প্রেমময় যীশুখৃষ্ট, 'মসিহ' ঈশা / পঞ্চম পর্ব

প্রেমময় যীশুখৃষ্ট, 'মসিহ' ঈশা / পঞ্চম পর্ব
(এক তথ্যসমৃদ্ধ ধারাবাহিক ধর্মীয় কাহিনী)
সুপ্রিয় বন্দ্যোপাধ্যায়
বন্ধুরা, আজ আলোচনা করব, বাইবেলের যীশুখৃষ্টের কাহিনির উৎস--- নিউ টেস্টামেন্টর কথার অন্তিম ও চতুর্থ উপাখ্যানের কথা ও কথোপকথন:---
-------------------------------------------------------------------------
আগের পর্বের আলোচনার মাধ্যমে আমরা জেনেছি, যেহেতু ইহুদি সম্প্রদায় " ঈশ্বর"-এর অস্তিত্বকে স্বীকার করতেন না, মথি নিজে ইহুদি বংশোদ্ভূত বলে, তিনি নিজেও বোধহয় সেই চিরন্তন প্রভাব থেকে বার হয়ে আসতে পারেন নি।
যীশুর সকাতর আহ্বানে বৃহত্তর ইহুদি-গোষ্ঠীর মনে হয়, যীশু ধর্ম বিরোধী কার্যক্রমের সাথে যুক্ত; তিনি শয়তানের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে সমগ্র ইহুদিদের বিপথে চালনা করছেন, এবং, সেই ব্যাপারে ওরা আরো সন্দিহান হয়ে ওঠে।
এই চতুর্থ উপাখ্যানে প্রকাশিত হয়েছে ওই বৃহত্তর ইহুদি গোষ্ঠীর সাথে যীশুর ক্রমবর্ধমান বিরোধিতা এবং, ( বলতে এবং লিখতে কষ্ট হচ্ছে, খারাপ লাগছে ) শেষে জেরুজালেমে ক্রুশবিদ্ধ করার ঘটনার দিকে নিয়ে যায়। এবং, এই অন্যায়ভাবে ধর্মের বিরুদ্ধাচরণ করে, জগতের পরিত্রাতার পুত্রকে ক্রুশবিদ্ধ বিদ্ধ করে হত্যার ঘটনায় তাঁর শিষ্যরাও অনুপস্থিত থাকেন।
ক্রুশবিদ্ধ করার পর, চার্চের যথাবিহিত নিয়ম অনুযায়ী, যীশুর দিব্যদেহ সমাধিস্থ করা হয়। এবং, পুনরুত্থানের ঘটনার মধ্যে দিয়ে যীশু প্রমাণ করেন --- সাধারণ মানুষ তিনি ছিলেন না, আর তিনিই ঈশ্বরের স্বর্গরাজ্যে নিয়ে যাবার আদর্শ পুরুষ।
আশ্চর্যের বিষয় এই যে, মথির লিখিত সুসমাচারের এই স্থানে সাইমনকে 'পিতর ' ( অর্থাৎ পাথর ) বলে পরিচিত করা হয়েছে।
এবং, এই পিতর অবশেষে প্রভু যীশুকে " খৃষ্ট, ' জীবন্ত ঈশ্বরের পুত্র ' বলে অভিহিত করেছেন।
বন্ধুরা, মোটামুটি-ভাবে মথি-লিখিত সুসমাচারের মুখবন্ধ বা বংশ-লতিকার পর চারটি উপাখ্যানের মূল প্রতিপাদ্য বিষয়গুলি আলোচনা করা হলো।
এবার, একটু হলেও, আপনাদের মনে সামান্য কৌতূহল উদ্রেক হওয়া খুবই স্বাভাবিক যে, এই "সুসমাচার " কথাটির সঠিক অর্থ কি? বা, এই শব্দটি তো আমাদের বাঙলা ভাষায় খুব একটা চালু শব্দ নয়; তবে, এই শব্দটির অর্থ কি?
এবার, সেই কথাটাই আলোচনা করার সময়।
" সুসমাচার " কথাটির প্রাসঙ্গিকতা:---
---------------------------------------------‐-----‐‐--
" সুমাচার " কথাটির আক্ষরিক অর্থ হলো, 'বার্তা ' বা 'খবর '।
তবে, একদম শুরুতে, ' সুসমাচার ' বলতে বোঝানো হতো " খ্রিস্টান বার্তা " ; কিন্তু --- দ্বিতীয় শতাব্দী থেকে এটার অর্থটা সামান্য বদলে গেছে। বলা হয়, যে, এই সুসমাচার হলো সেই সব পুস্তক, যার মাধ্যমে যীশুর জীবনী ও স্বর্গরাজ্যের অধিবাসী হতে গেলে, কি ভাবে জীবন-যাপন করতে হবে, তার বার্তাটি পৌছে দেয়।
তবে, এই সুসমাচারে, নাসরতীয় যীশুর কথা ও কাজের পূর্ণাঙ্গ বর্ণনার সাথে সাথে তাঁর বিচার ও শাস্তিদানে মৃত্যুর এবং পুনরুত্থানের ঘটনাবলীর মাধ্যমে এই শিক্ষাই দেওয়া হয়েছে যে, জীবনের চলার পথ কখনও কুসুমিত নয়; তা কন্টকময়। তবুও তার মধ্যেই জীবনের প্রকৃত অর্থ খুজে নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে।
মার্ক, মথি ছাড়াও লূক এবং যোহন-ও এই চারজনই ধর্মীয় সুসমাচার রচনা করেছেন। লূক, যতদূর ধারণা করা যায়, কিছু অনুচ্ছেদ সম্পূর্ণভাবে বাদ দিয়ে দিলেও মার্ক-এর লেখাকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন। সেখানে আবার সবথেকে বেশি ধর্মতাত্ত্বিক; ইঁনি যীশুর জীবনের বর্ণনার প্রেক্ষাপটের বাইরে গিয়ে প্রথম খ্রিস্টীয় বিচার প্রয়োগ করেন।
তবে, এই চারজন ছাড়াও, থোমা লিখিত সুসমাচার, পিতর লিখিত সুসমাচার, যিহুদা লিখিত সুসমাচার, মরিয়ম লিখিত সুসমাচার, যাকোব লিখিত সুসমাচার উল্লেখ্য।
বন্ধুরা, আজকের দিনে, এই বার্তাটি অতি লঘু ও প্রাচীন বলে মনে হতে পারেই। কিন্তু দ্বিতীয় শতাব্দীর সময়ে, বন্ধুরা, মনে রাখতে হবে --- মানুষের এটাও বোঝার ক্ষমতা ছিল না, যদিও, জীবন এখনকার তুলনায় ছিল, অনেক বেশি বিপদসঙ্কুল।
যাই হোক, আগামী পর্বে যীশুখৃষ্টের জীবনের কাহিনীতে আমরা প্রবেশ করব।
(ক্রমশ)



