শীতের আমেজে মন ভোলানো চিত্র প্রদর্শনী--- মিরর অফ মিরাজ
শীতের আমেজে মন ভোলানো চিত্র প্রদর্শনী--- মিরর অফ মিরাজ
রেহান কৌশিক
শীত মানে পাতাঝরার দিন। শীত মানে বাংলার বুকে উত্তরের হাওয়ায় বেজে ওঠে বিষণ্ণতার বন্দিশ। সেইসঙ্গে শীত মানেই বাঙালিদের উৎসবকালও। মহানগরের বুকে অন্যান্য বছরের মতো এবারেও ডাইভারশন ১৮ গ্রূপ আয়োজন করেছে উৎসবের। তবে এই উৎসব রং-তুলি-ক্যানভাসের। এই উৎসবের নাম 'মিরর অফ মিরাজ (Mirror of mirage)'।
আগামী ১৮ ডিসেম্বর থেকে ২৪ ডিসেম্বর, প্রতিদিন দুপুর ১টা থেকে সন্ধে ৭টা ৩০মি পর্যন্ত একাডেমি অফ ফাইন আর্টসের নিউ সাউথ গ্যালারিতে (এ & বি) প্রদর্শিত হবে ডাইভারশন ১৮ গ্রুপের শিল্পীদের আঁকা ছবি।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে ডাইভারশন ১৮ গ্রুপের মেন্টর, শিল্পী সমীর সরকার জানান, ''গত কয়েকমাস আমরা খুব কঠিন সময়ের সাক্ষী। আমরা স্বাধীনতা সংগ্রাম দেখিনি। মন্বন্তর দেখিনি। কিন্তু অতিমারী দেখলাম। অতিমারির অতর্কিত আক্রমণে মানুষকে দিশেহারা হয়ে পড়তে দেখেছি। সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে আপামর মানুষজনকে বিভ্রান্ত হতে দেখেছি। পরিযায়ী শ্রমিকদের যন্ত্রণা দেখেছি। বেআব্রু হতে দেখেছি আবিশ্বের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে। প্রত্যক্ষ করেছি অতিমারির কঠিন সময় কীভাবে মানবসভ্যতাকে অসহায়, ভীত ও দুর্বল করে তোলে। এত প্রতিকূলতা সত্ত্বেও মানুষ তার এগিয়ে চলার পথ খুঁজে নেয়। বিশেষত তার সৃজনশীলতার পথ হয়তো খানিক থমকে দাঁড়ায় কিন্তু চিরস্তব্ধ হয় না।
মরুভূমির বুকে মরীচিকা পথিকদের বিভ্রান্ত করে ঠিকই, তাবলে পথিকদের মরুভূমির পর্যটন স্তব্ধ হয় না। মরুপথিকের দুঃসাহসী অভিযানকে মরীচিকার বিভ্রান্তিকে অতিক্রম করে জারি আছে, জারি থাকবে। এই দৃষ্টিকোণ থেকেই আমাদের এবারের উৎসবের নাম Mirror of mirage.''
তিনি জানান, "ডাইভারসন'১৮ গ্রুপের প্রদর্শনী হওয়ার কথা ছিল গত জুলাই'এর শুরুর দিকে। প্রস্তুতিও ছিল। কিন্ত হঠাৎ অতিমারি ও লকডাউনে তা পিছিয়ে যায়। তবে এই কঠিন সময়েও শিল্পীরা থেমে থাকেন না। লকডাউন, আইসোলেশন, পি.পি.ই, মাস্ক, সামাজিক দূরত্ব ইত্যাদি শব্দবন্ধকে সঙ্গে নিয়েই শিল্পীরা আরও বেশি করে কাজের মধ্যে আত্মনিয়োগ করেন। তারই ফলশ্রুতিতে এই গ্রুপের শিল্পীরা যে ক্যানভাসগুলিতে রং-তুলির যুগলবন্দিতে এই কঠিন সময়কে ধরতে চেয়েছেন, সেইসব শিল্পকর্ম নিয়েই আমাদের এই শীতকালীন প্রদর্শনী।"
প্রসঙ্গত, ডাইভারশন ১৮ গ্রূপ আক্ষরিক অর্থেই ভিন্নধর্মী। গত দুবছর ধরে বিভিন্ন আর্ট মুভমেন্টে এই গ্রুপ অংশ নিয়েছে। ওয়ার্ল্ড ইয়ুথ ডে-তে পাবলিক আর্ট ও ভিক্টোরিয়া গার্ডেনে ল্যান্ড আর্টের আয়োজন করেছে। এই গ্রুপ পা মিলিয়েছে ওয়ার্ল্ড আর্ট ডে মিছিলেও। শিল্পগুরু অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মদিনে একাডেমী চত্বরে শিল্প সচেতনতার বার্তা দিয়েছে। 'আর্ট ফর আর্ট সেক'-এ সোচ্চার হয়েছে এই গ্রুপ তাদের শিল্প-সচেতনতার বার্তা নিয়ে।
বর্তমানে মোট ২২জন শিল্পী এই গ্রুপের সঙ্গে যুক্ত। উত্তম ভট্টাচার্য, সুদেষ্ণা সাহা,শর্মী দে সেন,পায়েল মিত্র সরকার, দেবব্রত বিশ্বাস, লীনা দস্তিদার, লাবনী, প্রিয়াঙ্কা দে, লীনা দস্তিদার, অস্মিতা বিশ্বাস, রনিতা দেবনাথ, মোনালিসা সরকার, অনির্বান সর্দার, সুমন নস্কর, মৌমিতা বণিক। সদস্যরা শুধুমাত্র এই শহরের নয়। কলকাতা, উত্তরবঙ্গ, হায়দ্রাবাদ, মধ্যপ্রদেশ, গুজরাট ইত্যাদি জায়গায় থেকে ছবি আঁকেন। সেই অর্থে ডাইভারশন ১৮ গ্রুপ একটি সর্বভারতীয় শিল্পীদের সংগঠন।
ডাইভারশন ১৮ গ্রুপটি মূলত শিল্পী সমীর সরকারের নিজের হাতে গড়া। তাঁরই পরামর্শে এই গ্রুপের তৃতীয় উপস্থাপনা--- মিরর অফ মিরাজ।