ আনন্দ পেতে আকর্ষনীয় এই স্থানে ঘুরতে যেতেন।
সুন্দরবন হলো বঙ্গোপসাগর উপকূলবর্তী অঞ্চলে অবস্থিত একটি প্রশস্ত বনভূমি যা বিশ্বের প্রাকৃতিক বিস্ময়াবলির অন্যতম। পদ্মা, মেঘনা ও ব্রহ্মপুত্র নদীত্রয়ের অববাহিকার বদ্বীপ এলাকায় অবস্থিত এই অপরূপ বনভূমি বাংলাদেশের খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, পটুয়াখালী ও বরগুনা জেলা এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের দুই জেলা উত্তর চব্বিশ পরগনা ও দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জুড়ে বিস্তৃত। সমুদ্র উপকূলবর্তী নোনা পরিবেশের সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বন হিসেবে সুন্দরবন বিশ্বের সর্ববৃহৎ অখণ্ড বনভূমি। ১০,০০০ বর্গ কিলোমিটার জুড়ে গড়ে ওঠা সুন্দরবনের ৬,০১৭ বর্গ কিলোমিটার (৬২%) রয়েছে বাংলাদেশে এবং বাকি অংশ (৩৮%) রয়েছে ভারতের মধ্যে।
সুন্দরবন ৬ ডিসেম্বর ১৯৯৭ খ্রিস্টাব্দে ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে। এর বাংলাদেশ ও ভারতীয় অংশ বস্তুত একই নিরবচ্ছিন্ন ভূমিখণ্ডের সন্নিহিত অংশ হলেও ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় ভিন্ন ভিন্ন নামে সূচিবদ্ধ হয়েছে; যথাক্রমে 'সুন্দরবন' ও 'সুন্দরবন জাতীয় উদ্যান' নামে। এই সুরক্ষা সত্ত্বেও, আইইউসিএন রেড লিস্ট অফ ইকোসিস্টেম ফ্রেমওয়ার্কের অধীনে ২০২০ সালের মূল্যায়নে ভারতীয় সুন্দরবনকে বিপন্ন বলে মনে করা হয়েছিল। সুন্দরবনকে জালের মত জড়িয়ে রয়েছে সামুদ্রিক স্রোতধারা, কাদা চর এবং ম্যানগ্রোভ বনভূমির লবণাক্ততাসহ ক্ষুদ্রায়তন দ্বীপমালা। মোট বনভূমির ৩১.১ শতাংশ, অর্থাৎ ১,৮৭৪ বর্গকিলোমিটার জুড়ে রয়েছে নদীনালা, খাঁড়ি, বিল মিলিয়ে জলাকীর্ণ অঞ্চল। বনভূমিটি, স্বনামে বিখ্যাত। রয়েল বেঙ্গল টাইগার ছাড়াও নানান ধরনের পাখি, চিত্রা হরিণ, কুমির ও সাপসহ অসংখ্য প্রজাতির প্রাণীর আবাসস্থল হিসেবে পরিচিত। জরিপ মোতাবেক ১০৬ বাঘ ও ১০০০০০ থেকে ১৫০০০০ চিত্রা হরিণ রয়েছে এখন সুন্দরবন এলাকায়। ১৯৯২ সালের ২১ মে সুন্দরবন রামসার স্থান হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে। সুন্দরবনে প্রতি বছর হাজার হাজার পর্যটক ঘুরতে আসে। প্রতি বছর দেশ-বিদেশের অসংখ্য পর্যটক সুন্দরবনের অপরূপ সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে সুন্দরবন ভ্রমণ করার মাধ্যমে প্রকৃতি থেকে বিভিন্ন জ্ঞান অর্জন করে।
সর্বাধিক প্রচুর গাছের প্রজাতি হল সুন্দরী (Heritiera fomes) এবং গেওয়া (Excoecaria agallocha)। বনে ২৯০ টি পাখি, ১২০ টি মাছ, ৪২ টি স্তন্যপায়ী, ৩৫ টি সরীসৃপ এবং আটটি উভচর প্রজাতি সহ ৪৫৩ ধরণের প্রাণী ও বন্যপ্রাণীর বাসস্থান।


