মমতার পাল্টা মুখ ছিল না, সর্বশক্তি দিয়েও তাই ছারখার বিজেপি

মমতার পাল্টা মুখ ছিল না, সর্বশক্তি দিয়েও তাই ছারখার বিজেপি
03 May 2021, 12:05 PM

মমতার পাল্টা মুখ ছিল না, সর্বশক্তি দিয়েও তাই ছারখার বিজেপি

 

 

পাল্টা মুখ কোথায়? এ যেন কুমীর ছানা দেখানোর মতো। ‘ভূমিপুত্র’ই মুখ্যমন্ত্রী হবেন, মোদি-অমিতের এই কথা মানুষের হৃদয়ে স্পন্দন জাগাতে পারেনি। আর তাতেই বিজেপির এই ভরাডুবি বলে মনে করছেন সকলে।

 

বিধানসভা নির্বাচনের পর কেন এই হার? সাংবাদিক বৈঠক করে বিজেপি নেতা জয়প্রকাশ মজুমদার জানিয়েছেল, কোথায় তাঁদের ত্রুটি বিচ্যুতি তা খতিয়ে দেখবেন। কেন মানুষের কাছে পৌঁছতে পারেননি, কোথায় ব্যর্থতা ছিল, তাও দেখবেন। তারপর সেই সব ক্ষতে প্রলেপ দেবেন। আপাতত তাঁরা বিরোধী দল হিসেবে রাজ্যে প্রতিষ্ঠিত হতে পেরেছেন, সেটাও যে কম নয়, তাও জানিয়েছেন‌।

 

কিন্তু যে বিজেপি বিধানসভার তিনটি আসন থেকে রাজ্য জয়ের স্বপ্ন দেখেছিলেন, সে স্বপ্ন পূরণ হয়নি। আটকে থাকতে হয়েছে ৭৭ এই। অর্থাৎ মিলে গিয়েছে প্রশান্ত কিশোরের ভবিষ্যৎ বাণী। সেখানে তৃণমূল ২১৩ আসন! অভাবনীয় সাফল্য। কিন্তু কেন বিজেপিকে এত পিছনে থাকতে হল। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী থেকে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বারবার ছুটে এসেছেন বাংলায়। তৃণমূলের কথায়, ডেলি প্যাসেঞ্জারি করেছেন। শুধু তাঁরা নন, স্মৃতি ইরানী, ধর্মেন্দ্র প্রধানের মতো একাধিক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, যোগী আদিত্যনাথ সহ একাধিক রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরা এসেছেন। তবু ছারখার বিজেপি। কেন? 

 

এর পিছনে অবশ্য একাধিক কারণ রয়েছে। ইতিমধ্যেই বিজেপিও তা বিশ্লেষণ শুরু করেছে। সেই কারণগুলি কী কী?

১। বারেবারে প্রধানমন্ত্রী ও অমিত শাহ এসে বক্তব্য রেখেছেন। হাততালিও কুড়িয়েছেন। কিন্তু হিন্দিতে রাখা সেই বক্তব্য বাংলার মানুষ কতটা হৃদয়ঙ্গম করেছেন? তা বুঝতে পারেননি।

২। ২০১৬ সালে বিধানসভা নির্বাচনে মাত্র তিনটি আসন পেয়েছিল বিজেপি। সেখান থেকে ২০০ পার - এই বৃহৎ স্বপ্ন বাস্তবায়িত করতে গেলে তা যে শুধু ভোটের সময় জোরকদমে প্রচার যথেষ্ট নয়, সেটিও বোধ হয় খেয়াল ছিল না।

 

৩। ভোট করানোর জন্য বুথ স্তরে কর্মীর প্রয়োজন। ২০১৬ সালেই বহু বুথে এজেন্ট পর্যন্ত দিতে পারেনি বিজেপি। তাই বিধানসভা কেন্দ্রের যে কোনও এলাকা থেকে এজেন্ট দেওয়া যাবে সেই দাবি জানানো হয়। পরিবর্তে বুথস্তরে সংগঠনকে নিয়ে যেতে ব্যর্থ হয়েছিল। তার ওপর এবার করোনার কারণে বুথের সংখ্যা বেড়েছে।

 

৪। কেন্দ্রীয় নেতাদের হাতেই ছিল নির্বাচনের যাবতীয় রাশ। পরবর্তীকালে তৃণমূল থেকে কিছু নেতাকে দলে নিয়ে সুবিধে করতে চেয়েছিল। কিন্তু ফল হয়েছে উল্টো। তৃণমূল সেই সব নেতাদের ‘মীরজাফর’ ও ‘গদ্দার’ বলেছে। যে প্রচারকে তৃণমূল স্তরে পৌঁছে দিতে সক্ষম হয়েছে। তারই সঙ্গে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতাদের ‘বহিরাগত’ দিয়েছে। সেই প্রচারকেও বুথস্তরে পৌঁছে দিতে সক্ষম হয়েছে।

 

৫। শেষ দিকে প্রচারে মেরুকরণের প্রবল চেষ্টা করা হয়েছে। প্রকাশ্য সমাবেশে কোনও কোনও বিজেপি নেতা, ৭০-৩০ তত্ত্বও হাজির করেন। তাতে মুসলিম ভোট এককাট্টা হয়েছে। এবং তা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পক্ষে গিয়েছে। কিন্তু হিন্দু ভোট এককাট্টা হয়ে বিজেপির পক্ষে যায়নি। হিন্দুদের বড় অংশটাই থেকে গিয়েছে তৃণমূলের পক্ষে।

 

৬। সর্বোপরি মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে কোনও মুখ তুলে ধরতে পারেনি বিজেপি। অমিত শাহ থেকে নরেন্দ্র মোদি, দু’জনেই শুধু বলে গিয়েছেন ‘ভূমিপুত্র’ মুখ্যমন্ত্রী হবে। কিন্তু কে তিনি? রহস্যে মোড়া ছিল। শেষদিকে অভিনেতা মিঠুন চক্রবর্তীকে বিজেপিতে এনে প্রচারে নামায় বিজেপি। তা থেকে অনেকে মনে করেন, হয়তো বা তাঁকেই মুখ্যমন্ত্রী করা হবে। কিন্তু তিনি ভোটের লড়াইয়েই নামেননি অর্থাৎ প্রার্থী হননি।

 

৭। একদিকে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যাঁর মুখকে মানুষ লড়াইয়ের প্রতীক হিসেবেই দেখেন। তাঁর বিকল্প মুখ্যমন্ত্রী মুখ পাওয়া এতটা সহজ নয়। সেখানে বিনা মুখ্যমন্ত্রী মুখে লড়াই যে সহজ হবে না, তা কেন্দ্রীয় নেতারা এতটা বুঝে উঠতে পারেনন।

 

৮। বিজেপি লাগাতর তৃণমূল নেতাদের বিরুদ্ধে নানা দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছেন। অথচ, বিজেপি যে সমস্ত তৃণমূল নেতাদের দলে নিয়েছে, তাঁরা সকলেই ধোয়া তুলসীপাতা এমন নয়। ফলে তা বুমেরাং হয়েছে। উল্টোদিকে তৃণমূল থেকে অত্যধিক নেতাদের নেওয়ায় নব্য বিজেপি ও পুরাতন বিজেপি লড়াইটা অনেকটাই বেড়ে যায়। যা নির্বাচনে প্রভাব ফেলে।

 

৯। প্রার্থী নির্বাচনের ক্ষেত্রেও অনেক ত্রুটি বিচ্যুতি ছিল। এমনকী, প্রার্থী তালিকায়    যাঁদের নাম প্রকাশ করা হয়, তাঁরা পরে অস্বীকার করেন যে, তাঁরা বিজেপিতেই যোগ দেননি। তৃণমূল‌ তা হাতিয়ার করতে ছাড়েনি। বিজেপি ধার করা প্রার্থী নিয়ে লড়াই করছে, এই প্রচারকেও মানুষের কাছে বিশ্বাসযোগ্য করতে সফল হয় তৃণমূল।

Mailing List