এই মুহূর্তে জাতীয় রাজনীতিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিকল্প নেই

এই মুহূর্তে জাতীয় রাজনীতিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিকল্প নেই
22 Aug 2021, 07:45 PM

এই মুহূর্তে জাতীয় রাজনীতিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিকল্প নেই

 

 

ফারুক আহমেদ

 

 

বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্যই ভারতের আদি ও অকৃত্রিম সংস্কৃতি। সেই বৈচিত্র্য ভাষাগত, ধর্মগত, লিঙ্গগত, বর্ণগত ও ভৌগলিক অবস্থান-সহ সব রকমের। সেই মহান সংস্কৃতির কারণে ভারতের প্রাচীনতম স্লোগান অতিথি দেব ভবঃ। মানবসভ্যতার অন্যতম পূণ্য  আদিভূমি ভারতের সেই মহান মিলনের সুমধুর সুরকে অ-সুরে রূপান্তরিত করতে ভয়ঙ্কর অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বিভেদকামী সঙ্ঘ পরিবার ও তাদের রাজনৈতিক মুখ বিজেপি দল। সদ্য সমাপ্ত পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা ভোটে সেই বিদ্বেষবাদীদের বিষরথ অগ্নিকন্যা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাঙা পায়ের কাছে হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়েছে। কেবল কথায় নয়, কাজেও তৃণমূল সুপ্রিমো দেখিয়ে দিয়েছেন, ভোটপাখি  তথা সদ্য অতীত বাংলা-দিল্লি ডেলিপ্যাসেঞ্জার মোদী-শাহ-যোগী-নাড্ডা ও তাঁদের পঙ্গপালদের তিনি একাই ধরাশায়ী করে দিতে পারেন, নয়া নজির সৃষ্টি করে দেশবাসীকে সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের অসাম্যের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের মিথ্যাচারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের এক অফুরন্ত অনুপ্রেরণা যুগিয়ে দিতে পারেন। উল্লেখ করতেই হবে, বাংলা তথা সারা ভারত জুড়ে তাঁর এই লড়াইয়ে এক নতুন মাত্রা সংযোজন করেছেন জনপ্রিয় জননেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।

 

আমাদের জাতীয় সঙ্গীতে বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্যের জয়গান গাওয়া হয়েছে, আমাদের সংবিধান সেই বৈচিত্র্যের মধ্যেকার ঐক্য ও ধর্মনিরপেক্ষতাকে রক্ষা করতে অঙ্গীকারবদ্ধ। গাঁধিজি, নেতাজি, কবিগুরু, নেহেরু, বিদ্রোহী কবি নজরুল, অমর্ত্য সেন, প্রণব বর্ধন প্রমুখ সেই মিলনের জয়গান গাইলেও মনুবাদী ফ্যাসিস্ট শক্তিতে শক্তিধর উন্মাদেরা বিজেপির পতাকার নিচে বিভেদের তাণ্ডব নৃত্য করতে ব্যস্ত। সংসদে সংখ্যার জোরে ক্যা, এনপিআর, এনআরসি ও নয়া কৃষি বিল লাগু করার জন্য মোদী-শাহ উঠেপড়ে লেগেছে। সেই আসুরিক তাণ্ডব বাংলার বুকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রুখে দিলেও সমগ্র দেশ জুড়ে প্রলয় নৃত্য এখনও চলছে। সারা দেশ জুড়ে বিদ্বেষ বিষের সেই মারণ চাষ-আবাদ ধ্বংস করতে হলে অগ্নিকন্যার হাত শক্ত করতে হবে। সোনার দেশকে ভিখারির দেশে রূপান্তরিত করতে এক মিথ্যেবাদী 'চাওয়ালা' নোটবন্দি, জিএসটির মতো অপরিনামদর্শী অনেক কাণ্ডকারখানা করেছে। খনি, খাদান, রেল, বিমান, বিমা সংস্থার মতো বিভিন্ন সরকারি সম্পত্তি বিক্রি করছে একদল গুজরাতি ব্যবসায়ীর কাছে আর এক দল গুজরাতি, যারা সরকারি লাখ লাখ কোটি টাকা মেরে দিয়েছে তাদের কাছে। সরকারি সম্পত্তি কিনতে তাঁদেরকেই সরকার ঋণ দিচ্ছে। কী অসম্ভব নির্লজ্জতা। এই মারণ-নেশা ঠেকাতে ভারতনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশে আজ দাঁড়ানোটা জরুরি কর্তব্য সচেতন দেশবাসীর।

 

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই বিজেপির বিদ্বেষ-রথের গতি রুদ্ধ করতে পারবেন সামনের লোকসভা নির্বাচনে। ভোটের আগে এ কথা মমতাবিরোধী অবিজেপি শক্তি না বুঝলেও বিজেপি ঠিকই বুঝেছিল। তাই সদ্য-সমাপ্ত ভোটপর্বে মোদী-শাহ অনুগত নির্বাচন কমিশন, শীতলকুচি হত্যাকাণ্ডের হোতা কেন্দ্রীয় সশস্ত্র বাহিনীতে ভরসা রেখেছিল বিজেপি। তাই মোদী-শাহ-যোগী-নাড্ডা ও তাঁদের নন্দীভৃঙ্গী বাহিনী বাংলার ডেলিপ্যাসেঞ্জার হয়ে গিয়েছিল। কোনও খ্যাতিমান অভিনেতা তো আবার সাপের ছোবলে ছবি বানিয়ে দেওয়ার মতো জঘন্য প্রচারে মেতে ছিলেন। সিবিআই, ইডির মতো সংস্থার ভূমিকা ছিল দলদাসের। কৈলাস বিজয় বর্গীয় তো আবার চূড়ান্ত নির্লজ্জতা প্রদর্শন করে কোনও বিখ্যাত নিউজ চ্যানেলের বুম হাতে ব্রিগেডের সমাবেশে সংবাদ পরিবেশনও করেছিলেন। তবু শেষরক্ষা না হওয়ায় ৩৫৬ ধারা লাগু করে রাষ্ট্রপতি শাসনের আকাঙ্খায় তাঁরা কেন্দ্রের অধীনে থাকা বিভিন্ন কমিশন লেলিয়ে দিয়ে, ভোট পরবর্তী হিংসার ধুয়ো তুলে মিথ্যা রিপোর্ট তৈরি করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। হাতে না মারতে পেরে, গুলি খাওয়া বাঘের মতো ক্ষিপ্ত মোদী-শাহ প্রাপ্য টাকা আটকে দিয়ে বাংলার মানুষকে ভাতে মারতে উদ্যত।

 

এই আর্থিক সংকটের মধ্যেও কন্যাশ্রী ও সবুজসাথীর মতো ডজনখানেকেরও বেশি জনবাদী প্রকল্প চালু করায় সব ধর্ম সম্প্রদায়ের আমপাবলিক উপকৃত হয়েছেন। ব্রাহ্মণ্যতন্ত্রের ধ্বজাধারী এই বাংলার মার্কসবাদীদের আমলে সম্মান-না-পাওয়া সম্প্রদায়ের ব্যক্তিদের প্রশাসনিক ও দলীয় স্তরে জায়গা করে দিয়ে, ত্রিস্তর পঞ্চায়েতে মহিলাদের জন্য ৫০% আসন সংরক্ষণ করে অগ্নিকন্যা ইতিহাস রচনা করেছেন। মার্কসবাদীদের মতো তিনি তত্ত্বের কচকচানি না করেও গরিবদের মুখে অন্ন তুলে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছেন। বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে অবহেলিতদের তিনি সম্মান জানিয়েছেন। গঙ্গাসাগর, তারাপীঠ, দক্ষিণেশ্বর, কালীঘাটের মতো তীর্থস্থানগুলোর তিনি আধুনিকীকরণ করেছেন। রেডরোডে দুর্গাপুজোর প্রদর্শনীর মাধ্যমে সারা পৃথিবীর প্রশংসা অর্জন করলেও নিন্দুকদের ভাষায় তিনি নাকি কেবল মুসলিম তোষণ করেন। এমনি বিকৃত দর্শন বিজেপি এবং তাঁর প্রভু আর এস এস-এর।

দশভুজা দুর্গার মতো তাঁর কর্মকুশলতা দশ দিকে ছড়িয়ে পড়েছে। দলীয় নেতাকর্মী ও প্রশাসনিক ব্যক্তিদের কিছু সীমাবদ্ধতা, কিছু ত্রুটি, কিছু দুর্নীতি সত্ত্বেও দশ বছরে যা উন্নতি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার করেছেন, তাতেই তিনি নিজেকে যোগ্য ভারতনেত্রীর জায়গায় উন্নীত করেছেন। মোদীর মতো ১৫ লাখ টাকার জুমলা রাজনীতি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় করেননি। সমুহ সম্ভবনা সত্ত্বেও আমরা দেশের প্রধানমন্ত্রীর আসনে কোনও যোগ্য বাঙালিকে অধিষ্ঠিত হতে দেখিনি, এবারে সর্বোচ্চ প্রশাসনিক সেই সাংবিধানিক আসনকে চূড়ান্ত মিথ্যাচারে এবং জনবিরোধী আচরণে যিনি কলঙ্কিত করেছেন, সেই নরেন্দ্রভাই দামোদরদাস মোদিকে অপসারিত করে আমরা এবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেই অধিষ্ঠিত দেখতে চাই এই ভারতের নিপীড়িত মানুষের সাংবিধানিক অধিকারকে পুনঃ প্রতিষ্ঠিত করবার জন্যে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়-এর ভারত জয় সুনিশ্চিত, শুধু সময়ের অপেক্ষা।

 

আমরা জানি বিভাজনের রাজনীতিতে বিশ্বাস করেন না দেশের অধিকাংশ সাধারণ মানুষ। তাঁরা জানেন বৈচিত্র্যময় ভারত হল নানা ভাষার ও নানা জাতের মানুষের মিলন ক্ষেত্র। বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্যবদ্ধ দেশ হল ভারত। মিশ্র সংস্কৃতি আমাদের অর্জিত বৈভব, তা আমরা কখনোই নষ্ট হতে দেব না।

 

নয়া নাগরিকত্ব আইন, সিএএ, এবং এনআরসির বিরুদ্ধে উদার সহিষ্ণু ভারতের কোটি কোটি মানুষ শান্তিপূর্ণ ভাবে, সংবিধানকে সামনে রেখে সভা-সমাবেশে, প্রতিবাদে ও প্রতিরোধে রুখে দাঁড়িয়েছেন। বিভেদকামী সরকারের পতন সুনিশ্চিত করতে জনতার এই একতা দেখে আমরা মুগ্ধ হই।

 

১৯৪৭ সালে দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে দেশ ভাগ হয়েছিল। মহম্মদ আলী জিন্নাহ বলেছিলেন, হিন্দু আর মুসলমান দুটি পৃথক জাতি, তাই দুটি আলাদা দেশ হওয়া দরকার। হিন্দু মহাসভার নেতা সাভারকারও এই একই বিভাজন নীতির প্রবক্তা ছিলেন। কিন্তু ভারতের সংবিধান প্রণেতারা জিন্নাহ বা সাভারকারের পথ নেননি। তাঁরা ভারতবাসীকে একটি ধর্মনিরপেক্ষ, সার্বভৌম গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র উপহার দিয়েছিলেন। কিন্তু স্বাধীনতার ৭৫ বছরে দাঁড়িয়ে সেই সংবিধানকে অস্বীকার করে মহাত্মা গান্ধী থেকে শুরু করে বাবাসাহেব আম্বেদকর পর্যন্ত সবার সেক্যুলার আদর্শকে জলাঞ্জলি দিয়ে ক্যা-এর নামে দ্বিজাতিতত্ত্বকে প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহের সরকার। সংখ্যার জোরে নয়া নাগরিকত্ব আইন সিএএ পাশ করেছে ঠিকই, কিন্তু বিভাজনের রাজনীতির ঘৃণ্য পুনরুজ্জীবন ঘটিয়ে বিজেপি সরকার কতটা সফল হবে তা কিন্তু সময় বলবে। কারণ, ভারতের ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধানকে রক্ষা করতে দেশবাসী দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।

 

আমরা সবাই জানি স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় আরএসএস এবং হিন্দু মহাসভার নেতারা স্বাধীনতা সংগ্রামের বিরোধিতা করেছিলেন এবং দেশ বিভাজনের মূলেও ছিলেন তাঁরাই। পঞ্চমুখে যে নেতার গুণগান করে বেড়ান বিজেপির নেতারা, সেই শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় প্রকাশ্যে লিখিতভাবে "ভারত ছাড়ো" আন্দোলনের বিরোধিতা করে বড়লাটকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, যেভাবেই হোক ব্রিটিশের স্বার্থবিরোধী এই আন্দোলনকে পর্যুদস্ত করতেই হবে এবং সে ক্ষেত্রে শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি এবং তাঁর বিশ্ব হিন্দু পরিষদ ব্রিটিশের সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করবে। করেছিলেন, ব্রিটিশের সেবাদাস হিসেবে তাঁদের সেই ভূমিকা আজ ইতিহাস, অথচ আজ তাঁদের উত্তরসূরিরা আমাদের দেশপ্রেম শেখাচ্ছেন! এর চেয়ে বড় প্রহসন আর কী হতে পারে!! যারা বিভাজনের রাজনীতিতে বিশ্বাস করে তারা দেশের সাধারণ মানুষের কখনও কল্যাণ করতে পারে না।

 

চিটিংবাজ ব্যবসায়ীরা দেশের লক্ষ লক্ষ কোটি টাকা লুট করে বিদেশে পালিয়েছে। আর তাদেরকে ধরে আনতে বিজেপির সরকার চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে। কালো টাকা ফেরত আনতে পারেনি নরেন্দ্র মোদীর সরকার। সাধারণ মানুষের একাউন্টে ১৫ লক্ষ করে টাকা ঢুকিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদী। আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর নরেন্দ্র মোদী এই প্রতিশ্রুতিও পূরণ করতে পারেন নি।

 

 

ব্যাঙ্ক জালিয়াতির ফলে প্রতিদিন কত সাধারণ মানুষ নিঃশব্দে শেষ হয়েছেন এবং হচ্ছেন। নোটবন্দি থেকে জিএসটির মতো অবিমৃষ্যকারী পদক্ষেপে সারা দেশের অর্থনীতি আজ ধ্বংসের শেষ কিনারায় এসে দাঁড়িয়েছে। নরেন্দ্র মোদীর কোন ভ্রুক্ষেপ নেই, কোন বক্তব্য নেই। ধর্মের বড়ি খাইয়ে গোটা দেশকে আজ ধ্বংসের দিকে ঠেলে নিয়ে চলেছেন তিনি।

 

দেশে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে চরমভাবে ব্যর্থ নরেন্দ্র মোদী সরকার । বিগত ৪৫ বছরের পরিসংখ্যানে বেকারত্ব সর্বোচ্চ সীমায় পৌঁছেছে। সাধারণ মানুষ দিন দিন দিশেহারা বোধ করছেন। সুস্থ ভাবে বেঁচে থাকতে উপযুক্ত রোজগারের সুযোগ সুবিধা থেকে অসংখ্য মানুষ বঞ্চিত হচ্ছেন। এসবের প্রতিকারে নরেন্দ্র মোদীর সরকার নিশ্চুপ।

 

দেশের নাগরিকদের হাজার সমস্যার সমাধান করতে না পেরে, অন্য দিকে দৃষ্টি ঘোরাতে, গোটা বিশ্বের মানুষের সামনে সংবিধান বিরোধী নতুন নাগরিকত্ব আইন ও কৃষি বিল হাজির করে নরেন্দ্র মোদী সরকার কি বার্তা দিতে চাইছে তা বুঝতে হবে। বিভেদমূলক শক্তিকে রুখতেই হবে।  

 

মানবিক চিন্তাচর্চায় যথার্থ আগ্রহী সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশের মেধাজীবী, সাহিত্যিক, শিল্পী, প্রাবন্ধিক, সাংবাদিক, সমাজ-রাষ্ট্রচিন্তক, সর্বোপরি আম-জনতার সচেতন অংশটি গেরুয়া শাসনের প্রশাসনিক বদমায়েশি সম্পর্কে নিরন্তর প্রতিবাদী হয়ে উঠেছে। সংখ্যাগুরু ও সংখ্যালঘিষ্ঠ সমাজ থেকে উদ্ভূত প্রতিনিধিস্থানীয় সমাজ-বেত্তা, প্রাবন্ধিকগণ তাঁদের ভাবনাচিন্তাকে তুলে ধরেছেন লেখালেখির সুবাদে। বাঙালির অস্তিত্ব রক্ষার সংগ্রাম ছিল ২০২১ বিধানসভা নির্বাচন।

 

 

সংখ্যাগুরু সমাজের একটি অংশ, যারা আজও উটপাখির মতো মরুবালিতে মুখ গুঁজে উপেক্ষিত অংশের জাগরণকে স্বীকার করতে দ্বিধান্বিত, তাদের বোধোদয় হবে এমন প্রত্যাশা করা যায়। ভারতের ঐতিহ্যের, পরম্পরার এবং সংহতির ঘোর বিরোধী গেরুয়া শাসনের অবসান ঘটাতে এগিয়ে এসেছেন সচেতন পশ্চিমবাংলার নাগরিকগণ। সীমাহীন রাজকীয় ক্ষমতানির্ভর সুখে-স্বাচ্ছন্দ্যে, ঘাড়ে-গর্দানে এক-হয়ে-যাওয়া কেন্দ্রীয় সরকারের রাজাবাবুরা এতদিন যে সংখ্যালঘু ও দলিত সম্প্রদায়ের উপস্থিতিকেই স্বীকার করত না, আজ তারাই বেমক্কা নির্লজ্জভাবে ছুটে গিয়েছেন প্রান্তিকের কাছে ভোট ভিক্ষা চাইতে।

 

ইতিহাস বলে, বিজেপি’র মূল চালিকা শক্তি আরএসএস ও তার তৎকালীন দোসর হিন্দু মহাসভা ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশগ্রহণ করেনি। বরং ইংরেজদের পক্ষেই ছিল তারা। শুধু তাই নয়, দেশভাগের মূলে প্রকৃতপক্ষে ওই দুই সংগঠনের নেতাদের ভূমিকাই ছিল আসল। অথচ, সেই আরএসএস-জাত বিজেপি’র অধুনা নেতারা দেশভক্তির পরাকাষ্ঠা দেখাতে কী না করছেন! বিজেপি নেতা নরেন্দ্র মোদি-অমিত শাহ’র শাসনে ভারতের অর্থনীতি ভেঙে পড়েছে, তীব্র বেকারত্ব ও ব্যাপক মূল্যবৃদ্ধির জোড়া ধাক্কায় দেশবাসীর নাভিশ্বাস ওঠার উপক্রম হয়েছে। সাধারণ মানুষকে দেওয়া প্রায় কোনও প্রতিশ্রুতিই পালন করতে পারছেন না মোদি ও তাঁর দোসররা। কৃষি বিল নিয়ে আন্দোলন চলছে আজ-ও কৃষি বিল বাতিল করতে এগিয়ে আসছে না বিজেপির সরকার।

 

এই ব্যর্থতা থেকে নজর ঘুরিয়ে দিতে ধর্মকে হাতিয়ার করছেন গেরুয়া নেতারা। ধর্মের ভিত্তিতে ভারতবাসীকে বিভক্ত করে নিজেদের আসন নির্বিঘ্ন রাখতে মরিয়া তাঁরা। সেই পরিকল্পনার আরও একটি অংশ হল বিভিন্ন আঞ্চলিক সংস্কৃতিকে গ্রাস করে নেওয়া। হিন্দি-হিন্দু-হিন্দুস্থানের স্বপ্নে বিভোর তাঁরা। ওই স্বপ্ন সফল করতে তারা হাত বাড়িয়েছিল বাংলার দিকে। ২০২১ এর বিধানসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে বাংলার রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের দখল নিতে সর্বশক্তি নিয়োগ করেছিল।

 

বাংলার যুব নেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় আর সবার প্রিয় দিদি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়-এর প্রতি মানুষ আস্থা রেখেছেন এবং বাংলা থেকে বিজেপির পতন শুরু হয়েছে। আগামীতে বিভিন্ন রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনে এবং লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির পতন সুনিশ্চিত করবে বিরোধী শক্তি। জোটবদ্ধভাবে পারস্পরিক বোঝাপড়ার মাধ্যমে জয় সুনিশ্চিত করতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই এখন ভরসা। ২০২৩ সালে ত্রিপুরা বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির হাত থেকে শাসন ব্যবস্থা তৃণমূল কংগ্রেসের হাতে আসার রাস্তা তৈরি হচ্ছে। নানান রূপেই বাধা দিচ্ছে ত্রিপুরার বিজেপির সরকার।

 

সাধারণ মানুষের বিরুদ্ধে একটার পর একটা বিল এনেছে কেন্দ্র সরকার। ২০২৪ সালে লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির পতন সুনিশ্চিত করতে বিরোধী জোটের সমন্বয়কারী প্রধান মুখ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনিই প্রধানমন্ত্রী হওয়ার দৌড়ে প্রথম হবেন কি না তা সময় বলবে। তবে দেশবাসী ২০২৪ সালে দিদিকেই চাইছেন বলেই মোদী ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হতে পারবেন না। জয় সুনিশ্চিত হবে বিরোধী জোটের। সকলের মুখে একটাই আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে এখন দেশ বাঁচাতে দিল্লি দাপাবেন হাওয়াই চটি। বাংলার মানুষ ২০২১ বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির পতন সুনিশ্চিত করে দেখিয়ে দিয়েছেন বাংলাই পারে মোদী জামানার অবসান ঘটাতে। 

 

গেরুয়া শিবিরের নানান অন্যায় আগ্রাসনকে রুখে দিতে বাংলার বহু সচেতন ব্যক্তিত্ব জোরদার লড়াই করছেন। লড়েছেন বহু সাধারণ মানুষও। বাংলা ও বাঙালির স্বার্থে তাঁদের এই লড়াইকে কুর্নিশ জানাই। রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের বিরুদ্ধে সরব ওই সব অগ্রণী অংশের ভাবনাকে প্রণাম। 

 

জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে প্রায় দেড়শো কোটি ভারতীয়দের অনন্যতা রক্ষায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়-এর প্রয়াস অব্যাহত থাকবে। দেশের মানুষের কল্যাণে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ নেতাদের মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছেন। এটাই আশার আলো।

 

গণতন্ত্র ও সংবিধান আজ বহু বিভেদকামী রাজনৈতিক নেতাদের হাতে ধ্বংস হচ্ছে। গণতন্ত্র ও সংবিধান বাঁচাতে দেশের সাধারণ নাগরিকদের আরও সচেতন হয়ে নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করতে হবে, বিভেদকামী শক্তির অবসান সুনিশ্চিত করতে একটাও ভোট দেবেন না সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্টকারী দলকে।     

 

অনেক বছর পেরিয়ে গেল, দেশ স্বাধীন হয়েছে। আজও আমরা সাম্প্রদায়িকতা মুক্ত ভারত গড়ে তুলতে পারিনি। দেশ জুড়ে অসহিষ্ণুতা বাড়ছে, সম্প্রীতির বন্ধন অগ্রাহ্য করে বেড়ে চলেছে হানাহানি।

 

আমাদের মধ্যে যে বিভেদের প্রাচীর তোলার অশুভ উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে তা ব্যর্থ করতে আমাদেরই এগিয়ে আসতে হবে। নইলে যতই আমরা মুখে সম্প্রীতির বার্তা শোনাই না কেন, সব আয়োজন গঙ্গার ভাঙনের মতো তলিয়ে যাবে। আমরা ছদ্ম ধর্মনিরপেক্ষতাকে বিসর্জন দিতে চাই। প্রকৃত ধর্মবোধে যারা বলীয়ান তাঁদের স্বাগত জানিয়ে সকলে মিলে ধর্মনিরপেক্ষতাকে পরিপূর্ণ করে তুলতে চাই।

 

আমরা বঞ্চনা চাই না। যে বঞ্চিত, সে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান হোক আর মুসলমান হোক, সে-ই আমাদের দুঃখের সমভাগী।

 

বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে দলিত ও সংখ্যালঘু নিপীড়নের ঘটনা অনেক বেশি ঘটছে। "লাভ জেহাদ" ও "গো রক্ষা"-র নামে অসহায় সাধারণ মানুষকে পিটিয়ে হত্যা করা হচ্ছে, যা চোখে দেখা যায় না। এই সব দৃশ্য প্রকৃত ভারতবাসীদের চোখে জল আনছে।

 

 অপরিকল্পিত লকডাউনের ফলে স্বদেশে চরমভাবে হেনস্তা হতে হয়েছে পরিযায়ী শ্রমিকদের। ক্লান্ত শ্রমিকরা রেললাইনে টুকরো টুকরো হয়ে গেছে। তাও মোদী সরকার নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নিতে হতাশাজনকভাবে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে।

 

বিভেদকামী শক্তি জাতিবিদ্বেষ ছড়িয়ে সংখ্যালঘুদের প্রতি যে ঘৃণা ও অবজ্ঞা পোষণ করছে তার বিরুদ্ধে জোটবদ্ধভাবে পারস্পরিক সম্পর্ক সুদৃঢ় করে একসঙ্গে লড়াই করতে হবে। বিভেদকামী নীতির অশুভ প্রয়াস বন্ধ করতেই হবে। মুসলমানদের শত্রু বানানোর প্রচেষ্টা ও ষড়যন্ত্রকে রুখে দিতে জনগণের মধ্যে একতা থাকা জরুরি। হিন্দু সম্প্রদায়ের উদার মানুষজন কিন্তু সর্বদা ভারতের কল্যাণে এবং সংবিধান রক্ষা করতে মুসলমানদের আগলে রেখেছেন।  আমার দৃঢ় বিশ্বাস, আগামী দিনেও ভারতকে সঠিক পথ দেখাবে উভয় সম্প্রদায়ের মানুষজন। দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে ভারতের শুভবুদ্ধির নাগরিকরা এগিয়ে আসছেন।

 

জাতীয় বিপর্যের মধ্যেও হতাশ হওয়ার কোনও কারণ দেখছি না। ভারত আকাশে একদিন মুক্তির সূর্য উঠবেই বিভেদকামী রাজনৈতিক শক্তিকে প্রতিহত করতে। সেই মুক্তি সূর্য আমাদের মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ইমমাদের অনুরোধে প্রচার চলছে করোনা থেকে সাবধানে থাকতে। আমাদেরকে স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলতেই হবে করোনা থেকে  বাঁচতে। সাবধানে থাকতে হবে এবং সর্বত্র মাস্ক পরতে হবে। স্বাস্থ্যের ব্যাপারে আরও সচেতন হতে হবে, সবাইকে আরও সচেতন হতে হবে। করোনার জন্য বহু মানুষের প্রাণ হারিছেন ইতিমধ্যে। করোনা থেকে সাবধানে থাকতে পারলেই সবার মঙ্গল। করোনা নিয়ে নোংরা রাজনীতি বন্ধ হোক। বাংলার মেয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দেশ পরিচালক হিসাবে দেখতে হলে বিজেপির পতন সুনিশ্চিত করতেই হবে দেশবাসীকে।

 

ইয়াসের তাণ্ডবে ক্ষতিগ্রস্থ মানুষের পাশে সাহায্য নিয়ে এগিয়ে এসেছিলেন তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।

বাংলার মানুষের মনের যুবরাজ অভিষেক বন্দোপাধ্যায় তাঁর ফেসবুক ওয়ালে এক পোস্টে ওই সময়ে লিখেছিলেন "ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে ডায়মন্ড হারবার লোকসভা কেন্দ্রের বিভিন্ন এলাকা ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন। রাজ্য সরকার, স্থানীয় প্রশাসন ও বিপর্যয় মোকাবিলাকারী দপ্তরগুলি অত্যন্ত তৎপরতার সঙ্গে সাধারণ মানুষকে বিপন্মুক্ত করার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। প্রতিটি মানুষের কাছে প্রশাসনিক নির্দেশ মেনে চলার ও প্রশাসনের সাথে সহযোগিতা করার অনুরোধ জানাই। সকলের ঐক্যবদ্ধ লড়াইয়ের মাধ্যমেই আমরা আবারও এই প্রাকৃতিক বিপর্যয় কাটিয়ে উঠে সাধারণ জীবনে ফিরব। ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ হিসেবে আমি শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে হলেও এই অঞ্চলের মানুষের সুরক্ষা সুনিশ্চিত করব। আজ ডায়মন্ড হারবার বয়েজ ও ফকিরচাঁদ কলেজ, পারুলিয়া, নূরপুর হাই মাদ্রাসা, কালিপুর উত্তর ও রাজীবপুর ফ্রি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ত্রাণ শিবিরগুলি পরিদর্শন করে আশ্রিতদের খাদ্য ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছি। এছাড়াও পারুলিয়া, শিফলবেড়িয়া ও আছিপুর সিদ্ধেশ্বরী ঘাট রোডের ক্ষতিগ্রস্ত নদীবাঁধ অঞ্চল পরিদর্শনের কিছু মুহূর্ত।"

 

বাংলার মানুষের ভালবাসা অর্জন করতে সর্বদাই বিনয়ী আচরণ করতে দেখা যায় যুব নেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে। মানুষের বিপদের সময়ে তিনি ঘরে বসে থাকতে পারেন না। তাই নিজেই সশরীরে হাজির হন সাহায্য করতে। এগিয়ে আসেন মানুষের মাঝে তার সাহায্যের হাত নিয়ে। ঘূর্ণিঝড় ইয়াস তছনছ করে দিয়েছিল বহু মানুষের জীবনকে।

 

বিভেদকামী শক্তির পতন সুনিশ্চিত করতে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় একাই যথেষ্ট।

যে কোনও পরিস্থিতিতেই অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় যে সেরা প্লেয়ার, তা বুঝিয়ে দিয়েছেন। ২০১৬-তে রাজ্যের ক্ষমতায় মমতার প্রত্যাবর্তনের অন্যতম কাণ্ডারী ছিলেন তিনি। বাংলার যুবশক্তির মুখ হয়ে উঠেছেন। এবার ২০২১ নির্বাচনে তৃণমূল যুব দলের সেই অধিনায়ক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে যুব সম্প্রদায় শপথ নিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বাংলার কুর্সিতে ফের অধিষ্ঠিত করার। তা করেও দেখালেন। বিপুল জয় সুনিশ্চিত করে তিনি দেখিয়ে দিলেন তাঁর দেখানো পথেই এসেছে তৃণমূল কংগ্রেসের জয়-জয়কার। তৃণমূলের বিপুল জয়ের পিছনে অনেকেই দারুণ ‘খেলছেন’। কিন্তু ‘ম্যান অফ দ্য ম্যাচ’ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ই। নির্বাচনের প্রাক্কালে, এলাকায় চষে বেড়িয়ে প্রচারে ঝড় তুলেছিলেন। বাংলার একপ্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে দাপিয়ে বেড়িয়ে তুলে ধরেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সুশাসনে বিগত দশ বছরে রাজ্যে উন্নয়নের জোয়ার বয়ে যাওয়ার কথা।

 

বামফ্রন্টের আমলে পিছনের সারিতে চলে যাওয়া এই বাংলাকে যেভাবে মুখ্যমন্ত্রী আবার সামনের সারিতে অধিষ্ঠিত করেছেন, সেই লড়াইয়ের কথা বাংলার ঘরে ঘরে পাঠিয়ে দেওয়ার মাধ্যম হয়ে উঠেছেন তিনি। মমতার সাফল্য, মমতার আগামী দিনের কর্মসূচী প্রচারের মূল দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছেন। সেইমতো তাঁর যুববাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছিলেন, মানুষের কাছে যেতে, মানুষকে বোঝাতে। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর হাত ধরে যে উন্নয়ন যজ্ঞ চলছে, সেই উন্নয়নের বার্তা রাজ্যবাসীর কাছে পৌঁছে দিয়ে মমতার জয় সুনিশ্চিত করে তোলার পিছনে অভিষেকের অবদান কারও থেকে কম নয়। তাঁর দূর্বার ডাকেই তৃণমূলের হাত শক্ত করতে সমর্থনের জোয়ার বয়ে গিয়েছিল। তাইতো, যতই জোট গড়ুক সিপিএম-কংগ্রেস, মানুষ বুঝতে সমর্থ হয়েছিল, অত্যাচারী সিপিএম আর নয়, বাংলার বুকে শান্তি প্রতিষ্ঠা হয়েছে যার হাত ধরে তাঁকেই বাংলার কুর্সিতে দরকার। যুব সংগঠনই দলের ভবিষ্যৎ। যুব সংগঠনের বৃদ্ধি না হলে, নতুন মুখ উঠে না এলে, যে-কোনও দলেই পচন ধরে। আর মানুষের পাশে, মানুষের কাছে গেলে, দলে নতুন সদস্যের অন্তর্ভুক্তি হতে বাধ্য। দলীয় সদস্যপদ নবীকরণ হওয়া মানেই দলের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল থেকে উজ্জ্বলতর হয়ে ওঠা। সেই সরল সাধারণ মন্ত্রই যুব নেতা হিসাবে রাজ্যের প্রতিটি যুব শাখার অন্দরে প্রবেশ করিয়ে দিতে পেরেছেন অভিষেক।

 

বয়সে নবীন হলেও, রাজনৈতিক বিচক্ষণতার সার্থক বহিঃপ্রকাশ ঘটাতে সমর্থ হয়েছেন সর্বভারতীয় তৃণমূল যুব সভাপতি। নেত্রীর দেখানো পথই তাঁর এগিয়ে চলার সোপান। তাই তো যুব সংগঠনের দায়িত্ব নিয়েই তিনি বুঝিয়ে দিতে চেয়েছেন, শৃঙ্খলা আর অনুশাসনই দলের মূলমন্ত্র। বলেছিলেন দলের অন্দরে অশান্তি-বিশৃঙ্খলা বরদাস্ত নয়। চূড়ান্ত করে দিয়েছিলেন যুবনেতা-কর্মীদের চলার পথ। তাঁর নির্দেশনামার প্রথমেই ছিল, মানুষের জন্য কাজ। বলেছিলেন, মানুষের জন্য জীবনপাত করুন, স্বার্থসিদ্ধি মানব না। রাজ্য সরকারের কর্মসূচি ও সাফল্যের কথা বুথে বুথে পৌঁছে দিতে হবে। যুব সংগঠনের মাধ্যমেই রাজ্যের তৃণমূল সরকারের সাফল্যের কথা গ্রামেগঞ্জে, শহর-শহরতলির অলি-গলি, তস্য গলিতে ছড়িয়ে পড়বে। রাজ্যের যুব সম্প্রদায়ের মধ্য দিয়ে যদি এই বার্তা মানুষের মনে প্রবেশ করানো যায়, তাঁর প্রভাব পড়বে বহুগুণ। দলের প্রতি, দলনেত্রীর প্রতি মানুষের বিশ্বাস দ্রুত বাড়তে থাকবে। দল বাড়বে। সরকারের উন্নয়নমুখী কাজের প্রচারে যোগ দিতে ভিন্ন ভিন্ন দল থেকে ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের মানুষও ভিড় জমাতে শুরু করবেন। তাঁদের দলে অন্তর্ভুক্তির জন্য ছাঁকনির কাজ করার গুরুদায়িত্ব নিতে হবে যুবকর্মীদের। আরও একটা বড় কাজ, ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে সমন্বয় রক্ষা করে চলা। কেননা ছাত্র সংগঠনের পরের ধাপই যুব সংগঠন। ছাত্র নেতা-কর্মীদের যুবস্তরে নিয়ে আসার ও তৈরি করার দায়িত্ব তো যুবনেতা-কর্মীদেরই।

 

অভিষেক প্রথম থেকেই বুঝিয়ে দিতে চেয়েছেন, মূল সংগঠনের সঙ্গে নীতিগত ফারাক বা কোনও সংঘাত তিনি চান না। এ ব্যাপারে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে সর্বস্তরে। মনে রাখতে হবে যুব সংগঠন দলের ডানহাত। এ হাত যত শক্ত হবে, দল ততটাই মজবুত হবে। কিন্তু মূল সংগঠনের সঙ্গে স্বার্থ-সংঘাত থাকা মানে দল নড়বড়ে হয়ে পড়া। যুব শাখার একটা বিশেষ দায়িত্ব থাকে। দলীয় নীতি মেনে সেইসব কাজের মাধ্যমেই দলকে শক্তিশালী করার প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। রাজ্যের উন্নয়নের প্রচারে মুখ একমাত্র মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই। তিনি বুঝিয়ে দিয়েছেন, তৃণমূল কংগ্রেসে এক, দুই বা তিন বলে কিছু নেই। দলের শীর্ষে আছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আর নীচে আছেন কর্মীরা। আমরা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে নেত্রীর কর্মযজ্ঞকে সফল রূপায়ণে সহায়তা করব। সেই ব্রত নিয়েই তিনি এগিয়ে চলেছেন। যে মন্ত্রে বিধানসভায়, পৌরসভা ও পঞ্চায়েত ভোটে বিপুল জয় এসেছে, সেই একই মন্ত্রে এবার লক্ষ্য বিধানসভা নির্বাচন ২০২১  সচেতন নাগরিকগণের কাছে একাটাই দাবি নিয়ে ২০০ বেশি আসনে জয় সুনিশ্চিত করতে হবে। জয় সুনিশ্চিত শুধু সময়ের অপেক্ষা। তাই তো এখন লক্ষ্য গ্রাম।

 

গ্রামের উন্নয়নে তাঁকে দলনেত্রী যেভাবে কাজে লাগিয়েছেন, সেই মতোই তিনি দলীয় কর্মীদের নির্দেশ দিয়ে বিপুল কাজ করছেন। গ্রামে বিগত দিনে যে উন্নয়নের ঝড় বয়ে গিয়েছে, তা তিনি তুলে ধরছেন তাঁর যুববাহিনীর মাধ্যমে। বলছেন ভবিষ্যৎ কর্ম যজ্ঞের কথাও। ২০১৬ বিধানসভা ভোটে মাথাচাড়া দিয়েছিল অনৈতিক জোট। তাঁকে সমূলে উৎখাত করা গিয়েছে। এখন বিজেপির পতন সুনিশ্চিত করতে তিনি বাংলার বিধানসভা নির্বাচনে বিভিন্ন আসনে অংশ গ্রহণকারী প্রার্থীদের হয়ে জোরালো প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। এবার ভোটেও কর্মীদের যে-কোনোও পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত থাকতে বলেছেন তিনি। বলেছেন, অসন্তোষ থাকলে দলের মধ্যেই আলোচনার মাধ্যমে মিটিয়ে নিতে। যুব সংগঠনের দায়িত্ব নিয়ে তিনি আদর্শ যুবনেতার পরিচয় বহন করতেই আগ্রহী। তিনি চান দুর্যোগ বা ঝড়ে প্রকৃত কাণ্ডারীর মতোই শক্ত হাতে হাল ধরতে। স্বচ্ছ প্রশাসন রাজ্যবাসীকে উপহার দিতে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বাংলার যুবরাজ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও বদ্ধপরিকর। যুবাদের অনুপ্রেরণার তিনিই উৎস। আবার রাজনীতিতেও সক্রিয় অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় শক্ত হাতে হাল ধরেছেন।

 

২০২১ বিধানসভা ভোটেও তৃণমূল কংগ্রেসকে বিপুল ভাবে জিতিয়ে আনতে তিনি প্রধান সেনাপতি ছিলেন। ২০২১ সালে বিধানসভা ভোটে তৃণমূল কংগ্রেসকে বাংলায় পুনরায় ক্ষমতায় ফিরিয়ে আনতে তিনি সংগঠনকে ঢেলে সাজালেন। হ্যাট্রিক করতে তিনি দৃঢ় প্রতিজ্ঞ ছিলেন। বাস্তবিক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় তৃতীয় পর্বে হ্যাট্রিক করিয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের জয়জয়কার সুনিশ্চিত করেছেন এবং পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসের সরকার গঠিত হয়েছে।  পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরবর্তীকালে তিনিই মুখ্যমন্ত্রী হবেন, এ বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই। বাংলার প্রতি প্রান্তে সংগঠন ও সদস্য সংখ্যা বাড়াতে দৃঢ় পদক্ষেপ নিচ্ছেন তিনি। বাংলার কল্যাণে ও দেশের কল্যাণে যুব সম্প্রদায়ের ঐক্যবদ্ধ প্রয়াসে আদর্শ ভারত গড়তে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ই দিদির যোগ্য উত্তরসূরি। তিনিই আলোর দিশা হয়ে উঠছেন।

 

বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম-এর ১২২ তম জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে অনলাইনে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান চলছে কয়েকদিন ধরেই। ২৬ মে ২০২১ প্রকৃতি বুমেরাং হওয়ায় বাংলার কয়েকটি জেলার মানুষ দিশাহারা হয়েছেন। বুধবার ২৬ মে ২০২১ ঘূর্ণিঝড় ইয়াস লণ্ডভণ্ড করে দিলো বাংলা সহ ওড়িশার উপকূল সংলগ্ন এলাকা। বাংলার মানুষের ভালবাসা অর্জন করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বাংলার মানুষের কল্যাণে নিবেদিত সহায়তাকারী হিসেবে বিপদে আপদে মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে সাহায্য করতে এগিয়ে আসেন। তাঁর উত্তরসূরি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও সাহায্য নিয়ে এগিয়ে এলেন। 

 

কবি কাজী নজরুল ইসলাম সমকালে নারী সমাজের মুক্তির লক্ষ্যে যারা একনিষ্ঠভাবে সংগ্রামে অবতীর্ণ হয়েছিলেন তাঁদের মধ্যে অগ্রণী ছিলেন রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন। নারীদের আরও বেশি করে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য এগিয়ে আসতে হবে। বাংলাদেশর জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম তাঁর কবিতায় লিখেছিলেন—-‘সাম্যের গান গাই, আমার চক্ষে পুরুষ রমণী কোন ভেদাভেদ নাই, বিশ্বের যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণকর অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।’ আশার কথা যে, সামাজিক পরিবর্তনের পাশাপাশি দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন ঘটাতে হবে সর্বত্র।  নারী-পুরুষের সমন্বিত প্রচেষ্টায় একটি সুন্দর ভবিষ্যত গড়ে তুলতে হবে, আর তাহলেই কবির সার্থকতা প্রতীয়মান হবে। নির্বাচনের ফলেও আমরা দেখলাম নারী-শক্তির জয় জয়কার হল বাংলা জুড়ে। বাংলার ইতিহাসে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিশেষ জায়গা করে নিলেন সমাজের কল্যাণে অফুরন্ত কাজ করে। তবে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য তাঁকে আরও কঠোর হতেই হবে। ভারতের বুকে সাম্প্রদায়িক বিভেদকামী বিদ্বেষকামী বিজেপি-আর এস এস নামক এই অশুভ শক্তির পতন সুনিশ্চিত করতে এই মুহূর্তে বাংলার অগ্নিকন্যা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই ভরসা যাঁর আদর্শকে সঠিক দিশায় রূপায়িত করতে অবিচল লক্ষ্যে এগিয়ে চলেছেন সারা ভারতের যুব আইকন আমাদের প্রিয় নেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।

 

 

লেখক: সম্পাদক-প্রকাশক উদার আকাশ এবং কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের গবেষক।

Mailing List