মেদিনীপুর: খড়্গপুরে হানা দিচ্ছে বাইরের দুষ্কৃতী! ড্রোন চালিয়ে দুষ্কৃতী ধরলো ঝাড়গ্রাম জেলার পুলিশ

মেদিনীপুর: খড়্গপুরে হানা দিচ্ছে বাইরের দুষ্কৃতী! ড্রোন চালিয়ে দুষ্কৃতী ধরলো ঝাড়গ্রাম জেলার পুলিশ
আনফোল্ড বাংলা প্রতিবেদন: খড়্গপুরের মানুষ অশান্তি চান না। খড়্গপুর শহরে ঢুকছে বাইরের লোক। আর তারা থাকছে রেলের পরিত্যক্ত কোয়াটারে। সেখানে বসে ডাকাতির ছক কষেছে। রেকি করছে। তারপর ডাকাতি করছে!
খড়্গপুরে সোনার দোকানে ডাকাতির ঘটনার পর এমনই তথ্য উঠে এলো। শউক্রবার দিনদুপুরে খড়্গপুরের গোলবাজারে একটি সোনার দোকানে ডাকাতি করার চেষ্টা হয়। সেই ঘটনার তদন্তে নেমে পাঁচজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করে এমন তথ্যই উঠে এসেছে পুলিশি তদন্তে। ধৃত ৫ জন বিহারের বাসিন্দা বলে জানিয়েছেন পুলিশ সুপার ধৃতিমান সরকার। তবে তদন্তের স্বার্থে ধৃতদের পরিচয় জানাতে নারাজ পুলিশ।
ঠিক কী ঘটেছিল শুক্রবার দুপুরে। পুলিশ জানিয়েছে, মেদিনীপুর শহরের বাসিন্দা মেদিনীপুর শহরের বাসিন্দা আশিসকুমার দত্তের সোনার দোকান রয়েছে খড়্গপুর শহরের গোলপাবাজারে। সেখানে দোকান খোলার সময় ডাকাতির চেষ্টা করে কয়েকজন দুষ্কৃতী। বাধা দিতে গেলে দোকানের মালিককে গুলি চালায় দুষ্কৃতীরা। তিনি দোকানের সামনেই লুটিয়ে পড়েন। তা দেখেন দোকানের এক কর্মচারী ছুটে এলে তাকে অস্ত্রের কোপ দেওয়া হয়। তারপর জেলার পাশাপাশি আশপাশের জেলাতেও নাকা চেকিং শুরু করে পুলিশ। ডাকাতির পর সেখান থেকে তারা চম্পট দিলে তাদেরকে ধাওয়া করে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পুলিশ ও খড়গপুর লোকাল থানার পুলিশ। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে ঝাড়গ্রাম জেলা পুলিশকে জানানো হয় ডাকাত দলটি ঝাড়গ্রামের দিকে প্রবেশ করতে পারে। সেই মতো ঝাড়গ্রাম জেলা পুলিশ গোপন সূত্রে জানতে পারে ডাকাত দলটি জাতীয় সড়ক ধরে গোপীবল্লভপুরের উপর দিয়ে উড়িষ্যা রাজ্যে পালিয়ে যেতে পারে। খবর পেয়ে গোপীবল্লভপুর থানার আই. সি. সুদীপ ব্যানার্জী পুলিশ কর্মীদের নিয়ে গোপীল্লভপুরে ব্রিজের উপর নাকা চেকিং করে দুষ্কৃতিদের গাড়িকে দাঁড় করাতে গেলে গোপীবল্লভপুর থানার একজন পুলিশ কর্মীর উপর হামলা চালিয়ে গাড়ি নিয়ে পালায় দুষ্কৃতিরা। ওই ঘটনায় গোপীবল্লভপুর থানার একজন পুলিশ কর্মী আহত হন। এরপর পুলিশ গাড়ি টিকে ধাওয়া করলে পাল্টা গাড়িটি ঘুরিয়ে বেলিয়াবেড়িয়া থানার রান্টুয়া এলাকার দিকে চলে যায়। রান্টুয়াতে গাড়িটি কে পুলিশ ঘিরে ফেললে তারা গাড়ি ফেলে পালায়। তখন গোটা এলাকা পুলিশ ঘিরে রাখে। এরপর ধান চাষের জমিতে দিয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে দুষ্কৃতীরা। শেষমেষ ধান চাষের জমিতে ড্রোন চালিয়ে চলে দুষ্কৃতীদের খোঁজ। ঝাড়গ্রাম জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অপারেশন উত্তম ঘোষ ও হেডকোয়ার্টার কল্যান সরকার, গোপীবল্লভপুরের এস.ডি.পি.ও কৃষ্ণগোপাল মিনার নেতৃত্বে দুটি পৃথক দল ধান চাষের জমিতে তল্লাশি চালায়। তাতেই প্রথমে গ্রেফতার ২জন। পরে আরো ৩ জনকে রান্টুয়া থেকে কিছুটা দূরে পাইকাম্বি গ্রামের ধান চাষের জমি থেকে গ্রেফতার করা হয়। অর্থাৎ গাড়ির ড্রাইভার সহ পাঁচ জনকেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গাড়ি থেকে উদ্ধার হয় আগ্নেয়াস্ত্র। পাঁচ দুষ্কৃতীদের গ্রেফতার করে নিয়ে আসা হয় গোপীবল্লভপুর থানায়। সেখান থেকে তাদেরকে তুলে দেওয়া হয় পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পুলিশের হাতে। ওই সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার পুলিশ আধিকারিকরা, গোপীবল্লভপুরের এসডিপিও কৃষ্ণ গোপাল মিনা, গোপীবল্লভপুর থানার আইসি সুদীপ ব্যানার্জি, বেলিয়াবেড়িয়া থানার ওসি সুদীপ পালোধী সহ অন্যান্য আধিকারিকরা। যে পাঁচজন দুষ্কৃতীকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে তারা হলেন রসন কুমার, সুজিত কুমার, নবীন কুমার, প্রকাশ কুমার ও গৌরব সিং, এদের প্রত্যেকের বাড়ি বিহারের বৈশালী জেলায়।ঝাড়গ্রামের পুলিশ সুপার অরিজিত সিনহা বলেন, এটা ঝাড়গ্রাম জেলা পুলিশের বড় সাফল্য। তিনি আরও বলেন, ডাকাতির ঘটনায় ধৃত পাঁচ জন সহ উদ্ধার হওয়া গাড়ি সমেত সব কিছুই পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও ডাকাত দলকে ধরার জন্য পুলিশের যে বিশেষ টিম অপারেশন চালিয়েছে তাদেরকে ৬০ হাজার টাকা পুরস্কৃত করা হবে ঝাড়গ্রাম জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে।
ঘটনার পর খড়গপুর এর রেলওয়ের পরিত্যক্ত কোয়ার্টারে নজরদারি চালাচ্ছে পুলিশ। অবাঞ্ছিত লোকজন এসে যাতে কোনও ঘটনা ঘটাতে না পারে। এবার খড়্গপুরে অবঞ্ছিত লোকের কাজকর্ম নিয়ন্ত্রণে আনতে নতুন পন্থা নেবে বলেও পুলিশ সূত্রে খবর।


